Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শরণার্থী শিবির : যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের নানা গল্প

প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : গ্রিক-মেসিডোনিয়া সীমান্তে সিরীয় শরণার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। শিবিরটিতে ধারণক্ষমতা ২ হাজার কিন্তু থাকছে ১৫ হাজার মানুষ। সামান্য একটু খাবারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একই অবস্থা হয় মানি ট্রান্সফার অফিসের সামনের কাউন্টার থেকে টাকা তোলার সময়ও। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ২০ বছর বয়সী সিরীয় তরুণী হান্নাহ।
হান্নাহ ওই শিবিরে এসেছে ১৫ দিন আগে। অর্ধ ডজন শরণার্থীর সঙ্গে সে লাইন ধরে আছে মানি ট্রান্সফার অফিসের কাইন্টারের সামনে। হান্না জানায়, সে প্রচ- সঙ্কটে আছে। মানসিকভাবে সে ভেঙ্গে পড়েছে। সে জানায়, টাকা ছাড়া আপনি এখানে থাকতে পারবেন না। আর সামান্য পরিমাণ খাদ্য কেনার জন্য টাকা তুলতে হলে আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
হান্না জানান, শিবিরের ১৫ হাজার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য নেই। তাই প্রয়োজনীয় খাবার আপনাকে নিজস্ব উদ্যোগে কিনতে হবে। হান্নার এই অর্থ আসে তার আত্মীয়দের একটি সূত্র থেকে, যেখান থেকে সে কখনোই এ ধরনের সাহায্য আশা করেনি। তার এক চাচা অস্ট্রেলিয়া থাকে। গত শনিবার সে হান্নাকে জার্মান টেলিভিশনের এক খবরে দেখতে পায়। তারপর তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে এবং টাকা পাঠায়।
হান্না হোমস-এর আর্কিটেক্চারের ছাত্রী। ২০১১ সালে এখান থেকেই সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছিলো।
কিন্তু চার বছরের যুদ্ধে এর বেশিরভাগই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হান্না তার বাবা-মা ও ভাইকে নিয়ে জার্মানিতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো। সেখানে তার দুই বন্ধু রয়েছে। কিন্তু অন্য সিরীয়দেও মতো হান্না এখন গ্রিসের উত্তরাঞ্চলে এই শরণার্থী শিবিরে আটকা পড়ে আছে।
গত সপ্তাহে মধ্য ইউরোপীয় অন্য ৯টি দেশগুলোর সঙ্গে মেসিডোনিয়াও সিদ্ধান্ত নেয়, তারা সীমিত সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে।
শরণার্থী শিবিরে অল্প যে ক’জন ইংরেজি জানে, হান্না তাদের একজন। সে ওই শিবিরে কর্মরত অল্প ক’টি এনজিও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আরবি’র পাশাপাশি ইংরেজিতে প্রধান দোভাষীর ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছে।
ঘান্না বলেন, তিনি অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যেহেতু আমি ইংরেজি জানি, তাই সবাইকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। তিনি প্রথম একটি ক্লিনিকে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন বলে জানান।
তিনি সেখানে তিন ঘণ্টা ধরে চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগিদের এবং নতুন বন্ধুদের সঙ্গে চিকিৎসক ও সেবিকাদের কথোপকথনে দোভাষির ভূমিকা পালন করেন। শিবির থেকে এখন দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টাই এ ব্যাপারে তার ডাক পড়ে।
শিবিরের কেউ যখন কোনকিছু চায় অথবা আমি যখন শিবিরের মধ্যে হাঁটাচলা করি, তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি অনুবাদ করকে পারো? এ ভাবেই আমি এখানে অনেক মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছি বলে জানান হান্না। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এখানকার পরিবেশ খুবই খারাপ ও বসবাসের অনুপযোগী।
হান্না এটাও ভেবেছিল, সে জার্মানিতে যাওয়ার জন্য মানবপাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তবে এটা যে খুবই বিপদজনক একটা সিদ্ধান্ত, তাও সে বুঝতে পেরেছিল। আর এটা ভেবেই সে ওই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। সে বুঝতে পেরেছিল, ওভাবে যাওয়াটা হবে অবৈধ। তাই সে পথ থেকে সে সরে এসেছে।
শরণার্থী শিবির প্রসঙ্গে সে বলে, এখানে যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের অনেক গল্প আছে। আমি এসব নিজের চোখে দেখেছি। তারা অনেক কষ্টে আছে, তবুও মনোবল চাঙ্গা রেখেছে। স্কাই নিউজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শরণার্থী শিবির : যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের নানা গল্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