Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসে ঘটল এক নাটকীয় ঘটনা, বিশ্বজুড়ে আলোড়ন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১০ পিএম

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে বেইজিংয়ের গ্রেট হলে নাটকীয় এক ঘটনা ঘটেছে। হঠাৎ করেই দু’জন কর্মকর্তা এসে সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওকে সভাকক্ষ থেকে বের নিয়ে গেছে।
এ ঘটনার লাইভ ফুটেজ বিশ্বজুড়ে বেশ আলোড়ন ফেলেছে। চলছে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পাশের আসনে একেবারে সামনের সারিতে বসেছিলেন ৭৯ বছরের এই নেতা।
রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকের পরপরই লাইভ ক্যামেরার সামনে বৈঠক শুরুর প্রায় পরপরই দেখা যায় দু’জন কর্মকর্তা তার কাছে এসে কিছু বলছে। অল্প কিছুক্ষণ পর দেখা যায় সাবেক এই প্রেসিডেন্ট উঠে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট শিকে কিছু বলছেন এবং শি মাথা নাড়ছেন।
এরপর ওই দুই কর্মকর্তা হু জিনতাওকে গ্রেট হলের বাইরে নিয়ে যান। সে সময় একজন কর্মকর্তাকে তার হাত ধরে থাকতে দেখা যায়।
বেরিয়ে যাওয়ার পথে হু জিনতাও বসে থাকা প্রধানমন্ত্রী লি কে কিয়াংয়ের কাঁধে হাত দিয়ে টোকা দিয়ে যান।
ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেকেই ব্যাখ্যা করছেন যে হু জিনতাও বেরুতে চাইছিলেন না কিন্তু বাধ্য হয়েই যেন তাকে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে হয়।
বিশ্বের সব বড় বড় মিডিয়ায় সাথে সাথেই ওই খবর ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়।
বেইজিং থেকে বিবিসির সংবাদদাতা স্টিভেন ম্যাকডোনেল বলেছেন, কংগ্রেস থেকে হু জিনতাওয়ের মতো এত বড় নেতাকে যেভাবে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে, কিন্তু চীনা সরকার বা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এখনো তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
সংবাদদাতা বলেছেন, দুটো সম্ভাব্য কারণ হতে পারে- এক, হু জিনতাওকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সাথে চীনের বর্তমান ক্ষমতার রাজনীতির হয়তো সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রতীকীভাবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে হু জিনতাও জামানার চিন্তা-চেতনার কোনো জায়গা শি জিনপিংয়ের বর্তমান চীনে আর নেই।
এমন খবরও বেরুচ্ছে যে এই ঘটনার পর চীনের জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবো এবং অন্যান্য ওয়েব প্ল্যাটফর্ম থেকে হু জিনতাও সম্পর্কিত সাম্প্রতিক সব খবরাখবর সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
অথবা, এমনও হয়তো হতে পারে যে হু জিনতাওয়ের শরীরের অবস্থা এতই খারাপ হয়ে পড়ে যে তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
দীর্ঘ ফুটেজে দেখা যায়, হু জিনতাওয়ের দিকে তাকাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট শি এবং হু জিনতাওয়ের বাম পাশে বসা সিনিয়র পার্টি নেতা লি ঝানশু ও ওয়াং হুনিনকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বড় সভাগুলো খুবই পরিকল্পনামাফিক হয়। সে কারণেই অসুস্থতার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, ক্যামেরার সামনে কেন এই ঘটনা ঘটতে দেয়া হলো? পরিস্থিতি কি সত্যিই এতটাই জরুরি হয়ে পড়েছিল? তাহলে হু জিনতাও কেন বেরিয়ে যেতে গড়িমসি করছিলেন?
হু জিনতাও এর কিছুক্ষণ আগেই সভাকক্ষে এক গোপন বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর যখন ক্যামেরা চালানোর অনুমতি দেয়া হয় তার পরপরই এই ঘটনা।
হু জিনতাও ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চীনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার শাসনামলে চীন এখনকার চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন পথে ছিল। তিনি চীনকে বাকি বিশ্বের কাছে অনেকটাই উন্মুক্ত করেছিলেন। তার সময়ে ক্ষমতার অনেক ভাগাভাগি ছিল। নেতা হিসেবে তিনি অনেক সহনশীল ছিলেন এবং নতুন নতুন ধারণাকে তিনি গ্রহণ করতেন।
হু জিনতাওয়ের পর শি জিনপিং দল ও দেশের দায়িত্ব নেয়ার পর চীনকে অনেকটাই ভিন্ন ধারায় পরিচালিত করতে শুরু করেন। বলা হয়, দলের ভেতর তিনি একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এমনকি নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ও ওয়াং ইয়াংয়ের মতো লোককে রাখা হয়নি, যাদেরকে হু জিনতাওয়ের ঘনিষ্ট হিসাবে দেখা হয়। দলের মূল নেতৃত্বে জায়গা পেয়েছেন শি জিনপিংয়ে অনুগত লোকজন। সূত্র : বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বজুড়ে আলোড়ন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