তৌহিদবাদীরাই ভারতের আদিবাসী
হিন্দ অঞ্চলে যত লোক বসবাস করে তারাই হিন্দী বা হিন্দু। ফারসী ও তুর্কীতে হিন্দুস্তান। আরবীতে
মু স্তা ফা জা মা ন আ ব্বা সী : ঈদ নিয়ে বের হবে বিশেষ সংখ্যা। সম্পাদককে জিজ্ঞেস করলাম, কোন বিষয় চিত্তাকর্ষক হবে? বললেন, ভাওয়াইয়া বা রবীন্দ্রসংগীত বা লালন নিয়ে লিখুন। একজনও বললেন না, যাকে নিয়ে আমাদের জীবন পরিচালিত, তাকে নিয়ে কিছু নতুন লিখুন। এ লেখা সবাই পড়বেন না। তাতে কিছুই যায় আসে না। যারা পড়বার তারা পড়বেন।
কম্পিউটারের কথা দিয়ে শুরু করি।
এডুয়ার্ড ফ্রেডকিন, পৃথিবীর সবচেয়ে নামকরা কম্পিউটার বিজ্ঞানী বলছেন: ঞযব ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ ঁহরাবৎংব বি যধাব রং ধ পড়হংবয়ঁবহপব ড়ভ ংড়সবঃযরহম রহঃবষষরমবহঃ, যিনি সমগ্র পৃথিবীকে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের মত কণায় কণায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে তথ্য দিয়ে পুরে দিয়েছেন। তথ্যগুলো সময় ও সুযোগমত ঠিক কম্পিউটারের নিয়মে কাজ করবে। বলেছেন: ঞযব ঁহরাবৎংব রং ধহধষড়মড়ঁং ঃড় ধ পড়সঢ়ঁঃবৎ ঢ়ৎড়মৎধস ফবংরমহবফ ঃড় ধহংবিৎ ধ য়ঁবংঃরড়হ.
উরমরঃধষ চযুংরপং এর মূলকথা হল: কোয়াকে বা ডিএনএগুলো মূলত: একটি ক্ষুদ্র যুগ্ম ও সমন্বিত তথ্যকণা, দেহ হারিয়ে যাবে, ওরা হারাবে না।
চীনেই হোক, আর একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির মাঝেই হোক, নবীজি [সা]-র শিক্ষা, বিজ্ঞানের কাছে যাও। নিরবচ্ছিন্ন বিজ্ঞান চর্চাই সত্যকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে।
সে কাল আসছে। যারা সত্যিকার ঈমানদার, তাদের জন্যে নয়। হজরত মুসা [আ]-র হাতের লাঠির হেলনে যখন সাগর তার পানি সরিয়ে নেয়, কুরআনে বর্ণিত অজস্র উদাহরণ যখন চোখের সামনেই অদৃশ্যকে দৃশ্য করে দেয়, তখন আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের আশ্চর্য অগ্রগতি মুহূর্তের জন্যে হলেও আধুনিক মনকে আচ্ছন্ন করে বৈকি। একবিংশ শতাব্দীর মাত্র ১৯ বছরে কি হতে পারে তা ঞযব অমব ড়ভ ঝঢ়রৎরঃঁধষ গধপযরহবং-এ বিধৃত। চিন্তা করুন এমন এক পৃথিবী যেখানে মানব ও তার সৃষ্ট যন্ত্রমানবের মধ্যে তফাৎটা হয়ে যাবে ঘোলাটে, মনুষ্যত্ব ও প্রযুক্তির সীমারেখা হবে বিলীয়মান এবং যেখানে আত্মা ও সিলিকন কণা এক হয়ে যায়। রে কুরজ্ওয়েল [জধু কঁৎুবিষষ] এর ভবিষ্যৎ চিন্তাধারা গত একশ’ বছরের প্রযুক্তির জয়যাত্রার ভিত্তির উপর রচিত এমন এক সম্ভাবনাময় দিগন্ত যেখানে কম্পিউটাররা তাদের ধারণ বুদ্ধি ও গাণিতিক দক্ষমতায় ২০২০ সালের মধ্যে বহু গুণে মানব-মগজকে ছাড়িয়ে যাবে। মনুষ্যচালিত বুদ্ধিমান সৃষ্টরা তখন জায়গা দখল করে নেবে শিক্ষকদের সহযাত্রী ও সহকর্মীদের এবং প্রেমিকদের। কারণ তাদের তথ্য প্রবাহ প্রত্যক্ষভাবে মগজে চালু হয়ে যাচ্ছে ‘ই’ তরঙ্গ প্রবাহে [ঘবঁৎধষ চধঃযধিুং]। ষ্পষ্টতঃই মানুষ ও কম্পিউটারের মধ্যে তফাৎ ক্রমেই ঘোলাটে থেকে ঘোলাটে হতে হতে এক সময় যন্ত্রই মানুষের মগজের চেয়ে উচ্চাসনে বসবে, ‘যদি আমরা তাকে বিশ্বাস করি’। মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান কি কম্পিউটার?
হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রেই তা মানুষের বুদ্ধিকে পরাস্ত করেছে বৈকি। সীমিত হলেও। যেমন, চেস বা দাবাখেলার ক্ষেত্রে, কয়েকটি চিকিৎসা শণাক্তকরণের ক্ষেত্রে, স্টক কেনা ও বিক্রির ক্ষেত্রে এবং সর্বোপরি ক্ষেপণাস্ত্র চালনার ব্যাপারে। তবুও মানুষের বুদ্ধিমত্তা সবার উপরে রয়েছে সচল ও প্রসারশীল, যেমন কম্পিউটার এখনও কুকুর ও বেড়ালের তফাৎ শেখেনি, জুতোর ফিতে বাঁধতে পারে না, একটি ছায়াছবির সংক্ষেপ কি জানাতে পারে না, জানে না পরিহাস, অনেক টুকিটাকি যা তার স্রষ্টারা বুঝে ফেলে এক সেকেন্ডে। কম্পিউটারের অভিধানে নেই প্রেম, ভালবাসা, স্নেহ, মমতা, অভিমান, ঈর্ষা, এমনি অনেক বিন্দু, যার সিংহভাগে রয়েছে মানুষের মগজের অজানা বিশ্ব, আল্লাহ্র ইল্ম।
আমার স্থির বিশ্বাস যে কম্পিউটার প্রযুক্তির বিস্ময়কর সাফল্যের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরাই ঘায়েল হবে। যেমনটি শুরু হয়েছে ড. রশীদ খলিফা মিসরি কম্পিউটারে ‘উনিশ’ সংখ্যাতত্তে¡র পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে।
কুরআনের সংখ্যাতাত্তি¡ক মাহাত্ম্য সম্পর্কে তার চমৎকার যুক্তি আহমদ দিদাত-এর অষ ছঁৎধহ, ঃযব টষঃরসধঃব গরৎধপষব [উঁৎনধহ, ঝড়ঁঃয অভৎরপধ ১৯৭৯], এবং ডক্টর মরিস্ বুকাইলি-র ‘বাইবেল কুরআন এন্ড সায়েন্স’। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের উত্তর দিতে কোনও বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিক এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসেন নি। অত্যাশ্চর্য জটিল এই জাল যেমনি অভিনব তেমনি বিস্ময়কর এই ১৯ এর সুদূঢ় বুনন। উম্মী মুহাম্মদ [সা]-কে শুধু বলা হয়েছে:
হে [মুহাম্মদ] বল, যদি এই কুরআনের অনরূপ গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্যে মানবকুল ও জীন জাতি সমবেত হয় পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতায়, তবু তাহারা উহা সম্ভব করিতে পারিবে না। [১৭-৮৮] বল, আমার প্রভুর বাণীসমূহ লিখিবার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তবুও আমার প্রভুর বাণীসমূহ শেষ হওয়ার পূর্বে সমুদ্র শেষ হইয়া যাইবে, যদিও অনরূপ আরও অন্যান্য সমুদ্রকে সাহায্যের জন্য আনয়ন করা হয়। [১৮-১০৯]
লেবাননের অধিবাসী ড. রশীদ খলিফা মিসরী সর্বপ্রথম কুরআনকে ‘সেট’ করেন কম্পিউটারে। ফরিদ উদ্দিন মাসউদ অনুদিত ‘আশ্চর্য এই কুরআন’, একটি অবশ্য পাঠ্য বই, যাতে আল্লাহ্র এই আয়াতগুলো:
১. তাহার উপর উনিশ
২. ইহার মাহাত্ম্য উনিশ, সুপ্রতিষ্ঠিত
ডক্টর রশীদ খলিফা মিসরী যা সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরেছেন তার সংক্ষিপ্ত সার হল: কুরআনের কোন একটি সুরা কোন একটি বিশেষ কোডের দ্বারা যখন শুরু হয়, সেই সুরাতে সেই কোডের অক্ষর অথবা অক্ষরগুলো যতবার আসে, সে সংখ্যাটি পৃথকভাবে সকল সময়েই ১৯ দ্বারা বিভাজ্য এবং সমষ্টিগতভাবেও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। কাজী জাহান মিঞার ‘আল কুরআন দ্য চ্যালেঞ্জ’- বইটির প্রথম পরিচ্ছেদ এই ‘তিসআতা আশারা’, বা উনিশের বন্ধন সম্পর্কে সুন্দর যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে, যা নবীন পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবে।
কুরআন বার বার পাঠ করলে বোঝা সহজতর হয়, যেমন ‘কোন মিথ্যা উহাতে অনুপ্রবেশ করিবে না সম্মুখ হইতে [সংযোজনার্থে] কিংবা পশ্চাৎ হইতে [বিয়োজন বা স্বত্ত¡া হারানোর অর্থে ৪১:৪২ আল্লাহ্র বাণীর কোন পরিবর্তন নাই, ইহা এক মহাসাফল্য’। [১৭-৬৪]
বিজ্ঞানের কাছেই আমরা স্থিরভাবে জানতে পারব কুরআন কখনই মানবসৃষ্ট নয়, বরং এটি অতিবিজ্ঞ বিজ্ঞানস্রষ্টার পরিকল্পনা প্রসূত যা মানুষের চিন্তা ও গবেষণার দাবি রাখে। তাই তো কুরআন বলে: তবে কি তাহারা কুরআন সম্পর্কে প্রগাঢ় চিন্তা [গবেষণামূলক চিন্তা] করে না। [৪৭-২৪] ইহা কোন জ্যোতিষির উক্তি নহে, যদি তোমরা বুঝিয়া থাক। [৬৯-৪২] বরং উহা সকল জগতের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে অবতীর্ণ। [৬৯-৪৯] আরবি ভাষায় অবতীর্ণ এই কুরআনের কোন ত্রæটি নাই [অতএব] তাহারা যেন সংযত হয় [কুরআন সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা পোষণ থেকে]। ৩৯:২৮।
কুরআন এক ও অপরিবর্তনীয়। যারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পান, লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে, তাসখন্দে, অথবা ইস্তাম্বুলের তোপকাপী যাদুঘরে রক্ষিত প্রাচীন লিপিগুলোর সঙ্গে নিজ ঘরে রক্ষিত যে কোন একটি কুরআনের কপি মিলিয়ে দেখুন, একই কপি। ১৪০০ বছর চলে গেছে, কোথাও একটি জের জবরের পরিবর্তন নেই। বিজ্ঞানের এত উন্নতর অবকাশ সে দিন ছিল না, মানুষের স্মৃতিতে, হাতে লিখে এই কুরআন সংরক্ষিত হয়েছিল সে দিন, আর আজ তা পরিবর্তনের তো প্রশ্নই ওঠে না। এর সঙ্গে মিলিয়ে ‘কুরআনের অমোঘ সম্ভাষণ পড়–ন, আল্লাহ্র বাণীর কোন পরিবর্তন নাই, ইহা এক মহাসাফল্য’। ১০:১৪।
