Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

টানা বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : রাজধানীতে বৃষ্টি মানেই পানিজট-যানজট। স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই রাজপথ ও অলি-গলিতে পানি জমে যায়। এ পানিতে ছড়িয়ে পড়ে ব্যবস্থাপনার বাইরে থাকা বিপুল পরিমান বর্জ্য। এতে নাগরিকদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগ-বিড়ম্বনায়। পানি জমতে যে সময় লাগে, তার থেকে বেশি সময় লাগে পানি সরতে। এ জন্য নগরবাসী দুষছেন ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে। তাদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি আমলে নিচ্ছে না।
দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খানাখন্দক ও খোঁড়াখুঁড়ির গর্তে বৃষ্টির পানি জমে একাকার হয়ে আছে। কোথয় সমতল আর কোথায় খানাখন্দক বুজার উপায় নেই। এ সব সড়কে প্রতিদিন অহরহ ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। গতকালের টানা বৃষ্টিতে এ সড়কগুলোদিয়ে চলাচলকারীদরে পড়তে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বারবার জানানোর পরও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছে না। দুই সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা অফিসে বহু অভিযোগপত্র জমা পড়েলেও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি রাজধানী ঢাকাকে শতভাগ পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনার জন্য ২০১২ সালে ঢাকা ওয়াসা যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তাও মুখ থুবড়ে বড়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল ইনকিলাববে বলেন, ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাষণের প্রধান দায়িত্ব ওয়াসার। কারণ ঢাকা শহর থেকে বড় অংকে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম স্যুয়ারেজের দায়িত্ব তাদের কাছে। আমাদের কাছে শুধু মাত্র কিছু ছোট খাট ড্রেনের দায়িত্ব।
আর মাত্র একদিন পরেই বর্ষা মৌসুম শুরু। শেষ জ্যেষ্ঠের ভ্যাপসা গরমে নগরবাসীর জীবন ওষ্ঠাগত। রমজানের এইদিনে সবাই একটু শস্তির আশায় অপেক্ষা ছিলেন, কখন নামবে বৃষ্টি। গত রবিবার বিকাল থেকেই সে প্রতিক্ষিত বৃষ্টির দেখা পেয়েছে নগরবাসী। বিকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি গতকাল সোমবার সারা দিন থেমে থেমেই ঝরেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সূত্র জানা গেছে, রবিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
রাতের বৃষ্টি স্বস্তি দিলেও গতকাল সোমবার সকালে অফিসযাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। গণপরিবহন কম থাকা এবং বেশিরভাগ বাসস্ট্যান্ডে পানি জমে থাকায় এলোমেলো হয়ে গেছে পরিবহন ব্যবস্থা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী ফ্লাইওভার এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত তীব্র যানজট। অন্য রাস্তাগুলোতে হঠাৎ হঠাৎ তীব্র যানজট হলেও বেশিরভাগ রাস্তা ছিল ফাঁকা।
রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট থেকে কাওরান বাজার, পান্থপথ সিগন্যাল থেকে ৩২ নম্বর ও ধানমন্ডি ২৭ থেকে সায়েন্সল্যাবের রাস্তায় মাঝারি যানজট তৈরি হলেও অন্যান্য রাস্তা বৃষ্টিতে ফাঁকা দেখা গেছে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিন অনুযায়ী নিম্নচাপটি আরও উত্তর ও উত্তর পূর্বে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে রাজধানীর গুলিস্তান, সিদ্দিক বাজার, বাবুবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্নি এলাকায় সড়কে পানি থৈ থৈ করছে। পুরাতন ও অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি দ্রæত নিষ্কাশন হতে না পেরে মুল সড়ক ও অলিগলিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ে। এছাও মুগদাপা, মানিকনগর, মতিঝিল, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, টাউন হল, আসাদ গেট, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, গুলশান, বনানী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা শহরের প্রাণ কেন্দ্র মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় এ এলাকার রাস্তাগুলো এখন চলাচলে একেবারই অযোগ্য। তাই এ এলাকার রাস্তাগুলোতে যানজট সকাল-দুপুর, রাত-দিন সবসময় লেগেই থাকে। এ থেকেই সারা শহর জুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই রাজধানীর যানজট এখন সাপ্তাহের সাত দিনই থাকে। বিশেষ করে কর্মদিবসের শুরুর দিন রোববার, প্রথানমন্ত্রী সচিবালয়ে অফিস করেন সোমবার আর কর্মদিবসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এ তিনদিন রাজধানীর রাস্তায় ভয়াবহ যানজটে সৃষ্টি হয়। এ সময় নগরবাসীকে রাস্তায় নেমেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
