চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
হামেদ বিন ফরিদ আহমদ
\ শেষ কিস্তি \
তবে দোয়াতে কেমন জিনিস চাইতে হবে এ বিষয়ে নবী কারীম সাঃ এর নিক-নির্দেশনা রয়েছে। তিরমিজী শরীফের হাদীসে বলা হয়েছে ‘কোন বান্দা আল্লাহর কাছে দোয়া করলেই আল্লাহ তা কবুল করেন, যদি সেই দোয়া কোন অপরাধমূলক কিংবা আত্মীয়তা ছিন্নকারী দোয়া না হয়।’
বর্তমানে দেখা যায়, মানুষ অশ্লীল কাজের শুরুতে দোয়া করে। আর কবুল না হলেই আল্লাহর উপর দোষ চাপায়। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম সিনেমাহলে সিনেমা রিলিজ দেওয়ার আগে নায়ক, নায়িকা, ডিরেক্টর, প্রডিউসার এবং কুশীলবরা সবাই মিলে সিনেমা সফল হওয়ার জন্যে দোয়া করছে। এভাবে প্রেমিক তার প্রেমিকার ভালোবাসা পাওয়ার লক্ষ্যে দোয়া করে। কেউবা আবার আরো ভিন্নধর্মী অবৈধ কাজ সিদ্ধির জন্যে দোয়া করে। আর কবুল না হলেই আল্লাহকে দোষারোপ করা শুরু করে দেয়। এমন ঘৃণ্যতম আচরণ যারা করে, দোয়ার নামে যারা ছেলেখেলা করে, তারা মূলত আল্লাহর সাথে বিদ্রƒপ করে। বেয়াদবি করে স্রষ্টার সাথে। তাচ্ছিল্য - পরিহাস করে দোয়া নিয়ে। এদের যথোপযুক্ত শাস্তি তুলা আছে আল্লাহর কাছে।
৩ / হেলেদুলে, গাফলতি নিয়ে দোয়া না করাঃ মুস্তাদরকে হাকেমে একটি হাদীসে এসেছে, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা এমনভাবে আল্লাহর নিকট দোয়া করো যেন তা কবুল হওয়ার দৃঢ়, বিশ্বাস থাকে। তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ গাফেল ও উদাস মনের দোয়া কবুল করেন না। ‘(হাকেম)
৪/ হালাল উপার্জন থাকা, হারাম ও অসৎ উপার্জনে লিপ্ত না থাকাঃ দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে হারাম উপার্জন দ্বারা খাবার পানীয় ও পোশাক পরিধান করা সবচেয়ে বড় বাধা।
ক) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া কবুলের উদ্দেশ্যে দূর থেকে পবিত্র স্থানে সফরাগত আওলাকেশী ধূলিমলিন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, সে ব্যক্তি আকাশের দিকে দু’হাত উত্তোলন করে হে আল্লাহ, হে আল্লাহ বলে দোয়া করে। অথচ তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারাম দ্বারাই তার রক্তমাংস তৈরি। তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে? (সহীহ মুসলিম)
খ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : তোমরা খাবারকে পবিত্র করো, তাহলে তোমার দোয়া কবুল হবে। (তাবরানী)
৫/ দোয়া করার আগে কোন ভাল কাজ করে নেওয়া ঃ আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের দোয়াকে গ্রহণ করার জন্যে দোয়ার পূর্বে আমাদেরকে কোন ভাল কাজ পেশ করতে হবে। যেমন দরুদ শরীফ পাঠ করা, কুর’আন তিলাওয়াত করা, নামাজ পড়া, রোজা রখা ইদ্যাদি। তাহলে দোয়া সহজে আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে বলে আশা করা যায়। আল্লাহ বলেনঃ ‘তাঁরই দিকে আরোহণ করে সৎবাক্য এবং সৎকর্ম তাকে তুলে নেয়। ‘ সূরা ফাতির- ১০
৬/ দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে সীমিত বিশ্বাস না রাখা ও হতাশা পোষণ না করা : কিছু লোক যারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, ভাবে যে তারা আরোগ্য লাভ করতে পারবে না আর তারা দোয়া করা ছেড়ে দেয় এবং আল্লাহর কাছে চাইতে ব্যর্থ হয় আর হয়ত শয়তানও এটা ভাবতে তাদের ওসওয়াছা দেয় যে তাদের দোয়া করার দরকার নেই। এটা অনেকগুলো মারাত্মক ভুলসমূহের একটি এবং এটি আল্লাহর ক্ষমতা ও দয়াশীলতা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণ। আল্লাহ যে কোন কিছু করতে সক্ষম আর তিনি যখনই কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন তখনই বলেন : “হও! আর তা হয়ে যায়।” যখন যাকারিয়া আলাইহি ওয়াস সালাম বৃদ্ধ ছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী বন্ধ্যা ছিলেন, তিনি সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন : “হে, আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।” (ইমরান : ৩৮)
