পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনভেস্টিগেটিং চ্যানেল : সউদি আরবের অনমনীয়তা ও মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপের কঠোর নীতি কি এখন দেশটিতে হানা দিতে ফিরে এসেছে? বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটি এখন গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে চলেছে।
কয়েক দশক ধরে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দালালির ভূমিকা পালন এবং একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা, প্রতিবেশী দেশগুলোর বিষয়ে অনধিকার চর্চার নীতি এবং সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন শেষ পর্যন্ত বিরক্তিকর বিষয় হয়ে উঠেছে যা দেশটিকে গোলযোগের মধ্যে নিপতিত করার হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। দেশে কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য ব্যয় কর্তন প্রচেষ্টার কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ, তেলের নিম্ন মূল্য ও মূল্যের ওঠানামার কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা এবং বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদের উত্তরাধিকারীর ব্যাপারে রাজপরিবারে মতবিরোধ এটাই বলে যে বিদেশে সউদি অ্যাডভেঞ্চার গৃহযুদ্ধের এক যথার্থ ঝড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে যা মধ্যপ্রাচ্যে আরো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। অন্য রাষ্ট্রসমূহ যেমন ইরান ও তুরস্ক আরব বিশে^র কার্যত নেতার সম্ভাব্য প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে অবস্থান গ্রহণের প্রেক্ষাপটে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
১.সউদি আরব অস্থিতিশীলতার ক্রমবর্ধমান লক্ষণ দেখছে
সউদি আরব কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে যা অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। ২০১৭ সালে বøুমবার্গ এক রিপোর্টে বলে যে বাদশাহ সালমান সউদি আরবে ঢালাও কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচি প্রচলনের চেষ্টার বিপরীতে রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের বোনাস ও ভাতা পুনরায় চালু করতে বাধ্য হন। সউদি সরকার জোর দিয়ে বলে যে প্রত্যাশার চেয়েও রাজস্ব আয় বেশী হওয়ার কারণে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা মার্চে উল্লেখ করেন যে সউদি আরবের বৈদেশিক রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে । এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সউদি আরব, ওমান, কাতার ও কুয়েতকে নিয়ে গঠিত উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) এক তৃতীয়াংশ দেখতে পাচ্ছে যে তাদের ক্রেডিট রেটিং কর্তিত হয়েছে এবং ইরানের প্রতি অভিন্ন পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণে তারা ক্রমবর্ধমান মতপার্থক্যের শিকার হচ্ছে।
সউদি আরবের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সমস্যার কারণ হচ্ছে তেলের মূল্য হ্রাস। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট উল্লেখ করে যে তেলের মূল্য হ্রাস সউদি আরবের মানব ব্যয় কর্মসূচিকে ব্যাহত করবে এবং দেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়স্কদের এক তৃতীয়াংশ কর্মহীন থেকে যাবে। পেট্রোলিয়াম সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর হিসাব এই যে সউদি আরব ২০২৮ সালে তেল উৎপাদনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হবে। তবে এটা এক অবিশ^াস্যু অবমূল্যায়ন হতে পারে। ‘দি মিডল ইস্ট আই’ যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের কথা উল্লেখ করেছে যারা বলেছেন যে সউদি আরবের প্রকৃত উৎপাদন ২০০৬ সাল থেকে হ্রাস পেতে শুরু করবে , ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর অব্যাহত ভাবে বছরে ১.৪ শতাংশ হ্রাস পাবে। সিটিগ্রæপের হিসাব অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ সউদি আরবের রফতানিযোগ্য তেল শেষ হয়ে যেতে পারে। দেশটির কামধেনুর মৃত্যু এমন একটি দেশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যাকে দি আটলান্টিক অত্যাধুনিক অপরাধ প্রতিষ্ঠানের ন্যায় নিজেকে পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
২.সউদি আরবে অভ্যন্তরীণ দ¦›দ্ব
