তৌহিদবাদীরাই ভারতের আদিবাসী
হিন্দ অঞ্চলে যত লোক বসবাস করে তারাই হিন্দী বা হিন্দু। ফারসী ও তুর্কীতে হিন্দুস্তান। আরবীতে
আ বু ল কা সে ম হা য় দা র : বাংলাদেশে শিল্পায়ন সবচেয়ে বড় কাজ। বেসরকারি খাতে শিল্পায়ন কম হচ্ছে বলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি কম হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারিভাবে বেশ বিনিয়োগ হচ্ছে। তাই কিছুটা হলেও অর্থনীতিতে গতি রয়েছে। সরকারি খাতের মতো অন্যদিকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করা গেলে অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা হচ্ছে।
দেশে বেসরকারি বিনিয়োগে এক ধরনের হাহাকার চলছে। এ দুরবস্থা দীর্ঘদিনের। পদে পদে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসছেন না বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। পার্শ^বর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করতে যেসব পলিসি বা নীতি গ্রহণ করে তার অনেক কিছুই নেই বাংলাদেশে। ওই সব দেশ যেভাবে শিল্প খাতকে প্রটেকশন দিয়ে আসছে। এখানে চলছে তার উল্টো চিত্র। যেমন- যে পণ্য দেশে উৎপাদিত হয় তা বিদেশ থেকে কম দামে আনতে সরকারের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সমর্থনে সব ব্যবস্থা করা হয়। আবার বিদেশী পণ্য ও বিনিয়োগকে অবাধ সুবিধা ও ছাড় দেয়া অব্যাহত আছে। অনেকটা জামাই আদরের মতো।
বিপরীতে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের বেলায় সব কিছুতেই জটিলতা ও আইনি মারপ্যাঁচ জুড়ে দেয়া হয়। গ্যাসের আবেদন নিয়ে ছুটতে হয় বছরের পর বছর। তবু গ্যাসের দেখা মেলে না। আবার ভাগ্যগুণে কেউ কেউ রাতারাতি সংযোগ পেয়ে যান। দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট এ ধরনের বৈষম্য হচ্ছে অহরহ। প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সমস্যা এখনও সেই তিমিরে। শিল্পের জন্য জমি পাওয়া নিয়ে সৃষ্টি হয় বড় সঙ্কট। এ নিয়ে সাত ঘাটের পানি খাওয়াতে একশ্রেণীর আমলারাও যেন সদা প্রস্তুত থাকেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে শিল্পোন্নয়ন তো দূরের কথা দেশের সার্বিক অর্থনীতি কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। দু’পা এগিয়ে চার পা পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কি পয়েন্টগুলোতে নেগেটিভ মানসিকতার লোকজন বসে থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের শিল্পোন্নয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাবখানা এমন যে, তারা একটু ছাড় দিলে কিছু লোক আরো ধনী হয়ে যাবে। তাহলে তাদের কী হবে? হিসাব কষতে থাকেন অন্যকে ধনী বানিয়ে তার কী লাভ বা তিনি কী পাবেন ইত্যাদি। অথচ যেসব দেশ আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে সেখানকার সরকার ও সরকারি লোকজনের প্রধান কাজই হলো ধনী ও শিল্পপতির সংখ্যা বাড়িয়ে দেশকে অর্থ-বিত্তে আরো শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করা। যে কারণে আমাদের অনেক পরে যেসব রাষ্ট্র স্বাধীনতা পেয়েছে তাদের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ হওয়ার ৫ বছর আগে স্বাধীন হলেও আজ সেখানে মাথাপিছু আয় প্রায় ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার। এককভাবে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম আজ কোথায় চলে গেছে। অথচ বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪০৪ ডলার।
দেশকে শিল্পোন্নত করতে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নানামুখী সহায়তা দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে। ৫ থেকে ১০-১৫ বছর মেয়াদি বিভিন্ন প্যাকেজ গ্রহণ করেছে। যেখানে সক্ষম বিনিয়োগকারীদের সরকারিভাবে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণসহ জমি, গ্যাস, বিদ্যুতের সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এমনকি একটি শিল্প না দাঁড়ানো পর্যন্ত তাকে সব ধরনের ট্যাক্সের বাইরে রেখে সাহস জোগানো হয়। এছাড়া সরকারিভাবে প্রতিটি শিল্প দাঁড় করাতে ওই সব শিল্পের পণ্য আমদানিতে অ্যান্টি ডাম্পিং ট্যাক্স বসানো ছাড়াও প্রয়োজনীয় ব্যারিয়ার সৃষ্টি করা হয়। উদ্দেশ্য যাতে নিজের দেশের উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে। একই সঙ্গে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের নীতিগত সহায়তা প্রদানসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। তারা বলেন, ওই সব দেশের সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এভাবে দেশে শত শত সফল শিল্পপতি ও শীর্ষ ধনী সৃষ্টি হবে এবং এর ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। টাকার বহুমুখী ব্যবহার বাড়বে। এতে করে মানুষের মাথাপিছু আয়ে দ্রæত উল্লম্ফন ঘটবে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে দেশে গ্যাস সংযোগে দুর্নীতি হয়। টিআইবির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টেও গ্যাসে দুর্নীতির কথা উঠে এসেছে। কাউকে সংযোগ দেয়া হয়, আবার কাউকে দেয়া হয় না। এর ফলে গ্যাস সংযোগ পেতে সরকারি দলের নেতা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়। অন্যদিকে বড় শিল্পের জন্য বয়লার লাগে। কিন্তু গ্যাস ছাড়া বয়লার চলে না। আর কয়লা দিয়ে বয়লার চালাতে হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবেন না বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া ফার্নেস অয়েল দিয়ে বয়লার চালানো সম্ভব নয়। কারণ এর দাম অত্যন্ত বেশি। ফলে ফার্নেস অয়েল দিয়ে বয়লার চালু করলে পণ্যের উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ গ্যাস সমস্যার এখনও কোনো সমাধান হয়নি। দেশে পর্যাপ্ত গ্যাস থাকলে তা উত্তোলনে সেভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আবার বিদেশীরা এখানে আমাদের মাটির নিচের গ্যাস উত্তোলন করে আমাদের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করছে। অথচ স্থানীয়ভাবে আমরা গ্যাস উত্তোলন করছি কম। এখন আবার বিদেশ থেকে এলএনজি বা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কিনে এনে শিল্পে গ্যাস দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এটা যারা বলেন, তারা কী জানেন চড়া মূল্যে এলএনজি কিনে শিল্প দাঁড়াবে কিভাবে?
অন্যদিকে চাহিদা মাফিক শিল্প গড়ার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগে অনেক সমস্যা রয়েছে। নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগে বড় ধরনের জটিলতা রয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নিজে আন্তরিক থাকলেও অনেক সময় সবকিছু পারেন না। তিনি কোথাও এক মাসের মধ্যে সংযোগ দেয়ার কথা বললে তাও বিলম্বিত হওয়ার নজির আছে। অর্থাৎ মাঠপর্যায়ে যারা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন তাদের বেশি আন্তরিক হতে হবে।
বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর কথা বলে আসছেন। কিন্তু সেই সেবা দেয়া হচ্ছে না। বিনিয়োগের এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের। তবে আমরা তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু একদিনে সব কিছু সম্ভব নয়।
দেশের বতর্মান পরিবেশ বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে নয়। ফলে বিনিয়োগে মন্দা চলছে। তার মতে, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য নিয়মিত কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ স্বল্পতা অন্যতম। এছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি এবং ঋণের উচ্চ সুদও বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। এরপর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও রয়েছে। অর্থাৎ পুরো পরিবেশই এখন বিনিয়োগের প্রতিকূলে। তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে, পণ্য উৎপাদনের পর তা বিপণনে সরকার সর্বোচ্চ নীতি সহায়তা দেবে।
বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে ওই পরিবেশ নেই। বিশেষ করে গ্যাস-বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি কমিয়ে আনতে হবে। এতে ব্যবসার ব্যয়সহ পণ্যের উৎপাদন খরচও কমবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে অংশীদারিত্ব ধরে রাখতে হলে শিল্পের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। কারণ ব্যবসায়ীরা এখন দেশে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করছেন। তাই হুটহাট নীতি পরিবর্তন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। প্রতিযোগী দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠা-নামার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জ্বালানি তেলের দাম একাধিকবার সমন্বয় করে, সেখানে বাংলাদেশে মাত্র একবার সমন্বয় করা হয়েছে। উল্টো গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী অবস্থানে আছে। অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশ ভারত ডলারের বিপরীতে রুপির ৪০ শতাংশ এবং তুরস্ক লিরার ৬৮ শতাংশ ডলার অবমূল্যায়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো টাকার মান সমন্বয় করা হয়নি। তিনি বলেন, অবকাঠামো খাতে বড় ঘাটতি আছে। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় শিল্পের নীতিমালা প্রণয়নের আগে সরকারের আরো ভাবা উচিত। অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলসহ সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। যার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের সাহস দেখাবেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুসারে ২০১৬ সালে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৭২টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৭৯ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এ সময়ে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশও পূরণ হয়নি। এরপর বিনিয়োগের তথ্য শুধু নিবন্ধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। অর্থাৎ বিনিয়োগে যে সাফল্যের কথা বলা হয়, তা কাগুজে।
বিনিয়োগে আলো