জানা গেছে, গত প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে রাজধানীর মাত্র ৩০ শতাংশ এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এ সব লাইনের বেশিরভাগই এখন অকেজো। কর্তৃপক্ষ যেখানে লিকেজ পাচ্ছে, সেখানে সংস্কারের চেষ্টা করছে। স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের একটি মহাপরিকল্পনা ২০১২ সালে ওয়াসা নেয়। কিন্তু অত্যন্ত ধীরগতি ও পরিকল্পনা মাফিক কাজ না হওয়ায় এ প্রকল্পও অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়াছে।
তৎকালীন সময় প্রায় ১৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা (১৬০ কোটি ডলার) ব্যয়ে ডেনমার্কের গ্রন্টমিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসার অধীনে প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ও ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিএমডিপি) অঞ্চলের মোট ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনার এ মহাপরিকল্পনা তৈরি করে।
রাজধানী পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রাজন খান বলেন, এ এলাকার ড্রেনেজ ও সুয়্যারেজ লাইনের ত্রæটির জন্য প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের। বেশি বৃষ্টি লাগে না, হালকা বৃষ্টিই যথেষ্ট হাঁটু পানি হওয়ার জন্য। ড্রেন দিয়ে তো পানি যায়-ই না, বরং ড্রেনের ময়লা ওই পানির সঙ্গে মিশে যায়। স্যুয়ারেজ লাইনের ঢাকনা খুলে রাখলেও পানি যায় না, বরং মল-মূত্র ভেসে ওঠে।
তিনি আরও বলেন, একবার পানি জমলে পানি নামতে কয়েকদিন লেগে যায়। দুর্গন্ধে এলাকা দিয়ে চলাচল তো দূরের কথা, বাড়িতেও নাক চেপে থাকতে হয়। বিশেষ করে গলির ভেতরের বাসিন্দাদের খুবই সমস্যা হয়। রাস্তার চাপ কলের পানিতেও ড্রেন-স্যুয়ারেজের ময়লা চলে আসে। এ ব্যাপারটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধান চাইলেও এখন পর্যন্ত দুর্ভোগ কমেনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
মৌচাক এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মমিন মেহেদী বলেন, বৃষ্টিতে পানি জমলে হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট উঠিয়ে তারপর কর্মস্থলে যেতে হয়। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা, জরাজীর্ণ রাস্তা সংস্কার না হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
কুড়িলের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন, এই এলাকায় বৃষ্টি হলে বন্যার মতো আবস্থা হয়ে যাওয়া সাধারণ ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। চল্লিশ বছরের ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ লাইন পুরোপুরি অকেজো। একবার পানি উঠলে সপ্তাহখানেকের আগে নামে না। অপবিত্র পানির জন্য বাসা থেকে বের হতে পারি না। আজান দিলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারি না। শুধু আমি কেন, এলাকার কেউই মসজিদে যেতে পারেন না। তার ওপর এ ময়লা পানি যদি মসজিদের সীমানা পর্যন্ত চলে যায় তাহলে পবিত্রতা কীভাবে রক্ষা হয়।
এ ছাড়াও ভারি বর্ষণের দিনগুলোতে দেখা যায়, বৃষ্টির ফলে রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, জুরাইনসহ বেশকিছু এলাকার শিক্ষার্থীরা জুতা হাতে নিয়ে হাঁটু সমান পানি পার হয়ে বিদ্যালয়ে হয়। কুড়িলে তো ছোট ছোট পথশিশুরা এই ময়লা পানিতেই সাঁতার কাটে।



 

Show all comments
  • সৌরভ ১৩ জুন, ২০১৭, ১:৪৫ এএম says : 0
    রাস্তাগুলো যেন এখন নদী আর খাল হয়ে গেছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

৫ অক্টোবর, ২০২২
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