Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় সৌম্য-মুস্তাফিজ-তাসকিনরা

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : হার-জিতের হিসেব বাদ দিলে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে যতগুলো সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের তার অপর নাম মুস্তাফিজুর রহমান। এই ভারতের বিপক্ষেই তার সাড়া জাগানো আবির্ভাব। প্রথম দুই ওয়ানডেতেই ১১ উইকেট নিয়ে গড়েছিলেন ইতিহাস। ২০১৫ সালে সেই সিরিজে ৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট নেওয়ার পর এই প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছেন মুস্তাফিজ। তবে এই সময়ে দুবার খেলেছেন টি-টোয়েন্টি। দুটি অভিজ্ঞতাই ছিল হতাশার।
২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে ৪ ওভারে দিয়েছিলেন ৪০ রান। কদিন পর টি-টোয়োন্টি বিশ্বকাপে ৪ ওভারে ৩৪ রানে দুটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন মুস্তাফিজ। তবে সেই ম্যাচ তো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডিগুলো একটির। বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচে শেষের দিকে ভজকট পাকিয়ে হারে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচ এখনও পোড়ায় অনেককে। তবে অতীত ভুলে, আপাতত কাটার মাস্টারের মন জুড়ে স্বপ্নের সেমি-ফাইনাল। জানালেন উপহার দিতে চান ভালো কিছু, ‘সেমি-ফাইনালে উঠতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে। ক্রিকেটাররা সবাই কম বেশি ভালো করেছে। ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল। সবাই ফুরফুরে মেজাজে আছে। আশা করি ভালো কিছু হবে।’
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অবশ্য এখনো ঠিক নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফের ম্যাচে দারুণ ইয়র্কারে একটি উইকেট অবশ্য নিয়েছেন। এজবাস্টনকে ঘুরে দাঁড়ানো আর জয় করার মঞ্চ যদি তিনি বানাতে পারেন, তাহলে কিন্তু রচিত হবে আরও একটি রূপকথাই। তবে প্রতিপক্ষ যখন ভারত, ২০১৫ সালের সেই সিরিজের পর প্রথম ওয়ানডেতে মুস্তাফিজের কাছে প্রত্যাশাও বেশি থাকবে অনেকের। তবে ভারত বলে আলাদা কিছু ভাবছেন না বাঁহাতি পেসার, নিজেকে উজার করে দিতে চান সবসময়ের মতোই, ‘বিশ্বাস সবসময়ই করি। আমি সবসময় যেটা ভাবি, সেটা করার চেষ্টা করি। বোলিংয়ে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি সবাই ভালো করতে পারি, ভালো কিছুই হবে।’ এই টুর্নামেন্টে এখনও অবশ্য দারুণ কিছু করতে পারেননি মুস্তাফিজ। জানালেন উইকেট একটি বড় কারণ, ‘শেখার শেষ নেই। আমার কাটার দেশের উইকেটে ভালো ধরে। এখানে অত বেশি হচ্ছে না। তবু চেষ্টা করছি ভালো করার।’
মাশরাফি বিন মুর্তজাও কদিন আগে বলেছেন, ইংল্যান্ডের উইকেটে বোলিংয়ের ধরনটা শিখছেন মুস্তাফিজ। অধিনায়কের বিশ্বাস, ২০১৯ বিশ্বকাপে এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে মুস্তাফিজের। তবে দারুণ কিছুর সুযোগ আছে এবারও। মুস্তাফিজ আরেকবার জ্বলে উঠলে, ভারতকে হারাতে পারলেই চ্যাম্পিয়্স ট্রফির ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। মাঠে আসা সমর্থকদের, দেশের মানুষকে দারুণ কিছুই উপহার দিতে চান মুস্তাফিজ, ‘যারা আসে মাঠে সবাই দেশের খেলা বলেই দেখতে আসে। আমাদেরকে ভালোবাসে বলেই আসে। আমরা চেষ্টা করব ভালোবাসার সম্মান রাখার জন্য, দেশের মানুষের সম্মান রাখার জন্য।’
২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে বোলিংয়ে ঝড় তুলেই ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল আরেকজন, তাসকিন আহমেদের। আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগের কথা। ওটাও ছিল এই জুন মাসেই। ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সেদিন তাসকিন বাংলাদেশের জয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন দারুণভাবেই। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সে ম্যাচ বাংলাদেশ জিততে পারেনি। সেটি ভিন্ন আলোচনা। তবে তাসকিন সেদিন দারুণভাবেই দিয়ে রেখেছিলেন নিজের আগমনী বার্তাটা। এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ৫ ওয়ানডেতে ১২ উইকেট তাঁর। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গ্রæপের শেষ ম্যাচে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেট নিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে দারুণ রেকর্ডের ধারাবাহিকতাটা এজবাস্টনের সেমিফাইনালে বজায় রাখতে পারলে এই ম্যাচে বাংলাদেশের ভালোই সুযোগ আছে।
মুস্তাফিজের টুইটার পেজে পোস্ট করা ছবির আরও একজন সৌম্য। ২০১৫ বিশ্বকাপে সাতক্ষীরার এই তরুণের ব্যাটেই শুরু হয়েছিলে নতুন দিনের পথে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পথচলা। ভারতের বিপক্ষেও তাঁর রেকর্ড বেশ ভালো। চারটি ওয়ানডে ম্যাচে মোট রান ১৫৭- গড় ৩৯.২৫। ২০১৫ সালের জুনে ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তিনটি ম্যাচে তাঁর স্কোর ছিল যথাক্রমে ৫৪, ৩৪ ও ৪০। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালোই খেলেছিলেন। ডাবলিনে নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আছে দুটি ফিফটি- একটি ৬১, অন্যটি ৮৭ রানের। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শুরুটাও মন্দ করেননি। ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ভালো খেলতে খেলতে ২৮ রানে আউট হয়ে ফিরেছিলেন। দৃষ্টিনন্দন সব শটে সেদিন ওভাল মাতাচ্ছিলেন তিনি। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিষ্প্রভ তাঁর ব্যাট। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে সেই আপ্তবাক্য তো তাঁর জন্য দারুণভাবে প্রযোজ্য- এটাই সময় ঘুরে দাঁড়ানোর ও জয় করার।
এজবাস্টনের সেমিফাইনাল বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরা জাতীয় কিছু নয়। তবে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র তো বটেই। মুস্তাফিজ-সৌম্য-তাসকিনরা এই ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারছেন- এটা নিশ্চিত। এখন প্রয়োজন কেবল মাঠের সমীকরণটা মিলিয়ে নেওয়াই। নিজেদের ক্যারিয়ারকে ভিন্নমাত্রা দেওয়ার এক মস্ত সুযোগও এজবাস্টনের সেমিফাইনাল।
আগামীকাল বার্মিংহামের ঐতিহাসিক এজবাস্টন মাঠে সেই অস্ত্রগুলোই ঠিকঠাক কাজ করলেই বিরাট কোহলির শক্তিশালী ভারতীয় দলের বিপক্ষে দারুণ কিছুর আশা বাংলাদেশ করতেই পারে। এই তিন অস্ত্রকেই এদিন গর্জে উঠতে হবে। এই ত্রয়ী কি পারবেন দেশবাসীর সেই প্রত্যাশা ভার কাঁধে তুলে নিয়ে বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুস্তাফিজ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