সউদি রাজ পরিবারে যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব চলমান তার কিছু আভাস পাওয়া গেছে। বাদশাহ সালমান সউদি রাজ পরিবারের উত্তরাধিকার ক্রম সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে ও তার পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ নিয়োগের বিতর্কিত পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে বিরাট আলোড়ন সৃষ্ট করেন। এ পদক্ষেপ বিপজ্জনক এ কারণে যে তা রাজ পরিবারে বিভক্তির সৃষ্টি করেছে। ‘ফরেন পলিসি’ উল্লেখ করেছে যে সউদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনী কোনো একক কমান্ড কর্তৃপক্ষের অধীন নয়, তার অর্থ অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের ঘটনা ঘটলে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
২০১৫ সালে ‘ইনডিপেন্ডেন্ট’ এক সউদি প্রিন্সের সাথে কথা বলে যিনি জানান যে বাদশাহ সালমানর ১১ জন ভাই তার নেতৃত্বের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। তারা তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সাবেক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী প্রিন্স আহমদ বিন আবদুল আজিজকে তার স্থলাভিষিক্ত করার কথা ভাবছেন। ‘এনবিসি’ নিউজ প্রকাশ করে যে বাদশাহ সালমানের পুত্রক যুবরাজ হিসেবে পদোন্নতি প্রদান প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকেও ক্রুদ্ধ করেছে। তিনি আগে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ছিলেন্ তার ইরান বিরোধী কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি পরিচিত। ২৮ জুন , ২০১৭ দি নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, নায়েফকে সউদি আরব ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং তাকে জেদ্দায় তার প্রাসাদে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। আরো জানা গেছে, তার প্রহরীদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে সালমান বিন মোহাম্মদের অনুগত প্রহরীদের মোতায়েন করা হয়েছে।
নায়েফ সউদি আরবের পূর্বাঞ্চল শাসন করেন। এ অঞ্চলে বিরাট সংখ্যক শিয়া মুসলিমদের বাস বলে গৃহযুদ্ধের ঘটনায় এ প্রদেশটিও খুব সম্ভব বিদ্রোহ করতে পারে বলে মনে করা হয়। ২০১৬ সালে শিয়া ধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমরের ফাঁসি দেয়ার তিনি অন্যতম প্রধান প্রবক্তা ছিলেন। বিদেশ নীতির হাতিয়ার হিসেবে যেসব বিদ্রোহী গ্রæপ সউদি আরব কর্তৃক ব্যবহৃত হয়েছে তাদের সাথে নায়েফের পরিবারের ঐতিহাসিক বন্ধন ছিল। তার পিতা নায়েফ বিন আবদুল আজিজ আল সউদ অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ছিলেন এবং সউদি আরবের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ , পুলিশ, বিশেষ বাহিনী, মাদক দমন সংস্থা ও মুজাহিদিন বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতেন।
বাদশাহ সালমান ইয়েমেনের যুদ্ধকে অভিজাতদের অসন্তোষ নিবৃত্ত করার জন্য ব্যবহার করেছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট এর কারণ হিসেবে নাগরিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ার উল্লেখ করেছে। এ পদক্ষেপ ইয়েমেনের হুছি বিদ্রোহীদের প্রতি ইরানি সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রোঅ্যাকটিভ পদক্ষেপের এবং আরব বসন্তের ফলে অস্থিতিশীলতা রোধের চেষ্টা। এদিকে ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ সউদি আরবকে হয়ত স্বল্প মেয়াদী সুবিধা দিতে পারে, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যকে আরো টুকরো টুকরো করায় ভূমিকা রেখেছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলিকে সউদি আরবকে এ অঞ্চলের প্রাধান্য বিস্তারকারী শক্তি থেকে অপসারণের পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে।
৩. ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন সংঘাত বাড়াতে পারে
