নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড কিংবা পরিসংখ্যান বরাবরই পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, সোয়েব আখতার কিংবা শহিদ আফ্রিদির অবসরের পর বিশ্ব ক্রিকেটে পাকিস্তান যখন ‘পরিচয় শঙ্কটে’ ঠিক তখনই নতুন এক পাকিস্তানের অবির্ভাব এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে। শুরুতে যে দলটিকে কেউ মাথায়ই রাখেনি, সেই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তানই এবারের আসরের ফাইনালে। প্রতিপক্ষ চিরচেনা কিংবা চিরপ্রতিদ্ব›িদ্ব যা-ই বলি না কেন- সেই ভারত। যে দলটিই পারে পাকিস্তানের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনতে। গতকালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভারতের বিপক্ষে স্বপ্নের ফাইনালে অন্য এক পাকিস্তানকেই দেখলো গোটা বিশ্ব। পরিচিত হলো নতুন করে, নতুন এক নামকে সঙ্গে নিয়ে- ফখর জামান।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে এর আগে সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র পাঁচজন। আইসিসির বিশ্বকাপকেও হিসাবে নিলে দুই টুর্নামেন্ট মিলে ফাইনালে সেঞ্চুরি মাত্র ১২ জনের। সেই ওরা ১২ জনের একজন হয়ে গেলেন ফখর। এই টুর্নামেন্টেই অভিষেক হয়েছিল তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকার সেই ম্যাচে ৩১ রানের ইনিংস খেলার পর টানা দুটি ফিফটি করে আলাদা নজর কেড়েছিলেন। দলকে ফাইনালে তোলার পেছনে ভূমিকা ছিল ওই দুই ফিফটির।
ফাইনালের জন্যই হয়তো নিজের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন! ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, সেটিও ফাইনালে! এক সেঞ্চুরি দিয়েই ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিলেন কদিন আগেও অচেনা এই ব্যাটসম্যান। প্রথম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন। তাঁর আগে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র দুই পাকিস্তানি-সাঈদ আনোয়ার (২০০৩ বিশ্বকাপ) ও শোয়েব মালিক (২০০৯ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি)।
৩ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান আম্পায়ারের নো বল সংকেতে। এরপর এলোপাতাড়ি কয়েকটি শট খেলে হাফ চান্স দিয়েছিলেন। কিন্তু ৯২তম বলে অশ্বিনকে সুইপ করে চার মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছানো এই বাঁ হাতির খেলা দেখে মনে হয়নি, ম্যাচটা ফাইনাল বলে কোনো স্নায়ুচাপে ভুগছেন। প্রতিপক্ষ যে ভারত, সে কথা না হয় বাদই দেওয়া হলো। প্রথম ৫০ ছুঁয়েছেন ৬০ বলে, পরের ৫০ মাত্র ৩২ বলে! শেষ পর্যন্ত আউট হওয়ার আগে খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস- ১০৬ বলে ১২টি চার ও তিন ছক্কায় ১১৪ রানের ইনিংস খেলে। জামানের জন্য শুধু একটা ভয়ের তথ্য। তাঁর আগে যে তিনজন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে সেঞ্চুরি করেছিলেন, হেরেছেন তিনজনই! বাকি দুজনের সেঞ্চুরি পরে ব্যাট করে।
শুধু ব্যাক্তিগত তথ্যভান্ডারই সমৃদ্ধ করেন নি, দলকে দিয়েছেন আরো রেকর্ডের যোগানও। ২২ ওভারে পাকিস্তানের দুই ওপেনার তুলে ফেলেন ১২৫ রান। ফখরের সঙ্গে ফিফটি পেয়েছেন আরেক ওপেনার আজহার আলীও। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তো আছেই, আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে এত ভালো শুরু পাকিস্তানের কখনো হয়নি।
