Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নির্বাচিত পদাবলি

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আ ল মা হ মু দ


নদীর ভিতরে নদী

তোমার গোসল আমি দেখেনি কি একদা তিতাসে?
মনে পড়ে? শ্মশানঘাটের সেই সিঁড়ি ছুঁয়ে নেমে যাওয়া জল
ডোবায় সে পাদপদ্ম। সফরী পুঁটির ঝাঁক আসে
আঙুল ঠুকরে খেতে। নদী যেন নদীতে পাগল।
নদীর ভিতরে যেন উষ্ণ এক নদী স্নান করে।
তিতাসের স্বচ্ছজলে প্রক্ষাললে নেমেছে তিতাসই।
নিজের শাপলা লয়ে খেলে নদী নদীর ভিতরে
ঠাট্টা বা বিদ্রƒপ নেই, শ্যেনচক্ষু, নেই চারণের বাঁশি।
অমন নাহানা আর দেখিনাকো; ঘুরি দেশান্তর
সাগরের বেলাভ‚মি ঘুরি আমি, তামাম হাম্মাম;
সিনানের ছবি দেখে ম্যুজিয়মে কাটাই প্রহর
পাই না সে দৃশ্যপট তিতাসের। প্রক্ষালনে নারীর আরাম।
ঈভের শরীর যত কেলি করে প্যাসিফিকে, ভ‚মধ্যসাগরে
নুনের দাহিকা হয়ে জ্বলে তারা অধরে, নধরে।


নি র্ম ল হা ল দা র

উইলককস
কোনও পবিত্রতা মানুসের চেয়ে
বেশি কিছু নয়।
কোনও উপাসনা অরণ্যের চেয়ে
বেশি কিছু নয়।

আনন্দের অধিক আনন্দ
দুঃখ-বেদনায় স্থির
রক্তাক্ত করে আহত করবে না
ব্যাধের একটি তীর


জা হা ঙ্গী র ফি রো জ

রাতের কাসিদ

তখনও আলো ছিল, মরা আলো গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে
একটি অস্পষ্ট রাত্রির ছিপনাও
বিলের আমন ধান বিনিকেটে সর্ সর্ শব্দ নিয়ে বাটে ফিরে আসে
সন্ধ্যা তখন ম্নাণ রোদের মাথায় ঘোমটা তুলে দিয়ে
সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিল রাত্রির;
ভাটিখানা থেকে টলতে টলতে ঘরে ফেরে একটি কুটুম পাখি
পিলসুজে রাখা কুপির কামনা শিখা কেঁপে ওঠে দমকা বাতাসে
মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে নীল আলোর জোনাকি;
কুপি নিভে গেলে রাত বিছানায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
জোনাকিটি জ্বলে নিভে
তারপর নীলআলো লেপ্টে দিয়ে স্থির
যেন অন্ধকারের সিঁথিতে এয়োতি চিহ্ন এঁকে দিল।
একটি চাপা গোঙ্গানির শব্দ ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হলে
দূরে কুকুরের কান্নায় উদ্বিগ্ন নবতি ধুর ধুর করে
কাকে যেন তাড়ায় একাকী।

আ নো য়া রু ল ই স লা ম

দরিয়া কাব্য
যেদিকে তাকাই শুধু জলরাশি ডাকছে আমাকে যেন
প্রতি পলে পলে আবেগে মথিত হৃদয় উঠছে হেসে
বাতাসের ধ্বনি ওঠে ফুঁসে ফুঁসে হানছে ক্ষোভের বাণ
ইস্রাফিলের শিঙ্গা হয়ে সে যে কর্ণকুহরে বাজে।
কার আহŸানে সাড়া দিতে আমি এসেছি এখানে আজ
কিছু জানা নেই, শিহরিত হই Ñ ভুলে যাই পিছু টান
দেয়া নেয়া চলে তোমাতে আমাতে অজানা গানের সুরে
বেশ তো ছিলাম আপন ভুবনে বাড়ালে দু’হাত কেন?
ফেলে আসা দিন স্মৃতির পরশে কথা কয় চুপি চুপি
তাইতো আকাশ দু’ডানা মেলেছে মনের কপাট খুলে
জীবনের মতো বেদনা-বিলাপ ঝরে আজ ফুল হয়ে
এ আমি যে কার সে কথা না ভেবে তোমাতে হয়েছি লীন।
এতো জানাজানি এতো ভালোবাসা নিমেষে লুকালে হায়
শত বঞ্চনা জেগে থাকে নীল বেদনার শরাঘাতে
আর কতো দূরে নিয়ে যাবে বলো কিছু তো মানে না মন
জলের নিবাসে বসতি তবুও পিপাসায় ফাটে বুক!
এই আমি যদি তোমার কাছেতে প্রিয়তম হই তবে
অতি সযতনে আমার আমিকে চরণে দিও গো ঠাঁই
আছি আমি তবু, হঠাৎ হারানো স্বপনের অবসরে
অচেনার দেশে একদিন জানি বাতিঘর খুঁজে পাবো।
বেলা শেষে খেলা না ফুরায় যদি থাকে না খেলার রীতি
লোনা দরিয়ার উত্তাল ঢেউ শোনায় সোনালি গীতি।

