Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশুলিয়া থানা পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য

প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সেলিম আহমেদ, আশুলিয়া থেকে ফিরে : রাজধানীর সন্নিকটে ঢাকা জেলার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া থানা এলাকা। জনগুরুত্বপূর্ণ এ এলাকায় মানুষের বসবাস। ফলে এ এলাকায় অপরাধ প্রবণতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুন, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, জবরদখল, বোমা ফাটিয়ে ও গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টির পর হামলার ঘটনা ঘটছে অহরহ। একের পর এক লাশ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু পুলিশ এসকল অপরাধ প্রবণতা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো তারাই জড়িয়ে পড়ছে ঘুষ দুর্নীতিতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রতি মাসে আশুলিয়া থানার নামে বিভিন্ন স্থান থেকে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এ টাকাগুলো কয়েক ভাগে উত্তোলন করা হয়। আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদিরের বডিগার্ড এক কনস্টেবল, থানার ক্যাশিয়ারের দায়িত্বপালনকারী আরেক কনস্টেবল ও লাশ পরিবহনের কাজে নিয়োজিত বহিরাগত এক ব্যক্তি এসকল টাকা উত্তোলন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়া থানা এলাকার বিভিন্ন ভাংগারী দোকান থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা, ইটভাটা থেকে প্রায় ২ লাখ, অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের কাছ থেকে মাসে অন্তত ৬০ হাজার টাকা, বাইপাইল মৎস আড়ৎ থেকে মাসে প্রায় ৩০ হাজার, বলিভদ্র বাজারের অবৈধ দোকানীদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ হাজার, ডিইপিজেড এলাকার হকার্সদের কাছ থেকে প্রায় ২৫ হাজার, জিরানী হকারদের কাছ থেকে প্রায় ১৫ হাজার, আশুলিয়া বাঁশহাট থেকে ৮ হাজার, পল্লী বিদ্যুৎ ফুটপাথ বাজার থেকে প্রায় ৩০ হাজার, বাইপাইল প্রাইভেটকার স্ট্যান্ড থেকে ১২ হাজার, বাসস্ট্যান্ড থেকে অন্তত ৪০ হাজার, পিকআপ স্ট্যান্ড থেকে ১০ হাজার, জিরানী প্রাইভেটকার স্ট্যান্ড থেকে ১৫ হাজার, পল্লীবিদ্যুৎ প্রাইভেটকার স্ট্যান্ড থেকে ১৫ হাজার টাকা, ঝুট ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আরো কয়েক লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।
আশুলিয়া থানার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানাগেছে, অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের কাছ থেকে মাসে ৬০ হাজার টাকা ওসি মহসিনুল কাদিরের বডিগার্ড কনস্টেবল মামুনের মাধ্যমে আনা হয়। এছাড়া ফুটপাথের বাজার, বিভিন্ন পরিবহন স্ট্যান্ডসহ অন্যান্য জায়গা থেকে থানার ক্যাশিয়ারের দায়িত্বপালনকারী ম্যাচ ম্যানেজার কনস্টেবল ফিরোজ উত্তোলন করেন। বিভিন্ন মাদকের স্পট থেকে টাকা উত্তোলন করেন দীর্ঘদিন থানায় লাশ পরিবহনের দায়িত্বপালনকারী জুয়েল নামের জনৈক ব্যক্তি।
এদিকে ভূক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছে, রাতে সিভিল টিমের দায়িত্বপালনকারী পুলিশ কর্মকর্তারা নিরীহ লোকদের আটক করে মাদক ও নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়েও হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। তবে সিভিল পোশাকে দায়িত্ব পালন না করার জন্য ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার বললেও তা আমলে না নিয়ে তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন আশুলিয়া থানার কয়েকজন পুলিশ কর্তা।
আবার চার্জসীট থেকে নাম বাদ দেয়ার কথা বলেও নেয়া হচ্ছে টাকা। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারের পর পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
জানাগেছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে পশ্চিম ইসলামনগর এলাকায় একটি বিরোধপূর্ণ জমির দখল করাকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপস্থিতিতে একটি মসজিদের কিছু অংশ ভাংচুরের অভিযোগ উঠে।
