পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মধুমাসে মধুফলের জমজমাট বাজার
রেজাউল করিম রাজু : মধু মাসের শেষ প্রান্তে এসে জমে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের মধুফল অর্থনীতি। হাটে বাজারে গ্রামে শহরে মহল্লায় মধুফল বিশেষ করে আমের ছড়াছড়ি। গোলাপী আবীর ছড়িয়ে ক্ষনিকের অতিথি হয়ে আসা রসে টুইটুম্বর লিচু বিদায়ের পথে থাকলেও রসালো শাঁসালো স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় ফলের রাজা আম এখন সর্বত্র। জমে উঠেছে আম বাণিজ্য। উত্তরের প্রায় জেলাতেই আম লিচুর আবাদ ভাল হচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। উচ্চ ফলনশীল জাতের আম লিচুর বাগান তৈরি হচ্ছে বাণিজ্যিক ভাবে। ধানসহ অনেক শাক-সবজির জমি এখন পরিণত হচ্ছে আম লিচুর বাগানে। জমির মালিকদের কাছে ফলের বাগান এখন লাভজনক বলে তারা ঝুঁকে পড়ছে। কৃষি বিভাগের মতে গত পাঁচ বছরে পুরাতন আম লিচুর গাছের সাথে যোগ হয়েছে আরো তিনচার লাখ গাছ। প্রতি বছর যোগ হচ্ছেই। এর প্রমান মেলে রাজশাহীর জোতদার শিশির চৌধুরীর কথায়। এবারো তিনি রাজাবাড়ি এলাকায় কয়েকশ আ¤্রপালি ও চায়না-৪ লিচুর গাছ লাগিয়েছেন। এসব গাছের অবস্থা দেখে সামনে আরো কয়েকটি বাগান করবেন। ধান চাষ এখন ঝক্কি ঝামেলার ব্যাপার বলে বাগানের দিকে ঝুঁকছেন। একবার বাগান হয়ে গেলে তারপর যুগ যুগ ধরে ফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া এখন আম লিচু আবাদে নিত্য নতুন প্রযুক্তি যোগ হচ্ছে। ফ্রুট ব্যাগিং এর মাধ্যমে আমের আবাদ করে এখন তা বিদেশে রফতানি হতে শুরু করেছে।
রাজশাহী অঞ্চলের নানা জাতের আমের সাথে রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে আম লিচু বড় ভুমিকা রাখতে শুরু করেছে। ফল গবেষণা কেন্দ্রগুলো তৎপর এসব নিয়ে। বিদেশে আম রফতানির লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ ভাবে যতœ নিয়ে আবাদ হচ্ছে আমের। বিশেষ করে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন করা হচ্ছে। আর এসব আমের চাহিদা বাড়ছে। এতদিন রাজশাহী অঞ্চলের আম দেশের বিভিন্ন স্থানে আম রসিকদের রসনা মেটালেও এখন দেশের গÐি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। রাশিয়াসহ ইউরোপের ছয়টি দেশে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে এখানকার আম। ইতোমধ্যে এসব আম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিদেশে রফতানির সনদ মিলেছে। এবারও আম যাবে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, পতুর্গাল, ফ্রান্সসহ রাশিয়াতেও যাবে। প্রতি বছর নতুন দেশ যোগ হচ্ছে। গতবছর মাত্র ত্রিশটন আম বিদেশে গেলেও এবার রাজশাহীর বাঘা ও চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে দেড়’শ মে:টন আম বিদেশে যাবে। হটেক্স ফাউন্ডেশন কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের যৌথ ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে বিদেশে যাবে এসব আম।
আম লিচুর কথা উঠলে চলে আসে রাজশাহীর নাম। ছড়া কেটে বলা হয় রাজা নেই শাহী নেই রাজশাহী নাম। হাতিঘোড়া কিছু নেই আছে শুধু আম। এর যথার্থ মেলে রাজশাহী অঞ্চলে এলে। বিশেষ করে রাজশাহী শহরের উপকন্ঠ পবা, চারঘাট,বাঘা, চাপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ ভোলাহাট, গোমস্তাপুর তিন উপজেলায় শুধু আম আর আম। মাইলের পর মাইল জুড়ে লাখ লাখ আম গাছে কোটি কোটি আম ঝুলে থাকার দৃশ্যতো নজর এড়াবার নয়। এজন্য বলা হয় চাপাইনবাবগঞ্জকে আমের রাজধানী। এর বাইরে পাশ্ববর্তী নওগাঁ জেলাতেও বিস্তার ঘটেছে আম বাগানের। সেখানে মিলছে প্রচুর আম। সব মিলিয়ে আম নিয়ে শুরু হয়েগেছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। আম ঘিরে এবারো বাণিজ্য হবে কয়েক হাজার কোটি টাকার। ইতোমধ্যে এর সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের লাখ পাঁচেক মানুষ। আম অর্থনীতি চাঙ্গা থাকবে মাস তিনেক। ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে আমপাড়া শ্রমিক প্যাকিং পরিবহন শ্রমিকরা ভীষণ ব্যস্ত। প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক বোঝাই আম যাচ্ছে। কুরিয়ার পার্শেল সার্ভিস ব্যবসা জমজমাট। চলছে প্রতিযোগিতা। এসব অঞ্চল থেকে যারাই বাইরে যাচ্ছেন তাদের হাতে এখন মিষ্টির বদলে আমের ঝুড়ি শোভা পাচ্ছে। বসে নেই আমের আচার জুম তৈরিকারক ছোট বড় কোম্পানী গুলো। এরা অবশ্য কমদামের গুটি আম বেশী কিনছে। আম পাড়ার সময় বেঁধে দেবার কারণে এবার ধাপে ধাপে আম আসছে বাজারে। গোপালভোগ দিয়ে কপাল খুলেছে আম বাজারের। এরপর এসেছে রানী পছন্দ ও খিরসাপাতি, হিমসাগরের। বেধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী আরো কটাদিন পর ল্যাংড়া আসার কথা থাকলেও আগে চলে এসেছে ল্যাংড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন এবার প্রচন্ড গরম পড়ছে। গাছে আম পেকে যাচ্ছে। সময় ধরে আম নামাতে গেলে লোকসানে পড়তে হবে। এরপর আসবে লক্ষনভোগ, বোম্বাই। পর্যায়ক্রমে আসবে ফজলী আ¤্রপালী মোহনভোগ আশ্বিনাসহ কয়েক জাতের আম। নতুন জাতের আম ব্যানানা আম আসবে শেষে। যখন বাজারে অন্যকোন আম থাকবেনা।
আমের সময় বেঁধে দেয়া নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। ইনকিলাব অফিসে আলাপচারিতায় আম গবেষক মাহবুব সিদ্দিকি বলেন সময় ধরে আম পাড়লে তা যেমন পরিপক্ক হয় তেমনি সুস্বাদুও হয়। জোর করে পাকানোর ব্যাপারও থাকেনা। বাগান মালিকরা বলছেন আমরা কেউ ওসব কেমিক্যাল ব্যবহার করিনা। ঢাকা বা অন্য জেলায় যারা নিয়ে যায় তারা এসব অপকর্ম করলেও করতে পারে। বিগত সময়ে ফরমালিন ধুয়া তুলে বিপুল পরিমান আম নষ্ট করে ব্যবাসয়ীদের ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে। এরপর এবার আবার ওজন নিয়ে প্রশাসন খবরদারি করায় বিরোধ বাধে আম বাগান মালিক ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে চলে আসছে পাইকারী বিক্রিতে ৪৬ কেজিতে এক মণ হিসাবে। আর ধরা হয় সামান্য কমিশন। এবার জেলা প্রশাসন আম উৎপাদকদের স্বার্থের কথা ভেবে চল্লিশ কেজিতে মন ঠিক করে দেয়। এনিয়ে প্রতিবাদ করে ব্যবসায়ীরা। তিনদিন সব আড়ত বন্ধ রাখা হয়। বিপাকে পড়ে বাগান মালিকরা। অবশেষে পেছনে হটে প্রশাসন। আগের নিয়মে শুরু হয়েছে বেচাকেনা। চাপাইনবাবগঞ্জের আমের হাট কানসাট আম বাজারে প্রচুর ভীড়।
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে ভীড় কম নয়। শুরুতেই মনপ্রতি দুই হাজার দুশো টাকা মন দাম নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে আম বাজার। এখন সরবরাহের উপর ভর করে ওঠা নামা করছে। বাজার পর্যবেক্ষণের সময় দেখা যায় কত নামের আম যে এসেছে তার ঠিক নেই। তবে বনেদী জাতের আমের মধ্যে সবার পছন্দ হলো ল্যাংড়া। এখানকার ল্যাংড়া খুবই সুস্বাদু। বিশ্ব বাজারেও এর চাহিদা রয়েছে। বিদেশীরা আম বাজারে এসে ল্যাংড়া আমের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ফিলিপাইনের ক্যারাবাউ আম বহি:বিশ্বে বাজারে প্রচুর চাহিদা। বাংলাদেশের ল্যাংড়া তার চেয়ে উন্নত। বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে এর উৎপাদনও হয় ভাল। বিশেষজ্ঞদের মতে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি একর বাগানে আমের উৎপাদন হয় দেড় হতে দু’টন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করতে পারলে উৎপাদন দাড়াবে পাঁচ থেকে সাত টনে। আর আম রফতানি করে আয় করা যাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
মধু ফলের বাণিজ্যের খবর নিতে গিয়ে দেখা যায় আম বাগান মালিক থেকে সংশ্লিষ্ট সবার মুখে মধুর হাসি। রমজান মাস হলেও আম বাগান ঘিরে পর্যটকদের ভীড় বাড়ছে। শুরু হয়েছে ম্যাঙ্গোট্যুর। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে মাইলের পর মাইলজুড়ে লাখো লাখো আম গাছে কোটি কোটি আম। গাছ পাকা আমের স্বাদ নেবার পাশাপাশি দু’চোখ ভরে দেখছে আম বাগান আর নানা জাতের আম। এ যেন দেখার মজা, খাওয়ার মজা দুটো এক সাথে হয়ে যাচ্ছে। ফেরার সময় বোনাস হিসাবে দু’চার ঝুড়ি পছন্দের টাটকা আম নিয়ে যাচ্ছে। যদিও এবার গরম একটু বেশী সহ্য করতে হচ্ছে। তারপর কাঁচা পাকা আমের জুস সব ক্লান্তি মুছে দিচ্ছে। বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। আর রমজানের ইফতারীর প্লেটে প্লেটে থাকছে আম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।