তৌহিদবাদীরাই ভারতের আদিবাসী
হিন্দ অঞ্চলে যত লোক বসবাস করে তারাই হিন্দী বা হিন্দু। ফারসী ও তুর্কীতে হিন্দুস্তান। আরবীতে
এ. কে. এম. ফ জ লু র র হ মা ন মু ন্ শী : মৃত্যু হচ্ছে ব্যক্তিগত মুয়ামালা। একজন মৃত্যুবরণ করে এবং অপরজন এরই স্থানে জন্মলাভ করে। জাতি ও সম্প্রদায়ও পর্যায়ক্রমে এই বিবর্তনের পৈঠায় পদার্পণ করে। একটি সম্প্রদায় নিজেদের খেলা সমাপ্ত করে চলে যায় এবং পরবর্তীদের জন্য স্থান উন্মুক্ত করে যায়। এই ক্রমবিকাশ সৃষ্টির শুভ লগ্ন থেকেই কায়েম হয়েছে এবং যা আজ পর্যন্ত চলে আসছে। সৃষ্টিজগত যে নিয়মতান্ত্রিকতায় পয়দা হয়েছিল, তা হুবহু একই রকমভাবে কায়েম আছে এবং এই মাহফিলের যে সৌন্দর্য প্রথম দিন থেকেই ছিল তা আজও একইভাবে অপরিবর্তিত রযেছে। মোটকথা, ‘হাজার বাতি জ্বলছে এবং নিভছে কিন্তু মাহফিল অপরিবর্তিতই থেকে যাচ্ছে।’
কিন্তু কখনো কি এমন দিন আসবে, যখন এই বিশাল সা¤্রাজ্য উল্টে যাবে? সৃষ্টিজগতের এই মজলিস ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে? আকাশ এবং জমিনের প্রতিটি গাঁথুনী খুলে যাবে এবং তা অণু- পরমাণুতে পরিণত হবে? তারপর বিশ্ব স্রষ্টাকে স্বীয় শৈল্পিক কর্মকান্ডের পুরস্কার ও তিরস্কার দেয়ার জন্য অপেক্ষমাণ হয়ে দন্ডায়মান লক্ষ করা যাবে। একই নির্দেশে নতুন দুনিয়া ও আকাশ হবে, সবকিছু মিলে নতুন এক পৃথিবীর আকার ধারণ করবে?
দুনিয়ার ঐ সকল লোক যারা বর্তমানকে অবলোকন করে ভবিষ্যতের সন্ধান লাভ করেন, কোনো না কোনোভাবে এ সকল প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচকই প্রদান করেন এবং বলেন, যেভাবে এই জনসমষ্টি আগমন করে এবং ফানা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি একটি দিন অগমন করবে, যখন এই বিশ্বের সবকিছুই মৃত্যুমুখে পতিত হবে।
তবে এই প্রশ্নের উত্তরে একমাত্র অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতে পারে তারাই, যারা দর্শন ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তবে এ কথাও সত্য যে, দার্শনিকদের এ বৃহৎ দল সেদিনের সম্ভাব্যতার ওপর বিশ্বাস রাখেন। এভাবে বেশির ভাগ বৈজ্ঞানিকও সেদিনের আগমন একেবারেই অসম্ভব মনে করেন না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে, প্রকৃতি বিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন গবেষক এর আবির্ভাবকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। এমনকি তারা নিজের জ্ঞান ও অন্বেষার আলোকে সেদিনের আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীও করতে থাকে। তারা এই সর্বগ্রাসী মৃত্যু ও ধ্বংসের বিভিন্ন কারণও বিশ্লেষণ করেছে।
