পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজ ১৭ মে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের জন্য, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুসারীদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদ আবেগ, আনন্দ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিন। ১৯৮১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুবিহীন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় আলোর মশাল হাতে কান্ডারি হয়ে এসেছিলেন জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। দিনটি ছিল রবিবার। দিনটিতে বইছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া। অথচ প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়াও গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ মানুষের মিছিল। সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী লাখো কণ্ঠের সেøাগানে প্রকম্পিত পুরো রাজধানী। তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জনসমুদ্রের প্রবল জোয়ারে ভাসিয়ে আজ থেকে ৩৬ বছর আগে ১৯৮১ সালের ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ এমনি একটি দিনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম জননেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর স্বামী-সন্তানসহ ছয় বছর বিদেশে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি এসেছিলেন বাঙালির জন্য, বাংলাদেশের জন্য আর্শিবাদ হয়ে। বিদেশে থাকাকালেই ১৯৮১ সালের ১৬Ñ১৮ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তাঁর হাতে তুলে দেন দেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা। লাখো মানুষের প্রাণঢালা উষ্ণ সম্ভাষণ এবং গোটা জাতির ভালবাসা মাথায় নিয়ে প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যার আগমনে সেদিন গগনবিদারী মেঘ গর্জন, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বদলা নেয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল, আর অবিরাম মুষলধারে বারিবর্ষণে যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার পিতৃ হত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন।
জননেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আজকের মতো সেদিনটি এমন নিষ্কলুষ ছিল না। শেখ হাসিনার চলার পথও ছিল না কুসুমাত্তীর্ণ। তখনো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার-পরিজন ও জাতীয় চার নেতার রক্তের দাগ শুকায়নি। গণতন্ত্র অবরুদ্ধ। সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের নির্যাতনের স্টিমরোলার চলছে বঙ্গবন্ধুবিহীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর। চলছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শাসক ও নানা পথের রাজনৈতিক নেতাকর্মীর গোয়েবলসকে হার মানানো অপপ্রচার। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সময়টিতে শ্বাসরুদ্ধকর অন্ধকার বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি করা হয়েছিল গোটা জাতিকে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে লন্ডনে রেখে এ দেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসেন।
১৯৮১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের লাখো মানুষের সঙ্গে স্কুলপড়ুয়া একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল। ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রæতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখ লাখ মানুষের সংবর্ধনা ও হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা-ভালবাসার জবাবে পিতা-মাতা-ভাইসহ স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে জাতির জনকের হত্যার বিচার করতে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালী জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৩৬ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগণের ভাগ্যবদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
সামরিকতন্ত্রের বেড়াজাল থেকে দেশের জনগণকে গণতন্ত্র উপহার দিতে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন বলেই আজকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশেরই নয়, এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক দল। শুধু দেশের বৃহত্তম দলই নয়, এই ৩৬ বছরে জনগণের আস্থা অর্জন করে প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটসংখ্যা বাড়িয়েছেন দ্বিগুণ-ত্রিগুণ হারে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সামরিকতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে দেশবাসী পেয়েছিলেন কাঙ্খিত গণতন্ত্র। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে ¯্রােতের বিপরীতে সেই যে উজানে নাও বাওয়া শুরু করেছিলেন জাতির জীবনে সাফল্যের পালক পরিয়েই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। জীবনে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে কুড়িবারের বেশি। যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না, তাদের সব হিসাব-নিকাশ যেন মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেল। দেশের মাটিতে নেমেই অন্ধকার দুঃসময়ে আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে তিনি নামলেন গণতন্ত্রের সংগ্রামে। গণমানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে নিরন্তর সংগ্রামে এক অবিস্মরণীয় গণজাগরণই ঘটালেন না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন করে দেশের জনগণকে সুসংগঠিত করে ঐক্যের রাজনীতির শুভ সূচনা করলেন। তাঁরই হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝোলানোর মধ্যে দিয়ে দেশ দায়মুক্ত, কলঙ্কমুক্ত হতে পেরেছে। তাঁরই বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। স্বপ্ন দেখছে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছার। অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা থেকে শুরু করে সর্বত্রই আজ উন্নয়নের জোয়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশের এখন রুপকথা গল্প নয়, বাস্তব। মানুুষের মুখে ফুটেছে হাসি। আজকের বাংলাদেশের এই উন্নয়নের ভিত্তিমূল শেখ হাসিনার সেই স্বদেশ প্রত্যার্বতনের মধ্যেই রয়েছে। আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার দ্বারপ্রান্তে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুুর পরই ক্যারিশমেটিক নেতা হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে তার নেতৃত্ব আজ প্রশংসিত। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের শুধু প্রশংসাই করেন না উন্নয়নের রুপকার ও রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
একজন উদার গণতন্ত্রী হিসেবে তিনি দলে সবাইকে প্রাপ্য সম্মান দিয়ে আওয়ামী লীগকে এক শক্তিশালী গণসংগঠনে পরিণত করলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে এসে তার স্নেহচ্ছায়ায় ধন্য হলো আমাদের জীবন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে তার লড়াকু সংগ্রামমুখর জীবন এতটাই উদ্ভাসিত হয়ে উঠল যে, মানুষ তার দিকে ¯্রােতের মতো ছুটেই গেল না, ভালোবেসে তাকে কখনো গণতন্ত্রের মানসকন্যা, কখনো বা জননেত্রী বলে দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে উচ্চাসনে অভিষিক্ত করলেন। আপসহীন, দেশপ্রেম, গণতন্ত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও রক্তের উত্তরাধিকারিত্ব নিয়ে গণমানুষের সংগ্রামে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ডিঙাতে লাগলেন। গোটা বিশ্ব অভিভূত হয়ে দেখল একজন সংগ্রামী নেত্রীর রাজনৈতিক সাফল্যের উত্থান। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর স্নেহসান্নিধ্য পাইনি তারা তার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার স্নেহসান্নিধ্যে ধন্য হলাম। আমরা তার স্নেহচ্ছায়ায় কাছে থেকে দেখলাম দুঃখী বাংলার মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও আস্থা এবং দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট। তার সাহসী সংগ্রামের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি তিনি কীভাবে একের পর এক প্রাণনাশের আঘাত, হামলা, নির্যাতনের মুখে অমিত সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্বই দিলেন না, আমাদের বুকের ভিতরে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আগুনও জ্বালিয়ে দিলেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের বাঁকে বাঁকে কত ষড়যন্ত্রের জাল ফেলা হয়েছে! তিনি ছিন্ন করেই অশুভশক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণের বাতি জ্বালিয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে বৈরী ¯্রােতের বিরুদ্ধে তার সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে গেছেন। তার স্নেহচ্ছায়ায় জাকসু ভিপি থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়ে আজকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক। জাতির জনকের আদর্শের একজন কর্মী হয়ে রাজনীতির পথ পরিক্রমায় খুব কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করেছি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের বিশালত্ব দিয়ে তিনি ভালোবেসেছেন তার মাটি ও মানুষকে। দলের কর্মীদের জন্য তার কোমল হৃদয়খানি বার বার কেঁদে উঠতে দেখেছি। কর্মীদের কাছে কখনো তিনি এক স্নেহময়ী মা, মমতাময়ী বড় বোন, কখনো বা আদর্শ অভিভাবক। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়মিত ছাত্রদের হাতে রাখতে তিনি বয়সের সীমানাই টেনে দেননি, আমাদের হাতে তিনি তুলে দিয়েছিলেন বই-খাতা-কলম। ছাত্রলীগের কর্মীদের আগে পড়ালেখা, মানুষ হওয়া, তারপর রাজনীতির তাগিদ তিনি বার বার দিয়েছেন। এই মহান নেত্রীর রাজনীতি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জীবনকেই ধন্য করেনি, গণতন্ত্রকামী অসা¤প্রদায়িক শক্তির পায়ের তলার মাটি শক্ত করেনি, দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতির দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ নামের ঐতিহ্যবাহী দলটিকে ব্যালট বিপ্লবে ক্ষমতায় এনে প্রচলিত আইনে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছেন। গোটা বিশ্ব তার এই উদার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে অভিভূত হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদকে সব কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু করতে তিনি প্রাইম মিনিস্টার আওয়ার্স চালু করে প্রতি সপ্তাহে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে এনে সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে মন্ত্রীদের বদলে সদস্যদের বসিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি। নারীর ক্ষমতায়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি যে ইতিহাস নির্মাণ করেছেন অনাগত প্রজন্ম তা ইতিহাসের ক্যানভাসেই তুলে