পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : সউদী নেতৃত্বাধীন চার আরব দেশীয় জোটের নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এবং বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের হাতে সঞ্চিত রিজার্ভের অর্থ দিয়েই অর্থনীতি সচল রাখতে চায় কাতার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-ও মনে করছে, নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে নিজেদের অর্থনীতিকে সচল রাখার ক্ষমতা রয়েছে কাতারের। ব্যাংকিং খাতে নিষেধাজ্ঞার সীমিত প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হলেও সামগ্রিক বিবেচনায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কাতারের অর্থনীতিকে পঙ্গু করা খুব একটা সহজ হবে না।
গত ৫ জুন সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসরসহ কয়েকটি দেশ। এ নিষেধাজ্ঞায় কাতারের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছিলেন অনেকে। তবে নিজেদের রিজার্ভেই ঘুরে দাঁড়াতে চায় কাতার।
কাতারের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে না; দাবি করেছেন ব্যাংকের গভর্নর শেখ আব্দুল্লাহ বিন সাউদ আল থানি। দেশটির বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা নগদ অর্থ (রিজার্ভ) ব্যবহার করেই তারা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হবেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
গভর্নর জানিয়েছেন, কাতারের হাতে ৩৪ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের নগদ অর্থ (রিজার্ভ) রয়েছে। স্বর্ণের আন্তর্জাতিক মান বিবেচনায় নিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত রিজার্ভের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি ডলার। আর দেশটির বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের কাছে আরও রয়েছে ৩০ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার এটাই আস্থার জায়গা। যেকোনও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের কোনও বাধা নেই। আমরা যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত। আমাদের আরও অর্থ দেশে আসছে।’ গ্যাস ও তেল বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির ফলে সেই সেক্টরটি এখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানিকারক দেশ কাতার। দেশটিতে জনপ্রতি মাথাপিছু আয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৬০ মার্কিন ডলার। যা দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশে পরিণত করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও মনে করে, দেশটির ক্রয়ক্ষমতা বিশ্বের যে কোনও দেশের তুলনায় বেশি। যে কোনও ধরনের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় অর্থ জোগান দেওয়ার সামর্থ্য আছে কাতারের। এদিকে অর্থনীতিবিদরা জানান, বিশ্বের শীর্ষ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিকারক দেশ কাতার এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সউদী জোটের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশটি নতুন নৌপথের ব্যবস্থা করেছে। যা সউদী আরবের সীমান্তের কাছ দিয়ে গেছে।
লন্ডন ভিত্তিক ক্যাপিটাল ইকোনোমিকের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক অর্থনীতিবিদ জেসন টোবে বলেন, আরও এক বছর এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলেও পরিস্থিতি পাল্টানোর সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, ‘কাতারের এলএনজি রফতানিতে যেকোনও বাধা তাদের হুমকির মধ্যে ফেলবে। তবে সেই সম্ভাবনা খুব কম। আর এটা হলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল বাণিজ্যতেই এর প্রভাব পড়বে।’ তবে মধ্যপ্রাচ্যের আরকাম ক্যাপিটালের হেড অফ রিসার্চ জাপ মেয়ের মনে করেন অর্থনৈতিক প্রভাব কিছুটা পড়াই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব কাতারের। তিনি বলেন, ‘কাতারের ব্যাংকিং সেক্টর বৈদেশিক অর্থায়নের উপর নির্ভরশীল। আন্তঃব্যাংকের রেটের কারণে সেই অর্থ কিছুটা কমেছে। যার প্রভাব কাতারের অর্থনীতিতে পড়তেই পারে।’
কাতারবিরোধী পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিন্দা
কাতারের বিরুদ্ধে সউদী আরবসহ ৬ দেশের জারিকৃত নিষেধাজ্ঞায় নিন্দা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আদালতের (আইসিসি) প্রধান আইনজীবী ফাতু বেনসুদা। রবিবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে সাক্ষাতের পর এই হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি। অবরোধে কোনও আন্তর্জাতিক আইন বা মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন তারা।
গত ৫ জুন সন্ত্রাসবাদে সমর্থনর অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সউদী আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর সহ কয়েকটি দেশ। তবে এই দাবি অস্বীকার করে আসছে কাতার। সম্পর্ক পুনর্গঠনে কাতারেক ১৩টি শর্তও বেধে দেয় সউদী জোট। কাতারের অবস্থানকে নেতিবাচক উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ওই আঞ্চলিক জোট।
কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কিউএনএ জানায়, এই সঙ্কট মোকাবেলায় কাতারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন বেনসুদা। সে সময় কাতার ও আইসিসির মধ্যে সহায়তা বৃদ্ধি করার বিষয়েও আলোচনা করেন তারা। এর আগে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানির সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যের এই সঙ্কট সমাধানে মধ্যস্থতায় প্রথম এগিয়ে আসে কুয়েত। এরপর স¤প্রতি এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছ যুক্তরাজ্যও। সঙ্কট সমাধানে মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। সূত্র: আল-জাজিরা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।