Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুদকের মামলায় সাজা বাড়ছে

২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা সাজার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সালেই দুদকের মামলায় ৫৪ শতাংশ আসামি সাজা পেয়েছেন। আর খালাস হয়েছে ৪৬ শতাংশের। রাষ্ট্রের একমাত্র দুনীর্তি বিরোধী সংস্থাটির ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণে করে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে সাজা পাওয়া আসামির সংখ্যা ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মামলায় সাজার সংখ্যা বাড়লেও মামলা দায়ের পরিমাণ কমেছে ৩২ শতাংশ। গত বছর দুদকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৫৯টি দুর্নীতির মামলা করা হয়। এর আগের বছর অর্থ্যাৎ ২০১৫ সালে মামলার সংখ্যা ছিল ৫২৭টি। তবে অভিযোগের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, দুদকের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, মানুষ এখন দুদকমুখী। আগামীতে মামলার সাজা আরো বাড়বে। মামলার দায়ের কিছুটা কমেছে। কারন দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংশোধনের হওয়ার পর অনেকগুলো অপরাধ আমাদের আইনের বাইরে। বিশেষ করে ৪২০, ৪০৬, ৪৬৭ ও ৪৬৮ ধারা অপরাধ কমিশনের অধীনে নেই। ফলে মামলা যেমন কমছে; তেমনি চার্জশীটও কমছে। তিনি আরো বলেন, আশা করি আগামীতে জনগণের প্রত্যাশা অনুযারী আমরা কাজ করতে পারে। আমাদের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে; তা বাস্তবায়ণের করতে পারলে দুদক একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
গত বুধবার দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের কাছে ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন। এসময় কমিশনার ড.নাসিরউদ্দীন আহমেদ, এ এফ এম আমিনুল ইসলাম ও সচিব উপস্থিত ছিলেন। এসময় সম্পন্ন কার্য-সম্পাদন, সম্পাদিত কাজের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক জবাবদিহিতা এবং সরকার-প্রদত্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়াও অনুসন্ধান, তদন্ত, প্রসিকিউসন, প্রতিরোধ, প্রশাসন, বাজেট ব্যবস্থাপনার সাধারণ তথ্য, কর্মপরিকল্পনা, তথ্য ব্যবস্থাপনার পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ  পেশ তুলে করা হয়।
প্রতিবেদনেটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ডিসেম্বর ৩০০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যার মধ্যে ২১৪টি কমিশনের দায়েরকৃত মামলা এবং বাকি ৮৬টি বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে আসা অনিষ্পন্ন মামলা। দুদকের দায়েরকৃত ২১৪টি মামলা বিজ্ঞ বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে, যার মধ্যে ১১৬টি মামলায় সাাজা হয়েছে। মামলায় সাজার হার ৫৪ শতাংশ এবং বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মামলাগুলোতে সাজার হার ৪৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে সাজার হার ছিল ৩৭ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে সাজার হার হয়েছে ৫৪ শতাংশ। অনুরূপভাবে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো আমলের মামলায় ২০১৫ সালে সাজার হার ছিল ২৫ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে সাজার হার হয়েছে ৪৫ শতাংশ ছিল। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরে ৩৫৯টি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়। পক্ষান্তরে, ২০১৪ সালে ৩৩৩টি এবং ২০১৫ সালে ৫২৭টি মামলা দায়ের করে। ২০১৫ সাল তুলনায় ২০১৬ সালে মামলার সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। কমিশন প্রতিষ্ঠার পর ২০০৯ সালে সাজার হার ছিল সবচেয়ে বেশি ৬১ শতাংশ। এরপর ২০১০ সালে সাজার হার কমে ৫৬ শতাংশ, ২০১১ সালে ২০ শতাংশ, ২০১২ সালে ৩২ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৩৭ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৪২ ও ২০১৫ সালে ৩২ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে।
চার্জশিট কম দেয়া হয় : ২০১৬ সালে ৫৩৫টি চার্জশিট অনুমোদন দেয়। আগের বছর ৬১৪টি চার্জশিট অনুমোদন করা দেয়। তার আগের বছর ৪৮৪টি। দেখা যায় চার্জশিট অনুমোদনের সংখ্যা  কমছে। মামলার কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন সংশোধনের কারণে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলাগুলো দুদকের তফশিলের বাইরে  চলে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে কমিশন পর্যাপ্ত দালিলিক প্রমাণ সাপেক্ষে মানসম্মত মামলা দায়েরের বিষয়ে বেশি সতর্ক হচ্ছে।
গ্রেফতার বাড়ছে: ২০১৬ সালে তদন্তের স্বার্থে কমিশনের সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা ৩৮৮জন আসামিকে গ্রেফতার করেছেন। যার মধ্যে ১৬৮ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৮৭ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ছাড়া ১৩ জন জনপ্রতিনিধিও আছেন। ২০১৫ সানে ১৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর আগের বছর ১৪ জনতে গ্রেফতার করা হয়।  গ্রেফতারের পাশাপাশি বেড়েছে গণশুনানি : ২০১৪ সালে ১টি, ২০১৫ সালে ৫টি এবং ২০১৬ সালে ৩০টি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক গণশুনানি হয়েছে। এমনকি এই সংখ্যা বিগত দুই বছরের মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি। অভিযোগ বাড়ছে: ২০১৬ সালে কমিশনে ১২ হাজার ৯৯০টি অভিযোগ আসে, যার মধ্যে ১ হাজার ৭টি অনুসন্ধানের জন্যে গৃহীত হয় এবং ৫৮৮ টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। পক্ষান্তরে ২০১৫ সালে কমিশনে মোট অভিযোগ এসেছিল ১০ হাজার ৪১৫টি। ২০১৫ সাল অপেক্ষা গত বছরে ২ হাজার ৫৭৫টি অভিযোগ বেশি এসেছে। অর্থাৎ ২০১৬ সালে ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় ২৫% অভিযোগ বেশি এসেছে। এটা কমিশনের প্রতি জন আস্থা বৃদ্ধি বলে উল্লেখ করা হয়।  
কর্মপরিকল্পনা পেশ: পাঁচ বছর মেয়াদি (২০১৭-২০২১) দুর্র্নীতি দমন কমিশনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন পেশ করা। এতে নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠন এবং এ ইউনিট পরিচালনার জন্য বিধি-বিধান প্রণয়ন এবং পূর্ণাঙ্গ অপারেশনাল ম্যানুয়াল প্রণয়ন। এছাড়াও সশস্ত্র ইউনিট গঠন, হাজতখানা স্থাপন, সম্পদ পুনরুদ্ধার ইউনিট গঠন। সরকারের কতিপয় দপ্তরের দুর্নীতি প্রতিরোধ তথা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা করার লক্ষে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি, রাজস্ব, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনাসহ ১০টি দপ্তরের দুর্নীতি প্রতিরোধে ৬৫টি সুপারিশ পেশ করে কমিশন। প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশেদ আলম খান ইনকিলাবকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলা সাজা বাড়ছে, এটা কিন্তু আশাব্যঞ্জক। এতে করে বুঝা যাচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক এক নিষ্ঠাভাবে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন মামলা দায়ের সংখ্যাগত কমলে মূলত এখন গুনগত মান বাড়ছে। কারন বর্তমানে প্রত্যেকটি অভিযোগ গুরুত্বসহকারে দেখে মামলা ও চার্জশীটের জন্য পাঠানো হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