পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : ৫৯ বছরের দীর্ঘ পথ চলায় খুলনা শিপইয়ার্ড গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করে তার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠার পরে গত অর্থবছরেই খুলনা শিপইয়ার্ড-এর বার্ষিক টার্নওভার ছিল প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা। যা ছিল এর আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৬০ কোটি টাকারও বেশী। গত অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটির করপূর্ব মুনাফার পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৫৮.৮০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থ বছরে নিট মুনাফা করেছে ৪০ কোটি টাকারও বেশী। যা এর আগের বছরে ছিল ৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার কিছু বেশী। ২০১০-১১ অর্থবছরে খুলনা শিপইয়ার্ডের করপূর্ব মুনাফা ২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকার থেকে গত অর্থবছরে প্রায় আড়াই গুণ ৬৪ কোটি ৬১ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। এঘটনাকে ওয়াকিবহাল মহল প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সততা ও আন্তরিকতাসহ এর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমের ফসল বলে মনে করছেন।
খুলনা শিপইয়ার্ড গত অর্থবছরে আয়কর বাবদ প্রায় ২১.৫৪ কোটি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিয়েছে। যা এর আগের বছরে ছিল ১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার কিছু বেশী। গত কয়েক বছর ধরেই খুলনা শিপইয়ার্ড দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শ্রেষ্ঠ আয়কর দাতার সম্মান অর্জন করে আসছে। ভ্যাট বাবদও প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থ বছরে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকারও বেশী পরিমাণ অর্থ জমা দিয়েছে সরকারী তহবিলে। পাশাপাশি খুলনা শিপইয়ার্ড শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে গত অর্থ বছরে ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা প্রদান করেছে।
দীর্ঘদিনের রুগ্ন ও বিক্রি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড ১৯৯৯ সালে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে গত ১৭ বছরে এর টার্নওভার প্রায় ২২ -ণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ কোটি থেকে গত অর্থবছরে ৪৪০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর কে কামরুল হাসান (এল), এনজিপি, এনডিসি, পিএসসি, বিএন। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি মাঝারী মাপের ৫টি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণে সক্ষমতা অর্জনের পরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য আরো দুটি ২টি ‘লার্জ পেট্রোল ক্রাফট-এলপিসি’ নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি নৌকল্যাণ ফাউন্ডেশনের জন্য দুটি কন্টেইনার জাহাজের নির্মাণ শেষ করার পারে বিআইডব্লিউটিসি’র জন্যও অনুরূপ দুটি নৌযান তৈরী করছে। যার প্রথমটি মাস তিনেকের মধ্যে রূপসা নদীতে ভাসান হবে। আগামী মার্চের মধ্যেই এসব নৌযান বিআইডব্লিউটিসি’র কাছে হস্তান্তর করবে খুলনা শিপইয়ার্ড। এছাড়াও খুলনা শিপইয়ার্ডই আমাদের দেশীয় নৌ-শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মত সাবমেরিন টাগ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী চীন থেকে যে দুটি সাবমেরিন সংগ্রহ করছে তার সহযোগী নৌযান হিসেবে এসব টাগ ব্যবহৃত হবে।
গত প্রায় ৬০ বছরে, খুলনা শিপইয়ার্ড ৭ শতাধিক নতুন নৌযান নির্মাণ ছাড়াও দু’হাজার ২শ’রও বেশী নৌযানের মেরামত কাজ সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব গ্রহণের পর পন্টুন ও বার্জসহ ১২০টির মত নতুন নৌযান নির্মাণ এবং ৬ শতাধিক নৌযানের মেরামত সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
খুলনা শিপইয়ার্ডে ৩শ’ ফুট দৈর্ঘের ৭শ’ টন ক্ষমতার যেকোন ধরনের নৌযান উত্তোলনসহ মেরামত ও নির্মাণ করার ক্ষমতা সমৃদ্ধ সøীপওয়ে বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল ‘ফেব্রিকেশন সেড’ নির্মিত হওয়ায় এখানে যেকোন আবহাওয়ায় নৌযানের নির্মাণ ও মেরামত সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে। ডকইয়ার্ডটির সøীপওয়ের ৮টি বার্থের প্রতিটিতেই প্রায় সোয়া ৩শ’ ফুট দৈর্ঘের যেকোন নৌযান নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে ৮ টন ক্ষমতার ১টি ও ৫ টন ক্ষমতার ২টি বার্থ ক্রেন, ৩০ টন ক্ষমতার ১টি মোবাইল ক্রেনসহ একই ক্ষমতার অপর একটি ড্রিক ক্রেনও সংযুক্ত রয়েছে। শিপইয়ার্ডটির অভ্যন্তরে বিভিন্ন শেড-এ ৫-১০ টন ক্ষমতার একাধিক ওয়ার্কসপ ক্রেন ছাড়াও ফর্ক লিফ্টারের মত বিশেষায়িত বিভিন্ন ধরনের কলখানা-সরঞ্জামও সংযুক্ত রয়েছে। আইএসও স্বীকৃত খুলনা শিপইয়ার্ড ইতোমধ্যেই উপ-মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অর্জনে সক্ষম করেছে।
জার্মানীর কারিগরি সহায়তায় ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা-ইপিআইডিসি খুলনা শিপইয়ার্ড-এর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ১৯৫৭ সালের ২৩ নভেম্বর খুলনা মহানগরীর অদূরে রূপসা নদীর ধারে প্রায় ৭০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত শিপইয়ার্ডটির উৎপাদন শুরু হয়। নানা আধুনিক নৌনির্মাণ সরঞ্জামসমূহ স্থাপন ও সংযোজনের মাধ্যমে শিপইয়ার্ডটিকে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৌ-নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়া হয়। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত শিপইয়ার্ডটি জার্মান ব্যাবস্থাপনায় ও ১৯৬৫ পর্যন্ত জার্মান-ব্রিটিস যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ইপিআইডিসি গ্রহণ করে। স্বাধীনতার পরে উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থা-বিএসইসি ’কে খুলনা শিপইয়ার্ড-এর দায়িত্ব গ্রহণ করে।
কিন্তু ১৯৫৭ সাল থেকে ’৬২ সাল পর্যন্ত খুলনা শিপইয়ার্ড ৪৬ লাখ টাকা লোকসান গোনার পরে ১৯৬২ থেকে ’৬৯ পর্যন্ত মাত্র ৬৬ লাখ টাকা মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়। এরপরে আবার প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের কবলে পড়ে। ১৯৬৯ থেকে ’৭৩ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৪২ লাখ টাকা লোকশান গোনার পরে ১৯৭৩- ’৮৪ সাল পর্যন্ত ৫.৯১ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়।
কিন্তু এর পর থেকে খুলনা শিপইয়ার্ড আর লাভের মুখ দেখেনি। ৮৫ সাল থেকে লাগাতার লোকশান গুণতে থাকায় একসময়ে এ নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি রূগ্ন শিল্পে পরিণত হয়। একপর্যায়ে সরকার খুলনা শিপইয়ার্ডকে বিরাষ্ট্রীয়করণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু কয়েক দফা চেষ্টায়ও বিক্রি করা সম্ভব না হওয়ায় ১৯৯৮ সালে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
১৯৯৯ সালের অক্টোবরে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার দায় দেনা ও লোকসানের বোঝা নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী খুলনা শিপইয়ার্ডের দায়িত্ব গ্রহণের পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা মিলে প্রতিষ্ঠানটিকে ইতোমধ্যে একটি শক্ত ভীতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন। খুলনা শিপইয়ার্ড ইতোমধ্যে দেশের দেশের সরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যতম মডেলে পরিণত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।