Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইভটিজিং ও ব্যভিচারকে না বলুন

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাহফুজ আল মাদানী
ইভটিজিং শব্দটি বর্তমান সময়ে অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ। ইভ্ অর্থ আদি মাতা হাওয়া এবং টিজিং অর্থ উত্যক্ত করা। অতএব, ইভটিজিং অর্থ নারীদের উত্যক্ত করা। ইভটিজিং একটি ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় অপকর্ম। সমাজের বখাটে, চরিত্রহীন, লম্পট, উশৃঙ্খল এবং মাদকাসক্ত ছেলেরাই এর আসল হোতা। ইভটিজাররা মেয়েদের গমনাগমনের পথে ওৎপেতে থেকে নানাভাবে উত্যক্ত করে। ফলে মেয়েদের চলাফেরা, পড়ালেখা ও কাজকর্ম বিঘিœত হয়। বিঘিœত হয় সমাজের শান্তি। শুরু হয় কলহ, বিবাদ, বিসম্বাদ। মানবতার ধর্ম ইসলাম ইভটিজিংকে সমূলে উৎখাতের ব্যবস্থা করে রেখেছে। যেসব কারণে সাধারণত ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়, ইসলাম তা অংকুরেই বিনাশ করে দিয়েছে। সন্তানদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয়া এবং তাদের চরিত্র গঠন ও নৈতিক মূল্যবোধসহ তাকওয়াবান করে গড়ে তোলার জন্য পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, শিষ্টাচার শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তাদের শাসন থেকে বিরত থাকবে না’ (আহমদ)। নারীরা যাতে ইভটিজিংয়ের শিকার না হয় এজন্য গায়রে মাহরাম নারীদের প্রতি তাকাতে নিষেধ করা হয়েছে। ‘হজরত কাসিম বিন আব্দুর রাহমান (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, চোখের দৃষ্টি ইবলিসের বিষাক্ত তীরগুলির মধ্যে একটি তীর। যে ব্যক্তি আমার ভয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ বর্জন করবে আল্লাহ পাক তার পরিবর্তে তাকে এমন ঈমান দান করবেন, যার স্বাদ সে অন্তরে অনুভব করবে’ (ত¦াবারানী)। পবিত্র কোরআনেও এ সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে এভাবে, আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে’ (সূরা আন নূর : ৩০, ৩১)।
ইভটিজিং এর সিঁিড় বেয়ে অনেকে বিপথগামী ধর্ষণ বা ব্যভিচারে লিপ্ত অথবা ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকে। অথচ ইসলাম ধর্ম ব্যভিচার এবং এতদসংশ্লিষ্ট কাজ হতে দূরে থাকতে নির্দেশ প্রদান করেছে। এমনকি, ব্যভিচারের যাতে কোন সুযোগ তৈরি না হয় সেটাও ইসলাম সতর্ক রয়েছে। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, কোন পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে মাহরাম ব্যতীত একান্তে মিলিত না হয়’। এর মাধ্যমে ইসলাম মূলত ব্যভিচারের পথকে অবরূদ্ধ করতে চায়। এছাড়া আল্লাহর বাণী, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ’ (সুরা আল ইসরা : ৩২)। আর ইসলাম ধর্ম অশ্লীল অশোভনীয় কাজকে কখনো প্রশ্রয় প্রদান করে না। চাই সে যতবড় বিত্তশালী বা বিত্তবান হোক না কেন। সবার জন্য সমানভাবে নির্দেশনা প্রদান করে রেখেছে। এরপরও যদি কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে পরিপূর্ণ মুমিন থাকে না। কোন বান্দা পূর্ণ ঈমানদার থাকা অবস্থায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না। ঈমান একজন ব্যক্তিকে সকল খারাপ এবং গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখে। ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ব্যভিচারী ঈমান থাকা অবস্থায় ব্যভিচার করতে পারে না’ (বোখারী ও মুসলীম)। ইমাম বোখারী (রহ.) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি পূর্ণ ঈমানদার থাকবে না এবং ঈমানের আলো থাকবে না।
অন্য হাদীসে এসেছে, ব্যভিচারে লিপ্ত হলে ঈমান বের হয়ে যায়। তার তাকওয়া সরে যায় অন্তর থেকে। তখন লিপ্ত হয় ব্যভিচারে। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যখন কোন বান্দা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার ঈমান বের হয়ে যায় এবং এটা ছায়ার মতো তার মাথার উপর অবস্থান করে। অতঃপর সে যখন এ অপকর্ম হতে বিরত হয়, তখন তার দিকে ঈমান ফিরে আসে’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)।
এতে স্পষ্ঠ হয়ে উঠে যে, একজন পরিপূর্ণ মুমিন ব্যক্তি ইভটিজিং বা তৎসংশ্লিষ্ট অগ্রবর্তী কাজ ব্যভিচারে লিপÍ হতে পারে না। আর এ কাজসমূহ আদর্শ সমাজ গঠনের পরিপন্থী। আমাদের সমাজের এহেন নিকৃষ্ট কার্যাবলীকে দূর করতে না পারলে সমাজের ধনী-গরীব, ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা কেউই সুন্দর ও ভালোভাবে বসবাস করতে পারবে না। আসুন, আমরা ইভটিজিং ও ব্যভিচারের পথকে বন্ধ করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইভটিজিং

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন