Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশের প্রথমবারের মত বিশেষায়িত নৌযান নির্মাণ করছে খুলনা শিপইয়ার্ড

কোস্ট গার্ডের জন্য সেলফ প্রপেলড ফ্লোটিং ক্রেন-এর নির্মাণ কাজ শুরু

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


নাছিম উল আলম : খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য একটি সেলফ প্রপেলড ফ্লোটিং ক্রেন-এর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা হল গতকাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ কিল-লেয়িং’এর মাধ্যমে নৌযানটির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন।
এ উপলক্ষে খুলনা শিপইয়ার্ডের ফেব্রিকেশন শেড-এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর কে কামরুল হাসান-বিএন’র সভাপতিত্বে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কোস্ট গার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী-বিএন। অনুষ্ঠানে নৌ বাহিনীর খুলনা অঞ্চলের কমডোর কমান্ডিং সামসুল আলম-বিএন ছাড়াও পুলিশ-প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাববৃন্দ এবং বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কোস্ট গার্ডের যাত্রা শুরু খুব বেশি দিনের না হলেও স্বল্পতম সময়ে একটি সুশৃংখল বাহিনী হিসেবে ইতোমধ্যে জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৪ কোটি মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে।
বিশ^ব্যাপী জলবায়ু যে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে, তা থেকে আমাদের উপকূলবাসীও মুক্ত নয়। ঝড়ঝঞ্ঝা আর জলোচ্ছ¡াসের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ তাদের নিত্য সঙ্গী। তবে এর পরেও তারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। আর উপকূলবাশীর নিরাপত্তা বিধানসহ তাদের জীবন মান উন্নয়নেও আমাদের কোস্ট গার্ড কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোস্ট গার্ডের উন্নয়নে সব ধরনের পদক্ষেপ ও প্রস্তাবনায় সম্মতি প্রদান করছেন। তিনি কোস্ট গার্ডসহ উপকূলবাশীর জীবনমান উন্নয়নেও অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন বলে জানান জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃতপ্রায় খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে বিচক্ষণতায় পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি দেশের এ অমূল্য সম্পদ ধংশের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই উন্নয়নের পক্ষে এবং তিনি নিজেই একজন উন্নয়ন কর্মী।
জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব বলেন, আমাদের অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠানই বছরের পর বছর ধরে লোকসান দিয়ে অর্থনীতিকে পেছন দিকে টানছে। অথচ খুলনা শিপইয়ার্ড আজ একটি মডেল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ কোস্ট গার্ডের সেল্ফ প্রপেল্ড ফ্লোটিং ক্রেন-এর নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের বিশেষায়িত নৌযান নির্মাণের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ডের কারিগরি দক্ষতায় নতুন মাইল ফলক যোগ হবে। দেশে এ ধরনের নৌযান নির্মাণের ফলে আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রার সাশ্রয় হওয়ায় তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যতে এ নৌ-নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে নৌযান রফতানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করতেও সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী-বিএন বলেন,  ফ্লোটিং ক্রেনগুলো খুলনা শিপইয়ার্ড নির্মাণ করায় আমরা যথেষ্ঠ গর্বিত। এর ফলে সঠিক সময়ে মানসম্মত নৌযান আমরা হতে পাব। পাশাপাশি এ ধরনের বিশেষায়িত নৌযান নির্মাণের ফলে খুলনা শিপইয়ার্ডের কারিগরি দক্ষতাও আরো একধাপ এগিয়ে গেল বলে জানান তিনি। কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালকও খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সমুদ্র সম্পদ রক্ষাসহ দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা বিধানে কোস্ট গার্ড তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান।