বেঙ্গালুরুতে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৮৪ রান তুলেছিলেন দুই ওপেনার আমির সোহেল ও সাঈদ আনোয়ার। এত দিন আইসিসির টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে এটা ছিল পাকিস্তানের সর্বোচ্চ। ২১ বছরের রেকর্ড তো ভেঙেছেনই, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে দারুণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন আজহার ও ফখর।
ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ ২২৪ রান তুলেছেন মোহাম্মদ হাফিজ-নাসির জামশেদ। ২০১২ সালের মার্চে ঢাকায় এশিয়া কাপে এমন দুর্দান্ত শুরুতে পাকিস্তান গড়েছিল ৩২৯ রানের পাহাড়। বিরাট কোহলির ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা ১৮৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের সৌজন্যে ১৩ বল বাকি থাকতে ম্যাচটা জিতে গিয়েছিল ভারত। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উদ্বোধনী জুটির রেকর্ডটা সৌরভ গাঙ্গুলি ও শচীন টেন্ডুলকারের ১৪১ রান। ২০০৬ সালের সেই আসরে কিন্তু ভারতকে তবু হারিয়ে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড।
সব মিলিয়ে এদিন ভারতকে ৩৩৯ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়েছে পাকিস্তান। ওভালে পাকিস্তানের গড়া এই রানের পাহাড় টপকাতে পেরেছে কী ভারত? পরিসংখ্যান অবশ্য সে কথা বলে না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৬৫ রান তাড়া করার রেকর্ড আছে নিউজিল্যান্ডের। সেটিও আবার ভারতের বিপক্ষে। ২০০০ সালে নাইরোবিতে সৌরভ গাঙ্গুলির সেঞ্চুরিতে ২৬৪ করেছিল ভারত। কিন্তু ক্রিস কেয়ার্নসের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেট ও ২ বল বাকি থাকতে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কিউইরা। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে দ্বিতীয় রান তাড়া করার রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফির (তখনকার ‘মিনি বিশ্বকাপ’) প্রথম ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ২৪৬ রানের লক্ষ্য দক্ষিণ আফ্রিকা টপকেছিল ৪ উইকেট হাতে রেখে।
ভারতকে অবশ্য একটি পরিসংখ্যান অনুপ্রাণিত করবে, আগের সাত ফাইনালের পাঁচটিতে জিতেছে পরে ব্যাটিং করা দল। তবে এবার জিততে হলে আরও একটি রেকর্ড করতে হবে ভারতকে। ওভালে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড শ্রীলঙ্কার। এই কদিন আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গ্রæপ পর্বে ভারতের দেওয়া ৩২২ রান শ্রীলঙ্কানরা টপকেছে ৭ উইকেট ও ৮ বল বাকি থাকতে।
সত্যিই, ফখ্র (গর্ব) করার মত আরেকটি নামই পেল পাকিস্তান- ফখর জামান!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে সেঞ্চুরি
খেলোয়াড় ইনিংস প্রতিপক্ষ আসর
সৌরভ গাঙ্গুলি (ভারত) ১১৭ নিউজিল্যান্ড ২০০০
ফখর জামান (পাকিস্তান) ১১৪ ভারত ২০১৭
শেন ওয়াটসন (অস্ট্রেলিয়া) ১০৫* নিউজিল্যান্ড ২০০৯
মার্কাস ট্রেসকোথিক (ইংল্যান্ড) ১০৪ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০০৪
ফিলো ওয়ালেস (উইন্ডিজ) ১০৩ দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯৮
ক্রিস কেয়ার্নস (নিউজিল্যান্ড ১০২* ভারত ২০০০
আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি
জুটি রান ভেন্যু তারিখ
আজহার আলী-ফখর জামান ১২৮ ওভাল ১৮ জুন ২০১৭
