Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাবা তুমি কি ঘুষ খাও?

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৭, ১১:১৭ পিএম


মালেক মল্লিক : বাবা তুমি কি ঘুষ খাও ? উত্তরে বাবা বললেন, ঘুষ খাব কেন, এটা কি খাওয়ার জিনিস? মেয়ে বলল, উত্তর হল না বাবা। তুমি ঘুষ খাও কি না সেটা জানতে চেয়েছি। তোমার বেতন কত বাবা? এই যে তুমি গাড়ি কিনছ, ফ্ল্যাট কিনছ, টাকা কোথায় পেলে? মায়ের এত গহনা কোথায় পেলে? লোকজন বাসায় মিষ্টি আনে, ফলমূল আনে, কি সব প্যাকেট আনে কেন এসব আনে বাবা?। জনৈক বাবা ও তার মেয়ের এমন সব কথোপকথনের একটি চিঠি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বরাবর পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ওই বাবার কোন ধরনের পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ঘৃণার বহি:প্রকাশ এইসব চিঠি। একই সঙ্গে সমাজের সর্বস্তরে মানুষের মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতি সচেতনতার চর্চা হচ্ছে বলে প্রতিয়মান হয়। চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতি তরুণেরা যে সচেতন চিঠিটি তারই একটি উজ্জল দৃস্টান্ত। দুর্নীতিকে ঘৃণা করেন শিশু থেকে শুরু করে সর্ব পর্যায়ের মানুষ। দুদক এ বিষয়ে সচেতনা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। দুদক সচিবের কাছে ওই বাবার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করবে কিনা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দুদক সুত্রে জানা যায়, সমাজের সর্বস্তরে দুনীর্তি বিশেষ করে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংক বীমা অর্থআত্মসাৎ ও অনিয়ম প্রতিরাধে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুনীর্তি প্রতিরাধসহ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে রাষ্ট্রের এক মাত্র দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠানটি। সমাজের সর্বস্তরে মানুষকে তথা শিশু থেকে শুরু করে তরুণদের মাঝে সচেতনা সৃষ্টির লক্ষে সারা দেশে ব্যানার, ফেস্টুন রচনা প্রতিযোগিতা উদ্যোগ নেয় দুদক। যে কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারেন। দুর্নীতি অমাজনীয় অপরাধ, অপরাধী হবেন না এমন ¯েøাগানে স্থাপনা করা হয়েছে অভিযোগ বাক্স্র। গত বছরে কমিশনে ১২ হাজার ৯৯০টি অভিযোগ আসে। ২০১৫ সালে অভিযোগ এসেছিল ১০ হাজার ৪১৫টি। গত বছর শতকরা ২৫  অভিযোগ বেশি এসেছে। এটা দুদকের প্রতি জনআস্থা বৃদ্ধি বলে কমিশন মনে করে। গত ১৫ জুন এক ব্যতিক্রম একটি চিঠি জমা পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাবা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কাছে একটি চিঠি লিখে তাতে তার ১২ বছরের মেয়ের করা একটি প্রশ্ন তুলে ধরেন।
চিঠিতে ওই বাবা লেখেন, আমার ১২ বছরের মেয়ে তনিমা একটি নাম করা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আমার সঙ্গে কথা বলতে খুব পছন্দ করে সে। তার নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। ফলে আমি যতক্ষণ বাসায় থাকি ওকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি। সে আমার নয়নের মনি। ওকে নিয়ে মাঝে মাঝে বাইরে বেড়াতে যাই। নামকরা রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া-দাওয়া করি। একবার তার মা এবং তাকে নিয়ে বিদেশেও ঘুরে আসি। একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরলে হঠাৎ তনিমা প্রশ্ন করে বসে, বাবা তুমি কি ঘুষ খাও?
নিজের মেয়ের কাছে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। কত পরীক্ষা দিয়েছি, কত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, এমন প্রশ্ন আমার সামনে আসেনি। আমার পরীক্ষার প্রশ্নের তুলনায় আমার মেয়ের প্রশ্নটি সহজ হলেও এর উত্তর অনেক কঠিন।
এ প্রশ্নের উত্তর কি দেব ভাবছি। বললাম, তুমি ছোট মানুষ। এ প্রশ্ন করছ কেন? ঘুষের তুমি কি বোঝ? এরই মধ্যে আমার স্ত্রী এসে হাজির।
তনিমাকে বললাম, তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবে তোমার মা। তনিমা বলছে, মা কেন উত্তর দেবে। আমি বললাম, ঘুষ খাব কেন, এটা কি খাওয়ার জিনিস? মেয়ে বলল, উত্তর হল না বাবা। তুমি ঘুষ খাও কি না সেটা জানতে চেয়েছি। সোজা প্রশ্ন।
এবার তনিমা প্রশ্ন করে বসে, তোমার বেতন কত বাবা? এই যে তুমি গাড়ি কিনছ, ফ্ল্যাট কিনছ, টাকা কোথায় পেলে? মায়ের এত গহনা কোথায় পেলে? লোকজন বাসায় মিষ্টি আনে, ফলমূল আনে, কি সব প্যাকেট আনে কেন এসব আনে বাবা? চিঠিতে ওই বাবা বলেন, মেয়ের এক প্রশ্নে আমি আজ জেগে উঠেছি। আমার মধ্যে অজানা আশঙ্কা ভর করেছে। আমি খুব উদ্বিগ্ন। যার জন্য এতকিছু করছি, সেই আজ প্রশ্ন তুলছে। বলছে চোর। সত্যিই আজ আমার নিজেকে চোর মনে হয়। যে পথে গিয়েছিলাম, সে পথ থেকে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করলাম। তনিমা আমার চোখ খুলে দিল। এখন আমি অফিস  শেষ করে মেয়েটার হাত ধরে বিকালে হাঁটি। নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করছি।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য ইনকিলাবকে বলেন, নাম গোপন রেখে একজন বাবা গত বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যানের স্যারের বরাবর চিঠিটি দিয়েছেন। এতে তার মেয়ে বাবার কাছে ঘুষ গ্রহণ করে কিনা জানতে চায়। তখন বাবার উত্তর দিতে বিভিন্ন অজুহাত খোঁজতে থাকেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘুষ

৩০ নভেম্বর, -০০০১
২ এপ্রিল, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