Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইবাদতের বসন্তকাল রমজানুল মোবারক

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাও: এইচ. এম. গোলাম কিবরিয়া রাকিব

\ এক \
রমজান মাস আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত। সওয়াব অর্জন করার মৌসুম। এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস-রমজান মাস। আল কুরআনে এসেছে, ‘রমজান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাজিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ [সূরা বাকারাহ: ১৮৫]
রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘রমজান-বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্টু শয়তানদের এ মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো (মহাকল্যাণ হতে)।’ [সুনানে তিরমিযি : ৬৮৬]
এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমজান মাসের বিশেষ আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. সিয়াম পালন করা
ইসলামের পাঁচটি রোকনের একটি রোকন গুলো সিয়াম। আর রমজান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমজান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা মহান আল্লাহ বলেন, সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেনো তাতে সিয়াম পালন করে। [সুরা বাকারাহ: ১৮৫]
২. সময় মতো সালাত আদায় করা
সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মতো নামাজ আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।’ [সুরা নিসা: ১০৩]
৩. সহিহভাবে কুরআন শেখা
রমজান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহিহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরজ করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে, ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। [সুরা আলাক: ১]
৪. অপরকে কুরআন পড়া শেখানো
রমজান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসুলুল্লাহ সা. নিজে সাহাবিদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’ [সহি বুখারি: ৫০২৭]
৫. সাহরি খাওয়া
সাহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদিসে এসেছে, ‘সাহরি হলো বরকতময় খাবার’। তাই কখনো সাহরি খাওয়া বাদ দিও না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরি খেয়ে নাও। কেননা সাহরি খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তায়ালা ও তার ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন।’ [মুসনাদে আহমাদ: ১১১০১]
৬. সালাতুত তারাবিহ পড়া
সালাতুত তারাবিহ পড়া এ মাসের অন্যতম। আমল তারাবিহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামুল লাইল (সালাতুত তারাবিহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ [সহি বুখারি: ২০০৯]
তারাবিহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থিরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবিহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাত।
৭. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা
এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রমজান ব্যতীত অন্য কোনে রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোজা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি।’ [সহি মুসলিম: ১৭৭৩]
৮. শুকরিয়া আদায় করা
রমজান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তায়ালার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমজান পাওয়ার জন্য তাওফিক কামনা করা। রমজান সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’ [সুরা বাকারা: ১৮৫]
৯. কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা
এ মাসটিতে একটি ভালো কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেন, ‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহŸান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও। হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কতো লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন? [সুনানে তিরমিজি: ৬৮৪]
১০. সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া
রমজান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমজানের কারণে আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরি খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমজান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী সা. বলেছেন ‘ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত।’ [সহি মুসলিম: ২৮১২]
১১. বেশি বেশি দান-সদকাহ করা
এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরিব মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসেব করে এ মাসে জাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রাসুলুল্লাহ সা. এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ সা. ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেতো।’ [সহি বুখারিধ: ১৯০২]
১২. উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা
রমজান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদের সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোজা রাখে, সে যেনো তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোজা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেনো বলে, আমি রোজাদার।’ [সহি মুসলিম: ১১৫১]
১৩. ইতিকাফ করা
ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। মানুষ থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এতো মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমজানে রাসুলুল্লাহ সা. রমজানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তার সাহাবিগণ ইতিকাফ করতেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, ‘প্রত্যেক রমজানেই তিনি শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমজানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন।’ [সহি বুখারী: ২০৪৪]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