১. ইতোমধ্যে সরকার মন্ত্রিসভায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রæত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বাধা অন্তত দূর করা সম্ভব হবে। সিদ্ধান্তটি বেশ সুন্দর, ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই চমৎকার। কিন্তু বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। দেখা যাক কি করে সরকার এই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন। সত্যিকার অর্থে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা গেলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, খরচ কমবে।
২. সরকার বেশ কিছু দিন আগে থেকে দেশে ১০০টি বিশেষ শিল্পাঞ্চাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে ৩০টি শিল্পাঞ্চলের কাজ এগিয়ে চলছে। ১০টি শিল্পাঞ্চালের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে। এই উদ্যোগটি বেশ ভালো। সরকার ঘোষণা দিয়েছেন এই সকল শিল্পাঞ্চালে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তাতে এসব অঞ্চলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শিল্প স্থাপন করতে পারবেন। তখন দেশ দ্রæত শিল্প বিকাশে এগিয়ে যাবে।
৩. শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুৎ, প্রয়োজনীয় গ্যাস ও জ্বালানি প্রয়োজন। দেশে গ্যাস চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বিদ্যুৎও চাহিদা মোতাবেক এখনো পাওয়া যায় না। কিন্তু সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে। তখন শিল্প বিকাশে আর কোনো বাধা থাকবে না।
৪. দেশে রাজনৈতিক স্থিতি বিরাজমান। বিগত দুই বছর দেশে রাজনৈতিক তেমন কোনো অস্থিরতা ছিল না। হরতাল, অবরোধ এখন অনেকটা মানুষ ভুলে যেতে শুরু করেছে। আশা করা যায় রাজনৈতিক দলসমূহ হরতাল, অবরোধ পরিহার করে শৃঙ্খলাপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এদিকে ২০১৯ সালের আগেই একটি বহুদলীয় সকলের গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের ইঙ্গিত সরকার দিয়েছেন। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ভিশন-২০৩০ সালকে সামনে পেশ করে আগামী নির্বাচনের বার্তা দিয়েছেন। তাই দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ধীরে ধীরে উন্নত থেকে উন্নতর হবে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তখন বাংলাদেশে বিনিয়োগে বেশ উৎসাহ বোধ করবে। কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া শিল্পে বিনিয়োগ করা যায় না। বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য শিল্প খাতে টার্গেট অনুযায়ী বিনিয়োগ আসেনি। আগামী দিনে এ অবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। তা এ ক্ষেত্রে সরকারকে সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহ পালনে সরকার সহযোগিতা করে দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নত করতে সহায়ক হবে। এটি সবার কাম্য।
৫. বিনিয়োগের অন্যতম শর্ত হচ্ছে স্বল্প সুদে, সহজ শর্তে ব্যাংকঋণ। ব্যাংকের ঋণের সুদের হার ধীরে ধীরে কমে আসবে। বর্তমানে ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণ পাওয়া যাচ্ছে। তা ধীরে ধীরে ৭ শতাংশে কমিয়ে আনতে পারলে শিল্পে বিনিয়োগ দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে বিদেশী অর্থও ৫ থেকে ৭ শতাংশে শিল্প খাতে বিনিয়োগের জন্য পাওয়া যাচ্ছে। এই হার ৩ থেকে ৫ শতাংশে সুুদের হার নেমে এলে আরো ভালো হবে।
৬. দেশে শিল্প ও বিনিয়োগে সর্বশেষ যে সমস্যার কথা বলব তা হচ্ছে দুর্নীতি, অনিয়ম ও সুশাসনের অভাব। দুর্নীতি, অনিয়ম ও সুশাসনের প্রতি সরকার এখন খুব বেশ করে নজর দিচ্ছে। দেশে আইনের শাসন কায়েম করার জন্য বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়েছে। এখন বিচার বিভাগ স্বাধীন। স্বাধীনভাবে বিচারকরা কাজ করতে পারছেন। আগামীতে বিচার বিভাগ আরো বেশি স্বাধীন ও শক্তিশালী হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। দুর্নীতিকে ‘না’ বলতে হবে। সমাজের সকল স্তর থেকে দুর্নীতিকে ‘না’ বলতে হবে। সকলকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। শিক্ষাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। শিশুকাল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের যা খারাপ তা বোঝাতে হবে। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সৎচরিত্র গঠনে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠ্যসূচি আকারে রাখতে হবে। শিশুমনে যা শেখানো হবে পরবর্তী জীবনে মানুষ তা বাস্তবায়ন করে। প্রকৃত মানুষ তৈরির শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষা দিয়ে জাতিকে বেশি দূর এগিয়ে নেয়া যাবে না। পুরো দেশকে বিনিয়োগবান্ধব করতে পারলে বিনিয়োগের জন্য উদ্যোক্তার কোনো অভাব হবে না। পরিবেশ ভালো হলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে দ্রæত এগিয়ে আসবে। যার নজির ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশ।
ষ লেখক : সাবেক সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।