Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাইনালে মাশরাফিদের শক্তি দলগত একতা

প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এই প্রথম টি-২০’র মেগা আসরে ফাইনালে খেলছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে এক সময় অংশগ্রহণে যেখানে তৃপ্ত থাকতো বাংলাদেশ, সেখানে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ফাইনালে অবতীর্ণ বাংলাদেশ দল। ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ টি-২০’র নাম্বার ওয়ান র‌্যাংকিংধারী দল ভারত। লড়াইটা টি-২০’র নাম্বার ওয়ান এর সাথে ১০ নম্বরের। এমন লড়াইয়ে ভারতকেই ফেভারিট মানছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। টি-২০’র সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের প্রধান শক্তি ব্যাটিং। সেখানেও এগিয়ে রাখতে হচ্ছে প্রতিপক্ষকে। তবে ফাইনাল পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দলগত একতাকেই প্রধান শক্তি বলে উল্লেখ করেছেন মাশরাফি। ফাইনালে চাপমুক্ত থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক। স্বপ্নের ফাইনালকে সামনে রেখে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফির সাক্ষাৎকারের চৌম্বক অংশ উপস্থাপন করছেন শামীম চৌধুরী।
** এত বড় ফাইনাল, ম্যাচটিকে কীভাবে নিচ্ছেন?
মাশরাফি : অবশ্যই এটা ফাইনাল, ফ্লেভার আলাদা হবেই। তবে আমরা অন্য সব ম্যাচের মতোই দেখছি। নিজেদের সেরাটা খেলতে চাই। গত ৩ ম্যাচে যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই খেলতে চাই।
** এশিয়ার পাওয়ার হাউজ হচ্ছেন কি না?
মাশরাফি : শ্রীলঙ্কা কিন্তু এখনও টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন। এভাবে বলা তাই ঠিক নয়। এই টুর্নামেন্টে হয়তো ভালো করতে পারেনি, তবে তারা ভালো দল। এমনকি পাকিস্তানও। আমরা আগের চেয়ে ভালো খেলছি, কিন্তু এখনও উন্নতির অনেক কিছু আছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আমাদের লক্ষ্য সেটিই। এশিয়ান পাওয়ার হাউজ হওয়া বা এ ধরনের কিছু নয়।
** অধিনায়ক হিসেবে কি এটাই আপনার সবচেয়ে বড় ম্যাচ হতে যাচ্ছে?
মাশরাফি : অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বড় ম্যাচ ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। এটি অন্যতম বড় ম্যাচ অবশ্যই। তবে তুলনা করলে সেই ম্যাচ আরও বড় ছিল। কারণ ৫০ ওভারের ক্রিকেটের পাশাপাশি  বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ ছিল ওটা।
** এমন এক ফাইনালের সামনে দাঁড়িয়ে চারপাশের চাপ থেকে দলকে মুক্ত রাখতে কী কী করছেন?
মাশরাফি : এসব আসলে আমাদের চিন্তার বিষয় নয়। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের উচিত শুধু ম্যাচ নিয়েই ভাবা। আমরা সেটাই চাচ্ছি এবং করছি। ছেলেরা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক  থাকার চেষ্টা করছে। টুর্নামেন্টের শুরুতে একটা কথাই বলেছি যে, আমরা অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে ছিলাম না। আমরা চেয়েছিলাম যে, এশিয়া কাপের আগে যেভাবে খেলছিলাম, তার চেয়ে যেন উন্নতি করতে পারি। গ্রাফটা ঊর্ধ্বমুখী মানে এই নয় যে, আমরা বড় দল হয়ে গেছি।
** ভারতের ব্যাটিং অর্ডার তো সব সময়ই কঠিন। তাদেরকে নিয়ে আপনার পরিকল্পনা?  
মাশরাফি : দেখুন, ভারতের উপরের ৬ ব্যাটসম্যানই বিশ্বমানের। বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি-২০তে। টেস্টেও অনেকেই আছেন। সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গায় ওদেরকে আটকানোর সুযোগ নেই। একটাই উপায় প্রথম ওভার থেকে ২০ ওভার পর্যন্ত ভালো বোলিং করতে হবে। ওরা অবশ্যই চার্জ করবে, আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব আটকানো। এ ধরনের ম্যাচে প্রথম ৬ ওভার  অথবা শেষ দিকে এসে বিধ্বস্ত হতে হয়,  তাই সেদিকে ফোকাস বেশি থাকবে।
