পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রংপুর স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা শনিবার রাত ৮টায়। সেই ট্রেন ছেড়েছে পরদিন রোববার সকাল ৬টা ৫২ মিনিটে। ঢাকায় পৌঁছতে গিয়ে ট্রেনটি ১৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট বিলম্ব। রংপুর এক্সপ্রেসের গন্তব্যে পৌঁছার সময়ের কাছে হার মানতে বসেছে রেলের এক সময়ের বহুল প্রচলিত প্রবচন ‘৯ টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে’। ৯টার ট্রেন ১০টায় ছাড়তে পারে, ১১ টায় ছাড়তে পারে। রাত শেষে সকাল ৭টায় ছাড়বে কেন? ঈদ শেষে এই ট্রেনের ঢাকামুখি যাত্রীদের কি অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। কেনো এমন বেহাল অবস্থায় পড়েছে উত্তরের একমাত্র বিলাসবহুল আন্ত:নগর ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেস? এ প্রশ্ন হাজার হাজার যাত্রীসহ উত্তরবঙ্গবাসীর। ঈদের আগে থেকে শুরু হওয়া বিলম্বের কলঙ্ক আর কাটিয়ে উঠতে পারছে না ট্রেনটি। এতে করে ঈদে ঢাকামুখি যাত্রীদেরকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছে ট্রেনের রানিং স্টাফরাও। একই সাথে উত্তরের আরও একটি ট্রেন লালমনি এক্সপ্রেসও বছরের পর বছর ধরে চলছে বিলম্বে। ভুক্তভোগিদের ভাষায়, লালমনি মানেই লাগামহীন বিলম্ব। এর কোনো বাছ-বিচার নেই। যেনো বিলম্বের জন্যই এই আন্ত:নগর ট্রেনের জন্ম। এ নিয়ে কারো যেনো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, সাদা রেকের ট্রেনে ইদানিং সমস্যা হচ্ছে। রেকের সমস্যার কারনে বার বার মার খাচ্ছে রংপুর এক্সপ্রেস। কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় তা ভেবে দেখা হচ্ছে জানিয়ে রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, আশা করছি শিগগিরি এর সমাধান হয়ে যাবে।
ঈদে রংপুর এক্সপ্রেসে বাড়ি গিয়েছিলেন একটি বিদেশি কোম্পানীতে কর্মরত প্রকৌশলী সারোয়ার মোর্শেদ। ২৩ জুন ভোরে কমলাপুর স্টেশনে উপস্থিত হয়েছিলেন যাতে ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠতে পারেন। কিন্তু সকাল ৯টার ট্রেন সেদিন ১১টা ২০ মিনিটে ছেড়েছে। চার ঘণ্টারও বেশি সময় কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষার পর ট্রেন ছাড়ার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে আবার ঘটে বিপত্তি। একটি কোচের ভ্যাকুয়াম পাইপ ফেটে যাওয়ায় আরও প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরি হয়। সব মিলে বগুড়া পর্যন্ত পৌঁছতে ৬ ঘণ্টা বিলম্ব। সারোয়ার বলেন, আমাদের ফেরার কথা ছিল শনিবার। বগুড়াতে ট্রেন আসার কথা ওই দিন রাত ১১টায়। সে হিসাবে প্রস্তুতি নিয়ে স্টেশনে এসে শুনি ট্রেন আসতে সকাল ১০টা বাজবে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে এতো কষ্ট করে, যুদ্ধ করে টিকিট কেটে কি লাভ হলো? তিনি বলেন, এটা টাকা দিয়ে বিপদ কেনার মতো অবস্থা। তিনি জানান, ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় বিলম্বে চলা এই ট্রেনের এসি কোচে (নং ৬৫১৯) একশ’/দুশ’ টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়েছে। যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করার পর নাটোর স্টেশনের পর একবার বিনাটিকিটের যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর আবারও যাত্রী তোলা অব্যাহত থাকে। এভাবে বিনা টিকিটের যাত্রী উঠতে উঠতে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছিল। বাথরুমে যাওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। ওই যাত্রী বলেন, আমরা টাকা খরচ করে কতো কষ্ট করে টিকিট কেটে এভাবে যন্ত্রণা ভোগ করবো কেনো? এর কি কোনো জবাবদিহিতা নাই? এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব মহাব্যবস্থাপকের (পশ্চিম)। তার সাথে কথা বলেন। পরে মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) কে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
রংপুর এক্সপ্রেস চলাচলের সময় নিয়ে বেহাল দশা সেই ঈদের আগে থেকে। রেল কর্মচারীদের অভিযোগ, এই ট্রেনের রেক নিয়ে বরাবরই অবহেলা করা হয়। ঢাকার ক্যারেজ বিভাগ এই ট্রেনের রেকগুলো সময়মতো মেরামত করে না। কোচগুলো ঢাকার ওয়াশপিটে নিয়ে ঠিকমতো পরিস্কারও করা হয় না। কোচের ভ্যাকুয়াম পাইপগুলো পুরাতন,অকেজো হওয়ার পরেও সেগুলো পরিবর্তন না করে জোড়াতালি দিয়ে চালানোর চেষ্টায় বার বার এগুলো ফেটে ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়। আবার সঠিক সময়ে ট্রেনটি চলাচলের ক্ষেত্রে বরাবরই বাধার সৃষ্টি করে পাকশি কন্ট্রোল। তারা ইচ্ছা করে ট্রেনটিকে মার খাইয়ে দেয় বলে ট্রেনের রানিং স্টাফদের অভিযোগ। উদাহরণ হিসাবে একজন বলেন, গত শনিবার ৮ ঘণ্টা বিলম্বে ঢাকার দিকে আসার সময় ট্রেনটিকে আব্দুলপুর স্টেশনে ১৫ মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখে সিল্কসিটিকে পাস করানো হয়। সিল্কসিটি বঙ্গবন্ধু পশ্চিম সেতুর আগে আরও চারটি স্টেশনে দাঁড়াবে। অথচ রংপুর এক্সপ্রেস একটিতেও দাঁড়াবে না। সেক্ষেত্রে পুরো পথই সিল্কসিটিকে সামনে রেখে রংপুর এক্সপ্রেসকে বিভিন্ন স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত সময়ের কাছে হার মানানো হয় ট্রেনটিকে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে যাত্রীদের উপর। ভুক্তভোগিদের মতে, একটানা চলার কারনে ট্রেনটির রেকগুলো বিশ্রাম না পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য এই ট্রেনের রেক পরিবর্তন করা দরকার। অনেকে মনে করনে, আরও উন্নত রেক না দিলে রংপুর এক্সপ্রেস এভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বেশিদিন চলতে পারবে না।
অন্যদিকে, লালমনি এক্সপ্রেসেরও বেহাল অবস্থা। ঈদের আগে এই ট্রেন ১৮ ঘণ্টাও বিলম্ব হয়েছে। যার খবর কেউ রাখেনি। লালমনি এক্সপ্রেসের রেক এক জোড়া করার পরেও সময়মতো ট্রেনটি চলতে পারছে না। এ পেছনে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ঠ অবহেলা আছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগিরা। আবার বেশিরভাগ সময় ট্রেনটিতে ফ্রেশ লোকো দেয়া হয় না। যার কারনে ট্রেনটি নির্ধারিত গতিতে চলতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।