পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ হাজার ৭ শত কোটি টাকার প্রকল্পে লুটপাট
পঞ্চায়েত হাবিব : ‘পানি সম্পদ’ মন্ত্রণালয় না ‘পানি দুর্নীতি-লুটপাট’ মন্ত্রণালয়! এই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বোর্ড, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরগুলোতে দুর্নীতি কার্যত ওপেন সিক্রেট। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে যতনা আগ্রহ দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের তারও চেয়ে বেশি আগ্রহ বরাদ্দের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে। ক্ষমতাসীন জোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির এমপির মন্ত্রিত্বে থাকা এ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি-লুটপাট যেন পানির মতোই সহজ ব্যাপার। সারাদেশে অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়; দুর্নীতি ছাড়া একটি প্রকল্পের কাজও সমাপ্ত হয় না। তাছাড়া পরিকল্পিতভাবে সময়ক্ষেপণ করে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়। দুর্নীতি যেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অঘোষিত নীতি। প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ সংস্কার, মেরামত ও খনন কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত ৩টি কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পগুলোয় এক রত্তি দুর্নীতি কমেনি; দায়িত্বরতদের মধ্যে ভয়ভীতি নেই। বরং প্রকল্পের টাকা ভাগবাটোয়ারা হওয়ায় তদন্ত বিষয়াদিকে কেউ ভ্রুক্ষেপ করছে না। দুর্নীতির কারণে হাওর অঞ্চলে উজানের পানিতে হঠাৎ বন্যায় ‘কৃষি বিপর্যয়’ ঘটেছে। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা এবং দেশের বিভিন্ন নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দের অর্থের ভাগবাটোয়ারায় নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সাধারণ মানুষ কোনো সুবিধাই ভোগ করতে পারছে না। স্বয়ং মন্ত্রী জাতীয় সংসদে দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছেন। মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও দায়িত্বরতরা দুর্নীতির কথা অকপটে লুটপাট-অনিয়মের কথা স্বীকার করলেও একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন। এদিকে বাঁধ সংস্কারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারদের মধ্যে কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও অনেকই এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তদন্তে দুর্নীতি প্রাথমিক প্রমাণ পেলেও ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শতাধিক প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলীকে প্রধান করে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়াও সারাদেশের মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্প ক্ষতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালককে প্রধান আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া শুধু হাওর এলাকার পাঁচটি জেলার দুর্নীতি দেখতে পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। সম্প্রতি হাওর এলাকায় আকস্মিক বন্যায় দেশের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ৩ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৯০টি উন্নয়ন প্রকল্পে চরম অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল প্রকল্পের দুর্নীতি ক্ষতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া সারাদেশে ১২৮টি বাঁধ সংস্কার প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে দুদকের দুইটি টিম মাঠে কাজ শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের এক অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ তিন বছরেও সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়নি। তিন বছরে মাত্র ২৪টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বাকীগুলো এখনো বাস্তবায়নাধীন। অভিযোগ রয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৯০টি উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ পানি সম্পদমন্ত্রী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে বাস্তবায়নে করায় এই অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণে সুফল পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২৮টি বাঁধ সংস্কার প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার ঘটনা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাওর এলাকার বাঁধ নির্মাণসহ সারাদেশের প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বর্ষা মৌসুমে যাতে নদ-নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে জনপদ ভাসাতে না পারে সে জন্য নদীর তীরবর্তী এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদীভাঙন ঠেকাতে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ প্রতিবছর অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) দেওয়া মোট বাজেটের ৭০ শতাংশই ব্যয় হয় এ খাতে। বাঁধ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নে চরম অনিয়ম-দুর্নীতি দেখা দিয়েছে তা খোদ দেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সংসদকে বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যে দুর্নীতি হচ্ছে না তা আমি করবো না। এখানেও কিছ দুর্নীতি হচ্ছে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে ঢালাওভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তা ধ্বংস করার কোন মানে হয় না।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান ইনকিলাবকে বলেন, কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এখানে আমরা প্রতিবেদন প্রকাশ করছি না তার আগে বলা যাবে না।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড, মোহাম্মদ আলী খান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা হাওর অঞ্চলের ৬ জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরেজমিন তদন্ত করছি। আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিল ১১ জুন। কিন্তু আমরা গত ৮ জুনে সচিবকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