** মাঠভর্তি দর্শক তো থাকবে। তাদের সমর্থন তো পাচ্ছেন?
মাশরাফি : আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি দর্শক। সব সময়ই ছিল, এখনও আছে। দর্শক না থাকলে আমরা এতটা অনুপ্রাণিত হতাম না। আমাদের ক্রিকেট ওই পর্যন্ত আসার পেছনে জনসাধারণের অনেক অবদান, অনেক ত্যাগও আছে।  যদি ভালো খেলতে পারি, ভালো কিছু করতে পারি, তাহলে অবশ্যই সবাই খুশি হবে।
** প্রধানমন্ত্রী থেকে আমজনতা, সবার আবেগ তো ক্রিকেটকে ঘিরে?
মাশরাফি : আবেগ থাকা খুবই স্বাভাবিক। কারণ আমরা সবসময় এরকম সুযোগ পাই না। তারপর আবার দেশের মাটিতে খেলা। রবি শাস্ত্রী যা বলেছেন, উনাদের জন্য হয়তোবা এই ম্যাচকে আর দশটা ম্যাচের মতো নেয়া সহজ। কারণ, এ ধরনের টুর্নামেন্টে অনেকবারই তারা ফাইনাল খেলেছে। তাদের জন্য যতটা সহজ, আমাদের জন্য আর দশটা ম্যাচের মতো নেওয়া অতটা সহজ নয়। তারপরও চেষ্টা করছি যতটা স্বাভাবিক থেকে ক্রিকেট খেলা যায়।
** ২০১২ এশিয়া কাপের  ফাইনালের পরিস্থিতির কথা কি মনে রেখেছেন?
মাশরাফি : ও রকম পরিস্থিতি হলে এখন তার চেয়ে বেটার হবে। তবে চার বছর আগের সেই ফাইনালে জয়ের অতটা কাছে গিয়েছি বলেই যে এবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হব, এটা বলা ঠিক হবে না। তবে ম্যাচটি যদি ক্লোজ হয়, তাহলে হয়তো চার বছর আগের তুলনায় ভালো করতে পারব। কিন্তু আবার বলছি, টি-টোয়েন্টি খেলাটাই হলো সুনিদিষ্ট দিনে যে ভালো খেলবে। আমাদের বেশ ক’জন তরুণ ক্রিকেটার আছে, তারা যে শুধু সম্ভাবনাময়, তা-ই শুধু নয়। সেই সম্ভাবনাকে তারা কাজে লাগাতে পারছে। এটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
** ভারতকে হারানোর বাস্তব সম্ভাবনা কতটা দেখছেন?
মাশরাফি : ভারত-বাংলাদেশের ফাইনাল ম্যাচে কিন্তু ভারত পরিষ্কার ফেবারিট। এটা সবাই জানে। আমরা একটা দল হিসেবে খেলছি। টি-টোয়েন্টিতে এখনও আমরা সে রকম ক্রিকেটার গড়ে তুলতে পারিনি যারা একাই ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে। গত দুটি ম্যাচ আমরা দল হিসেবে খেলে জিতেছি। এই মুহূর্তে আমাদের দলীয় একতা দারুণ। দর্শক, মাঠ, ড্রেসিংরুম, সব আমাদের পক্ষে। তবে এটাই শেষ কথা নয়, সব কিছু পক্ষ থাকলেই যে দিন আমাদের হবে, এমন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই।
** ফাইনালের পরদিনই টি-২০ বিশ্বকাপে খেলতে যেতে হচ্ছে। ফাইনাল নিয়ে কি তাই মনোযোগ সেভাবে দিতে পারছেন ?
মাশরাফি : এটা কঠিন হলেও স্বাভাবিক। আপাতত আমাদের সুযোগ নেই। আমরা ৬ তারিখে গিয়ে যদি ১ দিন বাড়তি সময় পেতাম, তাহলে সেটা দেখা যেত। তরুণদের জন্য অবশ্য ভালো হয়েছে। কারণ, কারিয়ারের শুরুতেই এত বড় ম্যাচে খেলতে নেমে এখন থেকেই বড় ম্যাচের মানসিকতা গড়ে তুলতে পারবে। পেশাদার ক্রিকেটারদের জীবনটা এরকমই হয়। এটার মধ্যে আনন্দ আছে। ফাইনালে না উঠলে হয়তো এই ফ্লেভারগুলো পেতাম না, চলে যেতাম।
** এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে তো ভারতের কাছে হেরেছিলেন। তাই এই ম্যাচে কি একটু বেশি প্রেসার থাকছে?
