Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৬টি খাতে বছরে ৮ হাজার ৮২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় : টিআইবি

প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পাসপোর্ট ও বিচারিকসহ অন্তত ১৬টি খাতের সেবা পেতে বছরে ৮ হাজার ৮২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে টিআইবির এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১৫’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। এ সংস্থাটির ওই প্রতিবেদনে সার্বিকভাবে বিভিন্ন সেবা খাতে ৬৭ দশমিক ৮ শতাংশ খানার সদস্যদের দুর্নীতির শিকার হওয়ার এবং ৫৮ দশমিক ১ শতাংশের ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়ার কথাও উঠে এসেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, সেবা খাতে ২০১৫ সালের জাতীয় প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ও জিডিপির শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১২ সালের সেবা খাতের দুর্নীতি জরিপের তুলনায় এবার ১ হাজার ৪৯৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ জরিপ ২০১২ সালের তুলনায় এবার মানুষের দুর্নীতির শিকারের হার প্রায় ১ শতাংশ ও ঘুষের শিকারের হার ৬ শতাংশ বেড়েছে। “সেবা খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও ঘুষের শিকার হতে হয় পাসপোর্ট খাতে। পাসপোর্ট সেবা নিতে ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার ও ৭৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষকে ঘুষ দিতে হয়। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে দুর্নীতির প্রকোপ বেশি ও ঘুষের শিকার হতে হয়ও বেশি,” বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
ইফতেখারুজ্জমান বলেন, খানা জরিপে উঠে এসেছে- ঘুষ না দিলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না ৭১ শতাংশ খানার সদস্য। তিনি বলেন, “দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা উদ্বেগজনক। দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়ার প্রবণতা থাকায় দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি, আগামীতে কার্যকর আরও উদ্যোগ নেয়া হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতি রোধে নিয়োগ, পদোন্নতি এবং বদলিতে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে সব খাতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের সুপারিশ করেন ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতির ব্যাপকতার উদ্বেগের অন্যতম কারণ হচ্ছে-মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে জড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতিবিহীন জীবন-যাপন যেন সম্ভব নয়। এটা নৈতিকতার ওপর বড় হামলা। “দেশের শীর্ষ পর্যায়ে যদি দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া না হয় এবং দুর্নীতিকে অস্বীকার বা লুকানোর চেষ্টা করা না হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতির চক্র থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারব।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৯৭ সাল থেকে টিআইবি এ পর্যন্ত সাতটি খানা জরিপ করেছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে এ জরিপ করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত সেবার ওপর ভিত্তি করে গত ১ নভেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবারের জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর আওতায় ১৫ হাজার ২০৬টি খানা ছিল, যা দেশের মোট খানার ২১০০ ভাগের এক ভাগ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মোট খানা ৩ কোটি ১৮ লাখ।
দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় গুরুত্ব ও প্রভাব বিবেচনায় ১৫টি প্রধান খাতকে জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ছিল স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, ভূমি প্রশাসন, কৃষি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক সেবা, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং, কর ও শুল্ক, এনজিও, পাসপোর্ট, গ্যাস, বিআরটিএ ও বিমা। এছাড়া ‘অন্যান্য’ নামে ওয়াসা, বিটিসিএল, ও ডাকের সেবা খাতকে বিবেচনায় নেওয়া হয় জরিপে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. ওয়াহিদ আলম, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা রহমান ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ নূরে আলম। এসময় উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি-ঘুষের তুলনামূলক চিত্র :
জাতীয় খানা জরিপের সার্বিক বিশ্লেষণ তুলে ধরে অনুষ্ঠানে টিআইবি জানায়, ২০১৫ সালে সেবা খাতে ঘুষের শিকার হওয়ার হার ২০১২ সালের তুলনায় বেড়েছে (৫৮.১% বনাম ৫১.৮%)। তবে সার্বিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
২০১২ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ভূমি প্রশাসন, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং, এনজিও ও অন্যান্য খাতে দুর্নীতি উলেখযোগ্য হারে কমেছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ ও বিমা খাতে উলেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শিক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, কৃষি, কর ও শুল্ক খাতে দুর্নীতির হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
স্বাস্থ্য, বিচারিক সেবা, ভূমি প্রশাসনসহ ছয়টি খাতে ঘুষের শিকার খানার হার ২০১২ এর তুলনায় কমেছে। তবে শিক্ষা, বিদ্যুৎ এবং এনজিও এর ক্ষেত্রে এই হার বেড়েছে। ঘুষের হার অপরিবর্তিত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, কৃষি, কর ও শুল্ক ও অন্যান্য খাত।
শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামঞ্চলে সেবা খাতে দুর্নীতির প্রকোপ বেশি (৬২.৬% বনাম ৬৯.৫%); ঘুষ প্রদানে বাধ্য হওয়ার হারও বেশি (৫৩.৪% বনাম ৫৯.৬%)।
জরিপে দেখা গেছে, গ্যাসের সংযোগ নিতে গিয়ে খানাকে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে; যার গড় পরিমাণ ২৭,১৬৬ টাকা। আর বিমা খাতে দিতে হয়েছে ১৩,৪৬৫, বিচারিক সেবায় ৯,৬৮৬ এবং ভূমি প্রশাসনে ৯,২৫৭ টাকা।



 

Show all comments
  • Bashar Ahmed ৩০ জুন, ২০১৬, ১০:৫৪ এএম says : 0
    কথা গুলো একদম ঠিক।হবিগনজ পাসপোর্ট অফিসে গেলে দেখা যায় যে কত দালাল সাথে আবার এস পি অফিস।এখানে দালাল চারা পাসপোর্ট করা যায় না। দিতে হয় ২০০০টাকা বেশি। দালালদের কম দিতে চাইলে তারা বলে পাসপোর্ট অফিসে দিতে হয় ১০০০, এস পি অফিসে ৫০০আরো খরচ আছে আমরা ২০০ থেকে ৩০০ পাই। আমি নিজে পাসপোর্ট করতে গিয়ে ছিলাম আমার আবেদন ফরম জমা নেয় না,যখন দালাল দরলাম তখন জমা নিল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ১৬টি খাতে বছরে ৮ হাজার ৮২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় : টিআইবি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