Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেষ সময়টুকু কাজে লাগাই

আসুন

প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৭, ১১:৪৭ পিএম | আপডেট : ৩:৪৬ পিএম, ২৪ জুন, ২০১৭

উবায়দুর রহমান খান নদভী : এক চাকরিজীবী অফিস থেকে একসাথে বেশ কিছু বকেয়া টাকা পান। কী করবেন ভেবে পরামর্শ চান তার এক বন্ধুর কাছে। বন্ধু বলেন, এ টাকার একভাগ নিজের জন্য রেখে আরেক অংশ লাভজনক স্থানে নিরাপদ বিনিয়োগ কর। ভাটি এলাকার হাওরের মানুষ খুব কষ্টে আছে, তাদের চাল, ডাল, তেল, নুন, কিনে দাও। চাকরিজীবী লোকটি প্রাপ্ত টাকার বড় একটি অংশ দিয়ে এ ব্যবসাই করেছেন। অসহায় বিপন্ন মানুষের মুখে হাসি দেখে, তাদের চোখে মুখে কৃতজ্ঞার ছাপ দেখে তার মন তৃপ্ত। এ দুনিয়ার এর চেয়ে বড় লাভজনক আর কোন বিনিয়োগ হতে পারে না। সরকারি চাকরি করেন এক ভদ্রলোক এবার নিজ এলাকার ফসলহারা মানুষকে ইফতার করিয়েছেন। ইফতার সাহরি করিয়েছেন। ঈদের বাজার করে দিচ্ছেন। পরিচিতদের মাঝে অনেকেই এবার রমজানের দান-সদকা পার্বত্য অঞ্চলে বিলির চেষ্টা নিয়েছে। কারণ ইসলামে বিপন্ন মানুষের সেবা করা অন্য যে কোন নফল ইবাদতের চেয়ে বহুগুণ বেশি প্রশংসিত। এক বুজুর্গ বলেছেন, অভাব ও দুর্ভিক্ষের দিনে নিরন্ন মানুষকে খেতে দেয়া হজ্জ ওমরা পালন ও মসজিদ নির্মাণের চেয়েও বেশি সওয়াবের কাজ।
আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। কিন্তু বড়লোকেরা দান-খয়রাত যেন ভুলেই গেছে। দেশে বন্যার, অকাল বর্ষণ, ফসল হানি, পাহাড়ধস কতকিছু ঘটছে কিন্তু মানুষের সহায়তা করার কোন প্রবতণা দেখা যাচ্ছে না। থাকার মধ্যে রয়েছে সরকারি ও অন্যান্য দলের দোষারোপ ও হানাহানির আলোচনা। মিডিয়া হাওর অঞ্চল, উত্তরাঞ্চল, পার্বত্যঞ্চলের দুঃখী মানুষের নিউজ খুব কমই পরিবেশন করছে। নীরবে মানুষ কষ্ট করছে। সাহায্য ও ত্রাণের কোন অভিযান চোখে পড়ছে না। অনেক বিত্তশালীকেও জনগণের প্রতি দায়িত্ব তুলে রেখে চলে গেছেন ওমরা পালনে। টাকার জোরে প্রতিবছর তারা ভিআইপি ব্যবস্থায় ওমরা পালন করেন। যাকাত দেন কিনা বোঝা যায় না। জাকাত ছাড়াও অসহায় মানুষের প্রতি তাদের যে হক আছে তা আদায় করেন বলে জানা যায় না। বিত্তবানদের এমন অসম আচরণ ইসলাম সমর্থন করে না। সব ইবাদত সুষমভাবে করাই ইসলামের শিক্ষা। পবিত্র রমজান বিদায় হয়ে যাচ্ছে।
রোববার চাঁদ দেখা গেলে সোমবার ঈদুল ফিতর। অবস্থাভেদে সময় আছে ২৪ কিংবা ৪৮ ঘণ্টা। পবিত্র রমজানের মহাসৌভাগ্যের দিনগুলো ফুরিয়ে গেল। একটি ফরজ আদায় করলে যখন ৭০টি ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। নফল ইবাদতের সওয়াব হয়ে যায় ফরজের সমান। তারাবী, কিয়ামুল্লাইল ও তিলাওয়াতের এখন শেষ সময়। ফিতরা দেওয়া ঠিক সময় এখনই। ঈদের জামাতে যাওয়ার আগে ফিতরা প্রাপকের