Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আশা দীর্ঘ, আশ্বাস সংক্ষিপ্ত

বিশ্বব্যাংকের বাজেট মূল্যায়ন

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


চালের জন্য সময়টা ক্রিটিক্যাল
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এ লক্ষ্য পূরণে যে ধরনের সংস্কার বা পদক্ষেপ দরকার ছিল বাজেটে তা উল্লেখ করা হয়নি। অনেক লক্ষ্যমাত্রাই আশার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে অনেক কিছুই মিল নেই। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে এমন মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাজেটে আশা দীর্ঘ কিন্তু আশ্বাস সংক্ষিপ্ত ।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। এ সময় তিনি ‘চালের জন্য সময়টা খুব ক্রিটিক্যাল’ উল্লেখ করে দাম কমাতে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, বাজেটে প্রবৃদ্ধি, সীমিত ঘাটতি, বৈদেশিক সহায়তা, রাজস্ব আদায়সহ যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা হয়তো অর্জনের আশা করতেই পারি। কিন্তু এটা কিসের ভিত্তিতে হবে সেটা বাজেটে দেখছি না। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে আর্থিক খাতসহ অন্যান্য সেক্টরে যেসব সংস্কারের প্রয়োজন ছিল তা দেখছি না। এজন্য এ বাজেটকে সংক্ষিপ্ত আশ্বাসের বাজেট বলছে বিশ্বব্যাংক।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে পাঁচটি চ্যালেঞ্চ থাকার কথা জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের এই লিড ইকোনমিস্ট জানান, বাজেট বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসন ও তদারকি বাড়ানো এবং খেলাপি ঋণের ঝুঁকি কমিয়ে আনা; বিদ্যুতের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা; সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া মুদ্রা বিনিময় হারকে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে দিতে হবে। একই সঙ্গে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে হবে।
“প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কোনো চমক নেই। সব কিছুই গতানুগতিক। রেমিট্যান্স খাতেও তেমন সুবাতাস নেই। এখন ১৪ শতাংশ নেতিবাক প্রভাব এ খাতে রয়েছে। বাজেট সংস্কারে স্বীকৃতি আছে কিন্তু পদক্ষেপ নেই।”
জাহিদ হোসেন বলেন, গত তিন বছর ধরে প্রথম পর্যায়ে এডিপি বাস্তবায়নে গতি কম। তবে পরবর্তী পর্যায়ে এটা দ্রæতগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চালে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ভাগ্যক্রমে তেলে লাভ হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ খাত লোকসানে আছে।
“বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় অনেক বেশি। এর প্রধান কারণ টেন্ডারিংয়ে প্রতিযোগিতা অনেক কম। তাই সরকারের উচিত ৮০ শতাংশ ই-টেন্ডারিং করা। এটা করতে পারলে টেন্ডারিংয়ে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ কমবে।”
জাহিদ বলেন, চালের মজুত কমে গেছে। এটার জন্য বাকিতে চাল আমদানি করার যে সুযোগ বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে, সময় উপযোগী। কেননা আমদানির মাধ্যমে মজুত বাড়ালে ভালো হয়। যদি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মজুত বাড়াতে হয়, তাহলে বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করে কৃষকদের চাল-ধানের দাম দিতে হবে।
তার মতে, জোর করে কৃষক বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাল নেওয়া যাবে না। বø্যাকলিস্ট বা অন্য কোনো মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হলে হিতে বিপরীত হবে। বাজার থেকে চাল উঠে যেতে পারে। আগামীতে অর্থনীতির জন্য যে কয়টা চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার মধ্যে চালের দাম একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, চালে শুল্ক উঠে যাবে, এসব বলা বন্ধ করতে হবে। এ ঘোষণার ফলে চালের ট্রাক সীমান্তে এসে আটকে যাচ্ছে। এপারে আসছে না। মনে করছে, চালের শুল্ক কমে গেলে ওই পারে ট্রাক নিয়ে যাব। নইলে লস হয়ে যাবে।
ব্যাংকিং খাতসহ অন্য সেক্টরে ভর্তুকির সমালোচনা করে ড. জাহিদ বলেন, ব্যাংকে খেলাপি ঋণ আদায়ের কোনো উদ্যোগ নেই। যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়নি। অথচ প্রতি বছর ব্যাংকগুলোতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। যদিও সবাই জানে, এতে আমানত ঘাটতি কমবে না। বাজেটে ব্যাংকিং খাতসহ আর্থিক খাতে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি চিমিও ফান, অর্থনীতিবিদ শেখ তানজিব ইসলাম, বিশ্লেষক সাবিহা সুবহা মোহনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বব্যাংক

১২ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