আমির সোহলে-সাঈদ আনোয়ার ৮৪ বেঙ্গালুরু ৯ মার্চ ১৯৯৬
সাঈদ আনোয়ার-তৌফিক উমর ৫৮ সেঞ্চুরিয়ান ১ মার্চ ২০০৩
আহমেদ শেহজাদ-আজহার আলী ৪৭ এজবাস্টন ৪ জুন ২০১৭
কামরান আকমল-মোহাম্মদ হাফিজ ৪৪ মোহালি ৩০ মার্চ ২০১১
ইমরান নাজির-কামরান আকমল ২৯ সেঞ্চুরিয়ন ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯
সাঈদ আনোয়ার-শহীদ আফ্রিদি ১৯ ওল্ড ট্রাফোর্ড ৮ জুন ১৯৯৯
আহমেদ শেহজাদ-ইউনিস খান ১১ অ্যাডিলেড ১৫ ফেব্রæয়ারি ২০১৫
আমির সোহেল-ইনজামাম-উল-হক ৮ সিডনি ৪ মার্চ ১৯৯২
কামরান আকমল-নাসির জামশেদ ৪ এজবাস্টন ১৫ জুন ২০১৩
ইমরান ফরহাত-ইয়াসির হামিদ ১ এজবাস্টন ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৪ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে রান তাড়ার রেকর্ড
দল স্কোর লক্ষ্য প্রতিপক্ষ মাঠ তারিখ
নিউজিল্যান্ড ২৬৫/৬ ২৬৫ ভারত নাইরোবি ১৫ অক্টো. ২০০০
দ. আফ্রিকা ২৪৮/৬ ২৪৬ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঢাকা ১ নভে. ১৯৯৮
ও. ইন্ডিজ ২১৮/৮ ২১৮ ইংল্যান্ড ওভাল ২৫ সেপ্টে. ২০০৪
অস্ট্রেলিয়া ২০৬/৪ ২০১ নিউজিল্যান্ড সেঞ্চুরিয়ন ৫ অক্টো. ২০০৯
অস্ট্রেলিয়া ১১৬/২ ১১৬ ওয়েস্ট ইন্ডিজ মুম্বাই ৫ নভে. ২০০৬ ওভালে রান তাড়ার রেকর্ড
দল স্কোর লক্ষ্য প্রতিপক্ষ তারিখ
শ্রীলঙ্কা ৩২২/৩ ৩২২ ভারত ৮ জুন ২০১৭
ভারত ৩১৭/৮ ৩১৭ ইংল্যান্ড ৫ সেপ্টে. ২০১৭
ইংল্যান্ড ৩০৯/৪ ৩০৮ শ্রীলঙ্কা ২৯ জুন ২০১৬
ইংল্যান্ড ৩০৮/২ ৩০৬ বাংলাদেশ ১ জুন ২০১৭
স্কোর কার্ড
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
ফাইনাল, পাকিস্তান-ভারত
টস : ভারত, ওভাল (কেনিংটন)
পাকিস্তান ইনিংস রান বল ৪ ৬
আজহার রানআউট ৫৯ ৭১ ৬ ১
ফখর ক জাদেজা ব পান্ডিয়া ১১৪ ১০৬ ১২ ৩
বাবর ক যুবরাজ ব যাদব ৪৬ ৫২ ৪ ০
মালিক ক যাদব ব ভুবনেশ্বর ১২ ১৬ ০ ১
হাফিজ অপরাজিত ৫৭ ৩৭ ৪ ৩
ইমাদ অপরাজিত ২৫ ২১ ১ ১
অতিরিক্ত (লেবা ৯, ও ১৩, নো ৩) ২৫
মোট (৪ উইকেট, ৫০ ওভারে) ৩৩৮
উইকেট পতন : ১-১২৮ (আজহার), ২-২০০ (ফখর), ৩-২৪৭ (মালিক), ৪-২৬৭ (বাবর)।
বোলিং : ভুবনেশ্বর ১০-২-৪৪-১, বুমরাহ ৯-০-৬৮-০, অশ্বিন ১০-০-৭০-০, পান্ডিয়া ১০-০-৫৩-১, জাদেজা ৮-০-৬৭-০, যাদব ৩-০-২৭-১।
ভারত ইনিংস রান বল ৪ ৬
রোহিত এলবি ব আমির ০ ৩ ০ ০
ধাওয়ান ক শরফরাজ ব আমির ২১ ২২ ৪ ০
কোহলি ক সাদাব ব আমির ৫ ৯ ০ ০
যুবরাজ এলবি ব সাদাব ২২ ৩১ ৪ ০
ধোনি ক ইমাদ ব হাসান ৪ ১৬ ০ ০
যাদব ক শরফরাজ ব সাদাব ৯ ১৩ ২ ০
পান্ডিয়া রানআউট ৭৬ ৪৩ ৪ ৬
জাদেজা ক বাবর ব জুনাইদ ১৫ ২৬ ০ ০
অশ্বিন ক শরফরাজ ব হাসান ১ ৩ ০ ০
ভুবনেশ্বর অপরাজিত ১ ৮ ০ ০
বুমরাহ ক শরফরাজ ব হাসান ১ ৯ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ২, ও ১) ৩
মোট (অলআউট, ৩০.৩ ওভারে) ১৫৮
উইকেট পতন : ১-০ (রোহিত), ২-৬ (কোহলি), ৩-৩৩ (ধাওয়ান), ৪-৫৪ (যুবরাজ), ৫-৫৪ (ধোনি), ৬-৭২ (যাদব), ৭-১৫২ (পান্ডিয়া), ৮-১৫৬ (জাদেজা), ৯-১৫৬ (অশ্বিন), ১০-১৫৮ (বুমরাহ)।
বোলিং : আমির ৬-২-১৬-৩, জুনাইদ ৬-১-২০-১, হাফিজ ১-০-১৩-০, হাসান ৬.৩-১-১৯-৩, সাদাব ৭-০-৬০-২, ইমাদ ০.৩-০-৩-০, ফখর ৩.৩-০-২৫-০।
ফল : পাকিস্তান ১৮০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ফখর জামান (পাকিস্তান)।
সিরিজ সেরা : হাসান আলী (পাকিস্তান)।
সেরা ব্যাটসম্যান : শিখর ধাওয়ান (ভারত)।
সেরা বোলার : হাসান আলী (পাকিস্তান)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।