নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : শুরুর একাদশে তিনি হয়তো ছিলেন না, তবে জেনোয়ার বিপক্ষে রোমার মৗসুমের শেষ ম্যাচটি হয় থাকলো কেবলমাত্র একজনের- ফ্রান্সিসকো টট্টি। ঠিকই পড়ছেন, রোমার হয়ে ধীর্ঘ ২৫ বছর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন টট্টি।
টট্টির শেষ ম্যাচকে কেন্দ্র করে পুরো রোমবাসীরা ছিলেন আবেগে আবøুত। এক রোমান ডেইলি তাদের শিরোনামে টট্টিকে আখ্যায়িত করেন ‘কোর অব দ্য সিটি’ হিসেবে। যার অর্থ হলো ‘শহরের মূল কেন্দ্র’। অথচ এর কিছুই স্পর্শ করেনি কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তিকে। যে কারণে টট্টিকে তিনি মাঠে নামালেন বিরতিরও প্রায় দশ মিনিট পর। স্কোরবোর্ডে তখন ১-১ সমতা। জয়ের জন্য স্পালেত্তি তাকে পরিয়ে দিলেন সেই বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সিটা। গোল তিনি করতে পারেননি, তবে সহজাত খেলা ঠিকই খেলেছেন। দলও নাটকীয় ম্যাচটি জিতেছে ৩-২ ব্যবধানে। পয়েন্ট তালিকাতে দুয়ে থেকে নিশ্চিত হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা পাওয়াটাও।
শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে আর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ৪০ বছর বয়সী রোমান মহাতারকা টট্টি। প্রাণের মাঠ স্টেডিও অলিম্পিয়াকে জানান অশ্রæসিক্ত বিদায়। দর্শকরাও এসময় চোখের জল আঁটকে রাখতে পারেননি। ক্লাবের পক্ষ থেকে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় তার সেই জনপ্রিয় নাম নম্বর ‘টট্টি ১০’ লেখা বাঁধাই করা একটি স্মারক ফ্রেম। বিদায়বেলা পাশে ছিলেন তার মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান।
লিখিত বিদায়ী বক্তব্যে ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড বলেন, ‘মনে করুন আপনি একজন শিশু এবং ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছেন... এমন সময় আপনার মা এসে ঘুম থেকে ডেকে তুলল স্কুলে যেতে। আপনি এসময় চাইবেন স্বপ্ন দেখাটা চালিয়ে যেতে... আবারো ঘুমিয়ে সেই স্বপ্নের রাজ্যে যেতে চেষ্টা করবেন কিন্তু পারবেন না।’ ধরা কন্ঠে টট্টি বলেন, ‘এখন এটা স্বপ্ন নয়, সত্যি। এবং আর আমি ঘুমোতে পারব না।’
ক্লাবের হয়ে তিনি যে সফল তা বলা যাবে না। রোমার হয়ে ৭৮৬ ম্যাচে করেছেন ৩০৭ গোল, নিজ ক্লাবের হয়ে যা রেকর্ড। জিতেছেন একটি সেরি আ শিরোপা (২০০০-০১), সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমসহ মোট ৯ বার লিগে রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। দুবার জিতেছেন কাপ ট্রফি। তবে টট্টির বিশেষত্ব অন্যখানে। রিয়াল মাদ্রিদ বা জুভেন্টাসের মত ক্লাবের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি! রোমাকে মনের এত গভীরে স্থান দিয়েছেন টট্টি। তার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো ইতালির হয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপ জয়। জাতীয় দলের জার্সিতে ৫৪ ম্যাচে তার গোল ৯টি।
১৯৯৩ সালে রোমার মুল দলে মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক হয় তার। মাত্র ২২ বছর বয়সে হন রোমার ক্যাপ্টেন। সেরি আ’তে যা সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের রেকর্ড। খেলেছেন মোট ২৫টি মৌসুম, পাওলো মালদিনির সাথে যা যৌথ সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ২৩ মৌসুমেই স্কোর বোর্ডে নাম লিখিয়েছেন, এটাও লিগ রেকর্ড। সেরি আ’তে তার ২৫০ গোল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ২৭৪ গোল নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে সিলভিও পিয়োলা (১৯২৯-১৯৫৪)। সেরি আ’তে জিয়ানলুইজি বুফনের সাথে দ্বিতীয় যৌথ সর্বোচ্চ ম্যাচও টট্টির ((৬১৯ টি)। ৬৪৭ ম্যাচে অংশ নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে পাওলো মালদিনি।
ক্লাবের হয়ে তার স্বপ্নের সময় কেটেছে ২০০৬-০৭ মৌসুমে। সেবার মৌসুম সর্বোচ্চ (৩২টি) গোল ছিল তার। ঘরোয় লিগে সর্বোচ্চ ২৬ গোল করে জিতেছিলেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু। একসময় চেয়েছিলেন রোমার পরিচালক পর্যায়ের কিছু হবেন। কিন্তু কিছুদিন আগেই জানান, অন্য কোথাও আরো কিছুদিন খেলা চালিয়ে যেতে চান তিনি।
টট্টি কথন
‘আমার কাছে রোমার হয়ে একটা শিরোপা জেতা জুভেন্টাস অথবা রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ১০টি শিরোপা জেতার সমান।
‘একজন খেলোয়াড়ই আছে যে আমার চেয়ে ভালো কিছু করে দেখাতে পেরেছে যা আমি পারিনি- এবং সে হলো লিওনেল মেসি।
‘রোমার হয়ে খেলতেই আমার জন্ম এবং রোমার হয়ে খেলেই আমি মরতে চাই।
টট্টিকে নিয়ে তারা
‘ফ্রান্সিসকো টট্টি হল রোমার রাজা। বর্তমান ও ভবিষ্যতে সে তাই-ই থাকবে।’ -আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা
‘আমার বিপক্ষে তার কিছু গোল এতটাই অনন্যসাধারণ ছিল যে তা ফেরাতে হলে আমাকে অতিদানবীয় কিছু করতে হত।’ -ইতালি ও জুভেন্টাস কিংবদন্তি গোলকিপার জিয়ানলুইজি বুফন
‘রোমার জার্সিতে টট্টিই সর্বকালের সেরা।’ - রোমার সাবেক চেয়ারম্যান রোসেলা সেনসি
‘টট্টি হলো একজন ফুটবল শিল্পী, সত্যিকারের নাম্বার ১০, ঠিক আমি যেমনটা ছিলাম।’ -সাবেক ফরাসি মিডফিল্ডার মিচেল প্লাতিনি
‘ইতালিয়ান ফুটবলের স্মৃতিস্তম্ভ হলো টট্টি।’ -সাবেক ইতালি কোচ মার্সেলো লিপ্পি
‘টট্টি হলো ফুটবল ভক্তদের জন্য একটা উপহার।’ -রোমার বর্তমান কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।