পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল ইসলাম : মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়ী ভাড়া কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সউদী আরবে যেতে পারছে না অধিকাংশ হজ এজেন্সি’র মুনাজ্জেমরা। হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনের সময়ে প্রত্যেক হজযাত্রী’র মুয়াল্লেম ফি’ বাবদ ৩০ হাজার ৭শ’ ৫২ টাকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে মুয়াল্লেম ফি’র ২০ হাজার ৩শ’ ৫১টাকা স্ব স্ব হজ এজেন্সি’র ব্যাংক একাউন্টে ফেরত দিতে অহেতুক বিলম্ব হওয়ায় আইবিএএন-এর মাধ্যমে সউদী আরবে মুয়াল্লেম ফি পাঠাতে না পারায় এ পরিস্থিতি’র সৃষ্টি হচ্ছে।
যথা সময়ে হজযাত্রীদের বাড়ী ভাড়া করে দেশে ফিরতে না পারলে আগামী ২৪ জুলাই বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট নিয়েও বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। অভিজ্ঞ মহল এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া প্রত্যেক হজ এজেন্সিকে রিয়ালের বিনিময় হার ২২ টাকা হওয়ায় প্রতি হজযাত্রী’র মুয়াল্লেম ফি’তে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৬শ’ ৭ টাকা করে গুনতে হবে। এতে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮শ’ ৬৮জন বেসরকারী হজযাত্রী’র অতিরিক্ত ৪২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮শ’ ৭৬ টাকা গুনতে হবে।
এসব অতিরিক্ত টাকা যোগাতে হজ এজেন্সিগুলোর নাভিশ্বাস উঠছে। হজ প্যাকেজের বাইরে এসব অতিরিক্ত অর্থ হজযাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা সম্ভব হবে কিনা সে ব্যাপারে কারো মাথা ব্যাথ্যা নেই। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ ফেরত না পাওয়ায় হজ এজেন্সি’র মালিকরা চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। গতকাল সরকারী ব্যবস্থাপনার ৫ হাজার ৮শ’ হজযাত্রীর কোটা সিরিয়াল অনুযায়ী বেসরকারী কোডে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় ৪ হাজার ৯শ’ ২২জনের কোড পরিবর্তন করে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এনিয়ে বেসরকারী হজযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮শ’ ৬৮জনে আর সরকারী ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭শ’১৯জনে। বাকি ৮শ’ ৭৮জনের কোড পরিবর্তনের জন্য সিরিয়াল অনুযায়ী আরো দু’দিন সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। হজ অফিসের পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম এতথ্য জানিয়েছেন। পরিচালক হজ জানান, আগামী ২৪ বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট চালু হবে। আগামী ২২ জুলাই অথবা ২৩ জুলাই আশকোণাস্থ হাজী ক্যাম্পে আনুষ্ঠানিকভাবে হজ কার্যক্রম (২০১৭) উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি চেয়ে সামারি প্রেরণ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ই আইবিএএন-এর মাধ্যমে বেসরকারী হজযাত্রীদের মুয়াল্লেম ফি সউদী আরবে পাঠিয়েছিল। কিন্ত গত জুন মাসের প্রথম দিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে হজ এজেন্সিগুলোকে জানিয়ে দেয় স্ব স্ব হজ এজেন্সিকেই আইবিএএন-এর মাধ্যমে মুয়াল্লেম ফি (১০৮৯- রিয়াল) সউদী আরবে পাঠাতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক এজেন্সি’র ব্যাংক ্একাউন্ট নম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নিদের্শ দেয়া হয়। হজ এজেন্সগুলো স্ব স্ব ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলেও ঢিলেমীর কারণে অদ্যবধি অধিকাংশ হজ এজেন্সি মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ ফেরত পায়নি। ফলে অধিকাংশ হজ এজেন্সি’র মুনাজ্জেম বাড়ী ভাড়া করার জন্য সউদী আরবে যেতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে হাব মহাসচিব মো: শাহাদাত হোসাইন তসলিম ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, গতকালও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন হজ এজেন্সি’র একাউন্টে পে-অর্ডারের মাধ্যমে মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ ফেরত পেতে শুরু করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে হাব মহাসচিব তসলিম বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় বেসরকারী হজযাত্রীদের মুয়াল্লেম ফি কেটে রেখে দিয়েছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়। যারা এমন অভিযোগ তুলছে তারা’ সঠিক তথ্য সর্ম্পকে অবগত নন। যেসব হজ এজেন্সি এখনো তাদের একাউন্ট নম্বর দেয়নি তারা এখনো মুয়াল্লেম ফি’র টাকা ফেরত পায়নি। তিনি বলেন, আমরা হাবের পক্ষ থেকে গতকালও এজেন্সিগুলোকে একাউন্ট নম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য এসএমএস-এর মাধ্যমে তাগিদ দিয়েছি। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম এগিয়ে চলছেও বলে হাব মহাসচিব উল্লেখ করেন। এদিকে, পবিত্র হজ পালনের লক্ষ্যে চলতি বছর নিবন্ধিত হজ গমনেচ্ছুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান কার্যক্রম ১২ জুলাই শুরু হচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিকিৎসকরা প্রত্যেক হজযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। এসময় প্রত্যেক হজযাত্রীকে দুই ধরনের (ম্যানেনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা) টিকা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সনদ (হেলথ সার্টিফিকেট) প্রদান করা হবে। এছাড়াও ১৬ জুলাই আশকোনা হজ ক্যাম্প মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র খোলা হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সউদী সরকারের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাদের প্রত্যেককেই স্বাস্থ্য সনদ ও টিকা গ্রহণ করতে হবে। বেসরকারী হজ এজেন্সি ঢালী ওভারসীজের (৫৩) মালিক মুজাহিদুল ইসলাম ঢালী গতকাল মুয়াল্লেম ফি’র টাকা ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চরম উদাসিনতার দরুণ প্রায় ২০ দিন আগে একাউন্ট নম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার পরেও আমাদের সিয়াম ওভারসীজের (১১৯৫) হজ এজেন্সি’র ২শ’ ২৬জন হজযাত্রীর মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ ফেরত পাইনি। এসব হজযাত্রীকে হজে পাঠাতে আগামী ২৪ জুলাই ও ২৫ জুলাই হজ ফ্লাইটে বুকিং দেয়া হয়েছে। মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ আইবিএন-এর মাধ্যমে সউদী আরবে পাঠাতে না পারায় মক্কা-মদিনায় বাড়ী ভাড়া করতে যেতে পারছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ ফেরত পেতে মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দরুণ গতকাল পর্যন্ত ১০% এর বেশি হজ এজেন্সি’র মুনাজ্জেম বাড়ী ভাড়া করতে সউদী আরবে যেতে পারেনি। হাব সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম ঢালী বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় ধরর্ণা দিয়েও জমাকৃত মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ ফেরত পাচ্ছি না। তিনি বলেন, যথাসময়ে হজযাত্রীদের বাড়ী ভাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে আসন্ন হজ ফ্লাইট সিডিউল লন্ডভন্ড হবার আশংকা রয়েছে।
এদিকে, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ স্ব স্ব হজ এজেন্সি’র একাউন্টে দীর্ঘ বিশ দিন বিলম্ব হওয়ায় রাতে হাবের মহাসচিব মো: শাহাদাত হোসাইন তসলিমের নেতৃত্বে হাবের একটি প্রতিনিধি দল ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সাথে তার বাস ভবনে বৈঠকে মিলিত হন। হাব মহাসচিব তসলিম ধর্ম মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ সোনালী ব্যাংক থেকে স্ব স্ব হজ এজেন্সি’র একাউন্টে প্রেরণ না করে পে-অর্ডারের মাধ্যমে দেয়ার প্রক্রিয়া করতে ৭দিন ঢিলেমী করেছে। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো ত্রæটি দেখা দিলে সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। মুয়াল্লেম ফি’র অর্থ স্ব স্ব এজেন্সি পেতে বিলম্ব হওয়ায় ধর্ম মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে রাতেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সর্তক করে দেন এবং সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমে কোনো প্রকার গাফলতি ও অব্যবস্থাপনা বরদাশত করা হবে না বলেও উল্লেখ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।