স্টাফ রিপোর্টার ; বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, যারা বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ‘নিপীড়ন-নির্যাতন’ করছে, বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালাচ্ছে তাদের কালো তালিকা করা হচ্ছে। তারা কেউ পার পাবে না।
গতকাল শনিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী অভিযোগ করেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় কর্মীদের ব্যবহার করে’ এই নিপীড়ন চালাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি আবারও তাদের বলতে চাই, আপনারা থামেন। আপনারা মনে করছেন, ঝড় হচ্ছে আর দেশবাসী, জনগণ, বিরোধীদল উটপাখির মতো বালির মধ্যে মাথা গুঁজে বসে আছে- তা নয়। আপনাদের কালো তালিকা রচিত হচ্ছে। যারা অন্যায় করছেন, অত্যাচার করছেন- আপনারা কেউ পার পাবেন না।
রিজভী বলেন, প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুমের খবর পান। সারাদেশে বিরোধীদলের ইফতার অনুষ্ঠানও এখন পুলিশ পন্ড করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সরকারকে রিজভী হুঁশিয়ার করেন, একদিন এই অন্যায়ের, এই অবিচারের, এই ঘৃণ্য মানববিধ্বংসী কাজের হিসাব আপনাদেরকে দিতে হবে। আপনারা জঘন্য মানবতাবিরোধী কাজ করছেন এজন্য বিচারের মুখোমুখি আপনাদের হতে হবে।
নরসিংদীর পলাশ, ঢাকার দোহার, মাদারীপুরের শিবচরে গত শুক্রবার স্থানীয় বিএনপির ইফতার অনুষ্ঠান পন্ড করে দেয়ার অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন রিজভী। তিনি বলেন, গত শুক্রবার নরসিংদীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের ইফতার মাহফিলে বাধা দিয়েছে। ছাত্রলীগের স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা করে ইফতার মাহফিল ভাঙচুর করেছে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানের বাড়িতে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হলে তার বাড়িতে হামলা চালায় পুলিশ। পরে ইফতার মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছে। রমজান মাসেও বিরোধীদলের ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার অধিকারও তারা রাখছে না। ধারালো খড়্গ উদ্যত করছে, পন্ড করছে, আক্রমণ করছে, আঘাত করছে, রক্ত ঝরাচ্ছে।
রিজভী বলেন, শুধু তাই নয়, তারা পরে উল্টো বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রæত বিচার আইনে মামলা করছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে তান্ডব চালাচ্ছে পুলিশ ও শাসক দলের ক্যাডাররা। এখন পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এখন একাকার।
বিচার বহির্ভূতভাবে ‘সাধারণ মানুষকে হত্যার’ পর ‘ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসী বানিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নাটক বানানো হচ্ছে’ বলেও অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, এর পেছনে আবার আর্থিক লেনদেনও থাকে। কোনো একজন ব্যবসায়ীকে বলা হলো টাকা দেয়া না হলে বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলা হবে। যখন দিতে পারছে না, তখন ক্রসফায়ার দেয়া হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা দেয়া হচ্ছে।
রিজভী বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধের নাটক’ এতো বেশি মঞ্চস্থ হয়েছে যে, জনগণ এখন আর তা বিশ্বাস করে না। জনগন মনে করে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার জন্য বন্দুকযুদ্ধের এই নাটক প্রচার করা হয়। আমি এই গুম-খুন-হত্যা ও পুলিশের মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।
নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান নাহিদ ও তার খালাতো ভাই ওয়াজিউল্লাহ লালকে গত বৃহস্পতিবার রাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। শনিবারও তাদের সন্ধান না পাওয়ার কথা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের জনসম্মুখে হাজির করার দাবি জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুল আলম, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। ###