পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : প্রাকৃতির দুর্যোগ ও বন্যা ওদের আশির্বাদ। বন্যার পানি ওদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। কাজ না করেই কোটি কোটি টাকা বিল। এ জন্য ওরা থাকেন বন্যার অপেক্ষায়। ওই ‘ওরা’ হচ্ছেন পাউবোর প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, ঠিকাদার। প্রশাসনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দু’পক্ষ্যই হাওড়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগে লাভবান হন। কাজের চুক্তি যখনই হোক প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য তাকিয়ে থাকেন বন্যার দিকে; কখন বন্যা হবে! বন্যা হলে প্রকল্পে অর্থ বাড়ানো যায়, ভুয়া বিল, আবার লাখ টাকা খরচ করে কোটি টাকা বিল তোলা যায়। সে টাকার ভাগ প্রকৌশলী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা এবং উর্ধ্বতন কর্তা ব্যাক্তিরাও পান। সে জন্য টেন্ডারের পর কাজ শুরু করতে অতিবৃষ্টি, প্রাকৃতিক বন্যার জন্য অপেক্ষা করেন। হাওড়াঞ্চলের বন্যায় লাখ লাখ একর জমির ফসল নষ্টের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ চিত্র উঠে এসেছে দুদকের প্রতিবেদনে।
তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় হাওড়ের লাখ লাখ মানুষের সর্বনাশের কারণ কাজ সমাপ্ত না করে বন্যার অপেক্ষায় ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)‘র কর্মকর্তারা ও ঠিকাদাররা। যাতে করে ভুয়া বিল প্রস্তুত ও দাখিল করে প্যাকেজের টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাত করতে পারেন। এছাড়াও হাওড় অঞ্চলে প্রকল্প বাস্তবায়ন দায়িত্ব পালনে গুরুতর অবহেলা করেছে নিবার্হী প্রকৌশলীরা। একই সঙ্গে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ঠিকাদারদের তদারক করেনি। বরং পরস্পর যোগসাজসে সরকারি অর্থ আত্মসাদের জন্য প্রাকৃতিক দুযোর্গের জন্য অপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দুনীতি দমন কমিশন গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে দুদক সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তারা হাওড় অঞ্চলের কাজ তো শুরুই করেনি। অথচ গত ফেব্রæয়ারি মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এতে তারা এতে অপরাধ মূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। এতে করে হাওড় অঞ্চলের জনগনের ভোগান্তি কমেনি বরং বাড়ছে। একই সঙ্গে সরকারের অর্থ খরচ হয়েছে। প্রতিবেদন বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা, নিধার্রিত সময়ে কাজ না শুরু করাসহ ইত্যাদি। তিনি আরো বলেন, হাওড় অঞ্চল বিষয় নিয়ে গত বছর দুদক একটি চিঠি পাঠিয়েছিল পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় বরাবর। পরবর্তীতে এক বছর পর আমরা ওই চিঠির জবাব প্ইা। সেখানেও তাদের দুনীর্তি বিষয়ে মন্ত্রনালয়ের কোন বক্তব্য পায়নি। এছাড়া প্রতিবেদনে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে দুদক সচিব বলেন, তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে ওই ১৩ জনকেও এ মামলার আসামি করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারিতে সিলেটের বিভিন্ন হাওরের বাঁধ ভাঙার বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন চাইলে ১০ মাস পর তারা প্রতিবেদন দেয়। তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে ২০১৭ সালে হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতি, মাছ ও গবাদি পশুর মৃত্যু হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
এদিকে হাওরে বাধ নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দীনসহ দুইজনকে গ্রেফতাও করা হয়েছে।
গত মার্চের শেষ দিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা তলিয়ে যায়। দুর্বল ও অসমাপ্ত বাঁধ ভেঙে প্লাবন ও ফসলহানির পেছনে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুর্নীতিকে দায়ী করে ঢাকায় মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশও হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী হাওরাঞ্চলের ছয় জেলায় মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়; ক্ষতির শিকার হয় আট লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, বাঁধ নির্মাণে কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই প্রেক্ষাপটে হাওর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করে দুদক। দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। তারা ওই এলাকায় গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