অনুষ্ঠানে খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর কে কামরুল হাসান-বিএন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানই আজ খুলনা শিপইয়ার্ডকে বর্তমান উৎকর্ষতায় নিয়ে এসছে। তিনি বলেন, এই প্রথমবারের মত দেশে সেলফ প্রপেল্ড ফ্লোটিং ক্রেন তৈরী হতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো কঠিন প্রযুক্তির নৌযান খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরী হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিঙ্গাপুরের ‘মেরিন কনসালন্টেসি’র নকশা ও কারিগরি সহায়তায় ফ্রান্সের নৌযান জরিপ প্রতিষ্ঠান ‘ব্যুরো অব ভেরিটাস’এর তত্ত¡াবধানে দেড় শতাধিক ফুট লম্বা ও ৫০ ফুট প্রস্থ এ সেলফ প্রপেল্ড ফ্লোটিং ক্রেনটির গভীরতা প্রায় ১০ ফুট। আমেরিকায় ক্যটারপীলার কোম্পানীর তৈরী ৩৭৫ অশ্ব শক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এ  নৌযানটি ৫৮০ টন পানি অপসারন করে ঘন্টায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে। বার্জটিতে ৬৯ কিলোওয়াটের ২টি জেনারেটর সংজোযন করা হবে। যার মাধ্যমে প্রায় ৭৫ টন উত্তোলনক্ষম একটি স্বয়ংক্রীয় ক্রেন পরিচালন সম্ভব হবে। ২৫ জন জনবল সমৃদ্ধ এ নৌযানটিতে ইকো সাউন্ডার, গেøাবাল পজিশনিং সিষ্টেম-জিপিএস এবং নেভিগেশনাল রাডার ছাড়াও অত্যাধুনিক ভিএইচএফ ও এইচএফ বেতার যোগোযোগ ব্যবস্থাও সংযোজন করা হবে বলে জানা গেছে। খুলনা শিপয়ার্ডে কোস্ট গার্ডের জন্য ২৭০কোটি টাকা ব্যায়ে ৩টি ইনশোর পেট্রোল ভেসেল-এর নির্মাণ কাজও বর্তমানে চলমান রয়েছে ।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দেশের সমৃদ্ধ সমুদ্র সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি আমাদের উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ এলাকায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে আসছে। এ আধা সামরিক বাহিনীটি ইতোমধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকা সহ বিভিন্ন নদী বন্দর ও নৌ পথে জনগনের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অনেকটাই নির্ভরতার প্রতিকেও পরিনত হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিবেশী ভারত ও মায়ানমারের সাথে আমাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় কোস্টগার্ডের ভূমিকা যথেষ্ঠ বেড়ে গেছে। এ গুরুত্ব ও দায়িত্বের বিষয়টি  বিবেচনায় নিয়েই এর সহায়ক সরঞ্জামাদি সংগ্রহেও সরকার সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহন করছে। প্রকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশের বিশাল সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও অভ্যন্তরীন নৌপথের নিরাপত্তা এবং মৎস সম্পদ রক্ষা সহ দেশের উন্নয়নেও কোস্ট গার্ড  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিশাল সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা, সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষে কোস্টগার্ড তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ২০১৫থেকে ’৩০সাল পর্যন্ত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়ন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে ৩টি ইনশোর পেট্রোল ভেসেল-এর নির্মান কাজও শুরু হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ডে। পরবতী কার্যক্রম হিসেবে একটি সেল্ফ প্রপেলড ফ্লোটিং ক্রেন-এর নির্মাণ কাজ গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে একই শিপইয়ার্ডে শুরু হল।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড তার টহল নৌযানসমুহের সাহায্যে দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় এলাকায় চোরাচালান বিরোধী অভিযান ছাড়াও ইলিশ সহ মৎস সম্পদ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার সময় সারা দেশে ইলিশসহ উপকূলীয় প্রজনন এলাকায় সব ধরনের মাছ আহরণ বন্ধে কোস্ট গার্ডেও ভূমিকা অপরিসীম। নির্মিতব্য ক্রেন বার্জটি কোস্ট গার্ডের যেকোন নৌযানের দূর্ঘটনা পরিবর্তী উদ্ধার অভিযানসহ দূর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতায়ও অংশ নেবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ছাড়াও আনুষ্ঠানিক কিল লেয়িংয়ের পর দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি খুলনা শিপইয়ার্ড দপ্তরে একটি বৃক্ষ রোপণ করেন



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