সবচেয়ে বিস্ময়কার ব্যাপার হল এত বড় জ্ঞানের আধার গ্রন্থ যিনি পৃথিবীর মানুষকে উপহার দিয়েছেন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে, তিনি হলেন মরুভূমির নিরক্ষর একজন মানুষ, যার জীবনে পুঁথিগত বিদ্যার্জনের সুযোগ আসে নি কোন দিন, যিনি ছিলেন অনাথ, সহায় সম্বলহীন। ‘কাসিদায়ে বোরদা’ তে হাসান বোসায়রি [রা] বলেছেন, এই নিরক্ষরতার ব্যাপারটিকে জোর দিয়ে:
কি প্রমাণ চাও মওজেযার
আমার নবী [সা] উম্মী নবী
এই কথাটি সবচেয়ে বড় মওজেযা [অনুবাদ আমার]।
মাঝে মাঝে সারিবদ্ধ পিঁপড়েদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি। সারিবদ্ধভাবে খাবার নিয়ে চলেছে তারা, রাজা রাণীর কথা মেনে চলছে শ্রমিক পিঁপড়ারা, আবার সংবাদ সংগ্রাহক পিঁপড়ে এসে কানে কানে কি বলে। যে পথে কোন পিঁপড়ে একবার চলে গেছে সে পথে আছে তাদের চিহ্ন। কাজেই সেটা আবার খুঁজে পেতে পারবে। বর্ষা আসছে, খাবার সংগ্রহ করে রাখ, এমনি কত চিন্তা তাদের মনে জাগে। আবার ভাবি পিঁপড়ে কি কখনও আমাকে নিয়ে ভাবে, আমার অস্তিত্ব টের পায়? তার কাছে আমি দৈত্যই শুধু নই, একটি বিধাতার মতই। আমার যে বিরাটত্ব তা তার কল্পনা বা মস্তিষ্কের কোটরে ধরবে? পিপীলিকার কল্পনায় ধরা যাক, বাংলাদেশের পৃথিবী, তারপর শত কোটি পৃথিবী, শত সৌরজগতের। তারপর বিধাতার কল্পনা তার পক্ষে ধারণ করা কি সম্ভব? এক কথায়, অসম্ভব।
আমাদের মস্তিষ্কের কি অবস্থা? আদর্শ মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা ১০১১ বা ১০০,০০০,০০০,০০০ এর বেশি নয়। সঙ্গে যোগ করা যায় যারা বিশেষভাবে জ্ঞানী তাদের ১০০০টি উবহফৎরঃব [অন্ত:¯œায়ুসূত্র] প্রতিটি কোষের সঙ্গে বা এমনিভাবে কাজ করে যাতে মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা উবহফৎরঃব [অন্ত:¯œায়ুসূত্র] সংযোগ প্রাপ্ত নিউরণের সংখ্যার হাজার গুণে দাঁড়ায়। তা হলে, যিনি সবচেয়ে জ্ঞানী, ধরা যাক আলবার্ট আইনষ্টাইন অথবা আবদুস সালাম, তাদের মস্তিষ্কে কতটুকু জ্ঞান আঁটা সম্ভব, তা হল মাত্র ১১১১ ১০০০ = ১০১৪ তথ্যের সমানুপাতিক। এবার খাবার টেবিলে একটি নুনের দানা হাতে তুলে নিই। নুন ছাড়া সব গিন্নির রান্না অচল। নুনের দানা হাতে নিলাম। এই নুনের দানাটুকুকেই সম্পূর্ণ ও সফলভাবে জানবার যোগ্যতা আছে কি আমার?
