Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে প্রাণ দিলেন শিক্ষক

প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেনের সমবেদনা, শোকবার্তায় ভরে গেছে টুইটার

প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর সময় শিক্ষার্থীদের বাঁচিয়ে গুলিতে প্রাণ দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ হামিদ হুসেন। জঙ্গিদের দিকে বন্দুক তাক করে গুলি চালাচ্ছিলেন ৩৪ বছর বয়সী যুবক। চিৎকার করে ঘরের ভিতরেই থাকার নির্দেশ দিচ্ছিলেন শিক্ষার্থীদের। একটু আগেই বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়েছে চার জঙ্গি। বন্দুক তাক করে তখন ছুটে আসছে তাদেরই দিকে। কিন্তু ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসা গুলির সামনে বেশি ক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের চোখের সামনেই গুলিতে লুটিয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক সৈয়দ হামিদ হুসেন। অনেক শিক্ষার্থী মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এলেও প্রিয় শিক্ষককে হারিয়ে শোকের ছায়া পড়ুয়াদের মধ্যে। হুসেন ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্ববান মানুষ। তার মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছেন পাক প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেন। বিভিন্ন মহল থেকে আসা শোকবার্তায় ভরে গেছে টুইটার।
গত বুধবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, পেশোয়ারের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা-জঙ্গির ছয় ঘণ্টার লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, স্যার না থাকলে এই সংখ্যাটা আরও বেশি বাড়তো। বন্দুক হাতে যখন হামিদ জঙ্গিদের মুখোমুখি, তখনই কোন মতে পিছনের দেওয়াল টপকে প্রাণে বাঁচিয়ে দেন শিক্ষার্থীদের। যদিও নিজে বাঁচতে পারেননি। এক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সাড়ে নয়টা নাগাদ গুলির আওয়াজ কানে আসে তাদের। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তখন একে একে জড়ো হচ্ছিলেন ছাত্র-শিক্ষকরা। বাচা খানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত কবিতার অনুষ্ঠান। কিন্তু ছন্দ কাটে গুলির শব্দে। এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘আল্লাহ মহান’ চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছিল জঙ্গিরা। আমাদের বিভাগে পৌঁছনোর সিঁড়ির দিকেই এগিয়ে আসছিল। জঙ্গিদের দেখে আতঙ্কে ক্লাসের জানলা দিয়ে নীচে ঝাঁপ মারে এক বন্ধু। আমরা আর ওকে উঠে দাঁড়াতে দেখিনি। ততক্ষণে বিপদ টের পেয়ে গিয়েছেন হুসেনও। বার করে ফেলেছেন নিজের আগ্নেয়াস্ত্র। ভূ-তত্ত্ববিদ জাহুর আহমেদ বলেন, ‘উনি বন্দুক হাতে নিয়ে এগিয়ে যান। জঙ্গিরাও তেড়ে আসে ওর দিকে। আমি ছুটে একটা ক্লাসের ভিতরে ঢুকে যাই। এর পর কোন মতে নীচে নেমে পিছনের দেওয়াল টপকে পালাই। ক্লাস বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী অনেকেই ছিলেন হোস্টেলে। জঙ্গিরা তাই চড়াও হয় মূলত সেখানেই। তখন সেখানে হাজির ছিলেন সমাজতত্ত্বের ছাত্র মহম্মদ দাউদ। চোখের সামনে হামিদকে লুটিয়ে পড়তে দেখেন তিনি। জঙ্গিরা সরাসরি গুলি চালায় স্যারের দিকে, তখনও আতঙ্ক দাউদের গলায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে পেশোয়ারের সেনা স্কুলে জঙ্গি হানার পর থেকে স্কুল-কলেজের ভিতরেও শিক্ষকদের আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে খাইবার পাখতুনখোওয়া প্রদেশে। কিন্তু তালিবানের একে-৪৭-এর সঙ্গে এটে উঠতে পারেনি সেই অস্ত্র। প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী জানান, হামলাকারীদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে। তার বর্ণনায় আমাদেরই মতো বয়স হবে ওদের। হাতে একে ৪৭।
গায়ে সাধারণ পোশাক। ওই ছাত্র জানান, ক্লাস না থাকায় হস্টেলে ছিলেন তারা। ঘরের ভিতর থেকেই বাইরে চলা গুলির আওয়াজ কানে আসছিল তাদের। গুলি থামার পর সেনারা ঘরে কড়া নেড়ে জানিয়ে দেয় আমরা নিরাপদ। তবে হামলা হয়েছে টের পাওয়া মাত্রই পাঁচিল টপকে পালাতে পেরেছিলেন কয়েক জন। পালানোর আগে দেখে এসেছিলেন হাড় হিম করা দৃশ্য। তখন ভয়াবহ লড়াই চলছে ভিতরে। এক জঙ্গি উঠে পড়েছে ছাদে, অন্য জন পাঁচিলের কাছে। বাকি দু’জন জড়ো হয়েছে এক কোনায়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ভিতরে ঢুকে দু’টো দলে ভাগ হয়ে যায় জঙ্গিরা।  রয়টার্স, টাইমস অব ইন্ডিয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে প্রাণ দিলেন শিক্ষক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