Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট

আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি : বন্ধ হয়েছে ১৭৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

| প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ : পাহাড়ি ঢলে সিলেট জেলার ছয় উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বন্যায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় ১৭৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়াও সিলেট অঞ্চলে আরো বৃষ্টিপাতের আশংকা করছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উজানে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে টানা বর্ষণে সিলেটের কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি বাড়তে থাকে। বর্তমানে দু’টি নদীর সবকটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকে জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। উজানে টানা বর্ষণ হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে এগোচ্ছে। সরেজমিনে ফেঞ্চুগঞ্জ গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের বেশিরভাগ জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের অধিকাংশ দোকানপাটে ওঠেছে পানি। ব্যবসায়ীরা মাচা বেঁধে দোকানের ভেতর মালপত্র রেখেছেন। বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কায় অনেকে মালপত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
বাজারের ব্যবসায়ী লিটন মিয়া জানান, প্রায় ২০ দিন ধরে তার দোকানে পানি জমে আছে। এছাড়া বাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট ও রাস্তা পানিতে ঢুবে যাওয়ায় ক্রেতারাও বাজারে আসতে পারছেন না। এতে তারা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদর সংলগ্ন পিটাইটিকর গ্রামের শফিকুর রহমান জানান, তিন সপ্তাহ ধরে গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও সরকারি ত্রাণ পৌঁছায়নি। এমনকি সরকারি কোন কর্মকর্তাও এই বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেননি। ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মুরাদ জানান, তার ইউনিয়নের বন্যার্তদের জন্য দুইটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রের বন্যার্তদের মাঝে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেন তিনি।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলা বন্যা কবলিত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বন্যার্তদের জন্য ১২৮ মেট্রিক টন চাল ও নগদ প্রায় ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও দুর্যোগ কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। বন্যার্তদের জন্য যে পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন সে পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হবে।
এদিকে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গতকাল রবিবার জেলা প্রশাসনের এক বৈঠক হয়েছে। সেখানে জানানো হয়, বন্যার কারণে জেলার ছয় উপজেলায় ১৬১ টি প্রাথমিক ও ১৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ি ঢল ও ফুলে ফেঁপে উঠা সুরমা-কুশিয়ারির পানিতে তলিয়ে গেছে তিন হাজার হেক্টর আউশ ধান। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত দুই লাখ মানুষ। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, কুশিয়ার নদী বিপৎসীমার ১৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। তবে বর্তমানে পানি বাড়ছেও না, কমছেও না। এপ্রিলে অতিবৃষ্টি আর বন্যায় হাওরে ফসলহানির পর আবার নতুন দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। আর প্রশাসন তাদেরকে দ্রæত সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতর রবিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা ও আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিলেটে আবারো দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘মৌসুমী বায়ু সক্রিয় তাই বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হবে।’
ওসমানীনগর-বালাগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ : ত্রাণের জন্য হাহাকার
এদিকে, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানি আর বৃষ্টির পানি মিলে দুই দফা সৃষ্টি হওয়া বন্যায় আক্রান্ত ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে লক্ষাধিক মানুষ এখন পানি বন্দি। অর্ধ মাস ধরে মানবেতর জীবন করছে পানি বন্দি মানুষ। ত্রাণের জন্য চলছে আহাকার। গতকাল রোববার পর্যন্ত বন্যার পানি বাড়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে নানান ধরণের রোগের।  আউস ধান ও ফিসারির মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সমস্যা দেখা দিয়েছে গোবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে।