লবণের কণায় সোডিয়াম ও ক্লোরিনের এটম সংখ্যা হল ১০১৬ অর্থাৎ ১০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০। লবণ দানাটিকে যদি জানতে চাই তা হলে এর সাথে প্রতিটি এটমের ত্রি-মাত্রিক ধারণা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। বৈজ্ঞানিকরা বলছেন যে জানবার আরও তথ্য আছে, শুধুমাত্র উদাহরণের খাতিরে এই সহজ ডাটা সংগ্রহের কথা বলা হল।
তা হলে, আমাদের মস্তিষ্কে যে ধারণক্ষমতা তা একটি লবণদানার কথিত কণাটির এটমের সংখ্যার একশ’ ভাগের এক ভাগ মাত্র।
লবণের কেলাসিত হবার তথ্য সবার জানা আছে। কেলাসিত হবার পর প্রতিটি ক্লোরিন ও সোডিয়ামের এটম সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত হয়। এদের কেলাসন পদ্ধতি মেনে চলে এক অজ্ঞাত আইনের শৃঙ্খলা।
প্রতিটি এটম তার বন্ধন বিন্যাসে প্রায় ১০টি তথ্য তরঙ্গ ধারা নির্ধারিত। ফলে একটি সাধারণ লবণ কেলাসিত কণা সর্বনি¤œ যে সংখ্যক তথ্য ধারণ করে, তা সর্বশ্রেষ্ঠ মস্তিষ্ক [আলবার্ট আইনস্টাইন] এর মস্তিষ্ক ধারণযোগ্য তথ্য বা জ্ঞানে চেয়ে হাজার গুণে বড় ১০১৬ ১০.১। তাই পিঁপড়ে যেমন আমাকে বোঝার জানার জ্ঞান ধরতে পারে না, তেমনি কোন জ্ঞানীর পক্ষেই স্রষ্টাকে সম্পূর্ণ জানার চেষ্টা, কে আল্লাহ্, কি তাঁর পরিচয়, তাঁর স্রষ্টা কে, বোধগম্য হবে না কোনদিনই। আমরা আল্লাহ্কে জানতে চেষ্টা করি। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হবে না কোনদিনই। মহামতি বুদ্ধ বলেছেন, সে পথে গিয়ে লাভ নেই। অজ্ঞেয়বাদীরা তাই নিশ্চুপ। বলেন, ও পথে সাফল্য আসবে না। উদাহরণ: পÐিত জওহর লাল নেহরু। আমাদের দেশে অনেকে আছেন যারা অজ্ঞেয়বাদী। ওদেরকে ঠাট্টা করা ঠিক হবে না।
¯্রষ্টাকে জানতে হলে তাই সৃষ্টিকে যেমন বিপুল মহাবিশ্বের অসংখ্য নক্ষত্র-নীহারিকা বুঝতে হয়। ঞড় ঁহফবৎংঃধহফ ংঁপয ধ ঁহরাবৎংব বি হববফ ধ নৎধরহ ধঃ ষবধংঃ ধং সধংংরাব ধং ঃযব ড়িৎষফ. [ঈধৎষ ঝধমধহ]
দৃষ্টি তাকে দর্শন করে না; তিনি দৃষ্টিসমূহকে দর্শন করেন। [৬-১০৩]
‘কুরআন যে বিজ্ঞানময় এবং আধুনিক বিশ্বের সাম্প্রতিক আবিষ্কার যে কুরআনের ধারণায় আগেই বিদ্যমান, তা ধীরে ধীরে প্রমাণিত হচ্ছে; যদিও বিজ্ঞানের তথ্যগুলো আলাদাভাবে পরিবেশিত নয়, এবং তা সমগ্র কুরআনে ছড়িয়ে আছে খানিকটা বিক্ষিপ্তভাবে’। ড. মরিস বুকাইলি বলেছেন:
ওঃ রং রসঢ়ৎড়নধনষব ঃড় বীঢ়ষধরহ যড়ি ধ ঃবীঃ ঢ়ৎড়ফঁপবফ ধঃ ঃযব ঃরসব ড়ভ ছঁৎধহ, পড়ঁষফ যধাব পড়হঃধরহবফ রফবধং ঃযধঃ যধাব ড়হষু নববহ ফরংপড়াবৎবফ রহ সড়ফবৎহ ঃরসবং.
