পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অতিবৃষ্টি ও জোয়ারে ফের ভাসছে চট্টগ্রাম : জনদুর্ভোগ চরমে : বন্দরে অচলাবস্থা : বহির্নোঙরে তিন কার্গোজাহাজ দুর্ঘটনা : স্থল নি¤œচাপ দুর্বল হয়ে ভোলা-কুমিল্লা হয়ে গেল ত্রিপুরায়
শফিউল আলম : মৌসুমি নি¤œচাপের সক্রিয় প্রভাবে দেশের সমগ্র উপকূলজুড়ে বিরাজ করছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। গত রোববার রাত থেকে গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ উপকূলভাগের সর্বত্র হিমেল দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে অতি বর্ষণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সামুদ্রিক প্রবল জোয়ারের সঙ্গে অতিবৃষ্টিতে ফের ভাসছে বন্দরনগরীর ‘নাভি’ আগ্রাবাদসহ ব্যাপক এলাকা। চট্টগ্রাম নগরীর অনেক জায়গায় হাজারো বাড়িঘর, দোকানপাট, গুদাম, আড়ত পানি ও ময়লা-জঞ্জালে সয়লাব হয়ে গেছে। কাদপানি ও আবর্জনা অপসারণ করতে গিয়ে রোজাদারদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এবার প্রাক-বর্ষায় এ নিয়ে তিন দফা ডুবলো মহানগরীর ব্যাপক এলাকা। ঘোর বর্ষায় কী বিপদ হয় তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় নগরবাসী। মৌসুমি নি¤œচাপের কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে চট্টগ্রামে গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯২ কিলোমিটারে উঠে। দিনভর দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া, অতিবর্ষণ, সাগর উত্তাল ও ৩নং সতর্ক সঙ্কেত বহাল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙরে আমদানি-রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী উঠানামায় বিরাজ করছে অচলাবস্থা। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে অধিকাংশ রাস্তাঘাট সড়কে একদিকে যানবাহনের সঙ্কট, অন্যদিকে তীব্র যানজটে বিভিন্ন গন্তব্যমুখী অগণিত মানুষ পড়েছেন বিপাকে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে দুপুরের দিকে ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিমেন্ট কারখানার কাঁচামাল ক্লিংকার বোঝাই দু’টি লাইটার জাহাজ ‘এমভি হাজী কায়েস’ ও ‘এমভি অলিম্পিক-২’ কাত হয়ে ডুবে গেছে। উভয় জাহাজের নাবিকরা অন্য নৌযানের সাহায্যে নিরাপদে কুলে ফিরেছেন। তাছাড়া বহির্নোঙরের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত একটি লাইটারেজ জাহাজ ‘এমভি অনন্যা-২’ তীব্র ঝড়ো হাওয়ার ধাক্কায় পতেঙ্গা সৈকতের কংক্রিট বাঁধের কিনারে আছড়ে পড়ে। জাহাজটির তলা ফুটো হওয়ার কারণে ডুবে যেতে পারে যেকোনো সময়। গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এদিকে মৌসুমি নি¤œচাপটি দুর্বল স্থল নি¤œচাপের আকারে গতকাল সারাদিনের গতিপথ পরিক্রমায় দক্ষিণের ভোলা উপকূল হয়ে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুমিল্লার উপর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় পৌঁছে যাচ্ছে। তবে এর বর্ধিত প্রভাবে আজও (মঙ্গলবার) ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী এমনকি অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
দীর্ঘ ভ্যাপসা গরমের পর বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ুমালার প্রথমে আগমন এবং এরপর ক্রমশ সক্রিয় হতে না হতেই ভারতের উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূলের বিপরীতে উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়াবাহী একটি মৌসুমি নি¤œচাপ বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসে। এর সক্রিয় প্রভাবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালীসহৃ সমগ্র উপকূলভাগে রোববার থেকে ঘনঘোর মেঘে আকাশ কালো করে শুরু হয় টানা বৃষ্টিপাত। সেই সাথে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া। গতকাল মৌসুমি নি¤œচাপের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২ ফুট বেশি উঁচু সামুদ্রিক জোয়ার বয়ে যায় বিশেষত চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোতে। চট্টগ্রামে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয় ভরা জোয়ার। সেই সাথে অতি বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ, এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, হালিশহর, বন্দর কলোনীসহ অনেক এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। মহেশখালের অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে পানি নামতে না পারায় বিস্তীর্ণ এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে পানিবদ্ধতা। এ অবস্থায় হাজার হাজার বাড়িঘর, দোকানপাট, গুদাম, আড়ত, হাট-বাজার, মসজিদ, রাস্তাঘাট, অলিগলি কাদাপানি ও আবর্জনায় সয়লাব হয়ে আছে। নগরীজুড়ে জনদুর্ভোগ সীমাহীন। বিভিন্ন খাল-নালা উপচে গিয়ে বাড়িঘর, দোকানপাটের ভেতরের কাদাপানি, বালির স্তূপ আর ময়লা-আবর্জনা সরানোর কাজে এলাকাবাসীকে গতকাল রাত অবধি হয়রান হতে হয়।
গতকাল দুপুরে প্রবল বৃষ্টি ও জোয়ারের সময় আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও আশপাশের পানিবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, মহেশখালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ, অপরিকল্পিত বাঁধটি অপসারণ, খাল-নালাসমূহ সংস্কার, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড উঁচু করে উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে আগামী বর্ষা নাগাদ এই অঞ্চল (আগ্রাবাদ) পানিবদ্ধতামুক্ত হবে আশা করা যায়। তিনি বলেন, এ বছর যেভাবে জোয়ারের পানি উঁচু হয়ে উঠেছে এবং পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে আগে এমনটি হয়নি। এখন পরিকল্পিতভাবে নগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনের প্রচেষ্টা চলছে।
মৌসুমি নি¤œচাপের সাথে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব যুক্ত হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গতকাল গাঢ় মেঘের বলয়ে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সাথে বজ্রসহ ভারী বর্ষণ নামে। সেই সাথে সকাল থেকে ক্রমশ জোয়ারের পানি বেড়েই চলে। এতে করে ব্যাপক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। জোয়ারের সাথে ভারী বর্ষণে বিশেষত আগ্রাবাদ, এক্সেস রোড ও হালিশহর এলাকা পানিতে থৈ থৈ করে। এছাড়া নগরীর চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, শোলকবহর, ষোলশহর, নাসিরাবাদ, বাকলিয়া, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, রাজাখালী, আগ্রাবাদ, সাগরিকা, হালিশহর, পতেঙ্গাসহ অনেক এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। নগরীতে পাহাড়-টিলা কাটা মাটি, বালি এবং নির্মাণ কাজের বালি-মাটিতে রাস্তাঘাটে সর্বত্র স্তুপ পড়ে গেছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। বৃষ্টির পানি উপচে গেছে এ কারণে। বিকেলের পর বর্ষণ কমলেও নগরীর অনেক জায়গায় বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আটকে থাকায় জনদুর্ভোগ ছিল অশেষ।
এদিকে আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় জানা গেছে, ভোলা ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নি¤œচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল দুপুর ১২ টায় স্থল নি¤œচাপ আকারে কুমিল্লা ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হতে পারে। স্থল নি¤œচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এবং বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
দেশজুড়ে বর্ষণ : ঢাকায় ১৩৩, চট্টগ্রামে ১৯০ মিলিমিটার
মৌসুমি স্থল নি¤œচাপটির সক্রিয় প্রভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সাথে গতকাল সমগ্র দেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই সঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্থানভেদে ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে গেছে। বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ু দেশে বিস্তৃত হয়েছে। আজও ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় মাঝারি বর্ষণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে উত্তরের জনপদ রাজশাহী ও রংপুরে বৃষ্টি হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে।
গত সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামে ১৯০ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় বর্ষণ ১৩৩, ময়মনসিংহে ৯২, রাঙ্গামাটিতে ১৬৫, চাঁদপুরে ১২০, কক্সবাজারে ১০৪, সিলেটে ৩৫, রাজশাহী ও রংপুরে ৫, খুলনায় ৩৪, বরিশালে ৭৯ মিলিমিটার। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ও ২৫ ডিগ্রি সে.।
দুর্বল স্থল নি¤œচাপটি কুমিল্লা হয়ে ত্রিপুরার উপর দিয়ে কেটে যাওয়ার পরবর্তী বর্ধিত প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যহত রয়েছে এবং বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর বিস্তার লাভ করেছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে ৪ ডিগ্রি সে. ফের বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। এর পরবর্তী ৫ দিনে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।