দুদক তদন্ত প্রতিবেদন বলা করা হয়েছে, উপর্যুক্ত তথ্যাদি ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে চুক্তিপত্রের সময় সীমা উল্লেখ থাকলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারগন ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ৮৪টি প্যাকেজের কাজ নির্ধারিত সময়ে সমাপ্ত করতে পারেনি। চুক্তিপত্রের শর্ত মোতাবেক ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক টেন্ডার চুক্তি বাতিল, কালো তালিকাভুক্তি ও ক্ষতিপূরন আদায় করে নতুনভাবে টেন্ডার আহবান করার বিধান থাকা সত্বেও তা প্রতিপালন না করে নিজেরা অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে এবং ঠিকাদারদের অবৈধ লাভবান করার মানসে উক্ত ৮৪টি প্যাকেজের কাজ ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে টেন্ডার ছাড়াই পূর্বের ঠিকাদারগনকে কাজ সমাপ্ত করার অনুমতি দিয়ে জনগনের ক্ষতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়াও ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে বাঁধ রিসেকশনিং (পুনরাকৃতি) কাজে টেন্ডার ডকুমেন্টের সময়সীমা অতিক্রম করা সত্বেও অর্থ্যাৎ ২৭’শে মার্চ,২০১৭ পানি আসার আগ পর্যন্ত সময়ে ৪জন ঠিকাদার কর্তৃক ৯টি প্যাকেজে কোন কাজ শুরু না করা সত্বেও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক টেন্ডার চুক্তি বাতিল, কালো তালিকাভুক্তি ও ক্ষতিপূরন আদায় করে নতুনভাবে টেন্ডার আহবান করার বিধান থাকালেও নিজেরা অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে এবং ঠিকাদারদের অবৈধ লাভবান করার মানসে ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক তা প্রতিপালন করেনি। অপর দিকে ৪৫ জন ঠিকাদার ১৫১টি প্যাকেজের কাজ চুক্তির সময়সীমার মধ্যে শুরু করলেও চলতি বছর ২৭’মার্চ পর্যন্ত সময়ে সর্বনিন্ম ১০ শতাংশ ও সবোর্”চ ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছেন। এতে বুঝা যায়, ঠিকাদারগন নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত না করে বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক বন্যার অপেক্ষায় ছিল। যাতে পরবর্তীতে সরকারী অর্থ কাজ না করে অসৎ উদ্দেশ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসৎ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভুয়া বিল প্রস্তুত ও দাখিল করে প্যাকেজের টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাত করতে পারেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত ১৫জন সরকারী কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা হলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, মোঃ আফছার উদ্দীন। যিনি ২৮ ফেব্রæয়ারীর মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় ১মাস সময় বর্ধিত করেন। বর্ধিত সময় অতিক্রম করা সত্বেও সম্পুর্ন কাজ বাস্তবায়ন না করে ঠিকাদারদের অবৈধ সুযোগ করে দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। প্রতি বছরে বন্যা আসার সময় ও আশঙ্কা সম্বন্ধে অবহিত থাকা সত্বেও কাজ শুরু না করা ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা তথা টেন্ডার চুক্তি বাতিল, কালো তালিকাভুক্তি ও ক্ষতিপূরন আদায় না করে করে নতুনভাবে টেন্ডার আহবান না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারকিতে গাফলতি করে প্রকারন্তরে ঠিকাদারদের অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ৮৪জন ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ না করা সত্বেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা তথা টেন্ডার চুক্তি বাতিল, কালো তালিকাভুক্তি ও ক্ষতিপূরন আদায় করত। নতুনভাবে টেন্ডার আহবান না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। সিলেট পওর সার্কেল, বাপাউবো, সাবেক তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম সরকার। যিনি নিজে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে অধস্থন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দায়িত্ব সঠিকভাবে মনিটরিং ও কন্ট্রোলিং না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার দায়ে অধস্থন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।এছাড়াও আব্দুল হাই, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাপাউবো, সিলেট, প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাস সুনামগঞ্জ ও খলিলুর রহমান এয়াড়াও সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন কর্মকর্তা শহিদুল্লা, ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ খান, খন্দকার আলী রেজা, রফিকুল ইসলাম, শাহ আলম, বরকত উল্লাহ ভূঁইয়া, মাহমুদুল করিম, মোছাদ্দেক, সজিব পাল, জাহাঙ্গীর হোসেন।
আর ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে ৪৬জন ঠিকাদার ছিলেন। তারা হলেন, টাঙ্গাইল আকুরটাকুরপাড়া, প্রোঃ, গুডম্যান এন্টার প্রাইজ,মোঃ আফজালুর রহমান, ফরিদপুরের ,প্রোঃ, মেসার্স খন্দকার শাহিন আহমেদ, খন্দকার শাহিন আহমেদ, মাহিন কন্সট্রাকশন মোঃ জিল্লুর রহমান, সিলেটের সজিব রঞ্জন দাস, সুনামগঞ্জের পার্থ সারথী পুরকায়স্থ, প্রোঃ, মেসার্স হান্নান এন্টার প্রাইজ, খাইরুল হুদা চপল, পটুয়াখালির কামাল, কাজি নাছিমুদ্দিন, প্রোঃ কাজি নাছিমুদ্দিন, সাতক্ষীরা খন্দকার আলী হায়দার, প্রোঃ, খন্দকার আলী হায়দার, প্রোঃ, মেসার্স আকবর আলী, মোঃ আবুল হোসেনের, প্রোঃ, মেসার্স বোনাস ইন্টারন্যাশনাল, শিবব্রত বসের, প্রোঃ, মেসার্স বসু নির্মাণ সংস্থাসহ মোট ৪৬টি ঠিকানাদার প্রতিষ্ঠান মালিকের দুনীর্তি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।