অবশ্যই হাতে পৌঁছে দিতে হবে। এবারের ফিতরা জনপ্রতি ৬০ থেকে ১৬০০ টাকা। রমজান দান-সদাকা ও যাকাতের সুন্দর মওসুম। যাকাত এমন এক ইবাদত, যা মানুষের জান-মাল ও ইজ্জতের হেফাজত করে। সম্পদকে পবিত্র এবং দীর্ঘস্থায়ী করে। যাকাত না দিলে সে সম্পদকেই সাপ বিচ্ছুতে রূপান্তরিত করে। পরকালে ওই ব্যক্তিকে আজাব দেয়া হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, যাকাত যারা দেয়নি তাদের অর্থ সম্পদ, সোনা রূপা দিয়ে অস্ত্র তৈরি করা হবে। সেসব আগুনে স্মরণ করে তাদের চেহারা, কপাল, বাহু, পিঠ ও পার্শ্বদেশে ছ্যাঁকা দেয়া হবে। বলা হবে, স্বাদ গ্রহণ কর যা তোমরা জমা করে রাখতে। (আল-কোরআন)।    
আল্লাহর দেয়া অর্থ সম্পদ নিজের মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা মানুষের হাতে একবছর জমা থাকে তা থেকে শতকরা ২.৫ ভাগ যাকাত দেয়া ফরজ। আমাদের দেশে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত দান-সদকা করে বেশি। মধ্যবিত্ত যাকাত দেয়। তবে যাকাত বা দান সদাকায় সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে এদেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণী। তাদের মধ্যে কিছু লোক দান-সদকা ও পরোপকারের জন্য সমাজে সুনান সুখ্যাতি লাভ করেন। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের নানা জায়গায় অতীতের যত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও পরিবার তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ছিল জনকল্যাণ পরোপকার তার দান-খয়রাত-সদাকা যাকাদের হাত। বর্তমানে এসব বিখ্যাত ব্যক্তি ও পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় মানুষের ধারণা বদলে যাচ্ছে। গত ত্রিশ বছরে দেশে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যাপক উত্থানে সামাজিক কাঠামোই অনেক পরিবর্তন আসে। দান-সদাকা ও যাকাতের প্রত্যাহেত্ত আসে নতুন গতি। কিন্তু যারা যাকাত দিলে বা সাধারণ দান করলে দেশের অবস্থা দ্রæত পাল্টে যেত সে নব্য বিত্তবানরা বা উচ্চবিত্তরা তেমন দানশীল না। চলতি রমজানে কিছু অনুসন্ধানী গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষ দান করছে প্রচুর। মধ্য আয়ের মানুষ যাকাত সদাকা দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগামী। কিন্তু বড় গাড়ি, বড় বাড়িওয়ালা বিত্তশালীরা কোন দানই করছে না। অল্পদিনের ব্যবধানে যারা বহু কোটি টাকার মালিক হয়েছেন কিংবা দীর্ঘদিন থেকেই যারা পয়সাওয়ালা তাদের মধ্যে আরো বড়লোক হওয়ার চিন্তাপ্রবল। নিজ অর্থসম্পদের যাকাত দেয়া বা মানুষের উপকার করার কোন ভাবনা তাদের নেই। এসব মানুষের জন্য এ বছরের পবিত্র রমজান শরীফের শেষ সময়টিতে এই আহŸান রেখে যেতে চাই যে, অমরা কেইই জানি না আগামী বছর