আনবে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গণমানুষের সমর্থন বাড়ানোর পরও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তাকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তবুও গণতন্ত্রের পথে তার অবস্থান ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের ঘাটতি দেখা যায়নি। দমন-নির্যাতনের মুখে তিনি গণমানুষকে নিয়েই তার সংগ্রাম করেছেন। একুশের গ্রেনেড হামলার মতো বর্বরোচিত কায়দায় তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্লজ্জ ও অশুভ আঘাত করা হয়েছে। তিনি দমেননি। বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনিতে কোনো ডর-ভয় তাকে দমাতে পারে না। তিনি ফের প্রমাণ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম তার সাহসী প্রতিবাদী চরিত্র উন্মোচন করে গণতন্ত্র ও ব্যালটের পথে ক্ষমতা হস্তান্তররের কথা বলেছেন। সব বাধা অতিক্রম করে দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ করেছেন এই দেশ ও মানুষের জন্য জীবন দিতেও তিনি কার্পণ্য করবেন না। তিনি সব সময় বলেন, দেশের জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনে তার জীবন উৎসর্গ করবেন। সংগ্রামমুখর জীবনের পরতে পরতে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। আমরা যারা তার কর্মী তাদের জীবনকে তিনি মহিমান্বিত করেছেন। মাইনাস ফর্মুলার ষড়যন্ত্র, কারা নির্যাতন তাকে দমাতে পারেনি। শুধু জনগণের ওপর ভর করা এই সাহসী নেত্রী ফের বিজয়ী হয়ে জনরায় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এই মানবিক হৃদয়ের অসীম সাহসী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে কাছে থেকে দেখতে দেখতে অভিভূত হতে হয়। মানুষ ও কর্মীর জন্য তার দরদ, গরিবের জন্য ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায়, বোঝানো যায় না। তাহাজ্জুদের নামাজ দিয়ে রাত শেষ হয়, ফজরের নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও সংবাদপত্র পড়ে তার দিন শুরু হয়। খাওয়া-দাওয়ায় একেবারেই সাদামাটা। তিনি নিজে রান্না করতে যেমন পছন্দ করেন, তার চেয়ে বেশি আতিথেয়তার সঙ্গে খাওয়াতে পছন্দ করেন। বিশ্বে এমন কজন রাষ্ট্রনায়ক আছেন, যারা নিজ হাতে রান্না করে কর্মী ও সন্তানদের খাওয়ান? সাধারণের মতোই জীবনযাপনে অভ্যস্ত আমাদের মহান নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গৌরব। একজন সম্ভান্ত পরহেজগার মুমিন মুসলমান হলেও তার চিন্তা ও চেতনাজুড়েই অসা¤প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতি জায়গা নিয়েছে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে তিনি দ্বিধা করেন না। খোলা বইয়ের মতো তার রাজনীতি ও জীবন মানুষের সামনে উন্মুক্ত করেই তিনি পথ হাঁটেন। তার সারল্যতা শিশুর মতো। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তার হাতের কাছেই শোভা পায়। অবসরে বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে তাকে দেখেছি। তিনি নিজে যেমন পড়াশোনায় মগ্ন থাকেন, তেমন আমাদেরও পড়াশোনার তাগিদ দেন। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করলেও ক্ষমতার কাছে ভিড়তে দেন না। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র রক্ষক। নিজে রাজনীতি করার পাশাপাশি তার দুই সন্তানকেও সুশিক্ষিত করে তুলেছেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় ইতিমধ্যেই সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা এমন একজন নেত্রী যিনি নিজের ছেলেমেয়ের চেয়ে কর্মীদের ভালোবাসেন নিজ সন্তানের মতোই। মায়ের স্নেহ-মমত্ববোধ থেকে সন্তানদের বঞ্চিত করে তা কর্মীদের নির্দ্বিধায় দেন। অসহায় বিপন্ন মানুষের কাছে ব্যাকুল চিত্তে তিনি ছুটে যান মানবিক হৃদয় নিয়ে, মায়ের ভূমিকায় পাশে দাঁড়ান। তার মতো স্নেহশীল মা, কর্মীবান্ধব সভানেত্রী, প্রাজ্ঞ দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেত্রী যেভাবে দেশ ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিরন্তর পথ চলছেন, দেশের স্বার্থে যেভাবে আপসহীন দৃঢ়তা দেখিয়ে এসেছেন তা ইতিহাসে তাকে অমরত্ব দেবে। বিশ্ববরেণ্য নেতারা শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘মেধা, যোগ্যতা, সততা আর দক্ষতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায়ই নয়, সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।’ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িখানিও তিনি জনগণকে দিয়েছেন। লোভ, মোহের ঊর্ধ্বের পথচলা বিশ্ববরেণ্য নেত্রী আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন, আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন, ততদিন দেশ উন্নয়নের সিঁড়িপথেই হাঁটবে, ততদিন গণতন্ত্র ও অসা¤প্রদায়িক রাজনীতি বিকশিত হতেই থাকবে, ততদিন গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবে। দেশ হবে তার স্বপ্নের দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। আজ তার এই দেশে ফেরার শুভ দিনে মহান আল্লাহর কাছে তার সুস্থ, কর্মঠ ও দীর্ঘজীবন প্রত্যাশা করি। এই দেশ ও মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এই মহান নেত্রীর ভাগ্যের সঙ্গে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মনের দোয়া কবুল করুন। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।
লেখক: এনামুল হক শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সাবেক জাকসু ভিপি, সাবেক সভাপতি- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।