Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাইনালে ঝড়ের হানা, অন্ধকারে ভুতুড়ে পরিবেশ

প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম তখনো ভরেনি দর্শক। প্রতিটি প্রবেশমুখের বাইরে লম্বা লাইন। যে করেই হোক, সাড়ে ৭ টার আগে স্টেডিয়ামে ঢুকতে হবে। কালোবাজারে ১৫০ টাকার টিকিট ৫ হাজার টাকায় কিনে স্টেডিয়াম মুখো যারা, পয়সা উশুলের জন্য ম্যাচের পুরো উত্তেজনা চাই তাদের। কিন্তু যথাসময়ে ম্যাচ শুরু হতে পারেনি। হঠাৎ ফাল্গুনে কালবৈশাখী রূপী ঝড় হানা দিয়েছে মিরপুরে। এমন ঝড়ের পূর্বাভাস পায়নি মাঠকর্মীরা। তাই গ্রাউন্ড কভার দিয়ে মাঠ ঢেকে রাখার প্রস্তুতি ছিল না তাদের। সন্ধা ৬টা ১০ মিনিটে প্রচন্ড বেগে ঝড় দিল হানা। দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃস্টি। প্রেস বক্সের উপর থেকে চেয়ার উড়ে পড়ল নীচে। ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ডের চারপাশে অস্থায়ী বিজ্ঞাপনী বোর্ড পড়ল হেলে। বাউন্ডারি রোপও মার্কার থেকে গেল বেরিয়ে। কালবৈশাখী  রূপী ঝড়ের তীব্রতায় তখন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে জড়ো হওয়া দর্শকরা ভিজে জুবুথুবু। শরীর বাঁচাতে যে যার মতো দৌড় ! বাইরে লম্বা লাইন দিয়ে স্টেডিয়াম ঢুকতে অপেক্ষা যাদের। তাদের লাইন গেল মূহুর্তের মধ্যে ভেঙ্গে। এরই মধ্যে আবার এক সঙ্গে সব ক’টি ফ্লাড লাইটের আলো নিভে যাওয়ায় ভুতুড়ে পরিবেশে কাটল মিরপুর স্টেডিয়ামে ১৬ মিনিট। এক এক করে সব ক’টি ফ্লাড লাইট জ্বলে উঠতে লেগে গেল ৫১ মিনিট।
মাঠকর্মীদের নিরলস চেস্টায় প্রথমে ৩০ গজী বৃত্ত ঢেকে ফেলা হলো ঠিকই, ঝড়ের তীব্রতা কমে যাওয়ার পর গাড়ীর পুরোনো টায়ার বিছিয়ে দিয়ে গ্রাউন্ড কভার যথাস্থানে রাখার কাজ ঠিকই হলো।  কিন্তু ঝড়ো হাওয়ায় গ্রাউন্ড কভার উড়ে যাওয়ায় পানি ঢুকেছে পীচে। ঝড়,বৃস্টি থেমে গেলে গ্রাউন্ড কভার খুলে ফেলার কাজ যখন শুরু হলো, ততোক্ষন ম্যাচের ৫ ওভার পেরিয়ে যাওয়ার কথা। গ্রাউন্ড কভার থাকতে থাকতেই ম্যাচ অফিসিয়ালদের প্রথম পরিদর্শন সন্ধা ৭টা ৪৫ মিনিটে, দ্বিতীয় দফায় ৮টা ১০ মিনিটে পরিদর্শন, ৮টা ২০ মিনিটে মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে কিউরেটর গামিনি সিলভার সঙ্গে ম্যাচ অফিসিয়ালদের আলোচনা। তার কিছুক্ষন পর দু’দলের ক্রিকেটাররা নেমে পড়েছে মাঠে,অনুশীলন জার্সিতে। পূর্ব প্রান্তে ভারত ক্রিকেটাররা মেতে উঠেছে ফুটবল আনন্দে। পশ্চিম প্রানে সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা কাটিয়েছে কিছুক্ষন ওয়ার্ম আপে। টসে’র পর ভারত ক্রিকেটাররা ড্রেসিং রুমে ফিরে গেলে বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক এবং ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল সাইড উইকেটে বোলারদের কিছুক্ষন করিয়েছেন অনুশীলন।  ম্যাচ শুরুর আগেই স্টেডিয়াম ভরে গেছে দর্শকে।  দাঁড়িয়ে খেলা দেখেছেন অন্তত: হাজার পাচেক দর্শক। স্টেডিয়াম লাল সুবজ জার্সিতে সয়লাব হবে, এমন ধারনা বদ্ধমূল ছিল যাদের, তারা এসে দেখেছেন কমলার ছড়াছড়ি। রিং আইডি নামের এশিয়া কাপের সহযোগী স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কমলা রঙের জার্সিতে ভরে গেছে পুরো স্টেডিয়াম।
এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে নেই রিজার্ভ ডে। ফলে ম্যাচ আয়োজনে সর্বাত্মক চেস্টা করতে হয়েছে মাঠকর্মীদের। ঝড় বৃস্টিতে বাধাগ্রস্থ  ২০ ওভারের ম্যাচটি অন্তত: ২ দলের জন্য  ৫ ওভারে নেমে আসলেও অসুবিধা নেই। কিন্তু তাও যদি না হতো, তাহলে কি হতো জানেন ? পরিত্যক্ত ঘোষিত হতো ম্যাচটি, ঘোষিত হতো দল দু’টি যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন।   কার্টেল ওভারে নিস্পত্তি করতে হলে নিয়ম অনুযায়ী রাত ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া তাই উপায় ছিল না ম্যাচ অফিসিয়ালদের। তবে মিরপুর স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থা এতোটাই ভাল যে, এক সঙ্গে ২টি সুপার সপার দিয়ে পানি নিষ্কাশনের আগেই মাঠটি দূর থেকে পরিস্কার দেখা গেছে। প্রায় ১ ঘন্টার ঝড়-বৃস্টিতেও জমেনি স্টেডিয়ামের আউটফিল্ডে পানি। ফলে ম্যাচ শুরু করতে   রাত ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়নি। রাত ৯টায় মাঠ সর্বশেষ পরিদর্শন শেষে ম্যাচের পরিবর্তিত সময় এবং ওভার জানিয়ে দেয়া হলো। রাত সাড়ে ৯টায় মাঠে গড়ালো ১৫ ওভারের ম্যাচ। ৫ ওভার কার্টেল হওয়ায় ফিল্ড রেস্টিকশন ৬ ওভারের পরিবর্তে নেমে এলো ৫ ওভারে, আর বোলিং কোটা ৪ ওভারের জায়গায় নির্ধারিত হলো ৩ ওভার। মিরপুর স্টেডিয়ামে সর্বশেষ বৃস্টি বিঘিœত ওয়ানডে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বছরের ১০ জুলাই। ৫০ ওভারের সেই ম্যাচ নেমে এসেছিল ৪০ ওভারে। ভেজা স্যাঁতসেতে পীচে ভয়ংকর হয়ে ওঠা দ.আফ্রিকার পেস বোলার রাবাদার তার অভিষেকে বোলিং তোপে (৬/ ১৬) বাংলাদেশ দল ছিন্ন ভিন্ন হয়েছে সে ম্যাচে। ১৬৩ এ অল আউট হয়ে ৮ উইকেটে হেরে গেছে ওই ম্যাচে। ভারতের বিপক্ষে ১টি এবং দ.আফ্রিকার বিপক্ষে ২টি টেস্টের একটিও ৫ দিন পার করতে দেয়নি বেরসিক বৃস্টি। এমন বৃস্টি বিঘিœত ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারত অধিনায়ক ধোনী। বাংলাদেশ একাদশে এদিন পরিবর্তন এসেছে দু’টি। মিঠুনের জায়গায় নাসির এবং আরাফাত সানির পরিবর্তে আবু হায়দার রনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-২০ সিরিজে অভিষিক্ত হওয়া আবু হায়দার রনি’র প্রতিক্ষিত  অভিষেক হলো ফাইনালে এসে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফাইনালে ঝড়ের হানা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