এদের কেউ বলেন, এই পৃথিবীর নিয়মশৃঙ্খলার গাড়ি যে ইঞ্জিনের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে তা হলো উত্তপ্ত সূর্য। যার উত্তাপ দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। পরিশেষে এমন একদিন আসবে যখন এই ইঞ্জিন উত্তপ্ত সূর্য। যার উত্তাপ দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। পরিশেষে এমন একদিন আসবে যখন এই ইঞ্জিন বিলকুল ঠাÐা হয়ে যাবে এবং সম্পূর্ণ গাড়িটি টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। একটি কারণ এই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই বিশ্বভুবন মাধ্যাকর্ষণের মানদÐের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। একই সাথে নভোমÐলের প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্র আকর্ষিত হয়ে চলেছে। তাহলে এমন একটি দিনও অবশ্যই আসবে যখন পারস্পরিক এই ভারসাম্য অবশিষ্ট থাকবে না। তখন প্রতিটি গ্রহ-উপগ্রহ অপরটির নিকটতর পৌঁছে পরস্পর আঘাত খেতে থাকবে। এই ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে এই বিশ্বভুবন লÐভÐ হয়ে যাবে।
তাছাড়া অপর একটি খেয়াল হচ্ছে এই যে, নভোমÐলের সব ক’টি গ্রহ-নক্ষত্র শূন্যে বিচরণ করে চলেছে। এগুলো কর্মকাÐের সামান্যতম জ্ঞানই আমরা লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, কোনো এক নতুন যুগে আমাদের এই পৃথিবী কোনো একটি নতুন তারকার সাথে ধাক্কা লেগে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। যার ফলে এর প্রতিটি আবাদি ও পদার্থ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে পড়বে। মোটকথা, এর প্রাকৃতিক কারণ যা-ই হোক না কেন, তবে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে এমন একটি দিনের আগমন বা আনুষ্ঠান বাস্তবে এসে উপস্থিত হওয়ার সম্ভাব্যতা মোটেই অবিশ্বাসের নয়।
একইভাবে ধর্মানুসারীদের মাঝে এই বিশ্বাসটি কোনো না কোনোভাবে সকল ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় এবং এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ সকল আসমানী কিতাবেই লক্ষ করা যায়। তৌরিত কিতাবে এর ইশারা পাওয়া যায়। যাবুর কিতাবে এর বিশদ বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। যাবুর কিতাবে এই দিনটিকে বিচার দিবস বলা হয়েছে। (যাবুর ৯-১৬-১৭ এবং ২২-১০-২০ ও ৪৯-৫০ অধ্যায়)।
হযরত মসীহ (আ:)-এর যুগে ইহুদিরা দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। তাদের একদল ছিল সাদুকী। তারা গ্রিক দর্শনের সংস্পর্শে এসে স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হয়ে পড়েছিল। তারা ছিল কিয়ামতের অবিশ্বাসী। আর দ্বিতীয় দলকে বলা হয়, ‘ফরায়েসি’। তারা প্রচলিত নিয়ম অনুসারে পুরাতন বিশ্বাসের ওপর কায়েম ছিল। (ইঞ্জিল মার্কস : ১২-২৪ কর্মকাÐ) রাসূলূল্লাহ (সা:)-এর আমলে যেসব ইহুদি ছিল, তারা কিয়ামত, হাশর-নশর এবং বেহেশত ও দোজখ স্বীকার করত। তাদের বিশ্বাস ছিল এই যে, যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখন আল্লাহ তায়ালা এক আঙ্গুলের উপর আকাশকে, দ্বিতীয়টির উপর পৃথিবীকে, তৃতীয়টির উপর বৃক্ষরাজিকে, চতুর্থটির উপর পানিকে এবং অভ্যন্তরস্থ নরম মাটিকে এবং পঞ্চমটির উপর সকল সৃষ্টিজগতকে ধারণ করবেন। তখন এই ঘোষণা দেয়া হবে যে, আমিই হলাম বাদশাহ (সহীহ বুখারী : তাফসীর সূরায়ে যুমার)।
