Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেনীতে মেডিক্যাল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জোরালো হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

| প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোঃ ওমর ফারুক, ফেনী থেকে : ফেনীতে মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হচ্ছে। ফেনী বাংলাদেশের অগ্রসর একটি জেলা হলেও অদ্যাবধি কোন মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। জেলার ১৬ লক্ষ মানুষ এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর  প্রায় ১৬ লক্ষ মিলিয়ে মোট ৩২ লক্ষ  মানুষ ফেনীর চিকিৎসা সেবার উপর নির্ভরশীল। জেলার ৬টি উপজেলা, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট, জোরারগঞ্জ, মিরসরাই, নোয়াখালীর সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার প্রায় সকল অধিবাসীরাই ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। বিপুল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র কেন্দ্রস্থল ফেনী জেলা।  জেলা  সদর হাসপাতাল দীর্ঘ দিন থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হিসাবে পরিচিতি থাকলেও বাস্তবে পূর্নতা পায় ২০১৪ সালে। পূর্বে ১০০ শয্যা দিয়ে গাদাগাদি করে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতো হাজার হাজার রোগী। ২০০৮ সালে গণপূর্তের অধীনে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মান কাজ শুরু হয়। যা ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। ফলে মোট ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসাবে পূর্নতা পায় সদর হাসপাতাল। বর্তমানে এ হাসপাতাল  স্বাস্থ্য সেবায় ব্যাপক ভ‚মিকা পালন করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিধানমতে জেলা শহরে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থাকলে মেডিকেল কলেজের প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, যশোর মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ সহ দেশের অনেক মেডিকেল কলেজই ২৫০ শয্যা নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সেই হিসাবে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘোষণাতেই মেডিকেল কলেজে পরিণত হতে পারে ফেনী সদর হাসপাতাল। দীর্ঘদিন ধরে ফেনীর সুশিল সমাজ, জনপ্রতিনিধি সর্বোপরি ফেনীর সর্বস্তরের মানুষ মেডিকেল কলেজের দাবিতে সোচ্চার। ফেনীর চেয়ে অনগ্রসর জেলা গুলো মেডিকেল কলেজ পেলেও ফেনী কেন বঞ্চিত হচ্ছে তা জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে ফেনীর চাইতে পিছিয়ে থাকা অনেক জেলাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ফেনী ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের একমাত্র বিদ্যাপিঠ ফেনী সরকারি কলেজ। বর্তমানে এ কলেজে অধ্যয়নরত রয়েছে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী। এছাড়া ফেনী সরকারী জিয়া মহিলা কলেজ,  জয়নাল হাজারী কলেজ, মহিপাল সরকারী কলেজ, রামপুর নাছির মেমোরিয়াল কলেজ ব্যাক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ফেনী সিটি কলেজ, ভিক্টোরিয়া কলেজ, বিকন মডেল কলেজ, ফেনী বালিকা বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ ও ফেনী মডেল কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে জেলার বাইরে যেতে হয়। ফলে চরম বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছেলেদের চাইতে বেশী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বলে জানা গেছে। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য জেলার বাইরে পাঠাতে চান না অভিভাবকরা। শুধু ফেনী নয় পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি জেলার বিপুল সংখ্যাক শিক্ষার্থী ফেনীর শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। ফলে ফেনীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে ফেনীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সমাজসেবী সংগঠন মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। ফেনী ২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ফেনী জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজ চৌধুরী প্রশাসক থাকাকালীন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তিগত প্যাডে সুপারিশনামা পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী লক্ষীপুরে জন সমাবেশে গিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফেনী চাঁদপুরের চেয়ে সবদিকে থেকে এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গের মঙ্গাপীড়িত জেলাগুলোতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ রয়েছে। ফেনী সদর হাসপাতাল বর্তমানে মেডিকেল কলেজ করার সম্পূর্ণ উপযোগী বলে জানালেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অসীম কুমার সাহা। যে কোন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ৫ একর জায়গা প্রয়োজন। সে হিসাবে ফেনী সদর হাসপাতালের মালিকানায় ১২ একর জায়গা রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন ফেনী সদর হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক রোগী ইনডোর, আউটডোর ও জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে। শুধু ফেনী নয় পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ ফেনীর চিকিৎসা সেবার উপর নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করেন তিনি। ফেনী সদর হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে পরিণত হলে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী উন্নত চিকিৎসা সেবার সুযোগ পাবে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে জোরালো প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানালেন ডাঃ অসিম কুমার সাহা। হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডাঃ শহীদউল্লাহ দিদার বলেন অভিজ্ঞ ডাক্তাররা নিজের পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শন করতে হলে এক পর্যায়ে সদর হাসপাতাল ছেড়ে মেডিকেল কলেজে যেতে হয়। ফলে ফেনীতে মেডিকেল কলেজ না থাকায় অভিজ্ঞদের ফেনী থাকার ইচ্ছা থাকলেও তা আর হয়ে উঠেনা। জানতে চাইলে ফেনী সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত¡াবধায়ক ডাঃ হাসান শাহরিয়ার বলেন ফেনীতে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ২ মাস পূর্বে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জেলা পরিষদ প্রশাসক স্বাক্ষরিত সুপারিশ নামাও প্রেরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা, সরকারের মন্ত্রী এমপিসহ ফেনী জেলার গণমান্য ব্যক্তিদের আন্তরিকতাপূর্ণ কর্মকাÐ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভ‚মিকা রাখবে। সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। ফেনীর সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান জানান, গত ডিসি সম্মেলনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফেনীতে মেডিকেল  কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়েছে।  এক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব নেই মন্তব্য করে ফেনীতে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় জেলা প্রশাসক সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে নিশ্চিত করেন তিনি।



 

Show all comments
  • নিশান দত্ত ২০ আগস্ট, ২০১৯, ১১:২৭ এএম says : 0
    অবশ্যই ফেনীতে মেডিকেল কলেজ অতিব জরুরি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেনী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