চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির : ইসলামে স্বীকৃত বরকতময় ও মহিমান্বিত যে সব দিবস ও রজনী রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর। কদরের এক অর্থ মাহাত্ম বা সম্মান। অন্যান্য রাতের তুলনায় এ রাত মহিমান্বিত হওয়ার কারণ এটাকে লাইলাতুল কদর তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন সেটা মহিমান্বিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব এবং যে নবীর উপর অবতীর্ণ, তিনিও মহিমান্বিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং যে উম্মতের জন্য অবতীর্ণ করেছেন, তারা মহিমান্বিত ও সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। সর্বোপরি আমল না করার কারণে যার সম্মান ও মূল্য ছিলনা সেও এরাতে তওবা ইস্তিগফার ও বন্দীগির মাধ্যমে মহিমান্বিত হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আমি কদরের রজনীতে কোরআন নাজিল করেছি। আপনি জানেন কি? কদরের রজনী কি? কদরের রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম! সে রাতে ফেরেশতাগণ অবতীর্ণ হন, জিব্রাঈল (আ:) সহ তাদের রবের নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে সব বিষয়ে শান্তির ফায়সালা নিয়ে ; তা উষার উদয় পর্যন্ত”। সূরা-কদর, আয়াত ১-৫। সূরা কদরের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘নিশ্চয়ই আমি কদর রাতে কোরআন নাযিল করেছি’’। এ আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায়, শবে কদরে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এরপর হযরত জিব্রাঈল (আ:) এর মাধ্যমে দীর্ঘ ২৩ বছরে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছান। এ কথাও বলা যায়, অবশিষ্ট কোরআন পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে অবতীর্ন হয়। শবে ক্বদরের এবাদত হাজার মাসের এবাদতের চেয়ে উত্তম। এ রাতে অগণিত ফেরেশতাসহ হযরত জিব্রাঈল (আ:) দুনিয়ায় অবতীর্ণ হন এবং ফেরেশতারা দুনিয়ার সমস্ত অংশে ছড়িয়ে পড়েন। প্রত্যেক স্থানে স্থানে রুকু-সিজদা করেন। মুমিন নর-নারীর জন্য দোয়ায় মশগুল হন (তাফসীরে ইবনে কাসির)। এ মহান রজনীতে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য গুনাহগারকে মাফ করেন, তওবা কবুল করেন। এ রাতে মাতা-পিতা ও আত্মীয় স্বজনদের রূহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে তাদের কবর জিয়ারত ও তাদের জন্য দোয়া করলে আল্লাহপাক কবুল করেন। পবিত্র কোরআন শরীফে লাইলাতুল ক্বদরের ফজিলত সম্পর্কিত একটি পরিপুর্ণ সূরা রয়েছে। সুরা ক্বদরে এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আমি সেটা ক্বদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি এবং আপনি কি জানেন ক্বদরের রাত কি? ক্বদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম’। এই মহিমাম্বিত রজনীকে লাইলাতুল ক্বদর নামে অভিহিত করার তাৎপর্য কি? এ সম্পর্কে তাফসীর ছাবীর চতুর্থ খন্ডে বর্ণিত আছে- আয় ইযহাব হাফী রাওয়ায়িনাল মালায়িল আলা। অর্থাৎ উর্ধ¦ জগতের ফেরেশতাদের দপ্তর প্রকাশিত হয়। পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য, রিযিক, জন্ম মৃত্যু ইত্যাদি কর্তব্যরত ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত হয়। লাইলাতুল ক্বদরের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। বুখারী শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ (ছগিরা) ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় লাইলাতুল ক্বদরের রাত জেগে ইবাদতে মশগুল থাকে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয় হয়। তবে কিছু মানুষের গুনাহ এ রাতে ক্ষমা করবেন না। ১. অনিষ্টকারী যাদুকর,গনক ২. মাতা পিতার অবাধ্য সন্তান ৩. ব্যভিচার ৪.আতœীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ৫. চোগলখোর ৬. যার অন্তর হিংসা বিদ্বেষ ও কৃপনতায় পরিপূর্ণ ৭. বান্দার হক আতœসাৎকারী।
লাইলাতুল ক্বদর কোন রাতে? এ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- তোমরা লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান কর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করতে চায়, সে যেন রমজান শরীফের শেষ দশকে অনুসন্ধান করে’। মোট কথা লাইলাতুল ক্বদর প্রাপ্তির লক্ষ্যে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত সমূহে ইবাদতে মশগুল থাকা বাঞ্চনীয়। শবে ক্বদরের আমলঃ হযরত সায়িদুনা ইসমাইল মক্কী (রাঃ) তাফসিরে রূহুল বয়ানে উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি শবে ক্বদরের বিশুদ্ধ অন্তকরণে নফল নামায পড়বে তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। এ রজনীতে নফল নামায যেভাবে ইচ্ছে পড়া যায়। তবে নুযহাতুল মাজালিস নামক কিতাবে এর নিয়ম দেয়া হয়েছে; এভাবে প্রতি রাকাতে সূরা তাকাছুর একবার এবং সূরা ইখলাস এগার বার করে পড়বে। তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার মৃত্যু সহজ করে দিবেন, কবরের আযাব থেকে নাজাত করবেন এবং নূরের এমন চারটি স্তম্ভ দান করবেন, যার প্রতিটি স্তম্ভে এক হাজার মহল থাকবে। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে শবে ক্বদরের সমূদয় ফজিলত এবং কল্যাণ লাভে ধন্য করুক। আমিন\
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।