পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : পিঠেপুলিসহ নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে পালিত হলো নবান্ন উৎসব। দেশের খাদ্য উৎপাদন চক্রে আবাদের সময়ের কিছুটা হেরফের হলেও আবহমানকাল ধরে চলে আসছে অগ্রহায়ণের প্রথম দিনটাকে নবান্ন উৎসবের দিন হিসেবে।
বিশেষ করে ধান উৎপাদনের তিনটি মওসুমের মধ্যে আমন ধান কাটাকে কেন্দ্র করে হয় নবান্ন উৎসব। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যদিও আমন কাটা শুরু হয়েছে কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে। আর তা চলবে অগ্রহায়ণজুড়েই। এ মাসেই দিগন্তজোড়া ফসলের ক্ষেত নজরে পড়ে। যেমন চলে ধান কাটাই মাড়াই। আবার শীতকালীন নানা শাকসবজির সবুজ ক্ষেত। যা কারো মন হরণ না করেই পারে না। এখন যেমন মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটা তেমনি গেরস্ত বাড়ির খৈলানে ঝাড়াই মাড়াই। নতুন ধান থেকে চাল তৈরির জন্য সেদ্ধ করার সময় ধানের সোঁদাগন্ধ বলে দেয় নবান্ন শুরুর কথা। নতুন ধানের চালের পায়েস, ভাপা পিঠাসহ রকমারি খাবার সময় তো এখনি।
সময়ের সাথে হিসাব করে এসময় শুরু হয় খেজুর গুড় আর আখের গুড় তৈরি। গুড় ছাড়া পিঠে পায়েস তো কল্পনা করা যায় না। টাটকা চাল আর গুড়ের সৌরভ যার স্বাদই আলাদা। বছরের অন্য সময়ের এসব পিঠেপুলির স্বাদ আর এখনকার স্বাদের মধ্যে ফারাক আকাশ-পাতাল। বহুকাল ধরে বছরের এ সময়টায় মেয়ে জামাইকে নায়রে নিয়ে আসার প্রচলন চলে আসছে। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে চলে নবান্নের উৎসব। খেজুরের রস আর নতুন চালের পায়েস এসময় ছাড়া আর কখন মিলবে। শীত এখনো জাঁকিয়ে বসেনি। যত শীত পড়বে ততই খেজুর গাছে রস ঝরবে। আর সাঁঝের বেলার রসের কথা কি ভোলা যায়। শীত জাঁকিয়ে না বসলেও নগরে ভাপা পিঠে চলে এসেছে। রিকশা-ভ্যানে করে গরম গরম ভাপা পিঠে বিক্রি হচ্ছে সূর্যাস্ত যাবার পর থেকে। বিক্রি হচ্ছে অনেক রাত পর্যন্ত। ভোরবেলায় পদ্মা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে বসেছে অস্থায়ী ভাপা পিঠের দোকান। মহল্লায় মহল্লায় ভাপা পিঠের দোকান বসতে শুরু করেছে। মূলত নগরীতে ভাপা পিঠের কদর বেশি। সকাল-সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠের স্বাদ নিচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। গ্রামের ঘরে ঘরে নানা রকম পিঠে-পায়েস তৈরি হলেও নগরজীবনের চিত্র ভিন্ন। ভাপা পিঠের দোকানগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এর সবচেয়ে বেশি ক্রেতা হলো শিক্ষার্থীরা। এখন বিকেলের নাশতা সিঙ্গাড়া-পুরির বদলে ভাপা পিঠের স্বাদ নিতে ব্যস্ত। গ্রামে বাড়ি হলেও সব সময় তো আর যাওয়া হয় না। তাই মা-খালাদের হাতের সুস্বাদু পিঠার স্বাদ মেটাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ পিঠেওয়ালাদের কাছ থেকে। নতুন চাল, খেজুরের গুড় আর নারকেল দিয়ে তৈরি গরম গরম ভাপা পিঠে সব শ্রেণীর মানুষের রসনা মেটাচ্ছে। নগরীর স্থায়ী বাসিন্দারাও নানা ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ঘরে এসব তৈরি করতে পারেন না। তাই এসব পিঠেওয়ালাদের কাছ থেকে পিঠে নিয়ে সাধ মেটাচ্ছে। এসব পিঠের আবার রকমফের রয়েছে। অর্ডার দিয়ে স্পেশাল বানানো যায়। সাধারণ পিঠে পাঁচ টাকা করে হলেও অর্ডার দেয়া পিঠে দশ-পনের টাকা। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য মিষ্টি ছাড়া ভাপা পিঠে তৈরি করা হচ্ছে মুরগির গোশতের ঝোল দিয়ে খাবার জন্য। নানাভাবে উপভোগ করছেন ভাপা পিঠের স্বাদ। শীত যত বাড়বে ততই রকমারি পিঠার দেখা মিলবে। আয়োজন করা হবে পিঠেপুলির মেলার। শহরে যখন এমন অবস্থা সেখানে গ্রামের ঘরে ঘরে তো ভিন্নরকম উৎসব। নবান্ন উৎসব বাংলার সব সম্প্রদায়ের উৎসব। বাংলার কৃষি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উৎসব। গবেষকদের মতে, এ সময়টা হলো বাঙালিদের কাছে নবান্ন। উপজাতি হাজংদের কাছে নয়াগাওয়া, কোজদের কাছে গেটেল চাওয়া। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্নভাবে নবান্ন পিঠে করা হয়। গ্রামে গ্রামে পিঠেপুলির আয়োজন দেখে মনে মনে আওড়াতে পারেন জীবনান্দ দাশের সেই কবিতা ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়। হয়তো মানুষ নয় হয়তো শঙ্খচিল শালিকের বেশে। হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে। প্রকৃতি রূপ রসে ভরে ওঠে চার পাশ কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারিদিক আর কৃষকের গোলায় উঠছে পাকা ধান।’
অগ্রহায়ণের প্রথম দিকেই রাজশাহী আর তার আশপাশের মানুষ মেতে উঠেছিল নবান্ন উৎসবে। সকালে সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য র্যালি এরপর নবান্নকে নিয়ে আলোচনা সাংস্কৃকিত অনুষ্ঠান আর নবান্নের পিঠা উৎসব। দুপুরে পবা উপজেলার নওহাটার মহানন্দাখালী বিলে ধান কাটা মাড়াই আলোচনা সভা আর পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নিয়ে প্রাণবন্ত করে তোলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। নবান্নের উৎসব শুরু হলেও এর রেশ চলবে পুরো মাস ধরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।