শুধু ইয়েমেনই সউদি আরবের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করেনি। বছরের পর বছর অনধিকার চর্চার অর্থ এখন এই যে সউদি আরব অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা পরিহার এবং আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে তার পররাষ্ট্র বিষয় পরিচালনা করছে। উইকিলিকসের সউদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফাঁস করা কেবলগুলোতে দেখা যায়, সউদি কর্মকর্তারা সিরিয়া সরকারকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর এ ভীতি থেকে যে আসাদ সরকার ধ্বংসকর গৃহযুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণে লিপ্ত হবে। সউদি আরব ইসলামী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে সিরিয়ার যুদ্ধ বাধাতে সাহায্য করে। উইকিলিকসের মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ফাঁস করা কেবলে দেখা যায়, সউদি আরব আন্তর্জাতিকভাবে সুন্নী সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থদাতা। কিন্তু বিদেশী হস্তক্ষেপের মত সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে এক পররাষ্ট্র নীতি অস্ত্র যা ধ্বংসকর শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দীর্ঘদিন ধরে ভীতি রয়েছে যে এ পদ্ধতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে এবং সন্ত্রাসের মদদদাতাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সউদি নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিতভাবে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অনুপ্রবেশ সমস্যার কথা বলেছে। ২০০১ সালে ‘স্ট্রাটফর’ উল্লেখ করে যে রাজপরিবার সামরিক বাহিনীর মধ্যে সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে এ ভীতি থেকে যে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর কেউ কেউ সউদি আরবের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন নয়। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মত সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো গত কয়েক বছর ধরে আত্মঘাতী হামলাসহ সউদি লক্ষ্যবস্তুগুলোতে কয়েকবার হামলা চালিয়েছে। মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনা শহর তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়।
ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা ইসরাইল ও সউদি সরকারের মধ্যে বিভক্ত। পরিবর্তনশীল মার্কিন কৌশল এবং এ অঞ্চলে অধিক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে ওঠার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের চেষ্টার কারণে এ আঞ্চলিক শৃঙ্খলার পরিবর্তন ঘটা শুরু হতে পারে। ২০১৬ সালের মার্চে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ নিউ ইন্টারন্যাশনালের কাছে উল্লেখ করেন যে জন ব্রেনানের মত মার্কিন কৌশলবিদ বৃহত্তর আমেরিকান কৌশলগত স্বার্থে , বিশেষ করে ইরানের প্রেক্ষিতে ক্রমবর্ধমানভাবে সউদি-ইসরাইলি বন্ধন গড়ে উঠতে দেখছেন।
এই রাজনৈতিক পরিবর্তন এখন কাতারের বর্তমান সংকটের সাথে খেলা হচ্ছে। কাতার ঐতিহাসিক ভাবে নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি কূটনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা ইরানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং তালিবানের মত বহু বিদ্রোহী গ্রæপকে আলোচনার জায়গা দিয়েছে। জন পোডেস্টার ই-মেইল থেকে দেখা যায় যে সউদি আরবের পাশাপাশি কাতারও আইএসের মত সন্ত্রাসী গ্রুপকে সমর্থন করেছে , তবে তা করেছে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারের ইচ্ছা থেকে। কাতারের চক্রগুলো আল কায়েদা, আল নুসরা, হামাস ও তালিবানকে সমর্থন দিয়েছে। এ ছাড়া কাতারের আল-জাজিরা আউটলেট মধ্যপ্রাচ্যের আগের অস্বীকারকৃত বিষয়সমূহের কড়া খবর প্রচার করে সউদি আরবকে উস্কানি দিয়েছে ( যদিও কাতারের রাজনীতির সমালোচনামূলক খবর তারা প্রকাশ করতে পারে না)। ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এন পি আর) উল্লেখ করেছে যে আরব বসন্তের সময় মিসরের মত দেশগুলোতে র্পপর বিরোধী দু’পক্ষকে দু’দেশ সমর্থন করে কাতার প্রকাশ্যেই সউদি আরবের সাথে প্রতিযোগিতা করেছে। কাতারের সাথে বিরোধ সউদি আরবের অভ্যন্তরে বৈরিতা ছড়িয়ে পড়ার প্রকৃত ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে যেহেতু উভয় দেশই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে সমর্থন দেয়।
সাম্প্রতিক উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন ব্যবস্থার উত্থানকে প্রকাশ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে পুরনো রীতির অনুসারী রাষ্ট্রগুলো, সউদি -ইসরাইলি বন্ধন ও তারা যারা ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস চায়। মিসর, ইউএই, বাহরাইন, ইয়েমেন ও মালদ্বীপ সউদি আরবকে সমর্থন করেছে। কাতারকে সমর্থন করছে সউদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›দ্বী ইরান ও তুরস্ক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক ধীরস্থির ভাবে মধ্যপ্রাচ্যে তার ভূমিকা বৃদ্ধি করছে। যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে দেখছে পাকিস্তানের মত দেশগুলোতে সউদি প্রভাবের ভারসাম্য রক্ষার উপযুক্ত খেলোয়াড় হিসেবে। তুরস্ক কাতারের সামরিক ঘাঁটিতে সৈন্য মোতায়েন ও ইরান কাতারকে খাদ্য সরবরাহের মধ্য দিয়ে এখন সক্রিয়ভাবে সউদি আরবকে চ্যালেঞ্জের ভাব প্রদর্শন করছে। দেশ দু’টি যদি অভ্যুত্থান ও সন্ত্রাসের অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা পায় তাহলে ভবিষ্যত যে কোনো সউদি প্রভাব হ্রাস থেকে লাভবান হওয়ার মত ভালো অবস্থায় থাকবে।
৪. সউদি গৃহযুদ্ধের বিপদ
একটি গৃহযুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ লড়াই দ্রুত আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে রূপ নেবে। প্রতিরক্ষা ঠিকাদাররা সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর প্রচেষ্টায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে স্বাক্ষরিত এক হাজার বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির অংশ, ক্রমবর্ধমানভাবে সউদি নগদ অর্থে ফুলে উঠছেন। সউদি আরব ক্রমেই বেশী করে বø্যাকওয়াটারের মত বেসরকারী সামরিক কর্পোরেশনগুলোকে ব্যবহার করছে। বø্যাকওয়াটার বর্তমানে ইয়েমেনে সউদি নেতৃত্বাধীন জোটকে যোদ্ধা সরবরাহ করছে।
মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক বিস্তারের অপচ্ছায়া উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে যে এ সব অস্ত্র ভুল হাতে পড়তে পারে বা নির্বিচারে ব্যবহৃত হতে পারে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ আল জাজিরা প্রধানের ২০১০ সালে দাবি পুনরুল্লেখ করেছেন যে কাতারের কাছে একটি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। সউদি আরবের নিজের কাছেও পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে সন্দেহ করা হয়। ২০১৩ সালে বিবিসি নিউজ খবর দেয় যে সউদি আরবের পারমাণবিক অস্ত্র আছে যা আদেশ পেলেই পাকিস্তান সরবরাহ করবে। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির অর্থ সরবরাহ করেছিল সউদি আরব। ২০১২ সালে সউদি আরব চীনের সাথেও আণবিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে যাতে বলা হয় যে রিয়াদ ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ১৬টি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ করবে। আরবদের গণবিধ্বংসী অস্ত্র সংগ্রহ ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তাদের আশংকা যে যেসব দেশ এ ধরনের অস্ত্র সগ্রহ করছে তারা কার্যকর ভাবে তা ব্যবহার করবে না।
কাতারের সাথে বিরোধ যদি (অথবা অন্য কোনো অঞ্চল যেখানে সউদি আরব হস্তক্ষেপ করেছে) নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য বিস্তার এক মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধ, আঞ্চলিক হস্তক্ষেপ এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সব মিলিয়ে ঝুঁকি সৃষ্টি করবে যে এ সব অস্ত্র আন্তর্জাতিক ভাবেই হোক আর অসাবধানতাবশতই হোক, ব্যবহৃত হতে পারে। একটি সউদি গৃহযুদ্ধও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। কোনো যুদ্ধের সময় পবিত্র মক্কা ও মদিনার ক্ষতি হলে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেবে।
বৈিেশক মুদ্রা রিজার্ভের পতন, তেলের সরবরাহ কমে আসা, রাজ পরিবারের মধ্যে বিরোধ এবং সদাসর্বদা হুমকি যে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলো তাদের মদদদাতাদের জন্য নেতিবাচক হতে পারে ইত্যাদি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে সউদি আরব একটি সংকটের ক্র্যাশ কোর্সের পর্যায়ে রয়েছে। কাতারি বিরোধ অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদের সম্ভাব্য অবসান বা আরব দেশগুলোর কাছে পুনরায় অস্ত্র বিক্রির নৈতিকতা বিষয়ে আসল প্রশ্ন হওয়া উচিত নয়, আসল প্রশ্ন হওয়া উচিত একবার ময়লা পরিষ্কার হওয়ার পর বিশ^ মধ্যপ্রাচ্যকে কি অবস্থায় দেখতে চায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।