Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৮ জঙ্গির বিরুদ্ধে মামলা ১০ দিনের রিমান্ড

তানোরে ‘রিবার্থ’ অপারেশন সমাপ্ত

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মমিনুল ইসলাম মুন, তানোর (রাজশাহী) থেকে : রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রাখার ২২ ঘন্টা পরে অভিযান শেষ হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে বোমা নিষ্ক্রিয় দলের সদস্যরা পর পর তিনটি শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয় করার পর এ অভিযান শেষ হয়।
পরে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নিশারুল আরিফ রাতেই ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিং করে অভিযানটিকে অপারেশন ‘রিবার্থ’ নামে ঘোষনা দেন। সেখান থেকে বেশ কিছু জিদাহী বই, সিডি ও টাকাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করে ১৩ জুন দিবাগত রাত ৩টা ৩০ মিনিটে থানায় মামলা রুজু করা হয়। এতে নারীসহ ৮ জনকে আসামী দেখানো হয়েছে। তানোর থানার পিএসআই জাহেদুল ইসলাম খন্দকার বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) সিদ্দিকুর রহমানকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বভার দেয়া হয়। দায়িত্ব পেয়ে আসামীদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে রাজশাহীর বিজ্ঞ ৩নং আমালী আদালতে হাজির করা হলে তা মঞ্জুর করে আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম।
মামলার আসামিরা হলো, বাড়ির মালিক ও উপজেলার গৌরাঙ্গপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রমজান আলী (৫৬), তার স্ত্রী আয়েশা বেগম (৪৮), তাদের দুই ছেলে ইব্রাহীম হোসেন (৩১) ও ইসরাফিল হোসেন (২৫), তার স্ত্রী রুমেসা বেগম (২০), ইব্রাহিমের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন (২৮), রমজানের মেয়ে হাওয়া খাতুন (২০) এবং তার স্বামী রবিউল ইসলাম (২৬)। পুলিশ বলছে- এরা সবাই নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছিল।
মামলার এহাজারে বলা হয়, আটক জঙ্গিদের মধ্যে ইসরাফিলের স্ত্রী রুমেসা বেগমের বড় দুলাভাই কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার সাদিপুর শিলাদহ গ্রামের রেজাউল করিমের পুত্র আব্দুস সবুর খাঁন ওরফে সোহেল ওরফে মাহফুজ (সাংগঠনিক নাম) দেশের কুখ্যাত জঙ্গি আসামী। তার মাধ্যমে ইসরাফিলের পরিবার নব্য জঙ্গি খেলাফরের দাওয়াত পায়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জন জঙ্গি বিভিন্ন সময়ে ইসরাফিলের বাড়িতে যাতায়াত করত এবং জিহাদ সম্পর্কে বোঝাত। এতে করে সুইসাইডাল ভেস্ট তৈরি সম্পর্কে তারা ধারণা পায়। ফলে এসব জঙ্গি সমর্থক অর্থ, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকদ্রব্যাদি ছাড়া প্রশিক্ষণ নিয়ে নব্য জঙ্গি সেজে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় বলে মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
অপরদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে থানা পুলিশ ও জেলা সিআইডির ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জঙ্গিবাড়ির বিভিন্ন মালামাল ও জমির কাগজপত্র উদ্ধার করে স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের জিম্মায় দেন। তিনি দায়িত্ব পেয়ে তালাবদ্ধ করে দেন বাড়িটি। এরআগে ১৩ জুন দিবাগত রাতে সুইসাইডাল বোম্ব নিস্ক্রিয় করার সময় বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এতে জঙ্গিবাড়ির দোতলার বারান্দায় টিনের ছাউনি উড়ে যায় এবং মাটির দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে।
এব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল ইসলাম জানান, আটককৃতদের মধ্যে চার নারীসহ ৮ জঙ্গির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে আসামিদের আদালতে তোলা হয়। আদালতে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন বলে জানান ওসি।
পুলিশের প্রথম দফার অভিযানে মর্জিনার তিন মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তামান্না খাতুন (০৮), তাসকিরা খাতুন (০৪), ছয় মাসের শিশু তানসিরা এবং হাওয়া খাতুনের তিন মাস বয়সী এক শিশুকেও উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, এই চার শিশুর মধ্যে তাসকিরা ও তামান্নাকে তাদের স্বজনদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। অন্য দুই শিশু থাকবে তাদের মায়ের সাথে।
অভিযানের ২২ ঘন্টা পর অপারেশন ‘রিবাথ’ শেষ হয়। অভিযানে বাড়ি থেকে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়। এছাড়া বাড়ির ভেতরে বেশ কিছু জিহাদি বই, সিডি, সুইসাইডাল ভেস্ট তৈরির উপকরণ, নগদ দুই লাখ টাকা, একটি ল্যাপটপ, পাঁচটি মোবাইল ফোন ও দুটি মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তানো


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