Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বদলীয় নির্বাচনী ফ্রন্ট

নির্বাচন এবং আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি, গঠন হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মূল দাবি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার : চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া, ফিরেই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা উপস্থাপন : ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে চলছে আলোচনা


রফিক মুহাম্মদ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত বিএনপি। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবী আদায় করেই দলটি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। সহায়ক সরকারের দাবী আদায় এবং নির্বাচনে অংশ নিতে ‘সর্বদলীয় নির্বাচনী ফ্রন্ট’ গঠনে কাজ করছে বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারক বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার বিভিন্ন বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যের যে ডাক দিয়েছেন সর্বদলীয় ফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে তারই চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ঘটবে। দলের সিনিয়র নেতা, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবী প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ সর্বদলীয় ফ্রন্টের ব্যানারে করার প্রস্তুতি চলছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যসহ অন্যান্য বাম দল এবং বিভিন্ন ইসলামী দলের সঙ্গে বিএনপি এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবীর বিষয়ে অনেকে একমত পোষন করেছেন। দলীয় সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের চলতি মাসেই চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। লন্ডন থেকে ফিরে তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপ রেখা জাতির সামনে পেশ করবেন। সরকার দলীয় জোটের বাইরে থাকা সকল দল, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখো ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি প্রস্তুত। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এবং অন্যান্য সমমনা দল সবাই মনে করেন একটি গ্রহণযোগ্য অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কোন বিকল্প নেই। আর এই সহায়ক সরকারের রূপরেখা জোটনেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খুব শিগগিরই জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন। আর সে রূপরেখা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
দলীয় সূত্র জানায় চিকিৎসার জন্য এ মাসেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের লন্ডনে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে অবস্থানরত দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আগামী নির্বাচন এবং দলের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন। লন্ডন থেকে ফিরে আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে সহায়ক সরকারের রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থান করবেন দলের শীর্ষ নেতারা এমনটাই মনে করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তু। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, তা এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার। বিএনপি চেয়ারপার্সন সবার সঙ্গে আলোচনা করে সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরী করেছেন। চিকিৎসার জন্য ম্যাডামের লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। লন্ডন থেকে ফিরেই তিনি সহায়ক সরকারের রূপ রেখা উপস্থাপন করবেন। তিনি বলেন, রূপ রেখা উপস্থাপনের পর রাজনীতিতে একটি মেরুকরন ঘটবে। তার আলোকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
নির্বাচনকালী সহায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়া খুব শিগগির দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে। সংবিধানের ১২৩-এর (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এসব রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। রূপরেখার খসড়া তৈরির সঙ্গে জড়িত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বর্তমান সংবিধানের মধ্য থেকে অথবা সংবিধান সংশোধন করেও সহায়ক সরকার গঠনের একাধিক প্রস্তাবনা তৈরি করছেন।
দলীয় সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে বেশ কিছুদিন অবস্থান করবেন। দুই ছেলের পরিবার নিয়ে একত্রে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশে ফিরতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঈদুল আজহার পরপরই তিনি সহায়ক সরকারের রূপ রেখা উপস্থাপন করবেন। রূপ রেখা উপস্থাপনের পর সরকার এ বিষয়ে সমোঝতায় না আসলে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের প্রস্তুতিও রয়েছে বিএনপির। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ইনকিলাবকে বলেন, গণতন্ত্র পুনরোদ্ধারে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্য অবশ্যই হবে। খুন, গুম, অপহরণসহ নানা রকম নিপিড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবাই রুখে দাঁড়াবে। আমাদের চেয়ারপার্সন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু ও সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষে তিনি খুব শিগগিরই ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপ রেখা উপস্থাপন করবেন। সরকার যদি আলোচনার ভিত্তিতে সহায়ক সরকারের রূপ রেখা মেনে না নেয় তাহলে আন্দোলনের কোন বিকল্প থাকবে না। আর সে ক্ষেত্রে গণতন্ত্র পুনরোদ্ধারে বৃহত্তর ঐক্যে আন্দোল শুরু হবে।
সহায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রভাবশালী দেশ ও দাতাগোষ্ঠীর সমর্থন আদায়েও ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। দলের আন্তর্জাতিক উইংয়ের সদস্যরা ঢাকার বিদেশি দূতাবাসগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন। অনেকে প্রয়োজনে প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশ সফর করেও সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে তৎপর রয়েছেন। স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন, তারা আর ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন দেখতে চান না। সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান। সেই সাথে নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সে বিষয়টিও নির্বাচন কমিশনের কাছে কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সেটা তাদের বিষয় নয়। সব দল অংশগ্রহণ করলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



