Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সউদী আরবের প্রতি ট্রাম্পের গুরুত্বপ্রদান সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে সোনালি সুযোগ

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল : রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তৃতা মুসলিম দেশগুলোকে ইরানের আঞ্চলিক আকাক্সক্ষা মোকাবেলা এবং সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থীদের বিতাড়িত করার জন্য উৎসাহিত করেছে।
সউদী আরবের উপ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কর্তৃক গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কাতার ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সকল সদস্যসহ ৪১টি সুন্নী দেশের সমন্বয়ে ন্যাটোর অনুরূপ ইসলামী সামরিক সন্ত্রাস দমন জোট গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য হচ্ছে অধিক কার্যকরভাবে কাজ করতে সাহায্য করার জন্য জোটের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় করা।
ট্রাম্পের সফরের পর উগ্রপন্থী ইসলামী গ্রæপগুলোকে মদদ দেয়ার অভিযোগে সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউ এ ই) ও বাহরাইন কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
এ ঘটনা এ চারটি দেশই যে সংগঠনের সদস্য সেই জিসিসির উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে তা এখনই স্পষ্ট নয়। তবে যা নিশ্চিত তা হল মঙ্গলবার তেহরানে ইরানী পার্লামেন্ট ভবন ও আয়াতুল্লাহ খোামেনীর মাজারে আত্মঘাতী বোমা হামলা ইসলামী জোটের মধ্যে জরুরি বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তাদের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা দ্রæত জোরদারের বিষয়টি সমন্বয় করা প্রয়োজন হবে।
ইসলামিক স্টেটের মিডিয়া শাখা আমাক এ দামলার দায়িত্ব দাবি করলেও এবং ইরান ও জিসিসি দেশগুলোকে হুমকি দিলেও ইরান এ হামলাকে জিসিসি দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করতে পারে।
সন্ত্রাস দমন কৌশল
যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমন ও উগ্রপন্থা দমনে সউদী আরবের কাছ থেকে বর্ধিত সহযোগিতা চায়। উগ্রপন্থী মতবাদ দমন বিশ^ কেন্দ্র উদ্বোধনে যোগ দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সউদী আরব সফরের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
এটা হচ্ছে সন্ত্রাস দমনে সউদী নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টার অংশ।
সউদী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আইডিওলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার সেন্টার (আইডবিøউসি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ ও এর মতাদর্শিক উৎস দমনের চেষ্টা শুরু করে।
আইডবিøউসি ডিজিটাল উগ্রবাদ মনিটর ও চূড়ান্তভাবে তা মোকাবেলার লক্ষ্যে মোহাম্মদ বিন সালমানের তত্ত¡াবধানে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল এক্সট্রিমিজম অবজারভেটরির সাথে যোগাযোগ করে।
সউদী -মার্কিন সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে গঠিত সউদী -আমেরিকান জনসংযোগ বিষয়ক কমিটির (এসএপিআরএসি) সভাপতি সালমান আল আনসারির মতে, আইডবিøউসি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ইসলামী জোটের সদস্য দেশগুলোর প্রচেষ্টা সমন্বিত করতে চায়।
আইডবিøউসি-র উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার বিভিন্ন কৌশলঃ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর গোয়েন্দা ডাটাবেস বিনিময়, উগ্রবাদ দমন বার্তার সাথে সংযোগ স্থাপনে মিডিয়া উদ্যোগ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় প্রতিটি সদস্য দেশের সামর্থ অনুযায়ী সামরিক সমর্থনের সমন্বয়।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা ও ইতালি সদস্য দিশগুলোর সমন্বয়কে সমর্থন করে এবং এ প্রচেষ্টা থেকে স্বদেশে সৃষ্ট বা আমদানিকৃত সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় বর্ধিত গোয়েন্দা তথ্য ও সমর্থন লাভ করে সম্ভবত লাভবান হতে পারে।
