বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে কাল ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৩ টি ইউনিয়ন ফুলগাজী সদর,মুন্সিরহাট ও আনন্দপুরে মেম্বার ও সংরক্ষিত সদস্য পদ ছাড়া চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে না। কারন এই তিন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী ছাড়া অন্য দলের কোন প্রার্থী না থাকায় আ’লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। বাকি ৩টি ইউনিয়ন দরবারপুর,আমজাদহাট ও জিএমহাটে চেয়ারম্যান,মেম্বার ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে জাসদ ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং অন্যান্য মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও সাধারণ ভোটারদের মাঝে সহিংসতার আশংকা বিরাজ করছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও মেম্বার পদে সরকারদলীয় বহু প্রার্থী থাকায় সাধারণ ভোটাররা এ আশংকা ব্যক্ত করছেন। ইতোমধ্যে প্রতিপক্ষের কর্মী সমর্থকরা সাধারণ ভোটারদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভোটররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা, তা নিয়েও প্রার্থীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।
উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল কাসেম সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তিনি বলেন ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে জয়ী হবো। কিন্তু প্রতিপক্ষ প্রার্থী কেন্দ্র দখল করে নির্বাচিত হওয়ার পাঁয়তারা করছেন। আমজাদহাট ইউনিয়নের জাসদ মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মো: সুরুজ্জামান বলেন,নির্বাচনে কারচুপি,কেন্দ্র দখল ও ভয়ভীতি প্রদর্শন,সহিংসতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের আশংকা করছি। প্রতিটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে তিনি পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবী জানান। আমজাদহাটের অপর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজাম পাটোয়ারী বলেন ভোটকেন্দ্রে না যেতে বিভিন্ন দিক থেকে তার কর্মী সমর্থকদের হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এদিকে আ’লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মীর হোসেন মীরু বলেন, জনগণ বিগত দিনে আমার জন্য যেমন ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে,জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। জিএমহাট ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আসম শাহ আলম বাবুল অভিযোগ করে বলেন, সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তার কর্মী সমর্থকদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছেন। তার সম্ভাব্য এজেন্টদের মামলা-হামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। তিনি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবী করেন। অপরদিকে একই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ জাকির হোসেন রতন নিজেও তার ইউনিয়নে সবগুলো কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। তিনি বলেন, যারা জনবিচ্ছিন্ন তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের বাঁধা। জনরায়ে নির্বাচিত হলে তিনি মাদক,ইভটিজিং মুক্ত এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে স্বপ্নের জিএমহাট উপহার দেবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
দরাবারপুর ইউপিতে জাসদ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা জাসদের সভাপতি দুলাল চন্দ্র বৈদ্যে জানান, তার ইউনিয়নে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধীকার প্রয়োগ করতে পারলে তার বিজয় সুনিশ্চিত। আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী নিজাম উদ্দিন মজুমদার বলেন,তার ইউনিয়নের জনগণ তার কাজের মূল্যয়ন করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
গত মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা ফুলগাজী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান। তিনি বক্তব্যে বলেন,নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কাউকেই কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে প্রশাসন মাঠে সার্বক্ষনিক কাজ করবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের সহাবস্থান বজায় রাখার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন নির্বাচনে প্রার্থীদের যেকোন অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে। যদি কেউ প্রতিহিংসামুলক মিথ্যা অভিযোগ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন,নির্বাচনের দিন পর্যপ্ত সংখ্যক র্যাব,বিজিবি,পুলিশ ও আনসার বাহিনী মাঠে কাজ করবে। এদিকে জেলার নবাগত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন,নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সমর্থক নয় প্রার্থীকেই এর দায় নিতে হবে। তিনি সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন,নির্বাচনে হারজিত থাকবে। নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এমন কিছু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় তার জয় পরাজয়ে রুপ নিতে পারে। এসময় বিজয়ী প্রার্থীকে সহনশীল হয়ে নির্বাচন পরবর্তী কোন উল্লাস না করতে এবং পরাজিত প্রার্থীকে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ বাহিরে না করে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন। নির্বাচনের পর সুন্দর পরিবেশ সকলের কাম্য।
ফুলাগাজী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বাকী ৫টি ইউনিয়নে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ফুলগাজী সদর,মুন্সিরহাট ও আনন্দপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে না। কারন তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সাথে কোন প্রতিদ্বন্ধী না থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় বিজয়ের পথে রয়েছেন। বাকী তিনটি ইউনিয়ন দরবারপুর,আমজাদহাট ও জিএমহাটে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন ১০ জন। সদস্য প্রার্থী আছেন ২২৮ জন,সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রার্থী আছেন ৫৪ জন। মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৩টি। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নে ২৪ হাজার ৯৫৮ জন ভোটার,মুন্সিরহাটে ১৬ হাজার ৯৯৮ জন,দরবারপুরে ১৩ হাজার ৪৬৩ জন,আনন্দপুরে ১১ হাজার ৫২৫ জন,জিএমহাটে ১০হাজার ৬৮৩ জন ও আমজাদহাটে ১৭ হাজার ৮৩৩ জন ভোটার রয়েছে। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।