Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত নয়

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া বিচার বিভাগীয় কোন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং অন্য কোন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম নয়। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া তদন্ত করা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত,অগ্রহণযোগ্য এবং তা কোনো ভাবেই কাম্য নয় বলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি আদেশক্রমে হাইকোটে বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া ১৭ জন কর্মকর্তা বিদেশ গমন না করার জন্য বলা হয়। সেখানে আরো জানানো হয় যদি কোন কর্মকর্তা পরামর্শ ব্যতিত বিদেশ গমন করনে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সর্তকও করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ ইনকিলাবকে বলেন, ওই সব বিষয়ে দৃষ্টিগোচর হয়েছে এরপর সার্কুলার জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আর এটা প্রশাসনের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ বলে আমার মনে হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অত্র কোর্টের গোচরীভূত হয়েছে যে কোন কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসদারচারণ,দুর্নীতি বা অন্য কোন অভিযোগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট পরামর্শ ছাড়াই আইন মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্ত বা অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযারী বিচার কর্মকর্তাদের নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল- নিধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) ও শৃঙ্খলা বিচার প্রেসিডেন্ট উপর ন্যস্ত। সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে তা প্রযুক্ত হয়। ফলে কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার কর্মস্থলে নিধার্রণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরী, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলঅ বিধান, বিদেশ গমন, ও চাকুরী অন্যান্য শর্তাবলী ইত্যাদি সকল বিষয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ নিধারণ করা বাধ্যকর।
এছাড়া সংবিধানে ১০৯ অনুচ্ছেত অনুযারী বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যেদের তত্বাবধানে ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের ন্যস্ত আছে, এছাড়াও ১০৯, ১১৬, ১১৬ (ক) অনুচ্ছেদ অনুয়ারী জুডিসিয়াল সার্ভিস ও এই সার্ভিসের সদস্যগণকে অন্য সকল সার্ভিস থেকে পৃথক এবং স্বাতন্ত্র্য করা হয়েছে।
অধিকন্ত, সচিব, অর্থ মন্ত্রনালয়ের বনাম মাসদার হোসেন ও অন্যান্য মামলায় আপিল বিভাগ কর্তৃক বিচার কর্মবিভাগের কর্মরত বিচারকদের অন্যান্য সকল বিষয়ের পাশাপাশি শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ প্রাধান্য নিশ্চিত করা হয়েছে। একইভাবে প্রেসিডেন্ট প্রণীত জুডিসিয়াল সার্ভিস বিধিমামলা অনুয়ারী সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ মতে কার্যক্রম গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এসব কারণে কোন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসদারচরণ বিষয়ে পরামর্শ ছাড়া প্রাথমিক তদন্ত গ্রহণ করা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত, অগ্রহণযোগ্য এবং তা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। পক্ষান্তরে ১০৯ , ১১৬ ও ১১৬ (ক) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ঠ লঙ্গন এবং সুপ্রিম কোর্টর আপিল বিভাগের সিভিল নম্বর ৭৯/ ১৯৯৯ মামলার পরিপন্থী।
এতে আরো বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের ১৮ ডিসেম্বর ১৬/২০১৩-২৪০৭২ এ, নং স্মারক পত্রমূলে কোন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দুর্নীতি কোন অভিযোগ উথাপিত হলে অত্র কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া কোন তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা বাঞ্চনীয় নয় মর্মে আইন ও বিচার বিভাগকে পরামর্শ গ্রহণ প্রদান করা হয়।
বিচার ভিাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে অসদাচরণ, দুর্নীতির অভিযোগ উথাপিত হলে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া উক্ত অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। একই সঙ্গে এ নির্দেশনা লঙ্গনপূর্বক কোন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া কোনো তদন্ত বা অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হলে তাৎক্ষনিকভাবে তা অত্র কোর্টকে অবহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে ১৭ কর্মকর্তা বিদেশ গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিবে বলে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বিচার বিভাগের ১৭ কর্মকর্তাকে আইন মন্ত্রণালয় বিদেশ পাঠাতে চাইলেও সুপ্রিম কোর্ট অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। এই সংক্রান্ত আইন মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রের পাল্টায় গত ২২ মার্চ আরেকটি পরিপত্রে সুপ্রিম কোর্ট ওই ১৭ জনকে বিদেশ না পাঠানোর আগের নির্দেশনাই বহাল রেখেছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে পাঠানোর জন্য গত ৩ থেকে ১৭ মে সরকারি অফিস আদেশ জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। ওই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে আইনমন্ত্রী ও সচিব কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুপ্রিম কোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