ইঞ্জিলে এই আকিদাহ ও বিশ্বাসের কথা পূর্ণ বিশ্লেষণসহ আছে। হযরত ঈসা (আ:) সাদুকীদের বিরুদ্ধে তৌরিতে একটি আয়াত দ্বারা পরকালের জীবনের বিশ্বাসকে প্রতিপন্ন করেছিলেন। (মথি : ২২-২১, ৩২; লুক : ২০, ২৭; মার্কস : ১২, ১৮) আর যোহনের গবেষণায় কিয়ামতের ভীতিপ্রদ প্রলয়ঙ্করী অবস্থার বিশদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। হিন্দুরা পর জীবনের নামে এই দিনের বিশ্বাস রাখে। কিন্তু এই হাকীকতের পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন নূর নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা:)। তিনিই এর হাকীকতের পরিপূর্ণতার দুয়ার উন্মোচন করেছেন এবং এর পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছেন।
কিয়ামতের নাম
কোনো বস্তুর হাকীকত সম্পর্কিত জটিলতা সর্বপ্রথম তার নাম বিশ্লেষণের দ্বারাই সহজতর হয়ে ওঠে। কুরআনুল কারীম এই কিয়ামতকে উনত্রিশটি নামে শনাক্ত করেছে। এগুলোর মাঝে প্রতিটি নামের একটি বিশেষ দিক তুলে ধরেছে। কুরআনুল কারীমে এ সকল নামের প্রথম নামটি প্রথম সূরায় উক্ত হয়েছে ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন’ অর্থাৎ বিচার দিবসের মালিক। পরিণাম প্রদানের দিনের মালিক। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, এটা সাধারণ পরিণাম ও ঐশী আদালত প্রতিষ্ঠার দিন। অন্যান্য আটাশটি নাম হচ্ছে এই : (১) আচ্ছায়াত, (সেই দÐ বা সেই নির্দিষ্ট সময়)। (২) ইয়াউমুল কিয়ামাহ (উত্থিত হওয়ার দিন, মৃতদের জীবিত হবার দিন)। (৩) আল ইয়াউমুল হাক্ক (সত্য দিন, যার আগমনে কোনোই সন্দেহ নেই, যার মীমাংসাতে কোনোই ভুল হবে না)। (৪) ইয়াউমুম মা’লুম (পরিজ্ঞাত দিন, কিংবা সুনির্দিষ্ট দিন) (্৫) আল ওয়াকতুল মা’লুম (জানা সময় অথবা নির্দিষ্ট দিন) (৬) আল ইয়াউমুল মাউ উদ (অঙ্গীকারের দিন, শপথের দিন)। (৭) আল্ ইয়াউমুল আখির (সর্বশেষ দিন) (৮) ইয়াউমুল আজিফাতু (নিকটে আগমনকারী মুসিবতের দিন)। (৯) ইয়াউমুল আছীর (এক কঠিন দিন)। (১০) ইয়াউমুল আজীম (এ বড় দিন)। (১১) ইয়াউমুল আছীব (কঠিন দিন)। (১২) ইয়াউমুল বা’ছ (পুনর্জীবিত হওয়ার দিন)। (১৩) ইয়াউমুত তালাক (আফসোসের দিন)। (১৪) ইয়াউমুত্তালাক (পরস্পর মিলনের দিন)। (১৫) ইয়ামুত্তানাদ (চিৎকারের দিন)। (১৬) ইয়াউমুল জাময়ি (একত্রিত হওয়ার দিন)। (১৭) ইয়াউমুল হিছাব (হিসাব নিকাশের দিন)। (১৮) ইয়াউমুল হাছরাতি (অনুশোচনার দিন)। (১৯) ইয়াউমুল খুরুজ (কবর হতে বের হবার দিন) (২০) ইয়াউমুল ফাছলি (ফায়সালার দিন)। (২১) আল ক্বারিয়াহ (আঘাত করার দিন)। (২২) আল গাশিয়াহ (আচ্ছাদিত হওয়ার দিন)। (২৩) আত্তাম্মাতুল কুবরা (বড় মুসিবতের দিন)। (২৪) আন্নাবাউল আজীম (বড় খবরের দিন)। (২৫) আল হাক্কাহ (অবশ্যই আগমনকারীর দিন)। (২৬) আল ওয়াদুল (অঙ্গীকারের দিন)। (২৭) আল ওয়াক্বিয়াহ (অবশ্যম্ভাবী দিন)। (২৮) আমরুল্লাহ (আল্লাহর নির্দেশের দিন। (২৯) আসসাখ্যাহ (বধির করার দিন)।
কিয়ামতের নিয়ম-নীতি ছিন্ন হয়ে যাবে
