সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
ইয়াছিন খন্দকার লোভা
আকিবের শীতকালীন সময়ের কথা। তখন ছিল শীতকালের মধ্যবর্তী সময়। আকিব তার খালাদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। তখন আকিব সপ্তম শ্রেণিতে পড়তো। আকিবের খালাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর যেমন, তেমনি খুব ভয়ংকরও ছিল। শীতকালীন সময়ে আকিবের খালাদের এলাকায় গভীর রাতে শিয়ালদের হুয়াক্কা হুয়া আওয়াজ বেশি শোনা যেত। আকিবের খালাদের বাড়ির আশপাশে সবুজ বন-জঙ্গলে ছিল ভরপুর। আকিবের সমবয়সী খালাতো ভাই ছিল বলে খালাদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে খুব খুশি লাগতো আকিবের। তাই বেড়ানোর আনন্দটাও খুব মিঠতো আকিবের। একদিন বিকেলবেলা খালাতো ভাইকে খুঁজতে তাদের বাড়ির সামনে দীঘির উত্তর পাশে গিয়েছিল আকিব। আকিব দেখতে পেল খালাতো ভাই দীঘির পাড়ে বসা। আর এলাকার কিছু সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে কি যেন কাজের প্রোগ্রাম করছিল। দীঘির দু’পাশে বন-জঙ্গলে ভরা ছিল বলে আকিব সেখানে কোনোদিনও ভয়ে একা বসতো না। তারপর খালাতো ভাইসহ সবাইকে দেখে আকিবও তাদের পাশে গিয়ে বসলো। সবার সাথে খালাতো ভাই তাদের প্রোগ্রামে আকিবকেও মিশিয়ে নিল। তারপর মনোযোগ সহকারে সবার সাথে আকিবও কান পেতে প্রোগ্রাম শুনছিল। প্রোগ্রাম শুনে আকিবের তখন আর বোঝতে বাকি রইল না যে এটি একটি শিয়াল ধরার ডেঞ্জারাস প্রোগ্রাম চলছে। আর সেই শিয়াল ধরা নাকি হবে ওই দীঘির দুপাড়েই অবস্থিত বড় জঙ্গলের ভিতর থেকে। কারণ ঐ জঙ্গলে প্রতি বছর শীত এলে যখন জঙ্গলগুলো বড় হয়; তখন নাকি শিয়াল প-িতরা এসে মনের সুখে সেই জঙ্গলে বাসা বাঁধে আর রাতের বেলায় হুয়াক্কা হুয়া চিৎকার করে। কিন্তু আকিবতো তাদের প্রোগ্রাম শুনে আতঙ্কে ভয়ে ‘থ’ হয়ে গেল। ভয়ে যেন আকিবের তখন পুরো শরীর কাঁপছিল। মনে মনে আকিব তখন বলছিল যে, এরাতো দেখি পুলিশ থেকেও ডেঞ্জারাস। সবার সাথে আকিবও যেন থাকে, খালাতো ভাইসহ অন্যরা অনুরোধ করলো। আকিব ভয় পেলেও কিন্তু রাজি হয়ে গেল।
পরে কখন শিয়াল ধরা হবে তার দিনক্ষণ ঠিক করে সবাই প্রোগ্রাম শেষ করল। আর সেই শিয়াল ধরার সময়টা ঠিক করে নেয়া হলো তারপরের দিনই খুব ভোরবেলায়। শিয়াল ধরার পরে শিয়ালের মাংস আর শিয়ালের কলিজা রান্না করার পর রুটি দিয়ে খাওয়া হবে বলে ঠিক করে নেয়া হলো। রাতেই শিয়াল ধরার জন্য অনেকগুলো লাঠিসোঁটা তৈরি করে নেয়া হয় সবার জন্য। ভোর বেলায় যেহেতু শিয়াল ধরার অ্যাকশন তাই রাতে আকিব আর তার খালাতো ভাই রাতের খাওয়া খেয়ে জলদি ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে অন্য দিনের চেয়ে সেদিন দু’ঘণ্টা আগেই ঘুম থেকে উঠলো আকিব ও তার খালাতো ভাই। ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খালাদের ঘরের কাউকে কিছু না বলেই আকিব ও তার খালাতো ভাই সোজা চলে যায় প্রোগ্রাম সফল করার উদ্দেশ্যে দীঘির পাড়ে। সেখানে গিয়ে আকিব আর তার খালাতো ভাই উপস্থিত হওয়ার আগেই অন্যরা সবাই দীঘির পাড়ে এসে হাজির হয়ে আছে। তখন ভোর প্রায় সাড়ে ৫টার মতো। তারপর দেরি না করে সবাই হাতে এক এক করে লাঠি নিয়ে তৈরি হয়ে গেল। সবাই একমত পোষণ করে প্রস্তুতি নিল। সবাই এক স্লোগানে ছুটে চললো শিয়াল ধরার অ্যাকশনে। শুরু হয়ে গেল দীঘির পাড়ের জঙ্গলের ভিতর পিটাপিটির অ্যাকশন।
তারপর অ্যাকশনের কিছুক্ষণ পরেই জঙ্গল থেকে শুর শুর করে বের হয়ে দৌড়াতে শুরু হয়ে গেল শিয়াল প-িতদের। আকিব দেখতে পেল অনেকগুলো শিয়াল জঙ্গল থেকে বের হয়ে ছুটছে এদিকওদিক। সব শিয়ালই মাইরের ভয়ে পালাচ্ছে দৌড়ের গতি বাড়িয়ে। আকিবরা সবাই জঙ্গল পিটাচ্ছে আর শিয়াল প-িতরাও পালাচ্ছে। আকিবরা সবাই লক্ষ্য করলো, খুব বড় একটা শিয়াল পালাচ্ছে। দীঘির পূর্ব পাশে স্কুলের পিছনের জঙ্গলের ভিতর। সুযোগ পেয়ে আকিবরা সবাই টার্গেট নিল ঐ বড় শিয়ালের পিছনে। তারপর স্কুলের পিছে ঐ জঙ্গল ছোট বলে আকিবরা সবাই মিলে চারদিক হতে ঘিরে ফেলল। পরে ধীরে ধীরে অ্যাকশনের মোড নিয়ে আকিবরা সবাই সামনের দিকে এগুতে লাগলো। আকিবদের এগুতে দেখে শিয়াল প-িত পালানোর চেষ্টা করছিল। না, আর রেহাই মিললোনা শিয়াল প-িতের। শিয়ালের আর পালানোর ব্যর্থ চেষ্টা হলো। পালানোর চেষ্টাকালে সোহাগ নামের একজনের পায়ে কামড়ে দিয়েছিল। কামড়ের সময়েই বাড়ি দিলো আকিবের খালাতো ভাই শিয়াল প-িতের মাথায়। বাড়ি খেয়ে সাথে সাথেই কাত হয়ে শিয়াল প-িত মাটিতে লুটে পড়লো। তারপর আকিবরা সবাই মিলে আরো কয়েকটি বাড়ি দেয়ার পর শিয়াল প-িত আর না পালিয়ে যাওয়া নিশ্চিত হলে উপস্থিত আকিবদের সবার সেকি আনন্দের চিল্লানি। চিল্লানির পরে শিয়াল প-িতকে দ্রুত জবাই করা হলো। তারপর শিয়ালটাকে নিয়ে যাওয়া হয় সোহাগদের বাড়িতে।
সোহাগদের বাড়িতেই শিয়ালের মাংস কাটা হবে। আর সোহাগদের বাড়ি আকিবের খালাদের পাশের বাড়ি। কারণ সেদিন সোহাগদের বাসার সবাই অন্য জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিল বলে পুরো বাড়ি একদম খালি ছিল। এরপর ছাগলের মতো করে শুরু হলো শিয়ালের চামড়া ছিলানো। আকিব ও তার খালাতো ভাইসহ সবাই শিয়ালের মাংস কাটতে বসে গেল। আকিব শিয়ালের মাংস কাটছিল আর ভাবছিল যে আজ বুঝি এই প্রথম বারের মতো করে ভোগ করবে শিয়ালের মাংস। এই কথাগুলো ভাবতে না ভাবতেই আকিবের খালা এসে আকিবের সামনে হাজির। খালাতো ভাইসহ আকিবরা দু’জনই খালার চোখে হাতে নাতে খেল ধরা। আকিবদের অবস্থা দেখে তখন আকিবের খালার সেকি চিল্লানি দিল। তারপর আকিবের খালা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এলো আকিবের খালাতো বোন বড় আপুদের। চিল্লানির জোর আরো বেড়ে গেল। আকিবের আপুরা আকিবদের হাতে শিয়ালের মাংস দেখে ওয়াক থু ওয়াক থু করতে করতে আকিবের একজন আপু সেখানে বমিই করে দিয়েছিল। তারপর আকিবের খালাসহ আপুরা সোজা বলে দিল আজ থেকে তোদের ঘরে খাওয়া নেই। যদিও খেতে আছিস তাহলে বাজার থেকে দু’জনই নতুন করে খাওয়ার প্লেট কিনে আনবি। তারপর আকিবের খালাসহ আপুরা তাদের বাড়ি ফিরে গেল। আহ! আকিব আর খালাতো ভাই পড়ল এক বিপদে। দু’জনই ভাবছিল একদিকে শিয়ালের মাংস আর অন্যদিকে ঘরের খাওয়ার কথা। শেষে দু’জনই ভাবল কি আর করা। সহপাঠীদের বলে আকিব আর খালাতো ভাই দু’জনই শিয়ালের মাংস কাটার স্থান থেকে সোজা ফিরে গেল বাড়িতে। কিন্তু মনের ভেতর ভীষণ একটা আফসোসই রয়ে গেল আকিব আর খালাতো ভাইয়ের। তারপর দুপুর বেলা যখন ঐ শিয়ালের মাংস সোহাগদের বাড়ির উঠোনে রান্না করা শুরু হয়েছিল তখন আশেপাশের পুরো দু’চার বাড়ি যেন শিয়ালের মাংসের ঘ্রাণে ভরে উঠল। কিন্তু আকিব আর খালাতো ভাই দুজন মিলে ঘরের সামনে সিঁড়িতে বসে বসে নাকে রান্না করা বাতাসে উড়ে আসা শিয়ালের মাংসের ঘ্রাণ নিচ্ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।