নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইমামুল হাবীব বাপ্পি : দ্য ওভাল ক্রিকেট গ্রাউন্ড, কেনিংটন, লন্ডন। বিশ্ব ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামগুলোর যদি ছোট্ট তালিকা তৈরী করা হয় তার উপরের দিকেই থাকবে নামটি। ১৮৮০ সালে ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই মাঠেই।
ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী এই মাঠকে ঘিরে একটা আক্ষেপ রয়ে গেছে পাকিস্তানের। এমন মর্জাদাপূর্ণ মাঠে এখন পর্যন্ত একটা ম্যাচও খেলার সুযোগ হয়নি তাদের। আবার পাকিস্তানের যা আক্ষেপ ভারতের জন্য তা সাম্প্রতিকতম তিক্ত অভিজ্ঞতা। চলমান আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটি ম্যাচই হেরেছে ভারত, সেটিও এই কেনিংটন ওভালেই। ঘটনাক্রমে এই মাঠেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল মহারনে আজ মুখোমুখি হচ্ছে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী দুই দল।
এমনিতেই বৈরী দুই দেশের মধ্যকার ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। একবারে বারুদে ম্যাচ যাকে বলে। আবার তা যদি হয় বৈশ্বিক কোন আসরের ফাইনাল তাহলে তো একবারে সোনায়-সোহাগা। ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপে এমনই এক ম্যাচ দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। উত্তেজনার চরমে পৌঁছানো ম্যাচটি ওয়াকওভারে জিতেছিল এমএস ধোনির ভারত। এখন পর্যন্ত আইসিসির বৈশ্বিক কোন আসরের ফাইনালে ওই একবারই মুখোমুখি হয়েছি দু’দল। এক দশক পর আবারো বড় কোন আসরের ফাইনালে মুখোমুখি দুই দল। নিশ্চিতভাবেই এবারের রোমাঞ্চটা আরো বেশি, পুরো ১০০ ওভারের ঠাসা রোমাঞ্চ যাকে বলে। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চাইছে না ক্রিকেট ভক্তদের।
অনেক কারণেই এই ম্যাচে ফেভারিট হয়ে মাঠে নামবে ভারত। একটু পিছনে ফিরে পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই তা স্পষ্ট হবে। আইসিসি আয়োজিত ইভেন্টে দু’দলের জয় পরাজয়ের রেকর্ডটা ১৩-২। অবশ্যই তা ভারতের অনুকূলে। পাকিস্তানের দুটি জয়ই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে, দুটিই আবার গ্রæপ পর্বে। ২০০৯ সালের সর্বশেষ সেই জয়ের পর টানা ৭ ম্যাচ হেরে চলেছে পাকিস্তান। যার সর্বশেষ সংযোজন দুই সপ্তাহ আগে চলতি আসরেরই গ্রæপ পর্বের হারটি।
এত হারের পরও জয়-পরাজয়ের সার্বিক রেকর্ডে পাকিস্তান কিন্তু এখনো ৭২-৫২ ব্যবধানে এগিয়ে। কিন্তু অতীত দিয়ে তো আর বর্তমানকে বিচার করা চলে না। তাছাড়া এই নিয়ে চতুর্থবার আসরের ফাইনালে খেলছে ভারত, পাকিস্তান এই প্রথম। ভারতের ফেভারিট তকমার তৃতীয় কারণটি হল দু’দলের সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স। ২০১০ সালের পর সাত আইসিসি ইভেন্টের চারটিতেই ফাইনাল খেলেছে ভারত। এসময় তাদের জয় পরাজয়ের রেকর্ডটাও ইর্ষনীয় ৩৪-৭, পাকিস্তানের ২০-১৬।
তবে চলমান আসরে দুই দলের পারফর্ম্যান্স কিন্তু দুর্দান্ত একটা ফাইনালেরই আভাস দিচ্ছে। দুই বিভাগে সেরা দুই দলই লড়বে শিরোপার জন্য। ৯১.৫ গড়ে আসরের সর্বোচ্চ ১০৯৮ রান ভারতের। ৩১.৭৭ গড়ে সর্বোচ্চ ৩১ উইকেট পাকিস্তানের। ভারত যেখানে ওভারপ্রতি রান নিয়েছে ৬.২৩ করে, পাক বোলারদের খরচ সেখানে পাঁচেরও নীচে, ৪.৯৯।