কিয়ামত সম্পর্কে কোনো কোনো যুক্তিবিদ এই সন্দেহ পোষণ করেছে যে, দু’টি উপাদানের পরিপূর্ণ বিলুপ্তি বা শুধু বিলুপ্তির নামই হচ্ছে কিয়ামত। অথচ এই কথাটি কুরআনের বিশ্লেষণের খেলাপ। কুরআনুল কারীমের বহু আয়াতে কিয়ামতের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা সর্র্বাংশে ফানায়ে হায়াত বা জীবনাবসান এবং আসমান ও জমিনের নিয়মশৃংখলা ভগ্ন এবং এগুলো ধ্বংসের চিত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং নি¤েœ উল্লিখিত আয়াতসমূহের মর্মের প্রতি লক্ষ করলে এ কথা অতি সহজেই বোঝা যাবে। ইরশাদ হচ্ছে : (ক) প্রকম্পিতকারী বস্তু! কি সে প্রকম্পিতকারী বস্তু? তোমাকে কে বলে দিয়েছে যে, প্রকম্পিতকারী বস্তু কি? এটা সেই দিন, যখন মানুষ পেরেশান ছিন্নভিন্ন পর্দার মতো হয়ে যাবে এবং পাহাড়সমূহ ধুনিত তুলার ন্যায় হয়ে যাবে; যখন জমিনকে প্রকম্পিত করা হবে এবং জমিন তার অভ্যন্তরস্থ বস্তুনিচয় বের করে দেবে; এবং মানুষ বলতে থাকবে, পৃথিবীর হলো কি? সেদিন পৃথিবী স্বীয় অবস্থার কথা তুলে ধরবে। (সূরা যিলযাল : রুকু-১)। (খ) যখন আকাশ চৌচির হয়ে যাবে এবং তা স্বীয় প্রতিপালকের ফরমাবরদারি করবে, কেননা সে আনুগত্য প্রকাশের উপযোগী যেদিন জমিনকে সম্প্রসারিত করা হবে এবং যা কিছু এর মাঝে আছে তা ঢেলে দেয়া হবে এবং জমিন খালি হয়ে যাবে। (সূরা ইনশিকাক : রুকু-১)। (গ) যখন আকাশ চৌচির হয়ে যাবে এবং যখন তারকাপুঞ্জ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে এবং যখন সমুদ্রকে উৎক্ষিপ্ত করা হবে এবং যেদিন কবরবাসীদের জীবিত করা হবে, সেদিন প্রতিটি রূহ যা আগে এবং পিছে প্রেরণ করেছে তা জানতে পারেব (সূরা ইনফিতার : রুকু-১)। (ঘ) যখন সূর্য অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে, যখন তারকাপুঞ্জ নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। (সূরা তাকবীর : রুকু-১)। (ঙ) যেদিন সম্পর্কে তোমাদেরকে অঙ্গীকার দেয়া হয়েছিল তা অবশ্যই সংঘটিত হবে যেদিন তারকাপুঞ্জ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে এবং যেদিন আকাশসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং যেদিন পর্বতরাজি ধূলিকণায় পরিণত হবে। (সূরা মুরসালাত : রুকু-১)। (চ) যেদিন দৃষ্টিশক্তি অবনমিত হয়ে যাবে, যখন চন্দ্র আলোহীন হয়ে যাবে এবং চন্দ্র-সূর্যকে একত্রিত করা হবে। (সূরা কিয়ামাহ : রুকু-১)। (ছ) যেদিন আকাশ বিগলিত তামার মতো এবং যেদিন পাহাড়সমূহ ধুনিত তুলার মতো হয়ে যাবে (সূরা মায়ারিজ : রুকু-১) (জ) যখন সিঙ্গায় একবার ফুঁৎকার করা হবে, যেদিন জমিন ও আকাশকে উত্থিত করা হবে এবং এতদুভয়কে পরস্পর আঘাত করা হবে, সেদিন যা হবার তা হয়েই যাবে এবং আকাশ চৌচির হয়ে যাবে এবং সেদিন তা দুর্বল হয়ে যাবে। (সূরা আল হাক্কাহ : রুকু-১)। (ঝ) সেদিন জমিন এবং পর্বতসমূহে প্রকম্পন হবে এবং পাহাড়সমূহ গলিত তামার ন্যায় হয়ে যাবে সুতরাং কিভাবে মুত্তাকী হতে পার, যখন তোমরা সেদিনটি অস্বীকার করছ? পরিপূর্ণ হবে (সূরা মুয্যাম্মিল : রুকু-১) (ঞ) যেদিন এই জমিন অপর এক জমিনে পরিণত হবে (সূরা ইব্রাহীম : রুকু ১৭)। (ট) যখন আকাশ ফেটে যাবে এবং লোহিত ধুয়ার মতো হয়ে যাবে। (সূরা আর রাহমান : রুকু-২)। (ঠ) যখন সংঘটিত