দুর্নীতি বিষয় এড়িয়ে গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর কবীর ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ৩ হাজার ৭ শত কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০টি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্পে চরম অনিয়ম-দুর্নীতির হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে ডিজি বলেন, ১২৮টি বাঁধ সংস্কার প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে এখানে দুর্নীতি হয়েছে তা আমার জানা নাই। হাওর এলাকায় বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পের তালিকা ও কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে দুদক জানতে চেয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দুদকে প্রকল্পের তালিকা দিয়েছি। ডিজি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি দেয়ার ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে নদীর ভাঙন রোধ, নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি ও পানিবদ্ধতা নিরসনে জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ নদী খনন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের প্রধান তিনটি নদী যমুনা, মেঘনা ও পদ্মার ভাঙন রোধে সরকার ‘ফ্লাড এন্ড রিভারব্যাঙ্ক ইরোশান রিক্স ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এফআরইআরএমআইপি) শীর্ষক প্রকল্প ২০১৭ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশে মোট ৩৯৭ দশমিক ৭২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং ও খনন। এসব প্রকল্প হচ্ছে; প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশী-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) শীর্ষক প্রকল্প।এ জন্য এক হাজার ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দুর্নীতিকরণ প্রকল্প। এর ব্যয় হয়েছে ২৬১৫৫৪.৮৩ টাকা। ভোলা জেলার চরফ্যাশন-মনপুরা শহর সংরক্ষণ প্রকল্পের ১৬৮০৪.৫৯ টাকা। কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলাধীন সোনাহাট ব্রিজের সন্নিকটে দুধকুমার নদীর ভাঙন হতে ভুরুঙ্গামারী-মাদারগঞ্জ সড়ক পথকে রক্ষা এবং উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ হতে বজরা সিনিয়র মাদ্রাসা পর্যন্ত তিস্তা নদীর বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প। এর ব্যয় হয়েছে ১৯,১৩৬.০৩ টাকা। ঘূর্ণিঝড় সিডর এলাকায় ২৯টি পোল্ডার এবং ৩ উপজেলায় ১২টি ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় হয়েছে ৭০৩১০.০০ টাকা যা চলতি বছরের ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা কিন্তু এখনো শুরু করা হয়নি। এছাড়া নদী খননের জন্য ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক সংগ্রহ প্রকল্প। এর ব্যয় করা হয়েছে ১৩০,৯৮৮.১০ টাকা। কিশোরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার যমুনেশ্বরী, চিকনি ও চারালকাটা নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এর হয়েছে ৮,৩৫৫.২৭ টাকা। বগুড়া জেলায় যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ব্যয় করা হয়েছে ২১,৪৪৬.৩৪ টাকা। তিস্তা ব্যারেজ ফেজ-২ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প এর ব্যয় হয়েছে ২৯,৪৭৫.৭৫ টাকা চলমান। কুষ্টিয়ার গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প (ফেজ-২) এর ব্যয় হয়েছে ৯৪,২১৪.৫৫ টাকা। প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নওগাঁ শহর রক্ষা প্রকল্প ব্যয় হয়েছে ৭,৩২৫.৩০ টাকা। বাগেরহাট জেলার পোল্ডার ৩৪/২ এর সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে ১৬,৭২৬.১২ টাকা। নাটোর সদর, সিংড় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশনবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়) ব্যয় করা হয়েছে ৩২৮,০০০.০০ টাকা। ভৈরব নদী পুনঃখনন প্রকল্প ৭,৩৮২.৮৪ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এর ব্যয় করা হয়েছে ২৮,৫৪০.২০ এবং ১২,০৩১.৭৮ টাকা। হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় করা হয়েছে ৬৮,৪৯৪.১০ এবং ৫,৬৩০.৪৭ টাকা কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী জেলায় কাজ করা হয়েছে। এসব জেলার বেশিরভাগ কাজ মন্ত্রী পছন্দীয় ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে হাওরের ২৮টি বাঁধ নির্মাণের জন্য ১১৬টি প্যাকেজে দরপত্র আহŸান করে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত দুই বছরে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে তিন প্রকৌশলীর সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ১১৬টি প্যাকেজের কাজে ঠিকাদাররা কোথাও ২০ ভাগের বেশি কাজ করেনি। অথচ গত দুই বছরে তারা ২৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীর ছোট বালিয়াতলী ও ফেরি ঘাট রক্ষা প্রকল্প, মুন্সীগঞ্জ শহররক্ষা প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা শহর রক্ষা প্রকল্প, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর শহর রক্ষা প্রকল্প, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প (নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্প, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বামতীর ভাঙনরোধ এবং বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী হইতে কাজীরহাট পর্যন্ত যমুনা নদীর ডানতীর ভাঙনরোধ প্রকল্প এবং কুষ্টিয়ার গড়াই নদ খননসহ শতাধিক প্রকল্পে চলছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি। এসব প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে সংসদে এবং সংসদের বাহিরে সরকার দলীয় মন্ত্রী ও এমপিরা অভিযোগ তুলছেন।
সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মহোৎসবের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। দুদক কর্মকর্তারা পাউবো কর্মকর্তা, ঠিদাকারদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি সরজমিন বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করবেন। বোরো ধানের মাতৃ এলাকা বলে পরিচিত সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা। বিস্তীর্ণ হাওর এলাকাকে অকাল বন্যা থেকে রক্ষা করতে বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রতি বছরই সরকার থেকে বিশেষ বরাদ্দ আসে। আর বরাদ্দের ওই কাজের শেষ সময়সীমা থাকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত মার্চ মাসের শেষ দিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকায় অকাল বন্যা দেখা দেয়। মাত্র তিনদিনেই হাওরে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জের বিশাল এলাকা। সুনামগঞ্জে এবার কোনো বাঁধই কাজে আসেনি। বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। করেন বিক্ষোভও। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা, এবার সুনামগঞ্জে ৭৬টি বাঁধ নির্মাণের জন্য ৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ বাঁধেরই কাজ শেষ হয়েছে। হাওরের মানুষের দুর্দশার চিত্র দেখতে সুনামগঞ্জ সফর করেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ। তিনি হেলিকপ্টারে হাওর এলাকা পরিদর্শন ছাড়াও সুনামগঞ্জের মানুষের সঙ্গে সুধী সমাবেশ করেন। আর এ সুধী সমাবেশেও স্থানীয় একাধিক এমপি হাওরের বাঁধনির্মাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেন। তারা অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করান পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের। এ সময় তারা পরিসংখ্যান তুলে বলেন, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় এবার বোরো ফসলকে বানের পানি থেকে রক্ষার জন্য ৭৬টি বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১২টি বাঁধের কাজ শুরু হয়নি বলে পাউবো কর্মকর্তারা নিজেই স্বীকার করেছেন। বাকি থাকা ৬৪টি বাঁধের কাজ হয়েছে। এমপিরা অভিযোগ করেন, প্রতিটি বাঁধের কাজ ১০ ভাগ থেকে ৩৫ ভাগ পর্যন্ত হয়েছে। এ কারণে বন্যার প্রথম ধাক্কাতেই তলিয়ে যায় হাওর। আর এখন অনেক বাঁধের অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেন তারা। এদিকে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সব মহল থেকে উপস্থাপনের পর দুর্নীতি দমন কমিশনও কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। ওই টিমে রয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহিম ও সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি। দুদক গঠিত অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তারা সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার নাজমানারা বেগমের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তারা হাওরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর দুদকের অনুসন্ধান টিমের সদস্যা যান সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাইয়ের কার্যালয়ে। সেখানে তারা প্রায় ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেন। পাউবোর নির্বাহী কর্মকর্তা দুদককে এবারের বাঁধ নির্মাণের নথিপত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
এদিকে দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের প্রধান মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ‘সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অনিয়মের দুদক তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। পরে দুদুক টিম সরে জমিন তদন্ত করে। হাওরের ২৮টি বাঁধ নির্মাণের জন্য ১১৬টি প্যাকেজে দরপত্র আহŸান করে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে তিন প্রকৌশলীর সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ১১৬টি প্যাকেজের কাজে ঠিকাদাররা কোথাও ২০ ভাগের বেশি কাজ করেনি। অথচ ২৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। ঠকাদাররা কাজ পেতে ৫ শতাংশ এবং বিল ছাড় করাতে ১৫ শতাংশ অর্থ ঘুষ দিয়েছেন প্রকৌশলীদের।
ঢাকার চতুর্দিকের নদীগুলোকে দুষণমুক্ত
শুষ্ক মৌসুমে বুড়িগঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে পানির গুণগতমান বৃদ্ধি, তুরাগ-শীতলক্ষ্যাসহ বুড়িগঙ্গা নদীর ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, সেচ ও মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন সাধিত হবে। এ জন্য ঢাকার চতুর্দিকের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে নানা প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এ জন্য এক হাজার ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ‹বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশী-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) শীর্ষক একটি প্রকল্পের কাজ বর্তমানে চলমান। ওই প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশী-তুরাগ নদী খননের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হযেছে।
কুষ্টিয়ার গড়াই নদ খনন করা হলেও এর কোনো সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। খনন কাজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম, অপরিকল্পিত খনন ও দুর্নীতি-লুটপাটের সুন্দরবনে মিঠা পানির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাসহ লোনা পানির আগ্রাসন ঠেকাতে নেয়া গড়াই খনন প্রকল্প সম্পূর্ণ ভেস্তে যেতে বসেছে। বিগত সাত বছরের অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ কারণে ভবিষ্যতে এ প্রকল্পে সুফল না মেলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পদ্মার শাখা নদ গড়াই। এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মিঠা পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস। তাই নদ পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০০৯-১০ থেকে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৯৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। পরে দরপত্রের মাধ্যমে চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’ খননের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর আবারও ২০১৫-১৭ সালে তিন বছরের একটি খনন পরিকল্পনা পনয় পাউবো। যেটি এ বছর শেষ হবে। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, সরকার প্রধান শেখ হাসিনা গড়াইকে সচল রাখতে এ প্রকল্প দিয়েছেন। হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে নদ খনন হচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না। দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।