আইডবিøউসি মার্কিন স্টে ডিপার্টমেন্ট এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশন ফর সোমালিয়ার মত আন্তর্জাতিক সরকারী দফতর এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ , ন্যাটো ও ইন্টারপোলসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় রাখতে চায়।
কয়েকটি মর্যাদাবান বৈশি^ক অর্থ-তছরূপ বিরোধী সংগঠনের সাথে কাজ করে এবং বৈশি^ক সন্ত্রাস-দমন ফোরাম ও উগ্রপন্থা মোকাবেলা প্রকল্পের মত উগ্রবাদ / সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা সংস্থাগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের জন্য কিভাবে আর্থিক সহায়তা তহবিল দেয়া হয় সে বিষয়ে ইসলামী জোটভুক্ত দেশগুলোতে সরকারী সংস্থাগুলোর জন্য আইনগত দিকনির্দেশনা প্রণয়ন এর লক্ষ্য।
সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এ ইসলামী জোট সাইবার হামলা প্রতিরোধ ও সাইবার হামলার ক্ষেত্রে দ্রæত সাড়া দিতে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ন্যাটোর কোঅপারেটিভ সাইবার ডিফেন্স সেন্টার ফর এক্সিল্ন্সে (সিসিডিসিওই)-এর পাশাপাশি ফোরাম ফর ইনসিডেন্ট রেসপন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি টার্মস (ফার্স্ট)-এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
ইসলামী জোটের সাথে সহযোগিতা পশ্চিমা সংস্থাগুলোকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে বর্ধিত গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করবে।
দৃঢ়তা
এ সবই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক রিপোর্টে বিপত্তির শিকার হয়েছে যাতে পাশ্চাত্যে আল কায়েদার সাথে সম্পর্কিত দাতব্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সালাফিবাদ বিস্তারে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের জন্য সউদী আরবকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সালাফিবাদ যাকে ওয়াহাবিবাদও বলা হয়ে থাকে, কুরআনের সাহিত্যিক পাঠে বিশ^াস করে যা যা যুক্তিবাদী ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে। এটা মৌলবাদী মতবাদে বিশ^াস করতে উৎসাহিত করে যা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে এবং জিসিসি ও পাশ্চাত্য উভয়ের প্রতি নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করেছে।
অনুরূভাবে জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভি এবং ফেডারেল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (বিএনডি) কাতার ও কুয়েতসহ সউদী আরবকে সউদী মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের মাধ্যমে সালাফিবাদের প্রসারে মসজিদ, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং উগ্রপন্থীদের অর্থ প্রদানের জন্য অভিযুক্ত করেছে।
কিন্তু সালাফিবাদ বা ওয়াহাবিবাদের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করার বদলে আইডবিøউটিসির পরিচালক ড. মোহাম্মদ আর ইসা জোর দিয়ে বলেন যে আইডবিøউসি ইসলামকে আলিঙ্গন, ভালবাসা ও সকলের গ্রহণযোগ্য ধর্ম বলে বিবেচনা করে।
তিনি বলেন, সেন্টার যে ইসলামের বিােধিতা করে তা হচ্ছে সকল যুক্তির বাইরে গিয়ে উগ্রপন্থা, ঘৃণা ও বর্জনের কথা বলে।
যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসলামের আধুনিক রূপ প্রচারে সউদী আরবের দৃঢ়তা এবং উগ্রপন্থী ইসলামী গ্রæপগুলোকে মদদ দান বন্ধে কাতারের প্রতি তার চাপ মনিটর করতে হবে।
এটা কাতারকে সন্ত্রাসবাদ দমন ও উগ্রবাদ দমনে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ জোরদার করতে জিসিসি দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সক্ষম করবে।
এটা শুধু তখনি কার্যকরভাবে ঘটতে পারে যদি তারা তাদের অঙ্গীকারে ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং আন্তর্জাতিকভাবে কুরআনের অ-সাহিত্যিক পাঠ বৃদ্ধি করে।
সউদী আরবের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপ্রদান মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য অভ্যন্তরীন সংস্কার কর্মসূচি এবং সউদী নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থা দমন উদ্যোগ জোরদার করার এক সোনালি সুযোগ যা লন্ডন ও ম্যানচেস্টারের মত হামলা রোধ করতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী আরব


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