পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য পানির হিস্যা আদায়ের দাবি জানিয়ে গতকাল ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৭৬ সালের এই দিনে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে সারাদেশের লাখ লাখ মানুষ রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান থেকে মরণ বাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন। দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জনদুর্ভোগের জন্য তারা ওইদিন লংমার্চ করে ভারত সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন মহান নেতা মওলানা ভাসানী। তাই এ দিনটি আজও শোষণ, বৈষম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং দাবি আদায়ের পক্ষে বঞ্চিতদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে পানিশুন্য করতে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে ১৯৬১ সালের ৩০ জানুয়ারি ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ১৯৭০ সালে শেষ হয় বাঁধটির নির্মাণকাজ। তখন পরীক্ষামূলকভাবে ভারত কিছু কিছু পানি ছাড়ে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে ফারাক্কার বাঁধ চালু হয়। তারপর ১৯৭৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানির নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিতই হচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে, শীতকালের শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদী থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত পানি পেত বাংলাদেশ।
ঐতিহাসিক এই দিবসটি পালন উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ন্যাপ ‘গঙ্গা-তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবীতে” মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স “ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং-মার্চ দিবস” স্মরণে তোপখানা রোডের কার্যালয়ে আলোচনা সভা করে। এছাড়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদ জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
সরকারের ব্যর্থতার কারণে পানির অধিকার আদায় হচ্ছে না: হাবিবুর রহমান
বাংলাদেশ ন্যাপের মানববন্ধনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভারত উজানের রাষ্ট্র হিসাবে ভাটির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশী হিসাবে আচরন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফারাক্কা সমস্যা সামাধানে ব্যর্থ সরকার টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের পক্ষে দেশের স্বার্থ বিরোধী উকালতি করছে। যে সরকার ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না, দেশের জনগনের কল্যাণ ও জনগনের মৌলিক চাহিদা পুরণ করতে পারে না, তাদের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ক্ষমতাসীনরা যতই ষড়যন্ত্র করুক বিএনপিকে বাদ দিয়ে দেশে আগামীতে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে দূরে সরিয়ে রাখতে সরকার গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তাদের কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। আগামীতে বিএনপিকে ছাড়া এই দেশে কোন নির্বাচন হবে না। হতে দেয়া হবে না। যারা ভাবছে তারা আহম্বকের স্বর্গে বাস করছে।
বিএনপির ভিশন-২০৩০ জাতিকে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিবে দাবি করে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, গঙ্গা, তিস্তা, ফারাক্কাসহ বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রে ন্যায্য হিৎসা পেতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনমত গড়ে তুলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিনত করেছে ভারত। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের মাধ্যমে আবারো দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিনত করার যে ষড়যন্ত্র করছে তার বিরুদ্ধে দেশের সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ। ভারত মূলত দুটি উদ্দেশ্যে পানি আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। এর একটি হচ্ছে রাজনৈতিক কারনে পানিকে ব্যবহার করা আর রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিনত করা। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মওলানা ভাসানীর মতো নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে। তিনি বলেন, ভারত যা বলে তা করে না। যা করে তা বলে না। আওয়ামী-বাকশালী চক্র ভারতের সঙ্গে যতগুলো চুক্তি করেছে সবগুলো জাতীয় স্বার্থ বিরোধী। বর্তমান সরকার সা¤্রাজ্যবাদী ও সম্প্রসারনবাদী শক্তির সহায়তার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তবে তাদের শেষ রক্ষা হবে না, হতে পারে না।
জাতীয় পার্টি (জাফর) নেতা আহসান হাবিব লিংকন বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক হতে হবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে কার্যকরী সম্পর্ক। আমরা শুধু ভারতে দিয়ে যাব বিনিময়ে আমরা কিছুই পাবো না তা হতে পারে না। আওয়ামী লীগের দাসসূলভ আচরনের কারনেই ভারত পানি আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে।
ন্যাপ নগর সদস্য সচিব মো. শহীদুননবী ডাবলুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহŸায়ক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এ্যাড. সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপি মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিন সহসভাপতি মুহাম্মদ ফরিদউদ্দিন, বিএনপি বাগেরহাট জেলা উপদেষ্টা ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান কাজী ফারুক হোসেন, সম্পাদক মো. কামাল ভুইয়া, যুব নেতা আবদুল্লাহ আল কাউছারী, ছাত্রনেতা সোলায়মান সোহেল প্রমুখ।
ফারাক্কা লংমার্চের চেতনায় সর্বাত্মক জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন: আলমগীর মজুমদার
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্সের উদ্যোগে “ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং-মার্চ দিবস” স্মরণে তোপখানা রোডে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে অ্যালায়েন্সের প্রধান সমন্বয়কারী আলমগীর মজুমদার ফারাক্কা লংমার্চের চেতনায় সর্বাত্মক জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহŸান জানান।
তিনি বলেন, শুধু গঙ্গা নয় তিস্তাসহ সকল আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ফারাক্কা লংমার্চের চেতনায় সর্বাত্মক জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী গঙ্গা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ তৈরির মাধ্যমে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের উপর পরিচালিত পানি আগ্রাসনের আজকের প্রেক্ষিত আঁচ করতে পেরেই ফারাক্কা অভিমুখী লংমার্চ করেছিলেন। তিনি এই ঐতিহাসিক লংমার্চের মাধ্যমে একদিকে নদীমাতৃক বাংলাদেশের অস্তিত্ব সুরক্ষা, অন্যদিকে বাংলাদেশের উপর পরিচালিত পানি আগ্রাসনসহ বিভিন্ন মুখী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভিত্তিক জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে বিশ^ বিবেককে জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তা করতে সমর্থও হয়েছিলেন।
আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই মন্ডল, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ রশীদ প্রধান, ন্যাশনাল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান কাজী সাব্বির, এনডিপি মহাসচির আলীনূর রহমান খান সাজু, ন্যাপ ভাসানীর যুগ্ম মহাসচিব ইমরুল কায়েস প্রমুখ। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।