মা হ মু দ কা মা ল

ঘরের ভেতরে পাপ বাইরে এনো না
ঘরের ভেতরে পাপ তাকে দ্রæত বাইরে এনো না
তার চেয়ে
ছড়ানো পাপকে ক্ষমাযোগ্য করে একীভূত করো
পৃথক জীবন তবু ভেদরেখা নানা চক্রযানে
দিনের শুরু ও শেষ ব্যবহারে অতি মাত্রিকতা
আত্মবিক্রয়ের যদি লজ্জাহীন নিন্দাবাদ হয়
হতে পারে
স্বভাবপ্রেরণা বলে পাপের তেমন কোনও দোষ নেই
জনারণ্যে শুচিরও ততোধিক প্রশংসা করো না
অপাপবিদ্ধ কিংবা দ্বিধাহীন পাপাচারী যেই হোক
ভুলশুদ্ধ ঘরে থাক তাকে আর বাইরে এনো না।


কা ম রু ল আ ল ম কি র ণ
বঙ্গদেশের রঙ্গরস

বঙ্গদেশের সব জাগাতে মিলছে খুবই রঙ্গরস,
এক খবরে সুস্থ্য সবাই নেতা, বাবা, খুনী বস।
রোগের ছুতোয় টপ আসামী নীড় বেঁধেছে হাসপাতাল,
এই নিয়ে এক করল খবর আনলো কুমির কেটে খাল।
খবর হলে জানলো সবাই সুস্হ বাবা হুদা ভাই,
এসিরুমে কাটছিলো বেশ রোগটা ছিল ক্ষুধা নাই।
বারডেমের এক এসি রুমে ছিলো নেতা জামানুর,
শুনছি তাহার কক্ষ ছিলো কর্মী নেতায় ভরপুর।
পাশে কারারক্ষী পুলিশ ছিল নাকি পাহারায়,
দিনগুলো বেশ কাটছিলো তার পাচ্ছিলো সে যাহা চায়।
শীর্ষ টেরর ফিরলো জেলে জানা গেল খবরে,
খুন করে সে শতেক মানুষ ঘুমাচ্ছে সব কবরে।
সেও নাকি হাসপাতালে কাটাচ্ছিলো মাসকে মাস,
চলছিলো তার চাঁদাবাজি মহাসুখের বসবাস।
এসব রোগী! ফিরছে এখন লাল দালানের ঠিকানায়,
এক খবরে সুস্হ সবাই! মীরাক্কেল সব বোঝা দায়।
রাতারাতি সুস্হ সবাই পত্রিকার এক খবরে,
প্রশ্ন এখন হাসপাতালে ডাক্তারেরা কি করে?


য শো ধ রা রা য় চৌ ধু রী
শুদ্ধ দেসি রোম্যান্স

রঙিন দিনকার, ভারত সুন্দর
রঙিন সারাদিন ভালো লাগার
ভারত নির্মাণ, এসটিডির বুথ
মুদিরা বেচে রোজ জিনিস তার
অনেক ছেলেমেয়ে এসেছে ছেলেমেয়ে
তাদের সরু পেট, জিনস টাইট
তারাই সব কাজে এগিয়ে আসে আর
টাকার লোভ, আরও টাকা যে চাই
বারাতে নাচে তারা বিয়েবাড়ির
শরীর খাটে ভাড়া সারাশরীর
অনেক খায় আর অনেক গায় তারা, টাকাও পায়।
ভাড়াতে থাকে তারা পোড়াবাড়ির
ভালোওবাসে শুধু ঘষাঘসির
অনেকবার করে তারা যে ভালোবাসে, বাকওয়াসেই...
বিয়ে করে না তারা, করে না বিয়ে আর
কেবল নিজেদের বিয়ে থেকেই
নিজেরা সারাদিন শুধু পালায়

আ ল ম শা ম স
বিশ্বাস

প্রেমের সাথে ভালোবাসার যে সম্পর্ক
নদীর সাথে সমুদ্রের যে বন্ধুত্ব
তোমার সাথে আমার এমন নয়।
জীবনের সাথে যৌবনের যে সন্ধি
পাহাড়ের সাথে ঝর্ণার যে মিতালী
তোমার সাথে আমার তেমন নয়।
মেঘের সাথে বৃষ্টির যে তফাৎ
ঝড়ের সাথে বিদ্যুৎ কিংবা গর্জনের
তোমার সাথে আমার এমনও নয়।
জীবনের সাথে মৃত্যুর যে প্রতিজ্ঞা
সময়ের সাথে প্রাপ্তির...
আমার দৃষ্টি এদিকেও নয়।
আকুল কণ্ঠে ব্যাকুল বাউল
বিধবার চোখে মুখে করুণ রোদন
এখানেও তুমি অদৃশ্য।

ত হী দ ম নি
নিঃসঙ্গ মানুষ

প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বাস করে এক একজন নিঃসঙ্গ মানুষ
গভীর রাতে অথবা একাকি দুঃসময়ে ঘুম থেকে জেগে
যোগ-বিয়োগের অংক কষে-হিসেব মেলে না তার।
স্তব্ধতার গভীর খাদে পড়ে থাকে তার সকল কথা সব চাওয়া পাওয়া!
পাশে শুয়ে থাকা বন্ধু,ভাই সন্তান অথবা মা-কন্যা কেউ পায়না
অতল অন্ধকারে সে মানুষের কান্না ঝরা দিন রাত্রির খোঁজ,
ভাষাহীন-শব্দহীন সব কিছু অলক্ষে অন্তরালে বসবাস করে তারই ঘরে।
এরপর বিলুপ্ত সবই ইতিহাস! যখন সে হারায় জীবন থেকে! চাপা পড়ে
অজস্র ব্যথা ও স্বপ্ন, হারায় কালের গহŸরে তার চিরকালীন নিঃসঙ্গতা,
যতটা বলেছিল তার চেয়েও সহস্রগুণের না বলা কথার মালা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন