Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলোর নীচে অন্ধকার

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

যাত্রাবাড়ী মোড়ে ফ্লাইওভারের নীচে রাস্তার বেহাল অবস্থা : শনিরআখড়া পর্যন্ত ড্রেনেজ নির্মাণেও ধীরগতি
নূরুল ইসলাম : উপরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। নীচে খানাখন্দে ভরা রাস্তায় জমে আছে ড্রেনের ময়লা পানি। গত এক সপ্তাহের প্রচÐ খরতাপেও সেই পানির এক ফোটাও কমেনি। গাড়িগুলো চলছে ঝুঁকি নিয়ে। চলতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। এ যেনো আলোর নীচে অন্ধকার। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা সংস্কারের কাজ নিয়ে গত দুই মাসের অধিক সময় ধরে গড়িমসি করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। তার গাফিলতির জন্যই এই দশা। এতো গেলো যাত্রাবাড়ী পাইকারী বাজারের সামনের রাস্তার কথা। যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালী হয়ে শনিরআখড়া পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নীচ দিয়ে ড্রেনেজের কাজ চলছে কয়েক মাস ধরে। সেই কাজও চলছে ঢিমে তালে। এ কাজের জন্য মহাসড়ক থেকে শনিরআখড়া ও দনিয়ার রাস্তাগুলো বিচ্ছিন্ন বহুদিন ধরে। দনিয়া এলাকার লাখ লাখ মানুষকে চলতে হচ্ছে ধোলাইরপাড় দিয়ে। বর্ষা আসতে না আসতেই ইতোমধ্যে ধোলাইপাড় পানির পাম্পের কাছের রাস্তাটি তলিয়ে গেছে। দনিয়া গোয়ালবাড়ী মোড়ের রাস্তাটি সারা বছরই ড্রেনের ময়লা পানিতে তলিয়ে থাকে। বিকল্প রাস্তা হিসাবে আগে কোদারবাজারের রাস্তাটি ব্যবহার করা যেতো। এখন সেই রাস্তাটিও ড্রেনের পানিতে তলিয়ে গেছে। সব মিলে ভোগান্তি আর ভোগান্তি। এর যেনো আর শেষ নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত যাত্রাবাড়ী মোড়। পাশেই সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। এ কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলসহ ১৮টি জেলার গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেন মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ডেমরা, পোস্তগোলা, গুলিস্তান, সদরঘাট, সায়েদাবাদ হয়ে কমলাপুর সড়কের সংযোগস্থল যাত্রাবাড়ী মোড়। আশেপাশের বেশ কিছু এলাকার পাইকারি ও খুচরা কেনাকাটার নির্ভরযোগ্য স্থান। কিন্তু ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই স্থানটি যেন গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় সেই যে খোড়াখুঁড়ি শুরু সেই ধকল কয়েক বছরেও শেষ হয়নি। নির্মাণযজ্ঞ শেষ হওয়ার পরও নীচের রাস্তাগুলোর অবস্থা বহুদিন ধরেই বেহাল। সিটি কর্পোরেশনের সেদিকে কোনো নজর নেই। স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ হোসেন বলেন, অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, যাত্রাবাড়ীর অধিকাংশ ভাড়াটিয়া বাসা বদল করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। ভাড়াটিয়ার অভাবে অনেক বাসা ফাঁকা পড়ে আছে। যাত্রাবাড়ী মোড়ের বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও ক্রেতা শূন্য সময় পার করছেন। আবার অন্যদিকে রাস্তার বেহাল দশার কারণে এখন আরো খারাপ সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে ডেমরা যাওয়ার রাস্তাতে ছোট বড় অসংখ্যা গর্ত। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান পানি জমে। নোংরা কাদা আর ড্রেনের পানি জমে থাকে সবসময়। শুকনার দিনে ধুলাবালুতে ধূসর হয়ে থাকে পুরো এলাকা। দুই মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে অন্তত ২০ মিনিট। ড্রেন ফুটপাত সব কিছু মিশে একাকার। পথচারীরা এখন আর এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন না। রিকশা, গাড়ি, ভ্যান উল্টে পড়ে হরহামেশাই। এমনকি রিকশা থেকে উল্টে পড়ে আহত হোন অনেক যাত্রী। ডেমরা এলাকার বাসিন্দা মিজান বলেন, ডেমরা এলাকায় বাড়ি বলে এই রাস্তা দিয়েই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রাস্তার এই অবস্থার কারণে চলাফেরা করা খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শুধু এই রাস্তা নয়, যাত্রাবাড়ীর সাথে সংযুক্ত সবগুলো রাস্তারই একই অবস্থা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফ্লাইওভার নির্মাণের পর থেকে যাত্রাবাড়ী এলাকার রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ হয়নি। দিনের পর দিন এভাবেই পড়ে আছে। রাস্তার এই বেহাল দশার কারণে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে বলে অনেকে ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন। একই অবস্থা যাত্রাবাড়ী থেকে শনির আখড়া হয়ে রায়েরবাগ পর্যন্ত রাস্তার। মহাসড়কের নীচ দিয়ে যে রাস্তা গেছে তার অনেকটাই বেদখল হয়ে গেছে। রাস্তার উপর বসানো হয়েছে টং দোকান। যেগুলো থেকে স্থানীয় যুবলীগ নেতারা চাঁদা তোলে। নীচের এই রাস্তা ঘেঁষে রয়েছে ড্রেনে। সেই ড্রেনেজের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় চার মাস আগে। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। বরং দনিয়া এলাকার সবগুলো রাস্তার সাথে মহাসড়কে ওঠার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে দনিয়া এলাকার লাখ লাখ বাসিন্দা পড়েছেন বিপাকে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত রাস্তাটির। বেশ কয়েক মাস ধরেই রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলমান সেই সংস্কারের কাজে দুর্ভোগ বহুগুণ বেড়েছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে যেসব গাড়ি ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে চলে সেগুলোর দুরাবস্থা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এমনিতেই ফ্লাইওভারের নীচে রাস্তার জায়গা কম। তার উপর সংস্কারের নামে রাস্তাটির সিংহভাগ গর্ত করে মাটি ফেলার কাজ চলছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তাটি দিয়ে গাড়ি চলতে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেই গর্তে আবার জমে আছে পাশেরই ড্রেনের ময়লা পানি। সব মিলে একাকার হয়ে গেছে। আলাপকালে বাস চালক রহিম উদ্দিন বলেন, এতোটা খারাপ অবস্থা হতো না, যদিনা এখানে ফ্লাইওভার না থাকতো। মূলত সবগুলো গাড়িকে ফ্লাইওভারে উঠতে বাধ্য করার জন্যই নীচের রাস্তাটি সংস্কারে এই গাফিলতি। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারনে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কর্পোরেশন থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তবে মেয়র সাহেব কাজটি দ্রæত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন। আশা করছি আর বেশি দিন লাগবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আলো

৫ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