 

Show all comments
  • ইমরান ৮ জুলাই, ২০১৭, ১১:৩৬ এএম says : 4
    এসব ফ্রন্ট গঠন করে আদৌ কোন লাভ আছে কী ?
    Total Reply(0) Reply
  • হিমেল ৮ জুলাই, ২০১৭, ১১:৩৭ এএম says : 2
    আন্দোলন জমাতে না পারলে বিএনপি কোন দাবি আদায় করতে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • হুমায়ন ৮ জুলাই, ২০১৭, ১১:৩৮ এএম says : 0
    এদেশে সব দল অংশগ্রহণ করলে সুষ্ঠু নির্বাচন কী আদৌ হবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • রশিদ ৮ জুলাই, ২০১৭, ১১:৩৮ এএম says : 1
    ভালো কিছু প্রত্যাশা নিয়ে আমরা অপেক্ষায় আছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Salam ৮ জুলাই, ২০১৭, ১:৩৯ পিএম says : 0
    we are waiting to see that what BNP give.
    Total Reply(0) Reply
  • Tuhin ৮ জুলাই, ২০১৭, ১:৩৯ পিএম says : 1
    amra ki abar vote dite parbo ?
    Total Reply(1) Reply
    • তুষার ৮ জুলাই, ২০১৭, ১:৪১ পিএম says : 4
      ভাই সেটা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানে । তবে সরকারের গতি দেখে পজেটিভ কিছু মনে হচ্ছে না।
  • pabel ৮ জুলাই, ২০১৭, ১:৪৩ পিএম says : 4
    সরকার যদি আলোচনার ভিত্তিতে সহায়ক সরকারের রূপ রেখা মেনে না নেয় তাহলে আন্দোলনের কোন বিকল্প থাকবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • ফজলুল হক ৮ জুলাই, ২০১৭, ১:৪৮ পিএম says : 3
    রূপরেখার খসড়া তৈরির সঙ্গে জড়িত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বর্তমান সংবিধানের মধ্য থেকে অথবা সংবিধান সংশোধন করেও সহায়ক সরকার গঠনের একাধিক প্রস্তাবনা তৈরি করছেন। .................................................. এটা ভালো কথা । কিন্তু সরকার একটাও মানবে কিনা সেটা হলো দেখার বিষয়।
    Total Reply(1) Reply
    • Salim ৮ জুলাই, ২০১৭, ১:৫০ পিএম says : 4
      perfect speech ....... if they don't accept any thing that will be harmful to us
  • Nur- Muhammad ৮ জুলাই, ২০১৭, ৭:৫২ পিএম says : 4
    জনগণের আই ওয়াস করার জন্য ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন করে। ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়। তাই তারা বিভিন্ন দোহাই ( সংবিধান, উন্নয়ন,শিশু গনতন্ত্র ) দেয়। এখন ও এ দোহাই চলছে। জনগণ এই সকল সব ই বুজে। জনগণ ভুল করে না। ভুল করে ক্ষমতাসীনরা। আর এই খেসারত দিতে হয় জনগণকে, দেশ ও পুরু জাতীয়কে। পাকিস্তান আমল থেকে এখন ও ক্ষমতাসীনরা ভুল করছে। জনগণ আন্দোলনে সরকারকে ভুল ভাঙ্গতে বাধ্য করছে। মনে হয় সরকার ভুল পথ ছাড়বে না। তত্ত্বাবদায়ক সরকারের পথে আসবে না। সমাধান করবে না। জনগণকে ই আগাতে হবে। আন্দোলন করে, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র আদায় করতে হবে। ধন্যবাদ। সবায়কে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