জ্ঞানার্জনের জন্যে প্রয়োজন হলে চীনে যাও, রাত্রিকালে কিছুক্ষণ জ্ঞানচর্চা সারারাত্রির নফল এবাদতের চেয়ে উত্তম, জ্ঞানী ব্যক্তির কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্রতর, জ্ঞানার্জন প্রত্যেক নর ও নারীর জন্য ফরজ, এগুলো হাদিস। কুরআনে আছে সাড়ে সাতশ’ আয়াত যেগুলো বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত। কুরআনের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের কোন সংঘাত নেই, আছে সামঞ্জস্য। কুরআনে বলা হয়েছে, যা সত্য, বিজ্ঞানীর কাজ হল সেই সত্যকে আবিস্কার করা। বিজ্ঞানীরা কোন নিয়মের ¯্রষ্টা নন, বিরাজমান নিয়মগুলো আবিষ্কার করেন। কুরআনে যে সব ঘটনাকে নিদর্শনাবলী বা আয়াত বলা হয়েছে, তা হল মহাবিশ্বের সৃষ্টি, প্রাণের সৃষ্টি, দিবারাত্রির পরিবর্তন, মেঘমালার বিবরণ ইত্যাদি। এগুলো বৈজ্ঞানিক ঘটনা। মরিস বুকাইলি বলেছেন: কুরআনে এমন একটি আয়াত নেই, যা বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক দিয়ে নস্যাৎ করা চলে। চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
‘যারা সত্যের সন্ধানী, তারা কি শুধু প্রশ্নে ক্ষান্ত হন না প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে চেষ্টা করেন? মৌলানা জালালউদ্দিন রুমির সমস্ত মসনবিই একটি প্রশ্নাগার, আর মনে মনে মালা গেঁথে কুরআন ‘হাদিসের নির্যাসের সেই প্রশ্নের সমাধানের প্রয়াস। ইকবালের ‘শিকওয়া ও জওয়াবে শিকওয়া’ প্রাচ্যের এক মহাজ্ঞানী দার্শনিকের গূঢ় প্রশ্নগুলো, ও অন্তর থেকে যে উত্তর এসেছে, তার জওয়াব। উত্তর ও প্রশ্নের সম্পর্কে কুরআনে স্পষ্ট লেখা আছে, যার মনের যেমন স্তর, সে তেমনি জওয়াব পাবে। যার কাছে ‘নাস্তি’র প্রাবল্য, যে লা ইলাহা’র ঊর্ধ্বে উঠতে পারবে না, সে-ও খানিকটা পাবে বৈকি, ওই পৃথিবীর আলো হাওয়া কারুণ্য কোন কিছু থেকেই সে বঞ্চিত হবে না; শুধু এর পরের ধাপটি থেকে অর্থাৎ ‘ইল্লাল্লাহ’ থেকে সে বঞ্চিত। এ পৃথিবীতে যত বঞ্চনা হাহাকার দুঃখ হতাশা তার থেকে মুক্তির জন্যে ‘লা ইলাহা’ অর্থাৎ কিছু নেই, অর্থাৎ ‘নাস্তি’, অনেকখানি সাহায্যে এগিয়ে আসবে, মানুষ ইচ্ছা করলে এই ‘নাস্তি’ দিয়েও একটি পরিচ্ছন্ন ও ত্রæটিহীন জীবন নিজেই সৃষ্টি করে নিতে পারবে। পৃথিবীতে লক্ষ কোটি মানবসন্তানের মধ্যে ‘লা ইলাহা’ নিয়ে সুন্দর জীবন কাটিয়ে গেছেন এমন লোকের উদাহরণ আছে বৈকি। সত্যের সন্ধানী হলেও তারা সত্যকে পান নি। তাদের প্রশ্নগুলোও বালকের মত। আমি কি স্বাধীন, আল্লাহ্র রূপ কি, খোদা কি মনুষ্য ভাবাপন্ন, খোদা কি স্বেচ্ছাচারী না নিয়মতান্ত্রিক, আল্লাহ্ ন্যায়বান না দয়ালু, পাপ পুণ্যের ডায়রি লেখার প্রয়োজন কি, গোর আজাব কি ন্যায়সঙ্গত, আল্লাহ্ মানুষের মন পরিবর্তন না করে হেদায়েতের ঝঞ্ঝাট দেন কেন, নামাজের সময় নির্দিষ্ট কেন, মেরাজ কি স্বপ্ন না সত্যি, পাপের আবার ওজন কি, আদমই কি আদি মানব? এমনি প্রশ্ন আমাদের দেশের একজন গ্রামীণ দার্শনিক করে গেছেন। অথচ অজস্র কেতাবে এর সমাধান প্রস্তুত। যাদের কাছে ছিল তার সরল বিনয়ী প্রশ্নগুলোর উত্তর, তাদের কাছে যাওয়ার সৌভাগ্য তিনি অর্জন করতে পারেন নি। এক ইবনুল আরবির পাঁচ শত পুস্তকে মানুষের মনে উদয় হতে পারে এমন শত সহস্র প্রশ্নের উত্তর সমুপস্থিত। যখন ইবনুল আরবির বইগুলো আমেরিকার লাইব্রেরিতে পেয়ে যাই ইংরেজিতে তখন ভাবী, ইশ্ এই জ্ঞান থেকে বাংলার মানুষ কেমন করে হল বঞ্চিত! আমেরিকার পÐিতরা সম্প্রতি [গত পনেরো বছরে] প্রায় একশ’টি গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ’ ইসলামি দর্শনের গ্রন্থ যেখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
শতাব্দীর শেষ বছরগুলোতে এবং এখনও পৃথিবীর নানা দেশ ঘুরে এসে আমার কাছে বার বার মনে হয়েছে একটি কথা। কোথাও শান্তি খুঁজে পেলাম না। এত উন্নতির মাঝেও পৃথিবীর মানুষ যেন দিন দিন আরও ঘনীভূত অশান্তির শিকার। নানা সঙ্কটের আবর্তে মানবতাকে তাই মুহাম্মদ [সা]-এর কাছেই ফিরে আসতে হবে। মানবতার শেষ আশ্রয়। আল্লাহ্ তাঁকে পাঠিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার বছর আগে, অনেক এগিয়েও যেভাবে ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি আমরা, তাতে কুরআনের সবগুলো বাণীই এ যাবৎ সত্যি বলে প্রতিভাত হয়েছে। এই কারণেই প্রথমে এশিয়ায়, পরে আফ্রিকা এবং এখন উত্তর আমেরিকায় লক্ষ মানুষ মুহাম্মদ [সা]-এর উম্মত হিসেবে দীক্ষা নিয়ে চলেছেন। দ্রæত গতিতে বেড়ে চলেছে। এই সংখ্যা অন্যান্য ধর্মের অনুগামীদের মধ্যে দৃশ্যত: কুরআনের অপ্রতিরোধ্যতা এমনভাবে প্রভাব ফেলেছে যে তাদের ধর্ম বিশ্বাসও যেন ধীরে ধীরে ফিকে হযে আসছে। অনেকে আবার ‘লা ইলাহা’ বা ‘নাস্তির’ দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সুবিশাল সোভিয়েত সাম্রাজ্য আমাদের চোখের সামনে মাত্র সত্তর বছরে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ল। লেনিন আর স্টালিনের বিরাট প্রস্তরমূর্তিগুলো কি পরাক্রমের সঙ্গে না শোভা পেত মস্কো, লেলিনগ্রাদের চত্বরগুলোতে, তাসখন্দে, আর্মেনিয়ায়, উজবেকিস্তানে, তুর্কমেনিয়ায়, জর্জিয়ায়। ক্যামেরায় ছবি তুলে এনেছিলাম কুড়ি বছর আগে। মহাচীনে ‘লা ইলাহা’, বা নাস্তির পতাকা উড়ছে পতপত করে। চীনের এই ‘লা ইলাহা’র জন্ম কনফুশিয়াস ধর্মের মাঝেই। তবু সে দিন দূরে নয় যে দিন চীনও অচিন মুহাম্মদ [সা]-এর সন্ধান পাবে। চীনের ইতিহাস সে দিকেই প্রবাহিত। মুহাম্মদ [সা] বলেছিলেন, চীন দেশে গেলেও যাবে যদি জ্ঞান আহরণ করতে চাও। মহাচীন যে মানবতার একটি প্রাচীন তীর্থস্থান সে বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। কে জানে মুহাম্মদ [সা]-এর কাছেই হয়ত মহাচীন সমর্পণ করবে তার অস্তিত্বকে।
রোজই লিখছি, কারণ মুহাম্মদ [সা]-এর কাছে এত কিছু যা কলমে ধরবে না, কাগজে কুলোবে না, হাজার হাজার কলাম লিখলেও না।
লেখক : সাহিত্য-সংগীত ব্যক্তিত্ব
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।