ভাংচুর করা মোল্লারটেক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম সুলতান মাহমুদ জানায়, মসজিদের এড়িয়া ঘেষে ১০৩ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে রাজধানীর সোমা সারওয়ার নামের এক মহিলার দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এরই সূত্র ধরে ওই দিন সন্ধ্যার দিকে ওই মহিলা জমির দখল নিতে আশুলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় অজ্ঞাত পরিচয়ের প্রায় ১৫-২০ জন যুবক নিয়ে সিমানা প্রাচীর ভাংচুর করার সময় মসজিদের ওযুখানা, পানির ট্যাংকি, মসজিদে প্রবেশের গেটসহ বিভিন্নস্থান ভাংচুর করে।
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী আব্দুস সোবাহান জানান, আশুলিয়া থানার ওসির নির্দেশে উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সিদ্দিকের উপস্থিতি এই ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ প্রসঙ্গে এসআই আবু সিদ্দিক বলেন, মসজিদে কেন? সেখানে কোন ভাংচুরের ঘটনাই ঘটেনি। আমি আমার জীবনে প্রথম আপনার কাছে শুনলাম মসজিদেও নাকি ভাংচুর চালানো হয়। তবে ওসি মহসিনুল কাদিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এদিকে ওসি মহসিনুল কাদির অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে জড়িত থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দেশে যখন তীব্র গ্যাস সংকট চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আধাঁরে বেড়েই চলছে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ। কথিত ঠিকাদাররা তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এই কর্মকান্ড। শুধু তিতাসের কর্মকর্তাই নয় কথিত এই ঠিকাদররা আশুলিয়া থানা পুলিশকেও মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চক্রটি রাতের আধাঁরে বাড়ি বাড়ি দিচ্ছেন তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ। প্রতিটি সংযোগ বাবাদ বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে ৪০-৫০ হাজার টাকা।
তবে ঠিকাদারদের দাবী, তিতাসের সাভার অফিস ও আশুলিয়া থানা পুলিশকে ম্যানেজ করেই সংযোগ দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় ওই ঠিকাদার আরও বলেন আশুলিয়া থানার ওসি আমাদের এই কাজের সমর্থনে রয়েছে। ওসি সাহেব শতভাগ ফেভারে রয়েছে। এদিকে আশুলিয়া থানা পুলিশের নিরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন?
অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার ওসি মহসিনুল কাদির বলেন, আমিতো তিতাসের কেউ না। তিতাস কর্তৃপক্ষ ম্যাজিস্ট্রেট পাঠালে আমরা থানা পুলিশ সাহায্য করবো। এছাড়া তিতাস কর্তৃপক্ষ যদি মামলা করে তাহলেও আমার প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিব। অন্যথায় আমাদের কিছু করার নাই।
গত ১৯ জানুয়ারী দিবাগত গভীর রাতে আশুলিয়ার জামগড়া চিত্রশাইল কাঠালতলা এলাকার আইয়ূব আলীর মোল্লার বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী গফুর খন্দকারকে (৬০) শ্বাসরুধে হত্যা করে তিনটি মটরসাইকেল লুট করে নিয়ে যায় একদল ডাকাত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়ারা জানান, ডাকাতরা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে নিরাপত্তাকর্মী গফুরকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরে নীচ তলায় থাকা তিনটি মটরসাইকেল নিয়ে যায়।
এ ঘটনার এক দিন পরেই ২১ জানুয়ারী (বৃহস্পতিবার) ভোরে আশুলিয়ার আনোয়ার জং সড়কের সরকার মার্কেট এলাকার ‘সামিয়া ইলেকট্রনিক্স’ শোরুমে নিরাপত্তাকর্মী আমিনুর রহমানের মাথা ফাটিয়ে ডাকাতরা দোকানের তালা কেটে ইলেকট্রনিক্স মালামালসহ ৭লক্ষাধীক টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে ডাকাতি নয়, চুরি হয়েছে। এদিকে আশুলিয়ায় একের পর এক চুরি, ডাকাতি ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষনসহ নানা ধরনের অপরাধকর্মকান্ডে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদির এ ধরনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আশুলিয়া থানা পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->