আর আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেছিলেন এই বলে যে : “আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন।” (ইমরান : ৩৯) সুতরাং আল্লাহর সাহায্য সম্পর্কে হতাশ হওয়া যাবে না এবং ভাবা যাবেনা যে তাঁর রহমত সীমিত।
৭/ দোয়ার ফলাফল লাভে অধৈর্য না হওয়া ঃ এখন এই বিষয়টি খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় যে, আমরা দোয়া করার পরপরই না পেলে ক্রুদ্ধ হয়ে পড়ি। নৈরাশ হয়ে যাই। ভাবি আল্লাহ বুঝি আমার দোয়া কবুল করেন নি। আল্লাহ কেন আমার দোয়াকে কবুল করছেন না! কেন দিচ্ছেন না! অধৈর্য হয়ে যাই। অনেকে দোয়া কবুল না হলে আল্লাহর অঙ্গীকারকে সন্দেহ করা শুরু করে। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, ‘একজন ব্যক্তির দোয়ার জবাব দেওয়া হতে থাকে- যদি সে অন্যায় অথবা হারাম কিছুর জন্যে দোয়া না করে। এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করে। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাড়াহুড়া না করে ও অধৈর্য না হয়। রসূলুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হলো কিসের দ্বারা ব্যক্তি অধৈর্য হয়ে যাবে? রাসূল সাঃ জবাব দিলেন : সে বলবে আমি দোয়া করেছি এবং করতেই থাকছি, কিন্তু আমি দেখছি আমার দুয়ার কোন উত্তর দেওয়া হচ্ছেনা। এভাবে সে আশা হারিয়ে ফেলবে এবং আল্লাহকে স্মরণ করা ছেড়ে দিবে। ‘(সহিহ মুসলিম)
হাদীসে ‘দোয়ার জবাব দেওয়া হতে থাকে‘ একথা দ্বারা অনুমান করা যায়, অনেক সময় আমাদের দোয়ার জবাব একত্রে না এসে ধাপেধাপে আমাদের কাছে আসে। যেমন এমনকিছু ঘটবে যার মাধ্যমে আমরা ক্রমান্বয়ে কাক্সিক্ষত উদ্দেশ্যে পৌঁছে যাবো। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হচ্ছে আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছে না।
এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন ঃ ‘কোন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে নেন। হয়তো দুনিয়াতে তড়িঘড়ি তার দোয়া অনুপাতে চাওয়াটা দিয়ে দেন, নয়তো দুনিয়াতে কবুল না করে আখেরাতে তার জন্য সওয়াব বরাদ্দ রাখেন অথবা দোয়া অনুপাতে তার গুনাহ ক্ষমা করা হয়। পাপ মোচন করে দেওয়া হয়।.... ‘তিরমিজী।
হাদীসসমূহের উদ্ধৃতি এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেয় যে, চারাগাছ রোপণ করার পর যেমন কেউ একসাথে বিশ গ্যালন পানি দিয়ে এ কথা বলে না যে, কেন চারাটি বিশাল মহীরুহে পরিণত হচ্ছে না। বরং ধৈর্য সহকারে পানি দিতেই থাকে। যত সময় লাগুক না কেন, একসময় কাক্সিক্ষত ফুলটি, ফলটি সে পাবে। একইভাবে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। অঙ্গীকার পূরণ করেন এটা সত্য। কিন্তু মুহূর্তের মাঝে অলৌকিকভাবে দোয়া কবুল করে নেওয়া এটা নিয়ম বহির্ভূত। নিয়ম না। নিয়ম হলো আল্লাহর কাছে সবসময় চাইতে থাকা, এবং তাঁর কাছে এই দোয়ার ফল পাওয়ার প্রক্রিয়া সময় ও ধৈর্যের উপর নির্ভরশীল। এ জন্যই গুহায় আটকে পড়া তিনজন ব্যক্তি নিয়ে অতি পরিচিত যে হাদীসটি আছে, তাতে আমরা দেখতে পাই, প্রথম ব্যক্তির দুয়ার ফলে গুহার মুখ থেকে পাথর সামান্যই সরেছিল। দ্বিতীয় ব্যক্তির দুয়ার পর পাথর আরেকটু সরল। এবং তৃতীয় ব্যক্তির দুয়ার পরই তারা তাদের কাক্সিক্ষত ফল পেলেন। তাই দোয়া করার পরে ফলাফলের জন্যে তাড়াহুড়া না করা। দোয়া দেরিতে কবুল হওয়ার অন্যতম একটি হিকমাহ হলো, যদি বান্দা চাওয়া মাত্রই আল্লাহ তা’য়ালা দিয়ে দেন, তাহলে বান্দা শুধু প্রয়োজনের সময় তাঁর কাছে চাইবে। অন্যসময় তাঁকে স্মরণ করবেনা।
৮/ দোয়া করার সময় অন্যের উপর নির্ভরশীল না হওয়া : আমরা দেখতে পাই যে, কিছু লোক রয়েছে যারা নিজেরা গোনাহগার এই মর্মে নিজেরা আল্লাহর কাছে দোয়া করে না, তাই তারা সর্বদা অন্যদেরকে তাদের জন্য দোয়া করতে বলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।