হওয়ার বস্তু হয়ে যাবে, যা সংঘটিত হওয়ার মাঝে কোনোই মিথ্যা নেই, তা হবে উত্থান-পতন সংঘটনকারী যখন জমিনকে ভীষণভাবে প্রকম্পিত করা হবে এবং পাহাড়সমূহকে তুলা ধুনার মতো করা হবে, তখন তা উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণার মতো হয়ে যাবে। (সূরা ওয়াকিয়া : রুকু-১)। (ড) এবং আকাশকে খুলে দেয়া হবে, তখন তা বিভিন্ন দরজাবিশিষ্ট হয়ে যাবে এবং পর্বতরাজি উৎক্ষিপ্ত করা হবে, তখন তা কুয়াশার মতো হয়ে যাবে। (সূরা নাবা : রুকু-১)।
মোটকথা, একই মর্মজ্ঞাপক বহু আয়াত রয়েছে, যা দ্বারা বোঝা যায়, কিয়ামত হচ্ছে দুনিয়ার নিয়মশৃঙ্খলা বিনাশকারী এবং পৃথিবীর বর্তমান জীবনের ধ্বংসের নাম। যার পরে তৈরি হবে এক নতুন জমিন এবং নতুন আকাশ এবং অতীত জীবনের পরিণামের ওপর ভিত্তি করে এই নতুন দুনিয়ার সা¤্রাজ্য পরিচালনার নিয়মকানুন প্রবর্তিত হবে। আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : ‘যেদিন এই জমিন অপর একটি জমিন দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং আকাশসমূহও পরিবর্তিত হয়ে যাবে। (সূরা ইব্রাহীম রুক-৭)।
কিয়ামতের হাকীকত
যদিও কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে বিক্ষিপ্তভাবে এই বিপদশঙ্কুল দিনের অবস্থাসমূহ ও তার পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তবু একটি নির্দিষ্ট সূরার নামও রাখা হয়েছে ‘কিয়ামত’। এই সূরায় অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে ও স্বল্প পরিসরে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও বুদ্ধিদীপ্ত আকারে ছোট ছোট বাক্যাবলির দ্বারা সুবৃহৎ ও সুপ্রশস্ত উদ্দেশ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। এই বর্ণনা বিন্যাস ও এর অবিস্মরণীয় আকর্ষণে বিদ্যা বুদ্ধি স্থবির হয়ে যায় এবং অন্তর প্রদেশে বয়ে চলে প্রশান্তির নির্ঝর ধারা। কিয়ামত নামক সূরাটির প্রারম্ভ এভাবে রচিত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে : আমি কিয়ামতের দিনের এবং অপদস্তকারী প্রাণের শপথ করে বলছি যে, মানুষ মনে করে যে আমি তার মরণের পর তার কিছুই করতে পারব না, বরং হ্যাঁ আমি তার প্রতিটি বিক্ষিপ্ত অংশকে একত্রিত করতে সক্ষম বরং আসল কথা হচ্ছে এই যে, মানুষ চায় যে, আল্লাহর সামনে মিথ্যাচার করে এবং এ কারণেই জিজ্ঞেস করে যে, কিয়ামতের দিন কবে হবে? সুতরাং যেদিন চোখ বিস্ফোরিত হয়ে যাবে, চাঁদ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে এবং চাঁদ ও সূর্যকে একত্রিত করা হবে, মানুষ সেদিন বলবে, পলায়নের স্থান কোথায়? না কখনো না, কোথাও পলায়নের স্থান হবে না, সেদিন তোমার প্রতিপালকের নিকটই প্রত্যাবর্তন করতে হবে, সেদিন মানুষকে যা সে অতীত করেছে (ভালো-মন্দ আমল) এবং যে মাল সম্পদ পেছনে রেখে গেছে, তা বলে দেয়া হবে। বরং মানুষ নিজের অবস্থাকে স্বচক্ষে অবলোকন করবে, যদিও সে মুখের ভাষায় বাহানা প্রস্তুত করতে থাকবে। (সূরা কিয়ামাত : রুকু-১)
লেখক : ধর্মতাত্তি¡ক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।