Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চালক নিয়ে বিপাকে যানবাহন অধিদপ্তর

উপ-সচিবরা গাড়ি পাচ্ছেন

| প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে উপ-সচিবরা সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা পাবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। উপসচিবদের সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার ১২ দিনে আবেদন জমা পড়েছে দুইশতাধিক। তবে উপসচিবদের সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি চালকের বিষয়টি কি হবে তা বলা হয়নি। এদিকে ১২০০ জন উপ-সচিবের গাড়ি চালক নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।
পরিবহন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, এর আগে প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যুগ্ম সচিবরা সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা পেতে এখন থেকে এ সুযোগ সুবিধা উপ-সচিবরা পাবেন। এ কয়েকদিনে ২ শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। উপসচিবদের গাড়ি ও গাড়ী চালকের বিষয়ে নিয়ে নতুন নীতিমালার কাজ চলছে। এসব উপসচিবকে পরিবহন পুল থেকে গাড়ী দেয়া হবে না তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বিনা সুদে ঋণ দেয়ার তার নীতিমালা হওয়ার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের ব্যয় এবং বিভিন্ন ক্যাডারের সাথে প্রশাসন ক্যাডারের দূরত্ব বাড়বে। একই সুবিধা সমমানের কর্মকর্তাদের না দেয়া হলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
যুগ্ম সচিবদের সার্বক্ষণিক গাড়ি দেয়ার কথা সরকারের। কিন্তু তা নিশ্চিত করতে পারে না যানবাহন অধিদপ্তর। এ কারণে যুগ্ম সচিবরা সরকারি গাড়ি না নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ভাতা দেয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এক সময় তাদের দাবি মেনে নেয়া হয়। তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বিনা সুদে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বর্তমানে গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালার আওতায় তাঁরা বিনা সুদে ২৫ লাখ টাকা ঋণ পান সরকারি কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে গাড়ি চালনার জন্য প্রতি মাসে দেয়া হয় ৪৫ হাজার টাকা। এই বিপুল পরিমাণ ভাতাই উপসচিবদের সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহারের প্রাধিকার পেতে উৎসাহিত করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাঁদেরও গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করে তা গত ২০ জন প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সূত্রে জানা গেছে. প্রশাসনে বর্তমানে উপসচিব রয়েছেন এক হাজার ৫৩৯ জন। যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ অন্যদের গাড়ি সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। সংস্থাটি গঠনের দীর্ঘদিন পরও এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে এখন যোগ হচ্ছে প্রায় দেড় সহস্রাধিক কর্মকর্তার গাড়ি। নতুন বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। এরপরই রয়েছে জনপ্রশাসন। জনপ্রশাসনে বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৩.৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৫৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। জনপ্রশাসনের এই ব্যয় প্রতিবছরই বাড়ছে। গত বছর সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে বৈশাখী ভাতা। বেতন ও ভাতা বাড়ানোর বছর না ঘুরতেই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাঁদের বেতন সমন্বয় করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে (সংস্কার ও সমন্বয়) প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই অবস্থায় উপসচিবদের সার্বক্ষণিক গাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
উপসচিবরা সরকারের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা। কোনো কোনো দপ্তরের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা গাড়ি সুবিধা পান। কিন্তু তাঁদের তা দেয়া হয় পরিদর্শন কাজের জন্য। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পুলিশ, খাদ্য অধিদপ্তরের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা সে সুবিধা পান। সচিবালয়, বিভিন্ন অধিদপ্তর বা বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের প্রাধিকারপ্রাপ্ত কক্ষে বসে যারা কাজ করেন, তাদের সার্বক্ষণিক গাড়িসেবা দেয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিবদের গাড়ি দেয়া হলেও বিভিন্ন দপ্তরের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তারা এ সুবিধার বাইরে থাকছেন। বিভিন্ন সেক্টরে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তার সংখ্যা তিন সহস্রাধিক। ২০১২ সাল থেকে সরকার গাড়ি সুবিধা গ্রহণের পরিবর্তে বিশেষ সুদমুক্ত অগ্রিমের মাধ্যমে গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা করে। এর আওতায় যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিবদের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার জন্য ঋণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় দেয়া হচ্ছে। তাদের সঙ্গে বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা, যারা যুগ্ম প্রধান এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (ড্রাফটিং) তাদের এ সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু অবশিষ্ট ২৭টি ক্যাডার এর বাইরে রয়ে গেছে। এ নিয়ে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্যাডারে মারাত্মক ক্ষোভ রয়েছে।
উপ-সচিবরা দীর্ঘদিন থেকেই সরকারের কাছে সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা প্রাধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে কর্মরত থাকার সময় তাদের ভালো মানের গাড়ি দেয়া হয়। জেলা থেকে সচিবালয়ে বদলি হলে সে সুবিধা আর থাকে না।



 

Show all comments
  • রাফী সরকার ৩১ আগস্ট, ২০২০, ১০:৪৮ এএম says : 0
    সরকারী কর্মচারীগণের টিফিন ভাতা ৩০০০/টাকা এবং দুপরে খাওয়া বাবদ ৬৫০০/ শিক্ষা ভাতা প্রতিজন শিক্ষার্থী সন্তানদের জন্য ৪০০০/টাকা করার দাবী জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানবাহন

২২ জানুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