পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
হাসান সোহেল : ঈদ মানেই আনন্দ। এ আনন্দে অনিবার্য অনুষঙ্গ সালামি। নতুন জামা-জুতার মতো ঈদের সেলামি মানেই টাকশাল থেকে আসা ঝকঝকে নতুন নোট। ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে জমজমাট হয়ে উঠেছে নতুন টাকার বাজার। ছোটদের সেলামি দিতে বাড়তি টাকা দিয়ে নোট সংগ্রহ করছেন সেলামিদাতারা। অন্য সব পণ্যের মতো এ নিয়েও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলে দরকষাকষিও। রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন টাকার পসরা সাজিয়ে বসেছেন পুরানো ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কেউ টুল নিয়ে বসে আবার কেউ দাঁড়িয়ে বিক্রি করছেন টাকা। আইন অনুযায়ী বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও অবাধেই চলছে এ ব্যবসা। ক্রেতাদেরও কমতি নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষ্যে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শাখা অফিস এবং রাজধানীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২০টি শাখার মাধ্যমে নতুন নোট বিনিময় করা যাবে। বিনিময় শুরু হয়েছে গত ৮ জুন থেকে। চলবে ২২ জুন পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে নতুন-পুরানো ব্যবসায়ীসহ নারী-পুরুষ মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন নতুন টাকার নোট বিক্রি করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় নতুন টাকা বের করেছেন তারা। কথা বলে জানা গেল, রাজধানীতে নতুন নোটের সবচেয়ে বড় অস্থায়ী বাজার এটি। মতিঝিল ছাড়াও গুলিস্তান, ফার্মগেট, সদরঘাটে নতুন টাকার নোট বিক্রি হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা। চাঁদ রাত পর্যন্ত চলবে নতুন টাকার বিকিকিনি। দুই টাকা, পাঁচ টাকা, ১০ টাকা ও ২০ টাকার নোটের চাহিদা ও দাম সবচেয়ে বেশি জানান বিক্রেতারা।
এক টাকার কয়েন থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা পর্যন্ত নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে টাকার বাজারে। টাকার পরিমাণ অনুযায়ী বান্ডেল প্রতি বেশি নিচ্ছে ২০ থেকে ২৫০ টাকা। টাকার প্রতিটি বান্ডেলে ১০০টি নোট থাকে। টাকার বাজারে এক টাকার কয়েন ১০০টি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। দুই টাকার নোট এক বান্ডেল অর্থাৎ ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। পাঁচ টাকার বান্ডেলে বেশি নিচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ১০ টাকার বান্ডেল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকা। ২০ টাকার বান্ডেল ২১‘শ থেকে ২২‘শ টাকা। ৫০ টাকার বান্ডেলের দাম বেশি নিচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ১০০ টাকার বান্ডেল ১০ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করছে। এসব নোটেরই চাহিদা বেশি। এছাড়া আছে ৫০০ ও এক হাজার টাকার নতুন নোট।
মামুন নামে এক টাকা ব্যবসায়ী জানান, নতুন টাকার মূল উৎস বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখান থেকে কর্মচারীদের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা টাকা বের করে নিয়ে আসেন। এ জন্য কর্মচারীদেরও কমিশন দিতে হয়। টাকা বিক্রেতা রাশিদা বেগম জানান, প্রতি বছরই ঈদের আগে নতুন টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। ১০ রমজান থেকে তা বাড়তে থাকে। ১৫ রমজানের পর ব্যবসা ভালো হচ্ছে। প্রতিদিন এখন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করছি। চাঁদা, কমিশন ও খরচ বাদ দিয়ে ১হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা থাকে।
শাহিন আক্তার বলেন, একটু বাড়তি আয়ের আসায় প্রতি ঈদে নতুন টাকার ব্যবসা করি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। লাইন ধরে দাঁড়াতে হয়। সপ্তাহে একদিন আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে মাত্র ৮ হাজার ৭০০ টাকা দেয়। সেই টাকা নিয়ে ফুটপাতে এসে বসি। কিন্তু এখানেও যন্ত্রনা আছে। পুলিশ ঝমেলা করে। তারা পুরাতন টাকা দিয়ে নতুন টাকা নেয়। কিন্তু কোনো মুনাফা দেয় না।
গুলিস্তানের বিক্রেতা হাশেম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টাকার ব্যবসা করছি। শুধু নতুন টাকা নয়, পুরাতন ও ছেঁড়া টাকা কমিশন ভিত্তিতে বদলিয়ে দেই। ঈদ ছাড়া অন্যান্য সময়ে নতুন টাকার ব্যবসা তেমন একটা চলে না। রোজায় নতুন টাকার চাহিদা বাড়ে। ১৫ রমজানের পর থেকে বিক্রি বেশি হচ্ছে। বান্ডেল ভেদে আলাদা আলাদা রেট নেই। যেমন দুই টাকার বান্ডেলে ২০ টাকা বেশি নেই আর পাঁচ টাকায় নেই ৫০ টাকা।
মতিঝিলে নতুন টাকা কিনতে আসা মনিরুজ্জামান বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাবো। বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা ঈদের উপহার হিসেবে নতুন টাকা আশা করে। তাই নতুন টাকা কিনতে এসেছি। ব্যাংকে লম্বা লাইন, প্রয়োজনমতো পাওয়াও কষ্ট। তাই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নতুন টাকা নিচ্ছেন। টাকার মূল্যের চেয়ে ২৫০ টাকা বেশি দিয়ে একটি ৫, ১০ ও ২০ টাকার তিনটি বান্ডেল নিয়েছি বলে জানান মনিরুজ্জামান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরও ঈদ উপলক্ষে নতুন টাকার নোট বিনিময়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ বছর ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বিনিময়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট প্রথমবারের মতো বাজারে ছাড়া হচ্ছে। বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা আগের জমা নেয়া ছেঁড়া-ফাটা অচল নোটের পুনর্মুদ্রণ।
এদিকে এ বছর বাজারে আনা হয়েছে শতভাগ কটন কাগজে নতুন নিরাপত্তা সুতা সংবলিত ১০০ ও ৫০০ টাকার ব্যাংক নোট। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য অফিস থেকেও এ নোট ইস্যু করা হবে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, উচ্চমূল্যমানের ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বিদ্যমান কাগজের পরিবর্তে উন্নতমানের কটন কাগজে মুদ্রিত হবে এ নোট। ৪ মিমি প্রশস্ত নিরাপত্তা সুতা সংযোজিত এ নোটে গভর্নর ফজলে কবিরের স্বাক্ষর থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।