মাশরাফি : প্রথম ম্যাচে ২০০ রানে জিতলেও তা আমার কোনো কাজে লাগত না।  দল হিসেবে খেললে আত্মবিশ্বাস ভালো থাকে। একজন-দু’জন দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না, বিশেষ করে আমাদের দলে। দল হিসেবে খেলছি, সেটাতেই মন দিচ্ছি।
** মুস্তাফিজুরকে তো ফাইনালে মিস করছেন?
মাশরাফি : মুস্তাফিজকে ছাড়া খেলছি, মানে এই মুহূর্তে আমরা আমাদের সেরা বোলারকে ছাড়া খেলছি। মুস্তাফিজের জায়গায় গত ম্যাচে তাসকিন, আল আমিন সবাই ভালো করছে। এটা একটা দলের জন্য ভালো ব্যাপার যে, সেরা বোলার না থাকার পরও অন্যরা দায়িত্ব নিচ্ছে  এবং পারফর্ম করছে। এটা ভালো লক্ষণ।
** ব্যাটিংয়ে কাদের উপর ভরসা রাখছেন?
মাশরাফি : আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দলে ভালো ক্রিকেটার আছে। বিশেষ করে টপ অর্ডারে। সাকিব-তামিম-সৌম্য-সাব্বির-মুশফিক সবাই ম্যাচ বদলে দিতে পারে। অবশ্যই টি-টোয়েন্টিতে আরেকটা জায়গা আছে। সাত-আটে নেমে ম্যাচের গতি বদলে দিতে পারে না। সেখানে আমাদের এখন বিশ্বমানের কেউ নেই। তবে টপ অর্ডারে বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান আছে।
** একাদশে কোনো চমক?
মাশরাফি : না, আমরা চমক দেওয়ার জন্য কিছু করব না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, ২০১৫ সাল থেকে আমরা বিশ্বাস করে আসছি, উইনিং কম্বিনেশন বলে কিছু নেই। প্রতিপক্ষ ও উইকেট মাথায় রেখেই তাই আমরা প্রস্তুতি নেই।
** লড়াইটা তো ১ নম্বর আর ১০ নম্বরের মধ্যে?
মাশরাফি : রোমাঞ্চ নয়, এটাই বাস্তবতা। খেলার মাঠে আমরা শতভাগ দিয়েই চেষ্টা করব। নিজেদের যা করণীয়, তার সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করব। ভাগ্যের দিকেও তাকিয়ে আছি আমরা।  ভাগ্যকে পাশে পেলে ম্যাচ অবশ্যই আমাদের দিকে আসতে পারে।
** অধিনায়ক হিসেবে কী দেশের মাটিতে এটাই আপনার শেষ কি না?
মাশরাফি : অনেকে বলছে, কিন্তু আমি তো বলিনি! আমার শুরু বা শেষ কোনো ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বড় ম্যাচ। আমরা সর্বোচ্চটা চেষ্টা করব।
* এশিয়া কাপে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠলেন?
মাশরাফি : এ ধরনের টুর্নামেন্টে আমাদের ফাইনাল খেলা খুব বিরল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক সময় পাজলড হয়ে যাওয়ার কথা। মাথায় অনেক কিছু কাজ করে না। তবে আমি মনে করি, এ ধরনের ফাইনাল তারাই জেতে, যারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না। প্রয়োজনীয় সময়ে আগ্রাসী সিদ্ধান্ত নিতে সংশয়ে ভোগে না। আমরা তাই চেষ্টা করব যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই স্বাধীনতা নিয়ে খেলার। এত বড় হাইপের ম্যাচ খেলার অভ্যাস যেহেতু খুব বেশি নেই, আমরা চেষ্টা করছি  যতটা সম্ভব চাপ থেকে মুক্ত থাকা।
** অনেকে তো টিকিটের জন্য লম্বা সময় লাইন দিয়ে টিকিট পাচ্ছে না?
মাশরাফি : সকালেই দেখেছি, অনেক মানুষ টিকিটের জন্য লাইন দিয়ে আছে। একটি টিকিটের জন্য অনেক কষ্ট করেছে, অনেকেই নাকি বেশ সমস্যায়ও পড়েছেন। আমরা ভালো খেললে প্রায় ক্ষেত্রে এটা হয়ে আসছে। এখন আরও বেশি হচ্ছে। তাই তাদের জন্য পুরো দলই চেষ্টা করবে ভালো কিছু করার।
** না জিতলে কী ক্ষতি হয়ে যাবে?
মাশরাফি : না জিতলে কিছুই হবে না। আমি এটাই বিশ্বাস করি। এমন নয় যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট এখানেই থেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সামনে অনেক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। টি-২০তেও যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এই টুর্নামেন্ট খুব ভালো একটি বার্তা দিতে পেরেছি। এই ম্যাচটি অবশ্যই  গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। জিতলে অসম্ভব ভালো লাগবে। কিন্তু না জিতলে কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা ঠিকই সামনের দিকে এগিয়ে যাব এবং ভালো করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফাইনালে মাশরাফিদের শক্তি দলগত একতা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