পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : চলমান উপসাগরীয় কূটনৈতিক সঙ্কটে পুরানো জোট এবং অংশীদারিত্বকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে। যদিও নতুন জোটেরও প্রকাশ ঘটছে। গত ৫ জুন সউদী আরব, মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পর বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধের তীব্র নিন্দা জানায় তুরস্ক। দেশটির সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় তুরস্ক বিমানযোগে খাদ্যদ্রব্য পাঠায় এবং কাতারের মাটিতে তুর্কি সৈন্যবাহিনী মোতায়েনের জন্য পার্লামেন্টের মাধ্যমে দ্রুত আইন পাস করা হয়। ৭ জুন তুরস্কের পার্লামেন্ট দু’টি বিল অনুমোদন করে। একটি কাতারে তুর্কি সৈন্যবাহিনী মোতায়েনের অনুমতি দেয়া হয় এবং অন্যটিতে সামরিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতার জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিকে অনুমোদন করা হয়। এরপর কয়েকদিন আগে আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন জাস্টিজ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টি’র সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেন, কাতারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গুরুতর ভুল করা হচ্ছে। সব দিকে থেকে একটি দেশকে বিছিন্ন করা অমানবিক এবং ইসলামি মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে কাতারের জন্য মৃত্যুদন্ডের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কাতার ও তার প্রতিবেশিদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার আগেই এই উভয় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল এবং পার্লামেন্টের একটি বিশেষ সেশনে একে পার্টির এমপিরা এই বিল উত্থাপন করেন। আল জাজিরার বিশ্লেষণধর্মী এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ হিসেবে তুরস্ক দেশটিতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করছে; যেটি মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের প্রথম তুরস্কের সামরিক স্থাপনা। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে কাতারে। আল-উয়েদীদ নামের ওই ঘাঁটিতে প্রায় ১০,০০০ সামরিক বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। দোহা এবং ইস্তাম্বুলের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৪ সালের শেষের দিকে। ওই সময় উভয় দেশ তাদের সাধারণ শত্রæ’র মোকাবেলায় সাহায্য করার জন্য চুক্তিটি স্বাক্ষর করে। উভয় দেশই মিশরীয় বিদ্রোহে তাদের সমর্থন প্রদান করেছে এবং দেশটির সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। ওই সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির বর্তমান নেতা আব্দেল আল ফাত্তাহ সিসি ক্ষমতা দখল করেন। তারা উভয়ে মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারকে উৎখাতের জন্য লড়াইরত বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়। কাতারে তুর্কি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমোদন ছাড়াও এই ঘাঁটিকে প্রাথমিকভাবে যৌথ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়। এই চুক্তি তুরস্কের মাটিতে অনুরূপ সামরিক সুবিধার বিকল্প প্রদান করেছিল কাতারকে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে কাতারে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত আহমেদ ডেমিরক রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, সামরিক ঘাঁটিটিতে বিমান ও নৌবাহিনী, সামরিক প্রশিক্ষক এবং বিশেষ অপারেশন বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি ৩,০০০ তুর্কি সেনা সদস্যকে মোতায়েন করা হবে। তারপর ২০১৬ সালে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগøু ঘাঁটিটি পরিদর্শনে যান। ওই সময় ঘাঁটিটিতে ২০০ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য অবস্থান করছিলেন বলে তুর্কি দৈনিক হুরিয়াতের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। দৈনিকটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫,০০০ সৈন্যের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ঘাঁটিটিতে তখন ২০০ জন সদস্য মোতায়েন ছিল। কিন্তু এটি ঠিক কবে নাগাদ উল্লেখিত সদস্যদের মোতায়েন সম্পন্ন করা হবে তা এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এ অঞ্চলে মার্কিন আগ্রহে ভাটা পড়ার পাক্কালে ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মুখে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছিল। তবে কাতার ও তার প্রতিবেশিদের মধ্যে সা¤প্রতিক বিতর্কের মধ্যে তুরস্কের জড়িত হয়ে পড়ায় আঞ্চলিক বিষয়গুলোর প্রতি দেশটির প্রাতিষ্ঠানিক সফট পাওয়ার বা কোমল শক্তির নীতি থেকে সরে আসার সর্বশেষ প্রদর্শন। এ ঘটনা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে তুরস্ককে একটি শক্তিশালী প্লেয়ার হিসেবে প্রসারিত করার আভাস দিচ্ছে। উপরন্তু, ন্যাটোর কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুরস্কের বিরোধ আঙ্কারাকে নতুন অংশীদারিত্ব গ্রহণের জন্য অনুপ্রেরণা দিচ্ছে এবং তার ঐতিহ্যগত পশ্চিমা মিত্রদের উপর দেশটির নির্ভরতা রুখতে তার জোটকে বৈচিত্র্য করতে প্ররোচিত করছে। তুরস্ক ইতোমধ্যেই আফগানিস্তান, ইরাক, বসনিয়া ও কসোভোতে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। এসব দেশে তুরস্ক শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবিক বা অন্যান্য মিশন বাস্তবায়ন করছে। উপরন্তু, চলতি বছরেই তুরস্ক সোমালিয়ার মোগাদিসুতে একটি সামরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করতে যাচ্ছে। যেটি তার বৃহত্তম বিদেশি সুবিধা পাবে বলে বলা হচ্ছে। জঙ্গিগোষ্ঠী আল শাবাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সোমালি সৈন্যদের প্রশিক্ষণের জন্য এই ক্যাম্প ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি এটি উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক বাহিনীকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে। এখানে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি ও কুর্দি বিদ্রোহীদের (ওয়াইপিজি) সঙ্গে তুর্কি বাহিনী লড়াই করছে। এছাড়াও দেশটির সামরিক বাহিনী উত্তর ইরাকে ও মসুলে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। খুব স¤প্রতি দেশটি সউদী আরবে একটি সামরিক বেস নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সউদী আরব তাদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। আরব ও আফ্রিকাজুড়ে তুরস্কের সামরিক উপস্থিতি প্রসারিত করার মতোই কাতারের সঙ্গে গভীরতর কৌশলগত মিত্রতা দেশটির বৈদেশিক নীতিসমূহের আকাক্সক্ষাকে পূরণ করছে এবং দেশটির ৮৫৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে উন্নত করছে। তুরস্কের একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কাসাপোগøু বলেন, কাতারের সামরিক ঘাঁটি স্থাপন তুরস্কের জন্য ক্ষমতা প্রদর্শনের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।