আরেকটি রমজান আমরা পাব কি-না। তবে, এ কথা সত্য যে, হয়তো আমরা অর্থসম্পদ রেখে চলে যাব। নয়তো অর্থসম্পদ আমাদের রেখে চলে যাবে। যে অর্থ সম্পদ আমাদের রয়েছে তার নির্দিষ্ট অংশ মানবতার সেবায় ব্যয় করা মানুষ হিসাবে আমাদের কর্তব্য। আসুন, যাকাত-সদাকা ও সহায়তা দিয়ে আমরা সম্পদের হক আদায় করি। এতে সম্পদ জানমাল ইজ্জর হেফাজতে থাকবে। পরকালেও আমরা আজাব থেকে রক্ষা পাব। রমজানে দান করলে ৭০ গুন সওয়াব পাওয়া যাবে। এ সময়ে প্রাপকের কাছে দান পৌঁছাতে না পারলেও শুধু নিয়তের দ্বারাই ৭০ গুণ সওয়াব পেয়ে যাব। পরে সুযোগ মত তাদের কাছে পৌঁছে দিলেই চলবে।
মানুষ কেন এমন লোভী ও কৃপণ হয়। আল্লাহ তাকে মেধা, স্বাস্থ্য, কৌশল, ভাগ্য সব দিয়ে অর্থসম্পদ অর্জনের সুযোগ দিলেন। আল্লাহর দেয়া সম্পদ যদি আল্লাহ সবটুকুই চেয়ে নিতেন, তাহলে বছর শেষে এর সবই দান করে দিতে হত। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ সম্পদের সুষম বণ্টনে জন্য যাকাতের বিধান ফরজ করছেন। মাত্র ৪০ ভাগের একভাগ বা শতকরা ২.৫ ভাগ টাকা অসহায় অভাবী মানুষকে দিতে বলেছেন। এতেই মানুষ অবাধ্য হয়ে যায়। আল্লাহ বিধান অমান্য করে। অকৃতজ্ঞ হয়। হালাল সম্পদকেও হারামের পর্যায়ে নেয় এবং দুনিয়ার অশান্তি আকৃষ্ট করে। শেষ পর্যন্ত, জাকাতের দায় মাথায় নিয়ে পরকালে গিয়েও কঠিন শাস্তি ভোগ করার সাহস করে। আল্লাহ সকলকে সুমতি দান করুন। পবিত্র রমজানের শেষ সময়টি কাজে লাগিয়ে আসুন দীন ও দনিয়ার কল্যাণ লাভে অগ্রসর হই। আল্লাহর দেয়া অর্থ সম্পদের জাকাত দিই। মানবতার প্রতি দায়িত্ব পালন করি। দুস্থ, অসহায়, ঋণগ্রস্থ, এতিম, বিধবা বেকারবন্দি ও স্বল্প আয়ের মানুষকে তাদের প্রয়োজন পূরণে সহায়তা দিয়ে ঐশী শান্তি ও অকল্পনীয় মানসিক তৃপ্তি লাভ করি।



 

Show all comments
  • তানবীর ২৪ জুন, ২০১৭, ৩:৫০ এএম says : 0
    উপদেশমুলক এই লেখাটির জন্য লেখক উবাদুর রহমান খান নদভী সাহেবকে মোবারকবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • আলফাজ ২৪ জুন, ২০১৭, ৩:৫২ এএম says : 0
    দৈনিক ইনকিলাবের কাছে আমরা প্রতিনিয়ত এই ধরনেরই লেখা প্রত্যাশা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Asadullah ghalib ২৪ জুন, ২০১৭, ৫:৩১ এএম says : 0
    Marvelous column, thanks writer ubaidur rahman khan nadvi, inqilab is a great news paper.
    Total Reply(0) Reply
  • Nitish K. Drong ২৪ জুন, ২০১৭, ৬:২৬ পিএম says : 0
    Good article, with Al-Qurran er quotations but should have given the ayats (verses) also. Everybody should read this article.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাজ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