কোন সেন্দহ নেই বোলিং দিয়েই তাই নিজেদের পরিকল্পনা সাজাবে পাকিস্তান। যে তিন ম্যাচে তারা জিতেছে তার প্রতিটাতেই তারা আগে বোলিং করেছে। ব্যাটিং স্বর্গে আসরের দুই টপ ফেভারিট ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে তারা ২২০ রানের নীচে আটকে ফেলেছে। ওভালের এই মাঠ অবশ্য একবারেই ভিন্ন। এখানেই উদ্বোধণী ম্যাচে বাংলাদেশের তিনশোর্ধো রান তাড়া করে হেসেখেলেই জিতেছিল ইংল্যান্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে এই মাঠের ব্যাটিং গড় ২৯৩। সরফরাজ আহমেদের দলকে কিছু করতে হলে তাই বড় ভরসাটা বোলারদের উপরেই রাখতে হবে।
পাকিস্তানের নতুন আবিষ্কার হাসান আলী দুর্দান্ত বোলিং করছেন। আসরের সর্বোচ্চ (১০) উইকেট তার। পিঠের চোটের কারণে আগের ম্যাচ মিস করা মোহাম্মাদ আমির অন্তর্ভুক্তিতে শক্তি আরো বাড়বে সন্দেহ নেই। জুনায়েদ খানও আছেন ছন্দে। বিরাট কোহলিকে সামলানোর অস্ত্র হতে পারেন এই বাঁ-হাতি পেসার। জুনায়েদের বিপক্ষে কোহলির ব্যাটিং গড় ০.৬৬! এ পর্যন্ত তার ২২ বলে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান নিতে পেরেছেন ২ রান! তার বলে আউট হয়েছেন তিনবার। সব মিলে ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য যা যা লাগে তার সবই আছে পাকিস্তানের হাতে। দরকার এখন আগের ম্যাচের সেই ফিল্ডিং ফর্মটা এই ম্যাচে ফিরিয়ে আনা। তাছাড়া ব্যাটিংয়েও যে তারা কি করতে পারে তার প্রমাণ তারা রেখেছে সেমিফাইনালে। ইংল্যান্ডের দেওয়া ২১১ রানের লক্ষ্য তারা টপকেছে ৮ উইকেট আর ১৩ ওভার হাতে রেখে।
বোলিংয়ের বিচারে ভারতও কিন্তু পিছিয়ে নেই। বৈচিত্রপূর্ণ বোলিং লাইনআপ তাদের। আজ অবশ্য তাদের সেরা স্পিন অস্ত্র রভিচন্দ্রন আশ্বিনকে নাও খেলাতে পারে তারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৫৪ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য। ইতোমধ্যে তার ফিটনেস সমস্যাকে সামনে এনে দলে না নেওয়ার আভাস দিয়ে রেখেছে ভারত। তার যায়গায় উমেশ যাদবকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। বিকল্প হিসেবে আছেন মোহাম্মাদ সামিও। তবে অনুশীলনেও কোন বোলিং না করায় তার খেলার সম্ভবনা কম। অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে তার বোলিং রেকর্ডটা কিন্তু ভালোই। তিন ম্যাচে ২১.৪০ গড়ে ৫ উইকেট, বেস্ট ৪/৩৫।
তবে নিশ্চিতভাবেই ভারতের শক্তির জায়গা হলো তাদের ব্যাটিং। তাদের দুই উদ্বোধণী ব্যাটসম্যানই আছেন আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষে। শেখর ধাওয়ানের রান ৩১৭, রোহিত শর্মার ৩০৪। শীর্ষ পাঁচের অপর নাম বিরাট কোহলি ২৫৩ গড়ে করেছেন ২৫৩ রান। ভারত অধিনায়কই হতে পারেন ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারক। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১৭ ম্যাচ খেলে ৫ বারই হয়েছেন ম্যাচসেরা।
ব্যাটিংয়ের কথা বললে পাকিস্তানের ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন শোয়েব মালিক। পাকিস্তানের এই দলে ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন এই মিডিরঅর্ডার ব্যাটসম্যান। ৪৮.৫০ গড়ে করেছেন সর্বোচ্চ ১৬৪৯ রান। ক্যারিয়ারের নয় সেঞ্চুরির চারটিই ভারতের বিপক্ষে। সব মিলে রোমাঞ্চকর এই ফাইনালই যে অপেক্ষা করছে তা বলাই যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।