জানা যায়, সুরমা নদীর উৎসমূখ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বরাকের ৮০ভাগ পানিই টানতে হচ্ছে কুশিয়ারা নদীকে। ১৫ দিন ধরে ভারতের বরাক উপত্যকায় ভারিবর্ষণ হচ্ছে। ওখানকার পাহাড়ি জনপদ মণিপুরসহ শত শত কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফুসে উঠেছে বরাক। আর বরাকের তীব্র ঢলে সিলেটের ৬ উপজেলার মত তলিয়ে গেছে ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের শতাধিক গ্রাম। এসব উপজেলার অর্ধেকের বেশি এলাকা কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও কোমরপানিতে নিমজ্জিত। কুশিয়ারা পাড়ের মানুষের মধ্যে রীতিমত চলছে হাহাকার। ঈদের দিনও পানি বন্দি ছিল প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ। সরকারীভাবে ত্রাণ বিতরণ চললেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে সচেতন মহল মনে করছেন। অনাহারে অর্ধহারে থাকা মানুষ পথ চেয়ে আছে ত্রাণের আশায়। ২৩জুন থেকে বৃষ্টির পানি আর বরাকের ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় ওসমানীনগর ও বালাগগঞ্জ উপজেলা। দুই উপজেলার কুশিয়ারা ডাইক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়ে পড়ে গ্রামের পর গ্রাম। বন্যা কবলিত এলাকার লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি।
কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী সাদীপুর শতভাগ, পশ্চিম পৈলনপুর, বুরুঙ্গা, উমরপুর ও উছমানপুর ইউনিয়নের বেশীর ভাগ অঞ্চল ও গোয়ালাবাজার, তাজপুর ও দয়ামীর ইউনিয়নের কিছু এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। তবে উপজেলার কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, সাদিপুর ইউনিয়নে ১হাজার ৭শ ৮০ পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয়দের ও জনপ্রতিনিধিদের মতে এ সংখ্যা সঠিক নয়। বন্যায় আক্রান্ত তিনগুন মানুষ। বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ৫শ’ ৫ হেক্টর আউস ধান বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বাকিগুলোর গলায় গলায় পানি।
এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ডায়রিয়া, পানি বাহিত চর্ম রোগ ও ভাইরাস জ্বরের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে। শিশু বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন সরকারি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো ও প্রাইভেট চিকিৎসকের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে রোগীরা ভিড় করছেন।
বন্যা দুর্গত এলাকার সার্বক্ষনিক খবরাখবর রাখতে ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএনও’র কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে (কন্ট্রোল রুম) খোলা হয়েছে। দূর্গত এলাকা থেকে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ ও বিভিন্ন তথ্য প্রদানের জন্য সর্ব সাধারণের জন্য একটি জরুরী মোবাইল নম্বার (০১৯২৯৩৩৬৬২৯) চালু করা হয়েছে।
উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার শতভাগ বন্যা কবলিত সাদীপুর ইউনিয়নসহ বন্যা কবলিত ইউনিয়ন গুলোর বেশীর ভাগ গভীর নলকুপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে বন্যার পানি পান করে শিশু বৃদ্ধসহ অনেকেই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে ভাইরাস জ্বর, সর্দি কাশি, চর্ম রোগসহ বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সাদীপুর ইউপির গজিয়া গ্রামের বাসিন্দা আলী হোসেন রানা বলেন, বন্যার কারণে বাড়িঘর ও নলকুপ পানিতে ডুবে যাওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। আমার ছেলে ইয়ামিনও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিল। তাকে দুদিন হাসপাতালে রাখতে হয়েছে।
বুরুঙ্গা সরকারী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারী চিকিৎসক সাফায়াত হোসেন বলেন, বন্যার পর থেকে ভাইরাস জ্বর, সর্দি কাশি ও চর্ম রোগ নিয়ে প্রতিদিন অনেকেই আসছেন চিকিৎসা কেন্দ্রে। গোয়ালাবাজারের চিকিৎসক ইকবাল মাসুদ বলেন, প্রতিদিন আমি যত রোগী দেখি এর মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগই ডাইরিয়া সর্দি কাশি জ্বরসহ বিভিন্ন ভাইরাস রোগে আক্রান্ত। দিন দিন এর তীব্রতা বাড়ছে।
ওসমানীনগর উপজেলা কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, বন্যা কবলিত অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে টিম গঠন করতে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে এবং তারা কাজ শুরু করেছেন। ওসমানীনগরের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোকে সক্রিয় রাখা হয়েছে।
ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যা দূর্গত মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলায় প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার পরিবারকে ৩ মাস ৮ দিনের জন্য প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫শ টাকা করে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উপজেলার প্রায় ২ হাজার পরিবারকে ঈদের ভিজিএফ কার্ড বিতরণ করা হয়। ৬শ’ বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে ঈদের আগে ভিজিএফ (ত্রাণ) বিতরণ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার ৩শ’ পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপজেলার শতাধিক দুস্থদের মাঝে জনপ্রতি নগদ ১ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান, ঈদের আগের দিন ২শ’ পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ঈদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়। সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে গত ২৯ জুন ওসমানীনগর উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য  আরো ৮ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।  এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত তা বিতরণ করা হয়নি।
বালাগঞ্জ উপজেলা সুত্রে জানা যায়, কুশিয়ারার ডাইক ডুবে গিয়ে বন্যার পানিতে ৫হাজার পরিবার আক্রান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সংখ্যা হচ্ছে ১৫শ’ পরিবার। সর্বশেষ শেষ ১২ মেট্রিক টন চাল ও ২১হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার বিতরণ শুরু করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি এবং ত্রাণ অপ্রতুল।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বন্যা কবলিত এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি। আমাদের উপজেলা হাসপাতাল না থাকায় চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে টিম গঠন করতে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। ওসমানীনগরের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোকে সক্রিয় রাখা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। পানি গতকাল রোববার বাড়েনি। তবে যে পানি ডুকেছে তা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আটকে আছে। বৃষ্টির না হলে কমার সম্ভাবনা নেই। আজ সোমবার জরুরি ভিত্তিতি উপজেলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার আহবান করা হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা প্রদিপ সিংহ বলেন, আক্রান্ত পরিবারগুলোতে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। একটি কেন্দ্রে ৮ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। কুশিয়ারার ডাইক বন্যার পানিতে ডুবে গ্রামগুলো আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার পানি কমেনি।
মৌলভীবাজার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : ১৮৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দ্দিষ্টকালের বন্ধ
অন্যদিকে, মৌলভীবাজার জেলায় তৃতীয় দফা বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি দীর্ঘ স্থায়ী রুপ নিয়েছে। গত ২দিন উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও জেলা সদরের সাথে বড়লেখা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলায় মোট ১৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনির্দ্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত খোলা হয়েছে ২৯টি বন্যা কবলিত মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র। অপর দিকে নতুনকরে রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুড়া, নাজিরাবাদ ও গিয়াসনগর ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সব এলাকার রাস্তাঘাট সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। রমজান ও ঈদের টানা ছুটির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও শিক্ষার্থীরা যেতে পারেনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল আলিম জানান, জেলায় মোট ১৪২টি প্রাথমিক স্কুল বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনির্দ্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অপর দিকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, হাওর পাড়ের মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে এবং তলিয়ে যাওয়ায় জেলায় ৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। পানি কমলে এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম আবার শুরু হবে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেকারণে হাকালুকি হাওরের পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হতে না পেরে উজানে বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মার্চ ও এপ্রিলের বন্যার পর এটি মৌলভীবাজারে ৩য় দফা দীর্ঘস্থায়ী বন্যা।
এদিকে স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাওর, নদী, খাল-বিল ও জলাধারগুলো ভরাট ও দখল হয়ে যাও্য়ায় পানি ধারণ ও প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বন্যা এমন রূপ নিয়েছে।  জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় সর্বশেষ ২৯৪ মেট্রিকটন জিআর চাউল ও নগদ ১০ লক্ষ টাকা এবং ৫৯ হাজার ২০০ ভিজিএফ কার্ডের অনূকূলে ১০ কেজি করে চাউল বিতরণ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে তিন ধাপে ৬৫০ মেট্রিকটন চাল, ৩০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ছাড়াও তিনমাসের জন্য ৫ হাজার ভিজিএফ কার্ডের অনুকূলে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল এবং ৫০০ টাকা করে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম গতকাল রোববার কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিল জিআর চাউল, জিআর ক্যাশ ছাড়াও ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেন। খাবারের মধ্যে  রয়েছে চিড়া, চিনি, টোস্ট বিস্কুট ও মুড়ি। অপরদিকে রোববার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামীলীগের একটি টিম। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের নেতৃত্বে এ টিমে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সমপাদক এসএম জাকির হোসাইন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, হুইপ মোঃ শাহাব উদ্দিন, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুল শহীদ এমপি, সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, আব্দুল মতিন এমপি, মৌলভীবাজারের পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, জেলা যুবলীগ সভাপতি নাহিদ আহমদ প্রমুখ। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